স্যার আমার নাম হিমু, বয়স ২৮, উচ্চতা ৫'৮", হালকা গড়ন, গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা। আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন?
-হুম
স্যার আপনি নাই তাই আমি ঠিক করেছি- আমি আর হলুদ পাঞ্জাবী পরে ঘুরে বেরাব না। আমার মনটা আজ খুব খারাপ। আমার খালু আমাকে ডান গালে ঠাটিয়ে এক চড় বশিয়ে দিয়েছে। আমার খালাতো ভাইটা আবারও পরীক্ষায় লাড্ডু মেরেছে।প্রচন্ড রাগে আমার খালা তার বাবার বাড়িতে চলে গেছে। আর খালুর ধারনা এসবের জন্য আমি দায়ী।
-হুম
পরীক্ষায় ফেল করার কারনে আমার খালু ঠিক করেছেন ওকে একটা রিক্সা কিনে দিবেন। আর আমি ঠিক করেছি আমার হলুদ পাঞ্জাবিটাও ওকে দিয়ে দিব। আমি হলুদ পাঞ্জাবী পরে খালি পায়ে হাটতাম, আর ও হলুদ পাঞ্জাবী পরে রিক্সা চালাবে। হিমুর রিভাইসড ভার্সন। ও অবশ্য মহা খুশী। স্যার আপনার অনুমুতি চাই।
- ভেবে দেখব। তুমি এখন যাও। আমার ঘুম পাচ্ছে। ওহ ভাল কথা... আমার জন্য সিগারেট এনেছ?
না স্যার। শুনেছি সিগারেটের কারনেই আপনাকে লেখা লেখি ছেড়ে দিয়ে আকাশে ভেসে বেরাতে হচ্ছে?? স্যার আপনি চাইলে আমি আপনাকেও একটা হলুদ পাঞ্জাবী গিফট করতে পারি...। হলুদ পাঞ্জাবী পরে ভেসে বেরাবেন। আপনাকে ট্রেস করতে আমার জন্য সুবিধা হবে।
স্যার ভ্রু কুছকে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। মনে হচ্ছে এমন কথা উনি বাপের জনমে কক্ষনো শুনেননি।
- হুম। ফিরে গিয়ে তোমার খালুকে বলবে যেন তোমার বাম গালেও ঠাটিয়ে একটা চড় বসায়।
জী স্যার বলব।
- এতবার জেলে গিয়েও শিখনি কাউকে দেখতে আসলে সিগারেট নিয়ে আসতে হয়?? সিগারেট ছাড়া আমি লিখতে পারিনা। পরের বার আশার সময় সিগারেট নিয়ে আসবে।
ওহ ভাল কথা। একটা হলুদ পাঞ্জাবীও নিয়ে এসো। বুদ্ধিটা ভাল।
বলতে বলতে স্যার ঘুমিয়ে পড়লেন। আরো কিছু কথা বলার ছিলো। বুদ্ধিটা ভাল হলে খালুর হাতে বাম গালে চড় খেতে হবে কেন সেটাও জিজ্ঞেস করা হয়নি। সিগারেট আর হলুদ পাঞ্জাবী নিয়ে এসে এই প্রশ্নটা অবশ্যই করতে হবে।
(লেখাটি কোনভাবে কারো বাক্তিগত অনিভুতি কে আঘাত করলে তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তবে লেখার সাথে যে ছবিটি সংযুক্ত করা হয়েছে সেটি একটি পাবলিক পেজ থেকে নেয়া, পেজটির নাম ভুলে গিয়েছি কিন্তু অসম্ভব সুন্দর এই ছবিটির জন্য সেই পেজ এর এডমিন কে স্যালুট)
--------------------------------------------------------------------
আমার চোখে হিমে এবং হুমায়ুন -আমার প্রথম লেখা।
কিছু প্রাসঙ্গিক কথা।
--------------------------------------------------------------------
(ক্লাস সেভেন এর ঘটনা। নতুন স্কুল এ ভর্তি হওনের পর এক বন্ধু পাইছি। হেই বন্ধু হারা দিন ডায়রী লেখে। কবিতা, গান... এইসব, আর আমারে জোর কইরা শুনায়। আমি ওমুক, তুমি তমুক এই জাতীয় জিনিস। আমি তেমন পাত্তা দিতাম না। মনে হয় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র হবে, স্কুলে আইসা একটা বই দিছিল। রামায়ণ জাতীয় কিছু একটা। ২ সপ্তাহর মধ্যে পইরা শেষ করতে হইব। এর পর ওরা প্রশ্ন করব আর সব উত্তর ঠিক দিলে পুরস্কার। বহু ধৈর্য নিয়া পড়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুই বুঝলাম না।পরে রাগ কইরা ওই বই আর ফেরত দেই নাই। মাইরা দিছি। এর কিছুদিন পর এক সৌখিন পুলিশ আঙ্কেল বইমেলায় ঘুরাইতে নিয়া আমারে একটা শিশুতোশ কিনে দিছিল। তারে স্যালুট। রামায়ন এর মত কঠিন জিনিসের পর শিশুতোশ জাতীয় জীনিস পড়ার অনুভুতি হইল ৫ ঘন্টা নন্সটপ জার্নি করা কালিন সময় হিশু চাইপা ধইরা রাখনের পর যখন সারতে যাবেন, অনুভুতিটা সেইরকম। এরপর থেকে বই পড়ি। মিসির আলী পাইলে তো কোন কথা নাই, গদ-গদ কইরা গিল্লা ফেলাইতাম। পরে হিমুও কিছু পড়ছি। খুব হিমু হইতে মন চাইত। একদিন তো একটা বই পড়ার পর রাতে ঘুমাইতে পারি নাই। মনে হইছে, সকাল হইলেই খালি পায়ে বাইর হইয়া যামু। কোথাও থেইক্কা একটা হলুদ পাঞ্জাবী কিন্না স্যারেরে খুইজ্জা বাহির করমু, এর পর হের পা ছুইয়া সালাম কইরা উইঠঠা কমু – ‘স্যার আমি হিমু।‘
হুমায়ুন আহমেদ মারা যাবার পর অনেকে অনেক শোকবার্তা দিছে। আমি কিছুই দেই নাই।প্রথম প্রথম আমার তেমন খারাপও লাগেনাই। এর পেছনে একটা গল্প আছে। কইলে আতেল হওনের সম্ভাবনা আছে তাই সেই গল্পে গেলাম না। যাই হোক, ফেবুর বিভিন্ন পেজ এ ঘুরতে ঘুরতে একটা ছবিতে চোখ আটকে গেছিল। আমার হিমু হওনের সখের কথা মনে পইরা গেল।......গজানোর পর বহুবার সাহিত্য চর্চা করার জন্য কলম ধরে পরে আর কুলায় উঠতে পারি নাই। খুব ভেজাল। কাটতে কাটতে ছেড়া- বেড়া অবস্থা। কিন্তু এই ছবিটা দেইখা চোখ বন্দ কইরা কি-প্যাড এ হাত ঘুরাইতে ঘুরাইতে যা হইল সেটার দিকে তাকায়ে দেখি আমার ভেতরের হিমুটা বাইর হইয়া আইছে। একটু দারান, এইবার বুকের ভেতরে কেমন যেন ফাকা ফাকা লাগতেছে। মনে হছে কিছু একটা হারাইছি। )
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১২ সকাল ৭:৫৩