পিতার চাকুরির সুবাধে আমাকে প্রায়সই বছর এর মাঝখানে স্কুল বদলাইতে হইতো। যথারীতি ক্লাস নাইন এ আমি ঢাকার একটি ভাল স্কুল থেকে বদলি হয়ে এসে নতুন এক অখ্যাত স্কুলে ভর্তি হই। আমার স্কুলে আদুভাই টাইপের কিছু বন্ধু ছিল যারা ক্লাস চলাকালীন সময়ে নাকি স্কুলের পাশের পুকুরে গিয়া বন্ধুক দিয়া মাছ শিকার করে। সব শুনা কথা। আমি কখনো দেখি নাই। যাই হোক। তাদের সাথে আমার কোন আপোশ নাই। বেফুক নীতির সহিত ভাব নিয়া ঘুইরা বেরাইতাম। কিছু দিনের মইধ্যে স্কুলে আমার বেফুক নাম হইল। "বাল" ছাত্র হিসেবে সবাই চিনে। ২ন্ড টার্ম পরীক্ষায় রেজাল্টও ভাল হইছিল। উল্লেখ্য, যে বনে বাঘ নাই সেই বনে বিলাই-ই বাঘ।
ঘটনা ঘটে ক্লাস নাইনের ফাইনাল পরীক্ষার সময়। গনিত পরীক্ষা সবার কাছে জম আর আমার কাছে দুধভাত। পরীক্ষার দিন আমার পাশে বসল স্কুলের শান্ডা টাইপ এর এক বন্ধু।পরীক্ষা চলিতেছে......আমি একের পর এক লুজ পেপার নিয়া অঙ্ক কইরা ভইরা ফেলাইতাছি।
পরীক্ষার মাঝখানে বন্ধু আমারে কয়
-ওই, তোর লুজ পেপার গুলা আমারে দে। আমি কপি কইরা তোরে আবার ফেরত দিতাছি।
আমি তো শুইনা আকাশ থেইকা পরলাম। হালায় কয় কি???
চোখ মুখ শক্ত কইরা কইলাম - জীবনেও না।
বন্ধু খাতায় লিখতাছে এমন ভাব কইরা দাতে দাঁত চাইপা আমারে কইলো
-ওই ঠোলার পোলা...... তোর লগে কি আমার কম্পিটিশন???
শুইন্না মেজাজটা খাড়ার উপরে বিগড়াই গেল। মুনটায় চাইল ওরে কানের নিচে একটা বন চটকানা মারি।
বহু কস্টে নিজেরে সংযত করলাম। এইটা অবশ্য আমি প্রায়ই শুনতাম। ঠোলা মানে কি এইটা আব্বারে জিগানোর সাহস হইত না। আমারতো মাথা বন বন কইরা ঘুরে। বন্ধুরা চান্স পাইলেই ভইরা দেয় - ঠোলার পোলা।
যাই হোক, একবার সৃষ্টিকর্তা আমার দিকে মুখ তুইলা তাকাইল। ভইরা দিল এক বিশাল কঞ্চি ওয়ালা বাঁশ। মেট্রিক আর ইন্টারে ১স্ট ক্লাস প্রাপ্ত জগদীশ চন্দ্র নামের এক পুলিশ আঙ্কেল কে দায়িত্ব দেয়া হইল আমারে সার্বক্ষণিক বইয়ের সাথে সুপার গ্লু দিয়ে আটকাই রাখতে। সাপোরটিং টিচার। শুনে আমার বুকটা ফাইট্টা চৌচির। নাক কানতে কানতে আম্মারে গিয়া বেফুক ঝাড়ি
- "আম্মা, আমি কি পড়ি না??"
আম্মা শুনেও না শুনার ভান কইরা চইলা গেল। আমি আম্মার গন্তব্বের দিকে তাকাই রইলাম। কিচেন এ গিয়া আম্মা বহু কষ্টে হাসি থামানোর চেষ্টা করতাছে কিন্তু কাজ হইতাছে না। হায়রে নিষ্ঠুর “মা” জননী!!
যাইহোক, বেফুক (!) পড়াশুনা শুরু। আঙ্কেল সেরাম গপ্পবাজ। আমি আরও সস্তি পাইলাম যখন শুনলাম আমারে মারনের অনুমোদন তার নাই, তয় আঙ্কেল আমারে প্রায়সই অপমান করার অপচেষ্টা চালাইত। আমিও একদিন তারে চামে পাইয়া ভইরা দিলাম -
-আঙ্কেল, ঠোলা মানে কি???
মনে মনে আমি বেপক উত্তেজিত। চোখ চিক চিক করতে লাগল। আঙ্কেল ৩৪ দাঁত বাহির কইরা ভেটকি দিয়া বেপক বিজয়ীর ভাব নিয়া কইল
-ঠোলা মানে “দুলাভাই”।
আমার উত্তেজনা চরমে উঠল। পারলে তারে চুম্মা দিই। বন্ধুদের মধুর বানী আমার কানে বাজে সুধার মতো...ও ও ও ও
যই হোক। এইবার সুযোগের সদব্যাবহার কইরা দিলাম। আমিও একটা কাগজের মধ্যে “ঠোলা মানে দুলাভাই” লেইখা পরীক্ষারত আমার বন্ধুরে সাপ্লাই কইরা দিলাম। পরীক্ষা শেষ কইরা তাড়াতাড়ি বাসায় গিয়া আব্বার লগে নগদে পল্টি। ঘোঁ ঘোঁ করতে করতে বাপের কানে বিষমন্ত্র ঢাইলা দিলাম
-এমুন স্কুলে ভর্তি করছ - আমার পাশের বন্ধু আমারে কয় অরে খাতা দেখাইতে। কত্ত বড় সাহশ!!
মন্ত্রে বেপক কাজ হইল। এরপর কিছুদিন আব্বারে নিয়া বীরদর্পে (!) পরীক্ষা দিতে আসতাম।
আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে........
এরপর থেইক্কা যেই কোন বন্ধু দাঁত কেলাইতে কেলাইতে কইত – “ওই ঠোলার পোলা”, আমিও নগদে রিপ্লাই মাইরা দিতাম "হুদা ঠোলা কইলে অয় না ???"
-------------------------------------------------------------------------
(লেখাটি কারো ব্যাক্তিগত অনুভুতিতে ঘুতাইলে তারা একটু সইরা বসেন। কাউকে আঘাত করা আমার উদ্দেশ্য নহে। আর আমার জানের পুলিশ আঙ্কেলদের কাছে আমি সারা জীবন কৃতজ্ঞ। এর কোন শেষ নাই। )
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১২ সকাল ৭:৩৭