আমার বিশ্বাস হতে চায় না!
পুরুষ!
তোমার পূর্বপুরুষ দেশটাকে স্বাধীন করলো।
তোমারই রবীন্দ্রনাথ লিখে গেলেন-
‘’নয়নের দৃষ্টি হতে ঘুচবে কালো, যেখানে পড়বে সেথায় দেখবে আলো’’
নজরুল তোমার, জীবনানন্দ তোমার।
তুমিই জাহানারা ইমাম, রোকেয়া সাখাওয়াত।
এখনো তো তোমারই বাবা দিনভর কাজ করে চালডাল নিয়ে বাড়ি ফেরেন।
ভাইটি আহ্লাদ করে- আপা, একশো টাকা দে তো।
বন্ধু নোট লিখে দিয়েছে কতবার!
রোজ রোজ গোলাপ বয়ে প্রেম নিবেদন করেছে প্রেমিকের হাত।
অচেনা লোক সেদিন তোমার ভারী সব ব্যাগ বয়ে রাস্তা পার করে দিল।
তোমার হারিয়ে যাওয়া সার্টিফিকেট ঠিকানায় পৌঁছে দিয়ে গেল নাম না জানা যুবক।
বাসে সিট ছেড়ে তোমাকে বসতে দিয়েছে সহযাত্রী।
তবুও কেন এমন হচ্ছে?
আমার বিশ্বাসই হতে চায় না।
যাকে বন্ধু বললে সে কেন বুকে হাত দিয়ে বসবে?
কেন চেনা প্রেমিক জোর করে তোমাতে প্রবেশ করবে?
কেন শিক্ষকের মুঠোফোনে বিধ্বস্ত তোমার নগ্ন ছবি?
কেন পাবলিক বাসে লোকগুলো ভাববে তোমার একটা জীবন গেলে কিছু এসে যায় না?
রাস্তার অচেনা লোকটা কেন তোমার নিতম্বে আলগোছে চাপ দিয়ে চলে যাবে?
কেন মোড়ের দোকানি তোমাকে বলবে ‘ইশ! কি মাল!’
তুমি তিন বছরের শিশুকন্যা কেন পুরষ দেখে ভয় পাবে?
আট মাসের শিশু তুমি, তোমার পায়ুপথে ক্ষত কেন?
ব্লেডে কাঁটা যোনীতে কেন পোকা বাসা বাঁধবে?
তুমি বাড়ি ফিরবার পথে কেন এতো ভালুকের ভয়?
কেন তুমি প্রথমদিন স্কুলে গিয়ে বাড়ি ফিরতে পারোনি?
কেন ওদের খাটের নিচে তোমার লাশ?
ধানের সবুজ ক্ষেতে রক্তমাখা লাল এ কোন তুমি?
সেই তো -পুরুষ!
আমার বিশ্বাস হতেই চায় না।
এখনো বেহায়ার মতো সুন্দর খুঁজি।
এখনো বেহায়ার মতো খুঁজি নিরাপদ।
এখনো বেহায়া হয়ে বলি – স্বপ্ন দেখি!
একদিন দেশটা তোমার হোক।
হালাল করে দিও সমস্ত ব্রোদেল।
যার হাত তোমার অসম্মতিতে বুকে নিতম্বে গেছে, যে প্রেম কিংবা পদের অধিকারে তোমার অসম্মতিতে তোমার ভেতর অসভ্যের মতো প্রবেশ করেছে, যার দৃষ্টির লাম্পট্য তোমার গায়ে কাঁটা ধরিয়ে দেয়, যে তোমার মুখ চেপে পড়ার টেবিল থেকে নিয়ে গেছে বিছানায়, সে পুরুষ নির্দ্বিধায় নিশ্চিন্তে ব্রোদেলে যাক। তাদের সংবর্ধনা দিয়ে গণিকালয়ের শয়নকক্ষে পৌঁছে দিও।
রুপাজীবিদের দিও যোদ্ধার সম্মান। ওরা মাথা উঁচু করে বাঁচুক।
ওরাই এই বিকারগ্রস্তদের আটকে রাখবে বিছানায়।
রুপাজীবিরাই ঝরিয়ে নষ্ট করে দেবে বিকারগ্রস্ত বীর্য। এদেশে আর কখনো নতুন কোনো বিকারগ্রস্ত জন্মাবেনা।
আর কখনো কেউ তোমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তোমাকে ছিঁড়েখুঁড়ে ভেঙেচুরে দিতে পারবেনা। মানুষের সম্মান নিয়ে তুমি নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে পথ চলবে। তোমার ডায়েরীর পাতায় সব সুখের গল্প লেখা থাকবে। তুমি আর কোনদিন অপমানে কাঁদবে না।
এটা আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়।
বাস্তব আর স্বপ্নের প্রভেদ এখানেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৬