somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কত কথা নাকি কথকতা

০৪ ঠা মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“এটা কেমন সমাজ যেখানে প্রকাশ্যে মুত্র-ত্যাগ করা যায় কিন্তু প্রকাশ্যে হাত ধরে হাঁটলে দোষ হয়ে যায়? ”

হুমায়ুন আজাদ স্যার সবসময় একটা কথা বলতেন। একেক সময় একেক ভাবে। কিন্তু সারমর্ম একই থাকত। আর তা হল বাঙালি সমাজের ভণ্ডামি। একেক জন একেক রকম হতে পারি আমরা বাঙালি হিসেবে কিন্তু ভণ্ডামি আমাদের ৯৯% এর মধ্যেই আছে। কম বা বেশী।
নিজে প্রেম করতে সমস্যা দেখিনা কিন্তু আমার ছোট বোন প্রেম করতে গেলে সেই ছেলেকে মার দেয়ার জন্য পাগল হয়ে থাকি। আমি যেখানে মার দিতে চাই সেখানে আমার প্রেমিকার কোন ভাই একই আচরন করতে চাইলে বলি পারিবারিক শিক্ষার অভাব।
নিজে মোড়ের দোকানে বসে ধোঁয়া টানলে নিজেকে মহারাজ ভাবি। বড় কাউকে দেখিয়ে সিগারেট টা লুকাতে বললে বলি “আরে এসব বুড়াগো বেইল আছে। তাছাড়া আমরা কি বড় হই নাই” । আর এলাকার কোন ছোট ভাইকে একই কাজ করা অবস্থায় দেখলে বলি ছেলে খারাপ হয়ে যাচ্ছে। গিয়ে একটু ঝেড়ে দিতেও পিছপা হইনা।
যে হুজুর জুম্মার নামাজে জালিমের বিচার চেয়ে কান্নাকাটি করে সেই আবার এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসীর মিলাদে সন্ধ্যাবেলায় বিরিয়ানি খেয়ে, কিছু টাকা বকশিশ নিয়ে সন্ত্রাসী ভাইয়ের আরও উন্নতির দোয়া করে।
সানি লিওনিকে গালি দেই আর রাতে বউ এর সাথে সানি আফা ফ্যান্টাসি করি। মেয়েকে থ্রি পিস কিনে দেই সানি লিওনি নামের। আর অবিবাহিতরা তো বদ্ধ রুমে তার শৈল্পিক সিনেমা দেখে উচ্চ-রক্তচাপে ভোগে। কিন্তু দিনের আলোয় গালি দিতে সবাই পছন্দ করি।
নিজেরাই ভোট দিয়ে নেতা বানাই আবার নিজেরাই চা-স্টলে বসে গালি দেই। কথায় আছেনা –“অসৎ লোকের নেতারা অসৎ ই হয়।” আমরা তো সৎ (!!!! আসলে হবে অপেক্ষাকৃত কম অসৎ) প্রার্থীদের দিকে ঘুরেও তাকাই না।
আমাদের ভণ্ডামির সবচেয়ে বড় প্রমাণ আমরা ধর্ষণ কমাতে মেয়েদের পোষাককে টেনে আনি বারবার। তাদের সাজগোজ আর রূপচর্চাকে দোষ দেই। তাদের যৌবন দেখানোর কথা তুলে আনি। যেখানে কিনা ময়লা পোশাক পড়া নয় বছরের কাজের মেয়েকেও (যৌবন!!!) ছাড়িনা। -_-
নারীবাদীরা খুশি হয়ে গেছেন হয়ত! আমার জীবনে যে কজন নারীবাদী পুরুষ দেখেছি তারা শুধু সুযোগের(!!!) ব্যাপ্তি বাড়াতেই নারীবাদী। আর মহিলা অধিকারের সৈনিকরা তো শাশুরিকে বৃদ্ধাশ্রম পাঠাতে আর বাসার সেই ৯ বছরের কাজের মেয়েকে ক্ষুধার কারণে অর্ধেক রুটি চুরি করে খাওয়ার দোষে মৃদু(!!) শারীরিক নির্যাতন করতে ব্যাস্ত।
প্রতিবেশী ঘুষ খেয়ে কলাগাছ হচ্ছে দেখে গা জ্বলে? পাড়ায় তাকে নিয়ে তার অসততা নিয়ে কথা বলেন সবসময়? মেয়ের বিয়ের সময় তো আবার পাত্র বাড়তি আয় দেখেই খোঁজেন। ;) আর ছেলেকে দেখতে চান সুযোগ আছে এমন চাকরিতে।
“সুযোগ” কথাটা তো বেশ কয়েক বার বললাম। আমরা বাঙালি আসলেই সুযোগের অভাবে সাধু, সেজদাধারি।
একটা গল্প বলি যা আমাদের সাথে যায়।
এক লোক একটা কথা বলা টিয়া পাখি কিনে বাসায় ফিরল। বাসায় এসে দেখে পাখি শুধু গালিগালাজ করে। একদিন তার শ্বশুর বাসার দরজায় আসতেই পাখি বলল “ওই হারামজাদা তোর এইখানে আসার কি দরকার? যা ভাগ খানকির পোলা।” শ্বশুর ভাবল এসব মনে হয় জামাই এর শিখানো। সে মন খারাপ করে চলে গেল। বউ তো রেগে ফায়ার। বউ এর ঝাড়ি খেয়ে লোকটা মনের দুঃখে বাজারে গেল চা- বিড়ি খেতে। গিয়ে বন্ধুর সাথে দেখা। বন্ধু মন খারাপের কারণ জানতে চাইল আর লোকটাও সব খুলে বলল। বন্ধু তখন বলল, “কি কস! আমার টিয়া তো সারাদিন সেজদায় পইড়া থাকে আর তসবি গুনে। এক কাজ কর আমার টিয়ারে নিয়া তোর টিয়ার কাছে রাখ তাও যদি তোর পাখিটা কিছুটা ভদ্র হয় দেখে দেখে।”
লোকটা তাই করল। নতুন টিয়া দেখে তো বদ পাখির সেই গালি গালাজ।
“ওই শুওরের বাচ্চা! ভেক ধরছস? হারামজাদা, খাকির পোলা, বাইঞ্চত........................”
তাও বন্ধুর টিয়া সেজদা ছেড়ে ওঠেনা। এভাবে সারাদিন সারারাত গেল। বদ টিয়া ও ক্লান্ত।
পরের দিন সকালে উঠেই লোকটার টিয়া নতুন টিয়া কে আবার গালি দেয়া শুরু করল।
“ওই মাদারচোত, কুত্তা, শাউয়া মারানি, হাউয়ার পোলা........................ ...। ওই হারামি কথা কস না ক্যান? আয় তোর পুটকিডা মাইরা দেই।”
এবার বন্ধুর টিয়া সেজদা ছেড়ে বলে উঠল, “আলহামদুলিল্লাহ্‌ ! এতদিনে দোয়াডা কবুল হইছে। ;)
আমরা এমন ই । ;)

লিখলে তো কত কিছুই লিখা যায়। লাভ কি? আপনিও বদলাবেন না আমিও বদলাবো না। তাই আসেন আমরা আমাদের মুখোশ নিয়েই বেঁচে থাকি ধুকেধুকে। কি হবে সমাজ পরিবর্তন করে। সমাজ পরিবর্তনের জন্য তো পাশের বাড়ি আছেই। আমরা তো সেই ব্রিটিশ কাল থেকেই চাই যে ক্ষুদিরাম হোক আর মাস্টারদা ই হোক তা যেন পাশের বাড়িতে জন্মায়। তাই না?

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৬
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×