somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

তাহলে কী হচ্ছে!

২৮ শে মে, ২০১০ সকাল ৭:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তাহলে কী হচ্ছে!
ফকির ইলিয়াস
=======================================
বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে সংশয় ক্রমেই বাড়ছে। আর তা বাড়িয়ে দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিকরা। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক আমলা ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে এক মতবিনিময় সভায় বলেছেন, বাংলাদেশের মতো মুসলিম অধ্যুষিত দেশে একাত্তরের ঘাতক দালাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সহজ কাজ নয়। তিনি বলেছেন, দেশের মাত্র ৩৫ শতাংশ মানুষ রাজনীতিকদের বিশ্বাস করে। রাজনীতিকদের অনুসরণ করে। বাকি ৬৫ শতাংশ মানুষ মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষক এবং সমাজের অন্য ধর্মীয় নেতাদের অনুসরণ করে চলে। তিনি আরও বলেছেন, এমন একটি দেশে ধর্মভিত্তিক একটি রাজনৈতিক দলের ব্যানারে অবস্থান করে যারা একাত্তরে মানবতাবিরোধী কাজ করেছে তাদের বিচার করা খুব দুরূহ কাজ। এছাড়াও সবার বিচার একসঙ্গে করা যাবে না। আমরা যতই বলি, বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে, বাস্তবতা তার উল্টো। প্রক্রিয়াগত কারণে এর বিচার বিলম্বিত হবে। তিনি বলেছেন, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ করে আমার অভিজ্ঞতা হয়েছে। প্রবাসেও বেশিরভাগ বাঙালি বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক। আমাদের সমর্থক যারা আছেন তারা ৫-৭ ভাগে বিভক্ত।
আওয়ামী লীগের এ নেতা সিডনিতে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা ঢাকার জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়েছে। এবং তার এ বক্তব্যটি আলোড়ন তুলেছে দেশে-বিদেশে। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে কি বর্তমান সরকার মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার থেকে ক্রমে সরে যাওয়ার পথ খুঁজছে? তারা কৌশলে গুরুত্বহীন করে দিতে চাইছে তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার?
ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর দাপটশালী আমলা ছিলেন। স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের 'খালকাটা প্রকল্প' নিয়ে একটি বইও লিখেছিলেন। তার সে বইটি 'নন্দিত' এবং 'নিন্দিত' দুটোই হয়েছিল। সেই মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নেতৃত্বেই 'জনতার মঞ্চ' হয়েছিল বাংলাদেশে। সরকারি আমলাদের সরাসরি রাষ্ট্রপক্ষের বিরুদ্ধাচারণ করার বিধিনিষেধ থাকলেও সে কাজটি সে সময় হয়েছিল। তারা খালেদা জিয়ার নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিলেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতে ক্ষমতায় আসার পর ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে প্রতিমন্ত্রীর পদ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। এটা ছিল তার প্রাপ্য পুরস্কার।
একজন মন্ত্রী হিসেবে তিনি কতটা সার্থক ছিলেন, তাও ছিল জনগণের জানা। ওয়ান-ইলেভেনের পর যে ক'জন রাজনীতিক কারারুদ্ধ হন, তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম। ড. আলমগীরের বিচারও অনুষ্ঠিত হয়। তার সাজাও হয়।
২০০৯-এর নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। তারপর ক্রমেই তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো খারিজ হতে থাকে। লাঘব হয়ে যায় তার দন্ডও। এখন বলা হয়ে থাকে, তিনি আওয়ামী লীগের অন্যতম নীতি-নির্ধারক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাও হতে পারেন যে কোন সময়। তেমন একটি গুঞ্জনও রাজনৈতিক অঙ্গনে রয়েছে। সবদিক বিবেচনায় তিনি রাষ্ট্রের রাজনীতিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, তা বলা যায় নিঃসন্দেহে।
কিন্তু কথা হচ্ছে সেই গুরুত্বপূর্ণ নেতা কি সব বলছেন? তার ভাষ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ কি তবে মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষকদের অনুসরণ করে? যদি তাই করে থাকে তবে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা মহাজোট পেল কিভাবে?
আমি খুব স্পষ্ট বলে দিতে পারি, '৫২-এর ভাষা আন্দোলন, '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, '৭০-এর নির্বাচন, '৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, '৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন কোনটাতেই কোন মৌলবাদী শক্তির নেতৃত্ব ছিল না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে বাংলার মুক্তিকামী মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আর বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলার আপামর মানুষের সৌহার্দ্য, অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূর্ত প্রতীক।
ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের কথার জবাব আরও দেয়া যায়। তিনি বলেছেন, বিদেশের অভিবাসী বাঙালিদের সিংহভাগ নাকি বিএনপি-জামায়াতের আদর্শে বিশ্বাস করেন। কথাটা সঠিক নয়। বর্ষীয়ান এ রাজনীতিকের জানা উচিত, মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালিদের অবদান ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। তিনি যখন স্বৈরাচারী জিয়া-এরশাদের রাষ্ট্রশাসনে আমলা ছিলেন তখন এ প্রবাসী বাঙালিরা ইউরোপ-আমেরিকা-কানাডার রাজপথে, জাতিসংঘ চত্বরে মিছিল-মিটিং করেছেন দেশে গণতন্ত্র কায়েমের লক্ষ্যে। এই সেই প্রবাসীরা যারা শহীদ জননী জাহানারা ইমামের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঐতিহাসিক গণআদালত পরিলক্ষণ, পর্যবেক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে খ্যাতনামা আইনজীবী মি. মাইকেল কিটিংসকে ঢাকায় পাঠিয়েছিলেন।
প্রবাসী বাঙালির এমন শত শত গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের লিখিত ঘটনাবলি বিশ্ব বাঙালির অজানা নয়। তারপরও ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর তা না জানার ভান করছেন কেন? নাকি তিনি সরকারের পক্ষ থেকে শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চাইছেন?
সিডনির সে সমাবেশে ড. আলমগীর আরও বলেছেন, বাংলাদেশের সরকারকে নাকি তাদের 'বাইরের প্রভু'দের কথা মেনে চলতে হয়। তিনি বলেছেন, জার্মানি নাকি যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদন্ডের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অথচ আমরা জানি, জার্মানিতে নাৎসিদের বিচার হচ্ছে এখনও। বিশ্বজুড়ে খোঁজা হচ্ছে নাৎসিদের।
বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সর্বশেষ অবস্থা কি হবে তা দেখার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে মুখোশধারীদের সংখ্যা বাড়ছে। কথায় এবং কাজের অমিল বাড়ছে দিন দিন। আর তারা বেশি ব্যস্ত তাদের প্রভুদের মন রক্ষা করতে। ঘটনা যদি সেটাই হয় তবে বোঝা যাচ্ছে, ২০১০ সালের আধুনিক দিনবদলের সেস্নাগানের কালেও বাংলাদেশের মানুষ এখনও পরাধীন। একটি স্বাধীন দেশের মানুষ এভাবে পরাশক্তির কাছে নতজানু থাকবে কেন।
আমরা খুব গভীরভাবে লক্ষ্য করছি, বর্তমান মহাজোট সরকারের মন্ত্রী এবং উপদেষ্টাদের মাঝে একটি স্নায়ুযুদ্ধ লেগেই আছে। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টার মাঝে মতপার্থক্যের দ্বন্দ্ব এর সর্বশেষ উদাহরণ। এমন অসঙ্গতি সরকারের ভেতরে চলতে পারে না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, যেসব মন্ত্রী পূর্ণ পারফরমেন্স দেখাতে পারবেন না, তাদের সরে যেতে হবে। নতুন মুখ দেখা যাবে মন্ত্রিপরিষদে। না, এর বাস্তবতা আমরা দেখছি না। সব মন্ত্রী নিজ নিজ দফতরে কৃতিত্ব তো দূরের কথা, ঠিকমতো চালাতেও পারছেন না। তাদের অব্যাহতি দিতে সরকারের হাত কাঁপছে কেন? যারা রাষ্ট্রশক্তির পরিচালক তাদের কথাবার্তায় পরিপক্বতা না থাকলে প্রজন্ম বিভ্রান্ত হয়। আর বিরোধীরা মাঠে নামে সেটাকে পুঁজি করে।
নিউইয়র্ক, ২৫ মে ২০১০
----------------------------------------------------------------------
দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ২৮ মে ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত

ছবি- জেন ওডেন
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×