তাহলে কী হচ্ছে!
ফকির ইলিয়াস
=======================================
বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে সংশয় ক্রমেই বাড়ছে। আর তা বাড়িয়ে দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিকরা। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক আমলা ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে এক মতবিনিময় সভায় বলেছেন, বাংলাদেশের মতো মুসলিম অধ্যুষিত দেশে একাত্তরের ঘাতক দালাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সহজ কাজ নয়। তিনি বলেছেন, দেশের মাত্র ৩৫ শতাংশ মানুষ রাজনীতিকদের বিশ্বাস করে। রাজনীতিকদের অনুসরণ করে। বাকি ৬৫ শতাংশ মানুষ মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষক এবং সমাজের অন্য ধর্মীয় নেতাদের অনুসরণ করে চলে। তিনি আরও বলেছেন, এমন একটি দেশে ধর্মভিত্তিক একটি রাজনৈতিক দলের ব্যানারে অবস্থান করে যারা একাত্তরে মানবতাবিরোধী কাজ করেছে তাদের বিচার করা খুব দুরূহ কাজ। এছাড়াও সবার বিচার একসঙ্গে করা যাবে না। আমরা যতই বলি, বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে, বাস্তবতা তার উল্টো। প্রক্রিয়াগত কারণে এর বিচার বিলম্বিত হবে। তিনি বলেছেন, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ করে আমার অভিজ্ঞতা হয়েছে। প্রবাসেও বেশিরভাগ বাঙালি বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক। আমাদের সমর্থক যারা আছেন তারা ৫-৭ ভাগে বিভক্ত।
আওয়ামী লীগের এ নেতা সিডনিতে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা ঢাকার জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়েছে। এবং তার এ বক্তব্যটি আলোড়ন তুলেছে দেশে-বিদেশে। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে কি বর্তমান সরকার মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার থেকে ক্রমে সরে যাওয়ার পথ খুঁজছে? তারা কৌশলে গুরুত্বহীন করে দিতে চাইছে তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার?
ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর দাপটশালী আমলা ছিলেন। স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের 'খালকাটা প্রকল্প' নিয়ে একটি বইও লিখেছিলেন। তার সে বইটি 'নন্দিত' এবং 'নিন্দিত' দুটোই হয়েছিল। সেই মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নেতৃত্বেই 'জনতার মঞ্চ' হয়েছিল বাংলাদেশে। সরকারি আমলাদের সরাসরি রাষ্ট্রপক্ষের বিরুদ্ধাচারণ করার বিধিনিষেধ থাকলেও সে কাজটি সে সময় হয়েছিল। তারা খালেদা জিয়ার নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিলেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতে ক্ষমতায় আসার পর ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে প্রতিমন্ত্রীর পদ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। এটা ছিল তার প্রাপ্য পুরস্কার।
একজন মন্ত্রী হিসেবে তিনি কতটা সার্থক ছিলেন, তাও ছিল জনগণের জানা। ওয়ান-ইলেভেনের পর যে ক'জন রাজনীতিক কারারুদ্ধ হন, তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম। ড. আলমগীরের বিচারও অনুষ্ঠিত হয়। তার সাজাও হয়।
২০০৯-এর নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। তারপর ক্রমেই তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো খারিজ হতে থাকে। লাঘব হয়ে যায় তার দন্ডও। এখন বলা হয়ে থাকে, তিনি আওয়ামী লীগের অন্যতম নীতি-নির্ধারক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাও হতে পারেন যে কোন সময়। তেমন একটি গুঞ্জনও রাজনৈতিক অঙ্গনে রয়েছে। সবদিক বিবেচনায় তিনি রাষ্ট্রের রাজনীতিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, তা বলা যায় নিঃসন্দেহে।
কিন্তু কথা হচ্ছে সেই গুরুত্বপূর্ণ নেতা কি সব বলছেন? তার ভাষ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ কি তবে মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষকদের অনুসরণ করে? যদি তাই করে থাকে তবে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা মহাজোট পেল কিভাবে?
আমি খুব স্পষ্ট বলে দিতে পারি, '৫২-এর ভাষা আন্দোলন, '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, '৭০-এর নির্বাচন, '৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, '৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন কোনটাতেই কোন মৌলবাদী শক্তির নেতৃত্ব ছিল না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে বাংলার মুক্তিকামী মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আর বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলার আপামর মানুষের সৌহার্দ্য, অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূর্ত প্রতীক।
ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের কথার জবাব আরও দেয়া যায়। তিনি বলেছেন, বিদেশের অভিবাসী বাঙালিদের সিংহভাগ নাকি বিএনপি-জামায়াতের আদর্শে বিশ্বাস করেন। কথাটা সঠিক নয়। বর্ষীয়ান এ রাজনীতিকের জানা উচিত, মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালিদের অবদান ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। তিনি যখন স্বৈরাচারী জিয়া-এরশাদের রাষ্ট্রশাসনে আমলা ছিলেন তখন এ প্রবাসী বাঙালিরা ইউরোপ-আমেরিকা-কানাডার রাজপথে, জাতিসংঘ চত্বরে মিছিল-মিটিং করেছেন দেশে গণতন্ত্র কায়েমের লক্ষ্যে। এই সেই প্রবাসীরা যারা শহীদ জননী জাহানারা ইমামের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঐতিহাসিক গণআদালত পরিলক্ষণ, পর্যবেক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে খ্যাতনামা আইনজীবী মি. মাইকেল কিটিংসকে ঢাকায় পাঠিয়েছিলেন।
প্রবাসী বাঙালির এমন শত শত গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের লিখিত ঘটনাবলি বিশ্ব বাঙালির অজানা নয়। তারপরও ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর তা না জানার ভান করছেন কেন? নাকি তিনি সরকারের পক্ষ থেকে শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চাইছেন?
সিডনির সে সমাবেশে ড. আলমগীর আরও বলেছেন, বাংলাদেশের সরকারকে নাকি তাদের 'বাইরের প্রভু'দের কথা মেনে চলতে হয়। তিনি বলেছেন, জার্মানি নাকি যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদন্ডের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অথচ আমরা জানি, জার্মানিতে নাৎসিদের বিচার হচ্ছে এখনও। বিশ্বজুড়ে খোঁজা হচ্ছে নাৎসিদের।
বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সর্বশেষ অবস্থা কি হবে তা দেখার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে মুখোশধারীদের সংখ্যা বাড়ছে। কথায় এবং কাজের অমিল বাড়ছে দিন দিন। আর তারা বেশি ব্যস্ত তাদের প্রভুদের মন রক্ষা করতে। ঘটনা যদি সেটাই হয় তবে বোঝা যাচ্ছে, ২০১০ সালের আধুনিক দিনবদলের সেস্নাগানের কালেও বাংলাদেশের মানুষ এখনও পরাধীন। একটি স্বাধীন দেশের মানুষ এভাবে পরাশক্তির কাছে নতজানু থাকবে কেন।
আমরা খুব গভীরভাবে লক্ষ্য করছি, বর্তমান মহাজোট সরকারের মন্ত্রী এবং উপদেষ্টাদের মাঝে একটি স্নায়ুযুদ্ধ লেগেই আছে। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টার মাঝে মতপার্থক্যের দ্বন্দ্ব এর সর্বশেষ উদাহরণ। এমন অসঙ্গতি সরকারের ভেতরে চলতে পারে না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, যেসব মন্ত্রী পূর্ণ পারফরমেন্স দেখাতে পারবেন না, তাদের সরে যেতে হবে। নতুন মুখ দেখা যাবে মন্ত্রিপরিষদে। না, এর বাস্তবতা আমরা দেখছি না। সব মন্ত্রী নিজ নিজ দফতরে কৃতিত্ব তো দূরের কথা, ঠিকমতো চালাতেও পারছেন না। তাদের অব্যাহতি দিতে সরকারের হাত কাঁপছে কেন? যারা রাষ্ট্রশক্তির পরিচালক তাদের কথাবার্তায় পরিপক্বতা না থাকলে প্রজন্ম বিভ্রান্ত হয়। আর বিরোধীরা মাঠে নামে সেটাকে পুঁজি করে।
নিউইয়র্ক, ২৫ মে ২০১০
----------------------------------------------------------------------
দৈনিক সংবাদ । ঢাকা । ২৮ মে ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত
ছবি- জেন ওডেন
আইনের ফাঁকফোকর-০৩
যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি
(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।
ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন
সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।
সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা
সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন