somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একদিন ড্রাগন পাহাড়ে

২২ শে এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৫:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জার্মানির বন শহর থেকে ক্যোয়িনিগ্সভিন্টার প্রায় বার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ সাত পাহাড়ে ঘেরা অপরূপ সুন্দর এই গ্রাম৷ গ্রামের পাশেই রাইন নদী বয়ে চলেছে৷ রাইনের জলে মিশে আছে হাজার বছরের ইতিহাস

ক্যোয়িনিগ্সভিন্টার গ্রামের একপাশে সাতপাহাড়ের উপর একটা ভাঙ্গা প্রাসাদ কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ সাতপাহাড়ের একটি পাহাড়ের নাম ‘দ্রাখেনফেল্স' বা ড্রাগন পাহাড়ে'৷ সাত পাহাড় নাম হলেও এখানে পাহাড় আছে ৪০টিরও বেশি৷‘দ্রাখেনফেল্স' বা ড্রাগনের পাহাড় নামটি কেন? এই উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানতে পারলাম, ‘দ্রাখেনফেল্স'-এর গুহায় একটি ড্রাগন বাস করতো৷ চারিদিকে অসাধারণ সবুজ৷ সিগফ্রিড নামে একজন লোককাহিনীর নায়ক সেই ড্রাগনটিকে মেরে ফেলে৷ তখন থেকে এই পাহাড়টির নাম ‘দ্রাখেনফেল্স'৷ ক্যোয়িনিগ্সভিন্টার গ্রামের দাদুরা এখনো খুব মজা করে এই গল্পটি বলেন তার নাতি-পুতিদের।

শুরু হলো আমার অভিযান

আমার ঘর থেকে এই পাহাড়ের চূড়াটি দেখা যায়৷ কি যে সবুজ সুন্দর পাহাড়, মন জুড়িয়ে যায়৷ আমি ভাবি কবে যাবো ঐ মেঘপাহাড়ের কোলে! কিভাবে দেখবো এই সাত পাহাড়, সারাক্ষণ শুধু এই কথাই ভাবছি৷ একদিন সাহস করে পৌঁছে যাই সাত পাহাড়ের কাছে৷

সেদিন বিকেল৷ হালকা হাওয়া৷ রোদের ঝিকিমিকি রাইন নদীতে৷ উঁচু পাহাড় আমাকে ডাকছে৷ আমি যাচ্ছি সেই পাহাড়ে৷ কিন্তু হেটে কি উঠতে পারবো? তাহলে যেতে হবে ট্রেনে৷ ড্রাগন পাহাড়ের কাছে ১২৬ বছরের পুরোনো রেল স্টেশন রয়েছে৷ এটি জার্মানির নর্থ-রাইন ওয়েষ্টফালিয়ার সবচেয়ে পুরানো ট্রেন-স্টেশন৷ পাহাড়ে ওঠার জন্য এই বিশেষ ট্রেনটি চালু করা হয় ১৮৮৩ সালে৷ ট্রেন লাইনটির দৈর্ঘ্য ১.৫ কিলোমিটার৷ বর্তমানে এটি বিদ্যুত চালিত ট্রেন৷ জানতে পারি ১৯৫৮ সালে এই ট্রেনটির ইঞ্জিনের বাষ্প শেষ হয়ে ১৭জন মানুষ মারা গিয়েছিল৷ ঐ ষ্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে পৌঁছে গেলাম দ্রাখেনফেল্সের চূড়ায়৷ ঠিক চূড়ায় বললে ভুল হবে৷ বর্তমানে এটি বিদ্যুত চালিত ট্রেন৷চূড়া থেকে একটু নীচে, ট্রেনটির শেষ স্টেশনে৷ এরপর পাহাড়ী পথ ধরে উঠে যাই চূড়ায়৷


এ এক অন্যরকম সবুজ

কোথায় এলাম আমি! চারিদিকে অসাধারণ সবুজ৷ অপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্য৷ আলোর চেয়েও উজ্জ্বল আলো ছড়িয়ে পড়ছে চতুর্দিকে৷ অদ্ভুত এক শীতল বাতাস ভাসিয়ে নিয়ে গেল পাহাড়ে উঠার সমস্ত ক্লান্তি৷ দূরের রাইন নদীতে অসংখ্য জাহাজ ভাসছে৷ চূড়ায় একটি স্থান আছে যার চারদিকে টেলিস্কোপ বসানো৷ টেলিস্কোপে এক ইউরো ফেললে নাকি দূর-দূরান্তের দৃশ্য চোখের সামনে চলে আসে৷ শুনলাম কোলন ডোম নাকি দেখা যায় সেখান থেকে৷ লোভ সামলাতে পারলাম না৷ দূরবীনে এক ইউরো ঢেলে দিলাম৷ দূরবীনে চোখ লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পেলাম কোলন ডোম৷ যেন কিছু দূর হেটে গেলেই সেখানে যাওয়া যাবে৷ দেখলাম, দূরের ছোট ছোট জাহাজগুলো আসলে কত বড়৷ শুধু রঙ, অবিরল অপার্থিব রঙয়ের ঝর্ণায় যেন বারে বারে রঙিন স্নানে স্নাত হচ্ছে ড্রাগনের পাহাড়৷ ড্রাগন পাহাড়ের উচ্চতা ৩২১ মিটার৷

পায়ে হাটা পথ...

এরপর পায়ে হেটে নামতে শুরু করি৷ নেমে আসার সময় চোখ পড়ে পাহাড়টির মৌমাছির বাগানে৷ সারি সাজানো মৌমাছির বাসা৷ সেখান থেকে বিশুদ্ধ মধু সংগ্রহ করা হয়৷ এরপর কিছুদূর চলার পর সেই বিখ্যাত প্রাসাদ৷ ২০০৩ সালে প্রাসাদটিকে পুনর্নির্মাণ করা হয়৷ প্রাসাদটি বর্তমানে একটি জাদুঘর৷ যেখানে আছে অনেক প্রাচীন ইতিহাস৷ জাদুঘরটিতে রাইন নদীকে ঘিরে যেসব কল্পকাহিনী আছে তাও সংরক্ষণ করা হয়েছে৷ সংরক্ষণ করা হয়েছে, জার্মান বীরদের লোকগাথা৷


পাহাড়ের মানুষ, মানুষের পাহাড়

পাহাড়ের ওপর কিছু সৌখিন মানুষ বাড়ি তৈরি করেছেন৷ পাহাড়ী পথে আছে অনেক রেষ্টুরেন্ট৷ যে কেউ বিশ্রাম নিতে পারে সেখানে৷ তবে শর্ত হলো, সেখান থেকে কিছু খাবার বা পানীয় গ্রহণ করতে হবে৷ তবে পাহাড়ী পথের এধার ওধারে রয়েছে অনেক বসার চেয়ার৷ যেখানে বসে পাহাড়ের অদূরের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়৷

তাহলে বিদায়

এক সময় শেষ হয়ে যায় আমার চলার পথ৷ এবার ঘরে ফেরার পালা৷ বাড়ির পথ ধরি৷ জার্মান সাম্রাজ্য, প্রকৃতির রূপ ও রূপকথার এক নিত্য নতুন সংজ্ঞা মনের মধ্যে নিয়ে ‘দ্রাখেনফেল্স'কে বিদায় জানাই, আউফভিদারজেন, আবার দেখা হবে৷

ফারজানা কবীর খান
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×