somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জিহাদ করুন ভাল থাকুন ভাল রাখুন

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


“সব চেয়ে বড় জিহাদ, নফসের বিরুদ্ধে
জিহাদ।”
নফস!
কী এই নফস? এটা আমাদের মনের
ভিতরের মন।
যে কোন কাজ করতে গেলেই আমরা
আমাদের মনের ভিতরে নানান
আওয়াজ পাই। এটা করব কি করবনা, যাব
কি যাব না, খাব কি খাব না। এমন তাই
না? আমাদের মনের মাঝে আরেক মন
বসবাস করে। অনেকটা সুয়ো-রানী আর
দুয়ো-রানীর মত। মনের একটা অংশ
পজেটিভ কথা বলে, একটা অংশ
নেগেটিভ কথা বলে। আমরা এদের
ইসলামিক পরিভাষায় এভাবে বলি।
নফস আর রুহ। নফস আমাদের প্রবৃত্তির
দিকে টানে, আর রুহ ডাকে মহত্ত্ব আর
মানবিকতার দিকে, বিবেক বলি
যাকে। নফস আমাদের নিচতা, রুহ
আমাদের মহত্ত্ব ও মানবিকতা। কিন্তু
দুয়ের মাঝে এ কথোপকথনের পর প্রধান
ডিসিসন টা কিন্তু নেয় আমাদের
সত্ত্বা বা কন্সাস মাইন্ড বা আমাদের
ইচ্ছা শক্তি।
মশহুর এক হাদিস আছে, যা বর্তমানে
প্রায় অনেকের ই জানা, “সব চেয়ে বড়
জিহাদ হল, নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ।”
আমার আগে মনে হত, জিহাদ-ফি-
সাবিলিল্লাহ বা জান বিসর্জন দেয়া
ইসলামের পথে, এর থেকে বড় জিহাদ
আর কি হতে পারে!! আমার মনে হত,
এটা দুর্বলের হাতিয়ার। তারা তাদের
দুর্বলতাকে লুকিয়ে এ হদিসকে পেশ
করে, নয়ত এ হাদিস বিধর্মীদের ও এত
পছন্দ হওয়ার কথা না। কিন্তু না, আমার এ
ভুল ভেঙ্গেছে। ভেঙ্গেছে আর এক
হাদিস পড়ে। আমার ভিতর টা নাড়া
চাড়া দিয়ে গেছে সে হাদিস টি।
.
.
হাদিস টার একাংশের ভাবানুবাদ
অনেকটা এরকম,(৪৬৮৮ নং হাদিস টি)
কেয়ামতের দিন জাবাব দিহিতার
জন্য এমন একলোক কে দাঁড় করানো হবে।
যে হবেন শহীদ। খোদার কাছে সে
বলবে, ইয়া খোদা আমরা তোমার
কথায় তোমার দীনের জন্য জীবন উৎসর্গ
করেছি। এখন আমাদেরকে আমাদের
প্রতিদান দিন, খোদা বলবেনঃ “তুমি
মিথ্যা বলছ। তুমি বরং এ জন্যই যুদ্ধ
করেছিলে- যাতে লোকে তোমাকে
বলে তুমি বীর, তোমাকে বলে শহীদ,
তোমার জয় গাথা বলবে, দুনিয়ার বুকে
অমর অজেয় বীর হিসাবে খ্যাত হবে,
তোমরা যা চেয়েছিলে তা তোমরা
পেয়েছ। এখন তোমাদের জন্য রইল
জাহান্নাম।
কি ভয়ংকর! কি ভয়ংকর! পড়লাম এই
হাদীস টি বর্ণনা করতে গিয়ে
সাহাবারা মূর্ছা পর্যন্ত গেছেন। কারন
ব্যপারটা আসলেই কাপিয়ে দেয়ার
মত।
.
.
.
মনে পড়ে গেল বহুদিন আগে হযরত আলী
(রাঃ) নিয়ে পড়া একটা ঘটনা। ঘটনা
টা অনেকটা এরকম, জিহাদের ময়দান।
মুশরিক এক যোদ্ধা কাতার থেকে
বেরিয়ে এসে, মুসলিমদের মাঝে
কেউ আছে কি না তার সাথে লড়ার
সাহস রাখে, এই বলে হুংকার ছাড়ল।
আলী (রাঃ) তার সাথে দন্দ্ব যুদ্ধের
জন্য এগিয়ে গেলেন, প্রবল লড়াই হল।
শেষ মেশ হযরত আলী (রাঃ) তাকে
মাটিতে ফেলে দিলেন ও তার বুকে
চেপে বসলেন। এ বার শুধু কল্লা টা
বরাবর অসি চালানোর পালা, তবেই
জয়। সেই মুহুর্তে হঠাৎ ঐ মুশরিক যোদ্ধা
আলী (রাঃ) মুখে থুতু ছিটিয়ে দিলো
(সম্ভবত হেরে যাওয়া ও মরে যাওয়ার
পূর্ব মুহূর্তে, অক্ষম ক্রোধে)।
যুদ্ধ ময়দানের সকলে দেখতে পেল,
আলী (রাঃ) না মেরেই ফিরে
চলেছেন নিজ সেনা সহ-যোদ্ধাদের
দিকে, দু পক্ষই অবাক। এমন তো হয় না,
কোন আরব তো সাধারনত এভাবে
ছেড়ে আসে না পরযুদস্ত কে। দন্দ্ব যুদ্ধে
এ ঘটনা বিরল। আলীকে (রাঃ) সহ-
যোদ্ধারা সুধায়, কেন আলী, কেন?
কেন ছেড়ে এলে সেই কাফের মুশরিক
ইসলামের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারীকে?
আলী(রাঃ) জবাব দিলেন, আমি
নিজের জন্য কোন মানুষের জান নেই
নি, আমার এই জিহাদ, এই অস্ত্র ধারন শুধুই
আল্লাহর জন্য, আমাকে ময়দানে যখন ঐ
যোদ্ধা থুতু দিল, আচমকা এক অন্ধ ক্রোধ
আমাকে আচ্ছন্ন করে। আমি তাকে
মেরেই ফেলছিলাম, কিন্তু শেষ মুহুর্তে
নিজে কে সংবরণ করি, কারন তাকে
হত্যা করলে তা আমার নিজের
ক্রোধের জন্য হত্যা করা হত,
আল্লাহর জন্য নয়।
.
.
যুদ্ধের ময়দানে, চাইলে বীর হওয়ার
জন্য বাহাদুরি করতে পারেন, মীর-
জাফরের মত সটকে পরতে পারেন, শত্রু
থেকে দূরে পিছে পিছে থাকতে
পারেন কিম্বা পারেন, আল্লার জন্য
আল্লার সীপাহি হয়ে যুদ্ধ করতে।
ইচ্ছেতো আপনার অধীন করা হয়েছে।
.
.
.
সব থেকে বড় কথা হল মন, মনের ভিতরে
কি চলছে, তাই খোদার কাছে
সবচেয়ে বেশি মুল্যবান।
.
আমার মূল কথায় ফিরে আসি। নফস,এই
নফসকে বাধ্য করতে পারলেই সব হয়ে
যায় আমাদের মুসলিমদের। কিভাবে?
এভাবে, ধরুন- আপনার সামনে ছিনতাই
হচ্ছে, বা ডাকাতি হচ্ছে, দুর্বৃত্তরা
সকলেই সশস্ত্র, আপনার বিবেক বোধ
বলছে, এটা অন্যায় হচ্ছে, আপনার রুখে
দাড়ান উচিত, নফস বলছে, কি হবে
বাধা দিয়ে, শুধু শুধু জানটা যাবে,
কাজের কাজ তো কিছুই হবে না। ওরা
ওদের কাজ ঠিকই করে যাবে। এখন
আপনার সিদ্ধান্ত নেয়ার পালা,
আপনি চুপ থাকতে পারেন, বা
প্রতিবাদ করতে পারেন।
প্রতিবাদ করলে হয়ত আপনার জানটা
যেতে পারে,কিন্তু শেষ বিচারের
দিন, আপনি তো বলতে পারবেন, আমি
চেষ্টা করেছি, ছিনতাই শেষ হল কি
না হল, তা তো আপনাকে খোদা
জিজ্ঞাসা করবে না। জিজ্ঞাসা
করলে করতে পারে, অন্যায় দেখলে
রুখে দাড়ানোর শিক্ষা দেয়া
হয়েছিল তোমাকে, তুমি অন্যায়
দেখে কি করেছিলে?
জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে এমনি,
আপনি আমি, কিছুই হয়ত করতে পারবনা,
আমরা হিন্দী ফিল্ম এর কোন অতি
শক্তিধর মানব না, কোন নায়ক না, একাই
১০-২০ জন মেরে কাত করে ফেলার মত
কেউ না, কিন্তু আমরা তো মুসলমান,
আমরা তো সেই জাতি, যারা বলে,
শুনলাম এবং মেনে নিলাম, আমরা তো
সেই মহা-নবীর উম্মত যে শিখিয়েছেন,
আল্লাহ ছাড়া আর কারো সামনে না
মাথা নোয়াবে, না ভয় করবে।
আজ আমরা অনেকে অনেক শিক্ষিত
হয়েছি, অনেক কিছু বুঝি, অনেক কিছু
জানি, আজ এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে, ঘরে
বসে অনেক হাদীস অনেক কোরানের
ব্যাখ্যা পড়া যায়, আমাদের মাঝে
হয়ত এমন ও অনেকে আছেন, যারা
দূরবর্তী অনেক সাহাবা থেকেও
অনেক বেশী হাদীস জানেন।
নিঃসন্দেহে, অনেকে তাবেঈন
তাবে-তাবেঈন দের থেকে বেশী
হাদীস জানেন, কিন্তু কই আজ সেই
মুসলিম সমাজ। আজ নির্দিষ্ট বিষয়ের
হাদীস সব একত্রিত করা, কিন্তু হায়!
আমরা কত গাফেল, আমরা নিত্য দিন
হাদীস কোরআন পড়ি তো ঠিকই, কিন্তু
তা যেন হৃদয়ে স্থান করে নিতে
পারে না, আমরা যেন আজ ঐ রাসুলের
যুগের ইয়াহুদী জ্ঞান পাপী হয়ে
গেছি, যারা সব যেনেও চুপ করে
থাকে, নাম কা ওয়াস্তে ভাল কাজ
করতে বলে আর তারপর চুপ হয়ে যায়,
অপরাধকে এক প্রকার মৌন স্মমতি দেয়,
সামাজিক অপরাধ আজ আমাদের গা
সওয়া হয়ে গেছে, আজ মুসলিম কে
দেখে আর অপরাধিদের বুক কাপে না।
আমরা সকলেই জানি ইসলাম আমাদের
শিক্ষা দেয়, অপরাধ দেখলে তা
প্রতিরোধ করতে হবে হাত দিয়ে, যদি
সম্ভব না হয়, যদি অপারগ হই তবে, মুখ
দিয়ে যেন প্রতিরোধ করি, তাও যদি
না পারা যায়, তবে যেন মনে মনে
অপরাধটিকে অপরাধ বলে ধিক্কার
দেই, আর মনে মনে এ কাজ করা হল,
দুর্বলতম ঈমানের লক্ষন, যা আজ বিবেক
নামক বস্তুর গেঁড়াকলে পরে আমরা
মুসলমানরা করে থাকি। আজ এই দুর্বলতম
ঈমানই হয়েছে আমাদের পুঞ্জি।
হায়রে কপাল! হায়রে দুনিয়া!
জামানার দোষও তো দিতে পারি
না, কারন ইসলাম যে আমাদের সময়কে
দোষ দিতে বারন করে, খোদা যে
বলে দিয়েছেন, সময়কে দোষ দিও না,
আমিই সময়।
.
.
.
সব জামানা কঠিন ছিল, সব জামানায়
মানব নামক পরীক্ষাত্রিরাই পরীক্ষা
দিয়েছে, এখন আমরা দিচ্ছি,
ভাইয়েরা আমার নফসের সাথে
জিহাদ করুন, মানবতার ছায়া তলে
আসুন। ভন্ড সুশীল, আর লোক দেখান
ভদ্রতা কিছছু দিবে না, না দিবে
জান্নাত। নিজের নফসের বুদ্ধিদীপ্ত
গা বাঁচান কথা গুলো ঝেড়ে ফেলুন,
আপনার বিবেকের ঢাকটি শুনুন, আসুন
সত্যিকারের মুসলমান হই, ঈমান দীপ্ত হই,
চলুন জান্নাতের সুবাস নেই, একটু পা
বাড়াই, জান্নাতের দিকে।
ঐ দেখুন আপনার রব দয়ার পসরা
সাজিয়ে বসে আছে, ফেরেশতা
মুনকার আপনার ঈমানের ঝঙ্কার লিপি
বদ্ধ করার জন্য ব্যাতিব্যস্ত হয়ে আছে,
আসুন একটু চেষ্টা করি, আসুন মানবিক হই,
আসুন আজ মোরা সত্যি কারের মুসলিম
হই
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×