somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আনোয়ার কবিরঃ অসম্ভবকে জয় করা সাংবাদিক

১৬ ই জুলাই, ২০০৯ দুপুর ২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আশির দশকের শুরুর দিকে যখন আনোয়ার কবির প্রথম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা হত্যা নিয়ে কাজ শুরু করেন, তখন এটাকে সবাই স্রেফ পাগলামি বলেই ধরে নিয়েছিলো। কেউ কেউ এমনও বলেছিলো যে, আনোয়ারের এই পাগলামি পত্রিকার পাতায় কিছু রিপোর্ট আর ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সদস্যদের কিছু সাাৎকারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। সবার সব আশংকা ভুল প্রমান করে আনোয়ার কবির বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা হত্যা নিয়ে বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন, ঘন্টার পর ঘন্টা লেকচার দিয়েছেন এবং শেষ পর্যন্ত সাড়ে দশ ঘন্টার একটি প্রামাণ্যচিত্র বানিয়ে ছেড়েছেন। আনোয়ার কবির অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন, সাংবাদিকের আসনে বসেই দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী গোষ্ঠীটির ভেতরে ঘটে যাওয়া অন্যায় আর কলংকগুলো তুলে এনেছেন, এবং বুঝিয়ে দিয়েছেন যে সেনাবাহিনী সমালোচনার উর্দ্ধে কোনো সংস্থা নয়, সেনাসদস্যরাও সমালোচনার উর্দ্ধে নন।
আনোয়ার কবির এই প্রামাণ্যচিত্রটির কাজ শেষ করেছিলেন আরো বছর আড়াই আগেই। কাছের বেশকয়েকজনকে পুরো কাজটি দেখিয়েছেনও। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে মোড়ক উন্মোচন সম্ভব হয়নি নানা কারনে, নানা বাধায়। শোনা যায় যে, মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া না-কি এই ফিল্মটি দেখেছেন এবং আনোয়ার কবিরকে এই সত্য উন্মোচনের অপরাধে বিদেশী চর হিসেবে আখ্যায়িত। হায় আনোয়ার কবির, আপনার এই ১৯ বছরের শ্রম খুনীদের দাম্ভিকতা বুঝি এক বিন্দুও কমাতে পারেনি !
যাই হোক, এবার এর মোড়ক উন্মোচন হচ্ছে ২১ জুলাই ২০০৯। এবার এই অসম্ভবটি জনসাধারনের জন্য উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। এবার দায়িত্ব আমাদের। দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে এই প্রামান্যচিত্র পৌঁছে দিতে হবে। প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি ইউনিয়নে এই সিনেমা প্রদর্শিত হতে যাবে। জাতির জানা উচিৎ যে কারা দেশের শত্রু, কারা খুনী, কারা মুখোশধারী। মানুষের জানা প্রয়োজন যে এদেশে খুনের সাথে সম্পৃক্ত থেকেও পুলিশের প্রধান পদে উন্নীত হওয়া গেছে, এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাও হওয়া গেছে। জনতার জানা উচিৎ, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আজ বড় বড় কথা বলা অনেকেই পঁচাত্তর পরবর্তি সময়ে মুক্তিযোদ্ধা হত্যায় মত্ত ছিলেন। এবং দেশবাসীর আরো জানা প্রয়োজন এই যে, ‘সারা বাংলার ধানের শীষে মিশে থাকা’ সাবেক সেনা-রাষ্ট্রপতিটি মানুষ হত্যায় কতটুকু পটু ছিলেন।
আনোয়ার কবিরের সাথেই বেড়াতে গিয়ে সেই গল্প শুনছিলাম বর্তমান সংসদের একজন সংসদ সদস্যের মুখে। তিনি ১৯৭৭ সালে রাজশাহী পুলিশে কর্মরত ছিলেন। তার কথাগুলো ছিলো এমন যে, সেসময় প্রতি রাতেই রাষ্ট্রপতি জিয়া’র সার যুক্ত একাধিক বান্ডিল ফাঁসির আদেশ থাকতো। আদেশগুলো হতো ব্যাচ ও সিরিয়াল নম্বর অনুযায়ী। প্রায়ই দেখা যেতো যে দ্রুত সার করতে গিয়ে জিয়া কিছু পাতা বাদ দিয়ে গেছেন। এবং তখন ব্যাচসুদ্ধ ধরে আনা মুক্তিযোদ্ধা সেনাদের থেকে সারহীনদের ডেকে ডেকে সরানো হতো।
সেনাবাহিনীর ভেতরে মুক্তিযোদ্ধা হত্যার সঙ্গে সম্প্রক্ত এমন অনেক ছোট-বড় গল্প পাওয়া যায় এই সাড়ে দশ ঘন্টার ছবিটিতে। আনোয়ার কবিরের এখন স্বপ্ন- এই ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোকে নিয়ে একটি সংগঠন করা এবং এই প্রামাণ্যচিত্রটিকে একটি প্রামান্য দলিল ধরে নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের জন্য আবেদন করা। আমরা কামনা করি, আনোয়ার কবিরের এই স্বপ্নটিও সফল হোক। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেতরে মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকারীদেরও কঠিন ও কঠোর বিচার হওয়া উচিৎ, এবং তা সম্ভব। প্রমান? আনোয়ার কবিরের এই ছবি।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×