বেখাপ্পা ধরনের এক সমীকরণ, মনে হয় ইসলামকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই এহেন বক্তব্য। আসলে ব্যাপারটি বাহ্যিকভাবে নেতিবাচক কিংবা বিদ্রুপাত্মক মনে হলেও, বিষয়টি বিশ্লেষণ করলে বর্তমান জগতের মুসলমানদের মনে কোরামিন ইনজেকশনের মতোই কাজ করার কথা। যা কিনা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কোন রোগীকে বাঁচিয়ে রাখার শেষ চেষ্টা হিসেবে ডাক্তার প্রয়োগ করে থাকে।
আমরা সকলে জানি গরু নিরীহ প্রাণী, বুদ্ধিমত্তা শূন্যের কোঠায়। তার অনেক প্রমাণের মধ্যে একটি হচ্ছে অনেকগুলো গরুকে যখন কুরবানী করার সময় কোন এক স্থানে একত্র করা হয় এবং পর্যায়ক্রমে কুরবানী করা হয়, অপেক্ষমাণ গরুরা কখনও বাধা দেয়ার চেষ্টা করে না, বরং তাদের জন্য রাখা খড় কিংবা ঘাস নির্বিকার খেতে থাকে। অথচ ১০/১২টা গরু যদি সংঘবদ্ধভাবে উপস্থিত মানুষগুলোর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তবে পরিস্থিতি অন্যরূপ ধারণ করতো। গরুরা বুদ্ধিহীন বলেই পরাধীন, আর গরুকে ওই পর্যায়ে বুদ্ধিহীন করে রাখা হয়েছে, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠজীব মানবজাতির সুবিধার্থে। এ পর্যন্ত আলোচনার নির্যাস হচ্ছে, বুদ্ধিহীন গরু কখনও একতাবদ্ধ হতে পারে না তাই নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারে না।
এবার তাকানো যাক ২য় মহাযুদ্ধের পর থেকে পৃথিবীর অধিকাংশ মুসলমান দেশসমূহের নেতৃত্বের দিকে। ক্ষেত্র বিশেষে দেখা যায় যে, মুসলমান নেতৃত্ব মাঝে মধ্যেই গরুর চেয়েও নিম্নমানের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। গরু সংঘবদ্ধভাবে বাধা দেয় না। তবে তারা মানুষকে সহায়তাও করে না তার জাত ভাই অপর কোন গরুকে কুরবানী করার জন্য।
অথচ ইতিহাস ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত দেয় যে, এক মুসলমান নেতৃত্ব সহায়তা করে ইসলামের শত্রুদের অপর এক মুসলমান নেতৃত্বকে/দেশকে ধ্বংস করার জন্য। মীর জাফর লর্ড (চোর) ক্লাইভের সাথে গাট বেধে আমাদেরকে ২০০ বছরের জন্য পরাধীন করে রেখেছিল, তা না হয় বাদই দিলাম। হায়দরাবাদের নিজাম সহায়তা করেছিল ইংরেজ এবং মারাঠাদেরকে, টিপু সুলতান তদীয় মুসলমানদের নিধন করতে।
ভালো জাতের গরুর আচরণ করেছে মিশরের হোসনে মোবারক। সীমান্ত দেশ ফিলিস্তিনের মুসলমানদের উপর ইহুদীরা যখন হত্যাসহ সকল প্রকার অত্যাচারের স্টিম রোলার চালায় তখন সে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়ে উল্টাদিকে তাকিয়ে দীর্ঘ ৩০ বছর ঘাস খেয়েছে।
আমাদের দেশের পাশে শান্তিতে নোবেল প্রাইজ পাওয়া অং সান সু চি অকাতরে মুসলমান নিধন করে যাচ্ছে। আর আমরা কি করছি? বিদেশ সফর? বিশ্ব শান্তির জন্য বক্তৃতা? আগামী নির্বাচনের জন্য ব্যস্ততা? কখনও বা মোবারকের মতো ঘাস খাচ্ছি? তবে ভালো দিক হচ্ছে, আফগান মুসলমানদের ধ্বংস করতে পাকিস্তান যেভাবে ন্যাটোকে সাহায্য করেছে এবং করছে, রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিপক্ষে মায়ানমার সেনাবাহিনীকে আমরা ওই সাহায্যটুকু করছি না।
এ বিষয়ে চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে পাকিস্তানের নেতৃত্ব। ’৭১ সালে ওই দেশের সেনাবাহিনী পূর্ব-পাকিস্তানের মুসলমানদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, আর ৪০ বছর পর ওই একই সেনাবাহিনী নিজের দেশের এনডব্লিউএফপি, ওয়ারিজিস্তান এবং বেলুচিস্তানের মুসলমানদের উপর আক্রমণ করে যাচ্ছে মাঝে মধ্যেই।
বিশ্ব রাজনীতির ক্ষেত্রে মুসলমান নেতৃত্ব বুদ্ধিহীন গরুকেও হার মানায়। যেমন পাকিস্তান সাহায্য করেছে আমেরিকাকে আফগান মুসলমানদের ধ্বংস করতে। আমেরিকার সাহায্যে ইরাকের সাদ্দাম ইরানী মুসলমান ধ্বংসে দীর্ঘ ৮ বছর যুদ্ধ করেছে, সউদী আরব সাহায্য করেছে ইরাক ধ্বংসে; বর্তমানে সাহায্য করছে সিরিয়ার মুসলমান নিধনে। আরও সাহায্য করছে জর্ডান ও তুরস্কের মুসলমান নেতৃত্ব। আজ যদি পাকিস্তান ইরানের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে, ন্যাটো আফগানিস্তান থেকে পালাতে বাধ্য হয়। কিন্তু না, কুরবানীর গরুর চেয়েও অধম তথাকথিত নেতৃবৃন্দ তা কখনই করবে না; বরং ন্যাটো সাপ্লাই লাইন খোলা রাখবে। মুসলমান নিধনে শত্রুদের রসদ সরবরাহের জন্য।
একটি গরুকে কুরবানী করতে ৫/৬ জন মানুষ যখন একত্রে কষ্ট করে মাটিতে ফেলে তখন কোন গরু সেই কাজে মানুষকে সহায়তা করে না। তাকে যতই তাজা ঘাসের লোভ দেখানো হোক না কেন, সে কখনই অপর এক জাত ভাইকে কুরবানী করার জন্য মানুষকে সাহায্য করবে না। অথচ এই কাজটি বর্তমান সময়ের মুসলমান নেতৃবৃন্দ হরহামেশাই করে যাচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে যামানার মুসলমানদের তথাকথিত নেতৃবৃন্দের বুদ্ধিমত্তার পরিধিকে কুরবানীর গরুর সাথে তুলনা করলে সেক্ষেত্রে কাকে অবমূল্যায়ন করা হবে? নেতৃবৃন্দকে না নিরীহ প্রাণী গরুকে?
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১২ ভোর ৪:০৬