somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিয়ে বন্ধুর জন্য ক্ষতিকর! :D

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কন্যার বাপ সবুর করতে পারত, কিন্তু কন্যা সবুর করতে চাইল না। সোজা বলল, ‘হয় শিহাবের সাথে বিয়ে দাও, নয় তো আমাকে কানাডা পাঠিয়ে দাও।’
কন্যার বাপ অপেক্ষাকৃত সহজ অপশনটা বেছে নিলেন। শিহাবের সঙ্গে রুনার বিয়ে হয়ে গেল।
শিহাব আমাদের বন্ধু। আমরা ছিলাম চৌমাথা। না না রাস্তার নয়, বন্ধুত্বের। শিহাব, হিমেল, বাবু আর আমি। আমরা রাস্তায়, ক্লাসে, টং দোকানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হো হো হা হা করে কাটিয়ে দিতাম। আমরা শেষের দিকে এমনকি ফেসবুকিংও একসঙ্গে করতাম। নিয়মটা ছিল এ রকম—অফিস থেকে বের হয়ে নির্দিষ্ট একটা চায়ের দোকানে বসতাম চারজনে। তারপর নিজেদের মুঠোফোন বের করে ঢুকতাম ফেসবুকে। নিজেদের অ্যাকাউন্টে ঢুকে আমরা পরস্পরের ছবি ও স্ট্যাটাসে লাইক দিতাম। বিচিত্র কোনো খবর পেলে নিজেদের ইনবক্স করতাম। এ রকমভাবে কয়েক ঘণ্টা জম্পেশ আড্ডা দিয়ে তবেই আমরা ঘরে ফিরতাম।
ছুটির দিনগুলোয় আমরা শিহাব আর হিমেলের মোটরসাইকেলে চেপে বেরিয়ে পড়তাম। সারাটা ছুটির দিন আমরা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুর ঘুরে একযোগে চেকইন দিতাম। সেলফি তুলতাম।
সেলফি তুললাম শিহাবের বিয়েতেও। হইহল্লা কম করলাম না। বাসরঘরে শিহাবকে ঢুকিয়ে দেওয়ার সময় সবাই মিলে বললাম, ‘দেখিস, বউ পেয়ে বন্ধুদের আবার ভুলে যাস না!’
শিহাব বলল, ‘মাথা খারাপ!’ বলেই সে তাড়াতাড়ি ঢুকে গেল ঘরে। আর বেরোল না। মানে পরের সারাটা জীবনে তাকে আমরা আর আমাদের মধ্যে পেলাম না। অফিস থেকে বের হয়ে সে সোজা বাসায় চলে যায়। আমাদের সঙ্গে বড়জোর এক কাপ চা খায়। খেতে খেতেই রুনার ফোন আসে। ওদিক থেকে কী বলে কে জানে! দেখি যে শিহাবের মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে যায়। বলে, ‘আসতেছি তো, এই তো...আরে না না ওদের সাথে না...কোনো আড্ডাবাজি না...জ্যামে জ্যামে!’
ফোন রেখে আমাদের দিকে আলগা সপ্রতিভ হওয়ার চেষ্টা করতে করতে সে বলে, ‘একটা দাওয়াত আছে জন্মদিনের। তাড়াতাড়ি যেতে হবে বন্ধু!’
শিহাব চলে যায়। বাবু খুবই রাগ করে। বলে, ‘শিহাব একটা...!’ আমরা উদাস মনে আড্ডা দিই। নিজেদের মুঠোফোন বের করে ফেসবুকে ঢুকে ততোধিক উদাস উদাস স্ট্যাটাস দিই। শিহাব দূর থেকে লাইক দেয় সেসব স্ট্যাটাসে।
ছুটির দিনগুলোয়ও শিহাব আর আমাদের সঙ্গে যেতে পারে না। তারা শপিংয়ে যায়। সিনেমায় যায়। বিপদে পড়ি আমরা। শিহাব না এলে তো তার মোটরসাইকেলও আসে না। আমরা তিন প্রাণী, একটা মোটরসাইকেল। আমরা চাপাচাপি করে বসি তাতে। ট্রাফিক সার্জেন্ট রক্তচোখে তাকায়। একদিন কানে পর্যন্ত ধরাল। হিমেল বলে, ‘শিহাব নাই তাতে কী! দেখ, আমাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে। আমরা এখন একটা বাইকে এ রকম ঠেলাঠেলি করে বসি, এক ব্রেকে একসঙ্গে ঝাঁকি খাই।’
আমরা বলি, ‘হু।’ কিন্তু আমাদের মন পড়ে থাকে শিহাবে।
এভাবে একটা বছর কাটতে না কাটতেই বাবুর বিয়ে হয়ে গেল। সেদিনও আমরা খুব হইচই করলাম। সেলফি তুললাম। শিহাবও এল। শিহাবের সামনেই বাবুকে বললাম, ‘বাবু দেখিস, শিহাবের মতো হয়ে যাস না!’
বাবু বলল, ‘মাথা খারাপ!’ বলেই বাবু তাড়াতাড়ি বাসরঘরে ঢুকে গেল। এবং, সে-ও আর বেরোল না! অফিস থেকে বেরিয়ে সে-ও আর আড্ডা দেয় না আমাদের সঙ্গে। এক কাপ চা খাওয়ারও সময় পায় না। শিহাব আর বাবু একসঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায়। যাওয়ার আগেই অবশ্য তাদের ফোন আসে। তারা প্রায় কোনো উত্তর না করে শুধু ‘হু হু’ আর ‘জ্যাম জ্যাম’ বলতে থাকে। হিমেল অত্যন্ত মেজাজ খারাপ করে। তারপর বলে, ‘এটাই ভালো হইছে, বন্ধু। এখন শুধু তুই আর আমি। আমার বাইক নিয়া সারা ছুটি ঘুইরা বেড়াব। সার্জেন্টও আর কান ধরাইতে পারবে না! শুধু তুই আর আমি!’
আমি বলি, ‘হু।’ কিন্তু আমি জানি আমার মতোই হিমেলেরও মন পড়ে থাকে শিহাব আর বাবুতে।
ছুটির দিনগুলোয় শিহাব আর বাবু তাদের স্ত্রীসহ শপিংয়ে যায়, সিনেমায় যায়। হিমেল আর আমি বিছনাকান্দি গিয়ে চেকইন দিই, সেলফি তুলি। সেই সেলফিতে আগের মতো জোশ থাকে না। হিমেল জোশ আনার চেষ্টা করে। বলে, ‘ব্যাচেলর লাইফ হলো শ্রেষ্ঠ লাইফ। এর ওপর কোনো লাইফ নাই!’
আমি শুকনা মুখে বলি, ‘হু...!’
হিমেল বলে, ‘আমি চিরদিন ব্যাচেলর থাইকা যাব!’
আজ হিমেলের বিয়ে। খুব ধুমধাম হচ্ছে। আমরাও খুব হইচই করছি। শিহাব আর বাবু তাদের বউ নিয়ে এসেছে। সবাই মিলে দেদার সেলফি তুলছি। বাসরঘরে হিমেলকে ঢুকিয়ে দেওয়ার সময় বললাম, ‘দেখিস বন্ধু, শিহাব আর বাবুর মতো আমাদের ভুলে যাস না!’
হিমেল বলল, ‘মাথা খারাপ!’ বলেই সে খুব তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে গেল।
আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম। বললাম, ‘যে যাই বলুক, ব্যাচেলর লাইফই হলো শ্রেষ্ঠ লাইফ।’
তবে আমার কথায় ‘হু’ বলার মতো কেউ তখন আশপাশে ছিল না
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:১১
৯টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×