কোনো একটা বই পড়ার পরেই আমার রিভিউ দিতে ইচ্ছে করে। কোনো বাধ্যবাধকতা নেই যদিও, কিন্তু বইটি পড়ে ইচ্ছে করে নিজের অনুভূতিটুকু শেয়ার করতে।
অবশ্য শুধুমাত্র যেসব বই পড়ে খুব ভালোলাগা কাজ করে আমি সাধারণত সেসব বইয়েরই রিভিউ দিতে চেষ্টা করি। অন্য যেসব বই তেমন টানে না, সেগুলো নিয়ে কিছু বলতে পারি না। অথবা বলতে চাই না। কারণ নেগেটিভ রিভিউ দিলে রিভিউকারের প্রতিও নেগেটিভ ধারণা জন্ম নেয়, যা পরিহার করা বাঞ্ছনীয়। তাই অনুরোধে ঢেঁকি গেলা নয়, শুধুমাত্র ভালো লেগেছে এমন বইগুলোতেই আমি দু’কথা বলার তাগিদ বোধ করি।
আজ যে দুটো বই নিয়ে বলতে এলাম, সেগুলো বহুল পঠিত এবং পাঠক সমাদৃত দুটো বই। রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি এবং রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো আসেননি। রবীন্দ্রনাথ সিরিজ নামেও বইদুটো পরিচিত। ইতিমধ্যেই হাজার হাজার (নাকি আরো বেশি!) পাঠক বইদুটো পড়ে ফেলেছেন। বিশেষ করে যারা থ্রিলারের উঁইপোকা তারা তো বইদুটো প্রায় মুখস্থই করে ফেলেছে। মুশকান জুবেরিকে স্বপ্নেও বুঝি দেখে ফেলেছে অনেকে!
আমি মাত্রই শেষ করলাম। আর শেষ করে বিমোহিত হলাম। অকুন্ঠচিত্তে বলছি, বইদুটোতে আমার মনোযোগ পুরোপুরি আটকে ছিল। সরতে দেয়নি অন্য কোথাও। বহুদিন পড়ে থ্রিলার পড়ে আনন্দ পেয়েছি।
গল্পের শুরু এক অচেনা আগন্তুককে নিয়ে। খাবারের ঘ্রাণে আকৃষ্ট হয়ে সে নেমে পড়ে একটি ভাড়া করা ট্যাক্সি থেকে। ট্যাক্সি থামে সুন্দরপুর নামের প্রায় গ্রামসদৃশ একটি ছোট্ট শহরে। একটি রেস্টুরেন্টের সামনে। অদ্ভুত নাম সেই রেস্টুরেন্টের, ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি’। খাবারের স্বাদ আস্বাদন করে চমকে ওঠে আগন্তুক। অভাবনীয় স্বাদ প্রতিটা আইটেমের। রেস্টুরেন্টের মালিকের নামটাও চোখে পড়ে কিছু আইটেমের নাম হিসেবে। ‘মুসকান’স স্পেশাল’। জানা গেল সেই রেস্টুরেন্টের মালিক একজন নারী, ভারী রহস্যময় নারী। অসাধারণ সুন্দরী। চালচলন বেশভূষা আর প্রতি পদক্ষেপেই যার আভিজাত্য।
আগন্তুক গোয়েন্দা পুলিশে কর্মরত একজন উচ্চপদস্থ অফিসার। তিনি এসেছেন একটি কেসের তদন্ত করতে। একটি মিসিং কেস। দেশের ক্ষমতাধর একজন ব্যক্তির ভাগ্নে হারিয়ে গেছে প্রায় কোনোরকম ক্লু না রেখে। বয়সে তরুণ সেই ছেলে কোনোরকম ঝামেলার সাথেই জড়িত নয়। অথচ পুরো দেশ থেকে সে যেন একেবারে কর্পুরের মতো উবে গেছে। কোথায় গেছে, কার কাছে গেছে অথবা কার সাথে গেছে...সবই অজানা।
বহু কাঠখড় পুড়িয়ে অতি সূক্ষ্ণ সব সুতোকে একত্র করে করে অফিসারটি জানতে পারেন, ক্ষমতাধর ব্যক্তির সেই তরুণ ভাগ্নেটি পা রেখেছিল এখানে। এই সুন্দরপুরে, সম্ভবত এই রেস্টুরেন্টেও!
ডিবি অফিসার একজন চৌকষ পুলিশ। তিনি তার জীবনে কোনো কেসই অমীমাংসিত অবস্থায় রাখেননি। কিন্তু এই কেসের ভেতরে যত প্রবেশ করতে থাকেন, ততই বুঝতে পারেন এটিই সম্ভবত হতে যাচ্ছে তার জীবনের প্রথম অমীমাংসিত কেস!
গল্পের যাত্রা এখান থেকেই। একটি বাক্যও আর বেশি বলা সম্ভব নয়। তাহলেই স্পয়লার হয়ে যাবে। টানটান সাসপেন্স। শেষ না করে ওঠার উপায়ই নেই। বইটি দুটি পর্বে। প্রথম পর্ব, রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি এবং দ্বিতীয় পর্ব, রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো আসেননি।
বইটির এডিটিং ভালো হয়নি। প্রচুর বানান ভুল চোখে পড়েছে। হ্যাজাক বাতি হয়ে গেছে হাইজ্যাক বাতি। বোরিং লাগছে না লিখে ’বোর লাগছে’ বলতে হতো না কি? এসব ভুল অনিচ্ছাকৃতও হতে পারে। কিন্তু এই চমৎকার বইটির সৌন্দর্য বিঘ্নিত হয়েছে নিঃসন্দেহে।
খুব শিগগিরই বইটি নিয়ে হইচইয়ে আসতে চলেছে একটি টিভি সিরিজ। সম্ভবত ১৩ই অগাস্টেই। বইটির লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন। প্রকাশনী, বাতিঘর।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:৩৬