somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একদা বর্ষায়

২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৃষ্টিতে বাসায় ফিরছিলাম বন্ধুর সাথে কথা বলতে বলতে। কথায় কথায় বলছিলাম, "বর্ষা জিনিসটাকে আমার একদমই ভাল্লাগেনা।।"
জানামতে আশেপাশে কয়েকটা ছেলেমেয়ে ছিল; স্কুল থেকে যার যার বাসায় ফিরছিল মনে হয়।
.
যাক, পথে একটা ব্রীজের উপর বসে আরো কয়েকজনের সাথে দেখা হয়ে গেল। আড্ডা দিলাম অনেকক্ষণ। তারপর যথারীতি বাড়িতে....
.
প্রথমে ড্রেস চেঞ্জ করে এসে ছোটবোনের সাথে খুনসুঁটি করতে শুরু করলাম ওর ব্যঙ্গনাম ধরে ডেকে। কিন্তু কেমন যেন রাগ রাগ একটা ভাব।
ওকে ম্যান, ইউ স্টে উইথ ইওর ভাববাদীতা, আই গো টু মাই ওয়ে।
.
গেলাম মায়ের কাছে। খাবার দিতে বললাম। রেডি করে এনে এমনভাবে সামনে ফেলল; যেন আমি একটা অযাচিত মেহমান!
.
কিরে বাবা!
কি হল আজ?
.
খেয়েদেয়ে শুয়ে শুয়ে ভাবতে শুরু করলুম ব্যাপারটা নিয়ে।
জন্মদিন নাকি আজ আমার? বিদিশী সিনামাগুলায় দেখছি এইভাবে জন্মদিন পালন করে সারপ্রাইজ হিসেবে! আমিতো অলরেডি ব্যাপকমাত্রায় সারপ্রাইজড!
উঁহুহ! আজতো আমার পয়দা দিবস না?
তাহলে কি?
ছোটবোনের জন্মদিন??
"ধুর বেটা, কিসব বি-গ্রেড চিন্তাভাবনা করছিস? বোনের জন্মদিনের সারপ্রাইজ বোনকে দেবে, তোর সাথে কি?"
তাহলে?
.
ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি নাস্তা খেতে বসলাম। আমার চেহারা মোবারকের দর্শন পেতেই মা বিড়বিড় করে কি যেন বলতে লাগলো!
একটু কান পেতে শোনার চেষ্টা করলামঃ
"বেয়াদপ কোথাকার! মেয়েদের সাথে...............ব্লাহ্ ব্লাহ্ ব্লাহ্..."
ধুর!
কি করছি আমি? এত নারীবাদিতা কেন হঠাত্‍?
.
দেখা যাক একটা ঝাঁক মেরে। একটু ঝাঁঝের স্বরেই বললাম, "হইছেটা কি আজ সবার? সমস্যাটা কোথায়?"
তার চেয়েও বেশি ঝাঁঝ ফেরত দিয়ে মা বলল, "রাস্তাঘাটে যা খুশি তা করে বেড়াবে, আর বাড়িতে এসে রাগ দেখাবে! নবাব হইছেন উনি!"
হায় খোদা!
মানুষকে এইভাবে কেন পয়দা করলে তুমি? সোজা কথাটা সোজাসুজিই কেন বলতে পারেনা এই মনুষ্যজাতি?
.
যাক একটা ব্যাপার শিওর হলাম, আজকের দিনটায় আমার চৌদ্দগোষ্ঠীর মধ্যেও কারো জন্মদিন নাই। ব্যাপার কিছু একটা আছে। অনুসন্ধানে নামতে হবে।
তাই অনুসন্ধিত্‍সু মনটা নিয়ে চলে গেলাম আমার একমাত্র সাসপেক্ট, ছোটবোনের রুমে; জেরা করতে। :p
গিয়ে 'লালটুসি', 'ফুলটুসি', 'লুলটুসি' ইত্যাদি ইত্যাদি বিবিধ হাওয়াপ্রদানের পর পয়েন্টে গেলাম। প্রশ্ন শুনে সাসপেক্ট এমন দৃষ্টিতে তাকাল, যেন কোন খুনের আসামীর বিচার করছে চক্ষুদ্বারা!
অতঃপর জবাব এল বিদ্যাসাগরের ফুফুমনির কাছ থেকে- আমি নাকি রাস্তায় কোন মেয়েকে বাজে মন্তব্য করেছি!
'ধরনী দ্বিধা হও / এই বাক্য শোনার আগে আমার মরণ কেন হলনা ভগবান....'- টাইপ ডায়ালগ মারার বেশ ইচ্ছে হল; তবে বেশি ড্রামাটিক হওয়া চলবেনা। কথা আরো বের করতে হবে। চেপে গেলাম আবেগ।
.
বেচারা বেচারা মুখ করে জানতে চাইলাম, কার পাকা ধানে মইদান করেছি?
জবাবে মাননীয়া স্পীকার যাহা কহিল, তাহাতে তো আমার চক্ষু চড়কগাছ!
'আমি নাকি পাশের বাসার বর্ষাকে 'জিনিস' বলেছি! পছন্দ না করলে নাই, ওকে জিনিস কেন বলতে গেলাম? এটা কেমন ম্যানার? ও কি আমার বউ হতে চাইছে নাকি, যে ওকে আমার পছন্দ-অপছন্দের কথা উঠবে? আজ দুপুরে ও নিজে এসে বিচার দিয়ে গ্যাছে।'
এই জবাবের পর স্তম্ভিত না হয়ে আর কোন উপায় আছে? ঠাটা পড়া বকের মত চুপ করিয়া বসিয়া রহিলাম।
.
মনের আকাশে চন্দ্র হইয়া দুইখানা কথাই আলো ছড়াইতে লাগিলঃ
১। মেয়েদেরকে 'জিনিস'-জাতীয় সম্বোধন করাটা নিঃসন্দেহে নোংরা কাজ। এটা জেনেও এই কাজ আমি কেন করতে যাব?
২। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা হল, কেন আমি বর্ষাকে অপছন্দ করতে যাব? ফুলের মত সুন্দর একটা মেয়েকে কি কেউ সজ্ঞানে অপছন্দ করে? :p
.
তাহলে?
এবার মনে পড়লে সকালের কথা।
আমি বললাম কি, আর কথা গড়ালো কোথা পর্যন্ত! বর্ষাকাল তো আমার জীবনে বর্ষার কাল হয়ে ধরা দিল!
.
সামান্য একটা ভুল বোঝাবুঝিতে
বর্ষা বাদী (বিচারপ্রার্থী; আমি আসামী)।
বোন ভাববাদী।।
মা নারীবাদী।।।
বাবা জানলে যে কোন লেভেলের 'বাদী' হত, আল্লাই মালুম!
.
হে বর্ষাকাল,
তোমায় আগে শুধু 'অনেক ঘৃণা' করিতাম। কিন্তু আজ থেকে 'অনেক অনেক ঘৃণা' করিব।
চিরজীবন করিব।
লাইফটা ডাল করিয়া দিলে তুমি কাল হইয়া।।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৬
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×