somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

1=ইসলাম ও আন্দোলনঃ ইসলামী আন্দোলন-দ্বিতীয়ার্ধ

১৭ ই নভেম্বর, ২০০৬ বিকাল ৩:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূর্ব পর্ব পড়ুন- ইসলাম ও আন্দোলনঃ ইসলামী আন্দোলন

(( প্রারম্ভ যেভাবে ))

পৃথিবীর প্রতিটি মতবাদই যখন একজন ব্যক্তির চিন্তা-চেতনায় আবর্তিত এবং আলোড়িত হয়, তখনি স্বাভাবিক মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে হোক কিংবা ক্ষমতা অথবা স্বার্থভিত্তিক প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য হোক কিংবা প্রত্যাদেশ প্রাপ্তির ভিত্তিতে হোক; ব্যক্তি তার ধারণকৃত চিন্তা-দর্শনকে অন্যের নিকট প্রচার করবেই, তা নিয়ে নাড়াচাড়া করবেই, কথাবার্তার মাধ্যমে তার আহ্বান অন্যের কর্ণ সীমায় পৌঁছাবেই। এক থেকে অন্যের কাছে আহ্বান পৌঁছানোর এই ধারাবাহিকতা ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করতে থাকে জন থেকে জনে, এলাকা থেকে এলাকায়, শহর থেকে শহরে এবং দেশ থেকে দেশে দেশে। এভাবেই যে কোন মতবাদ রূপ নেয় একটি আন্দোলনে। আর এই আন্দোলনের মাধ্যমেই পরিবর্তন আসে পৃথিবীর সমাজ ব্যবস্থায়, রাষ্ট্র ব্যবস্থায়, সর্বোপরি মানুষের চিন্তা থেকে কর্মের সুউচ্চ শিখর পর্যন্ত।আন্দোলনের এই চিরাচরিত ধারার বাইরে ছিল না আল্লাহ্ প্রদত্ত পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা ইসলামও। যদিও ইসলামের মূল কথা এবং প্রধান আহ্বান যুগে যুগেই ছিল এক ও অভিন্ন, তথাপি আল্লাহ্ দ্বীনের সঠিক পথ থেকে যখনই মানুষ সরে গিয়েছে, তখনি রাব্বুল 'আলামীন পাঠিয়েছেন তাঁর প্রেরিত পুরুষদেরকে; যাতে করে ভ্রষ্ট মানুষদের ভুল-ভ্রান্তিগুলোকে সংশোধন ও সংস্কার করে চিরন্তন ইসলামকে আবার তার আসল রূপে ফিরিয়ে নিতে পারেন। সেই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ এবং বিশ্ব নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর আল্লাহ্ পক্ষ থেকে ওহী আসার পর থেকেই তিনি ঘরে এসে তার সংবাদ দিলেন তার স্ত্রী খাদিজা রাদিয়াল্লাহু 'আনহাকে, তিনি তা গ্রহণ করলেন নির্দ্বিধায়। সংবাদ দিলেন ও সংবাদ পেলেন আলী, আবু বকর, যায়েদ রাদিয়াল্লাহু 'আনহুমসহ মক্কার অনেককেই, যারা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আল-আমীন বা বিশস্ততার প্রতীক মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথাকে অকুণ্ঠ চিত্তে গ্রহণ করে নিলেন। ধীরে ধীরে জানতে শুরু করলো মক্কাবাসীদের অনেকেই। আর এভাবেই সত্যের এই এক মুখ থেকে অন্য কান হয়ে নাড়াচাড়ার মাধ্যমেই মূলতঃ সূত্রপাত ঘটে তৎকালীন আরব ভূখণ্ডের মক্কা নামক শহরে- "ইসলাম" নামক আদর্শের ভিত্তিতে একটি আন্দোলন, একটি حركة, একটি চেষ্টা-সাধনা বা জিহাদ।গোপনভাবে চলতে থাকে, প্রচার হতে থাকে, ছড়িয়ে পড়তে থাকে দিক থেকে দিগন্তে সর্বশক্তিমান এক আল্লাহ্ একত্ববাদের এই উদাত্ত আহ্বান- لا إله إلا الله محمد الرسول الله ! চিরাচরিত নিয়মের সীমানায় এখানেও ঘটেছে একই ব্যাপার, স্বচ্ছ-পবিত্র আত্মার অধিকারীরা সাক্ষ্য দিতে শুরু করলো- "আল্লাহ্ ছাড়া সত্যিকারের কোন মা'বূদ নেই আর মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহ্ রাসূল"। যাদের নিকট ছিল পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহের জ্ঞান, তাদের মধ্য থেকেও দুনিয়ার প্রতি লোভ-লালসা মুক্ত সত্যপন্থীরা অকপটে স্বীকার করেছেন শেষনবীকে এবং তার আনীত সংবাদকে; যেমনটি আমরা দেখতে পাই ওয়ারাকা বিন নওফেল নামক খৃষ্টান ইঞ্জিল লেখকের বক্তব্য থেকে। সে বলেছিলঃ "এ হচ্ছে নামূস (ঊর্ধ্ব আকাশ থেকে ওহী আনয়নকারী ফিরিশ্তা অর্থাৎ, জীব্রীল 'আলাইহিস্ সালাম) যাকে মূসা 'আলাইহিস্ সালামের প্রতি নাযিল করা হয়েছিল। আহা! যদি তোমার নবুয়তের সময় আমি শক্তি-সামর্থ রাখতাম! আহা! যখন তোমার জাতি তোমাকে দেশ থেকে বহিস্কার করে দেবে, তখন যদি আমি জীবিত থাকতাম! রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিস্মিত হয়ে বললেনঃ ((আমাকে বের করে দেবে?)) ওয়ারাকা বললেনঃ হাঁ, তুমি যে মিশন নিয়ে এসেছ, যে-ই এ মিশন নিয়ে এসেছে তার সাথেই তার সাথেই এমন শত্রুতা পোষণ করা হয়েছে। যদি আমি ততদিন বেঁচে থাকি, তাহলে কোমর বেঁধে তোমাকে সাহায্য করবো।" [দেখুনঃ সীরাতে সরওয়ারে আলমঃ তৃতীয় খণ্ড, পৃ-১১০] এ সংবাদ যে সে ইঞ্জিল (বর্তমান নাম নিউ টেষ্টামেন্ট) থেকেই পেয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এভাবেই সেদিন সত্যপন্থীদের নিকট সত্য উদ্ভাসিত হয়েছিল এবং আজো হচ্ছে, হবে দুনিয়ার ধ্বংসপূর্ব পর্যন্ত; কোন সন্দেহ নেই।মানবতার প্রতি দয়াময় আল্লাহ্ রহমত স্বরূপ কুরআনের প্রথম ওহী নাযিল হওয়ার প্রারম্ভ থেকে প্রায় তিন বছর কাল যাবৎ ইসলামের দাওয়াতী কাজ চলতে থাকে গোপনে। এটাই ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতর্ৃক পরিচালিত ইসলামী আন্দোলনের প্রথম পর্যায়। তারপর আসে দ্বিতীয় পর্যায়- যেখানে প্রকাশ্যভাবে লোকদেরকে আহ্বান করা হয় এই চিরন্তন শান্তি লাভের আদর্শ ইসলামের দিকে। এ প্রসঙ্গে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু 'আনহু বর্ণনা করেন, ((একদিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা পাহাড়ে আরোহণ করলেন এবং বলতে লাগলেনঃ " يا صباحاه!" (কখনো কোন বিপদের সংবাদ দিতে আরবরা তখন এই শব্দাবলীর ব্যবহার করতো এবং লোকেরা সংবাদ শোনার জন্য সববেত হতো) সবাই সমবেত হয়ে জানতে চাইলোঃ কি হয়েছে? তিনি বললেনঃ হে লোকসকল! আমি যদি বলি যে, এই পাহাড়ের পিছনে বিরাট এক শত্রু-সৈন্য বাহিনী তোমাদের উপর হামলা চালানোর জন্য উঁৎ পেতে আছে, তাহলে তোমরা কি তা বিশ্বাস করবে? লোকেরা বললোঃ নিশ্চয়ই করবো। (কেননা, তুমি কখনো মিথ্যা কথা বলনি, আমরা তোমাকে সাদেক বা সত্যবাদী এবং আল-আমীন বলেই জানি।) তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে শোন! আমি তোমাদেরকে (আল্লাহ্) কঠোর আযাব সম্পর্কে সতর্ক করছি। একথা শুনে আবু লাহাব (রাসূলের চাচা) বললোঃ তুমি কি আমাদেরকে শুধু এইটুকুর জন্যই ডেকেছ?)) [মুসনাদে আহমাদঃ ১ম খণ্ড] অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ((রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘোষণা শুনে আবু লাহাব হাত নেড়ে বললোঃ ধ্বংস হও তুমি, শুধু এই জন্যই আমাদিগকে একত্রিত করেছ, না?)) [ইবনে কাসীর]ইসলাম এতদিন তার বিদ্বেষকারীদের গোপন ষড়যন্ত্রের শিকার হতে থাকলেও এটাই একদিকে যেমন ছিল ইসলামের প্রথম প্রকাশ্য আহ্বান, তেমনি এটাই ছিল প্রকাশ্য বিরোধিতা। আর এভাবেই ইসলামের এই আন্দোলন প্রকাশ্যভাবে আত্মপ্রকাশ করে বিশ্ববাসীর নিকট। এই ঘোষণার পরপরই সমগ্র কুরাইশ বংশ ও আশপাশের গোত্রগুলোতে যেন দাবানল জ্বলে উঠলো। যারা জানলো না, তারা জানতে পারলো, আর যারা আগে থেকেই গোপনে জানতে পেরেছিল, তারা এবার বুঝে গেছে যে, এই আন্দোলন কতটা বিস্তার লাভ করে ফেলেছে যাতে করে আজ প্রকাশ্য ঘোষণা দেয়ার মত দুঃসাহস করে বসেছে। কিছুদিন পরেই রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাদিয়াল্লাহু 'আনহুকে একটি ভোজনসভা ডাকার আদেশ করলেন। এতে আব্দুল মুত্তালিবের পুরো সমপ্রদায়কে ডাকা হলো যেখানে হামজাহ, আবু তালেব, আব্বাস প্রমুখ প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত হলেন। রাসূল সবার উদ্দেশ্যে বললেনঃ ((আমি এমন এক জিনিস নিয়ে এসেছি যা দ্বীন ও দুনিয়া উভয়ের জন্য যথেষ্ট। এই বিরাট বোঝা উত্তলনের কাজে কে আছ আমাকে সাহায্য করবে? তখন সমগ্র কুরাইশ বংশকে চমকে দিয়ে মাত্র তের বছরের বালক আলী উঠে দাঁড়িয়ে বললেনঃ আমার চোখে যদিও যন্ত্রণা অনুভূত হচ্ছে, আমার হাঁটুদ্বয় অত্যন্ত পাতলা, তার উপর বয়সেও আমি সবার কনিষ্ঠ; তবুও আমি আপনার সহযোগিতা করে যাব!)) বয়সের ভারে অন্ধ হয়ে যাওয়া ওয়ারাকা বিন নওফেল থেকে শুরু করে পরিণত আবু বকর থেকে বালক আলী রাদিয়াল্লাহু 'আনহুম কর্তৃক ইসলামের এই কঠিন প্রারম্ভকে এভাবে সাহসিকতার সাথে ইতিহাসের পাতায় উৎকীর্ণ করার মাধ্যমেই তারা আজো হয়ে আছেন বিশ্বব্যাপী ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রেরণার উৎস। উৎস বৃদ্ধদের, উৎস পরিণত বয়সীদের, উৎস বালকদের, উৎস মহিলাদের; ইসলামী আন্দোলনের এই প্রেরণার প্রারম্ভ প্রদীপকে কেউ নেভাতে পারেনি; এবং পারবেও না কোনদিন ইনশাআল্লাহ্।
(((((চলবে)))))

ছবির জন্য কৃতজ্ঞ যেখানে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০০৭ সকাল ৯:১৭
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×