তলা'আল বাদরু 'আলাইনা - মিন সানিয়াতিল অদা'আ
অজাবাশ্ শুক্রু 'আলাইনা - মা-দা'আ লিল্লাহি দা'আ
আইয়ু্যহাল মাব'উসু ফি-না - জি'তা বিলআমরিল্ মোতা-'আ
জি'তা শার্রাফ্তাল মাদিনাহ্ - মার্হাবান্ ইয়া খাইরা দা'আ।
অর্থাৎ,
-আমাদের মাঝে পূর্ণিমার চন্দ্র উদিত হয়েছে সানিয়াতুল অদা'আ (মদীনার দক্ষিণে কুবার উপকন্ঠে অবস্থিত একটি জায়গার নাম) হতে।
-আমাদের শুকরিয়া আদায় করা উচিত ততক্ষণ পর্যন্ত, আহ্বানকারী যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্র পথে আহ্বান করতে থাকে।
-হে আমাদের মধ্যে প্রেরিত (মহাপুরুষ)! আপনি এমন বিষয় নিয়ে এসেছেন, যার আনুগত্য করা হয়।
- আপনি আগমন করে মদীনাকে সম্মানিত করেছেন, হে উত্তম দা'ঈ! (আল্লাহ্র পথে আহ্বানকারী) আপনাকে শুভেচ্ছা-স্বাগতম।
আহা! সেদিনের শিশুদের মাঝে যদি আমিও হতাম। তবে তো প্রিয় রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতে পেতাম, শুনতে পেতাম তার কন্ঠের সুমধুর তিলাওয়াত, জীবন চলার পথ-নির্দেশ, দেখতে পেতাম আল্লাহ্র কালাম আল-কুরআনের জীবন্ত রূপ, সঙ্গ পেতাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষের। মহানের রব (প্রতিপালক)-এর প্রশংসায় আমার কন্ঠ উৎসর্গ, চৌদ্দ শতক পরের আমিও আজ তাঁর প্রিয় বন্ধু মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্নেহের পরশ লাভে ধন্য, তিনি (আল্লাহ্) আমায় দয়া করেছেন, আমার দো'আ কবূল করেছেন, আমি রাসূলের প্রতিবেশী, মদীনার বাসিন্দা, আল্হামদুলিল্লাহ্।
স্বদেশের মাটি পেরিয়ে বিশ্ব দেখবো, এ আকাংখা অনেক ছোট্টবেলা থেকেই। সেদিনের ভাবনাগুলো ঘুরপাক খেত দু'টি ভিন্নধর্মী স্রোতে। 'যা কিছু দেখি, তাতেই সেরা হবো' -ভাবনার এ ধারা বেয়েই সেরা দাবাড়ু, গায়ক, অভিনেতা, খেলোয়াড় আরো আরো, প্রচেষ্টা কিছু থাকলেও সেসবের কিছুতেই আমার মন স্থায়িত্ব পায়নি এবং এ পথেই বিশ্ব দেখার প্রথম মন্যিল ভেবে রেখেছিলাম আমেরিকা। অন্য ধারায় বইতো দরবেশ দাদুর দরবেশ নাতি, প্রিয় শিক্ষকের (মক্তবের হুযুর) যোগ্য ছাত্র, যোগ্য আলেমের যোগ্য উত্তরসূরী, ভাবনা ভাবনাই রয়ে গেল, জীবন-জগৎ আমাকে এসবের কিছুই দিল না। ভাবনার জাল বুনতে বুনতেই প্রবাসী হলাম সৌদী আরবের বেদুঈন পল্লীতে। লোহিত সাগরের পানি ছুঁই ছুঁই করে গড়ে উঠা ছোট্ট মহকুমা উমলেজ, প্রথম সাগর দেখা, প্রথম মরুর পরশ, পৃথিবী দেখার প্রথম মন্যিল আমার।
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নবী এটুকু ছাড়া তেমন পরিচিত ছিলাম না, আমার প্রথম পরিচয় প্রিয় নবীর সাথে, যখন আমি উমলেজের প্রবাসীদের একজন। 'সীরাত ইবনে হিশাম' এই জীবনী গ্রন্থখানিই আমাকে প্রথম পরিচয় করিয়ে দেয় একজন মানুষের সাথে, একজন সুহৃদের সাথে, একজন সুবিচারক শাসকের সাথে, একজন সুবিজ্ঞ সেনাপতির সাথে, একজন রাসূলের সাথে, একজন পরম বন্ধুর সাথে। লাইনের পর লাইন পেরিয়ে দুচোখের দৃষ্টি যতই এগিয়ে যাচ্ছে, মনের পৃথিবী যেন ততই বিশাল থেকে বিশালতায় হারিয়ে যাচ্ছে। একজন মানুষের দেহ এবং আত্মা পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেলেও তিনি রেখে যান তার মমতা, স্নেহ-ভালবাসা, শ্রম, জীবনের সবটুকু অর্জন, গোস্সা-কাঠিন্যতা-প্রবলতা, চরিত্র-কর্মের মাধুর্য ইত্যাদি ইত্যাদি। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পড়ছে, সাথে সাথে রচিত হচ্ছে আমার ক্ষুদ্র হৃদয়ে প্রিয় রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালবাসার ভিত। মনে পড়ে যখন শেষের পৃষ্ঠাগুলো পড়ছিলাম, পৃথিবীতে আসার পর থেকে এতটা ব্যথিত হয়ে কখনো কাঁদিনি, যতটা সেদিন কেঁদেছিলাম। যেন অন্ধকারে ছেয়ে গেল আমার সম্পূর্ণ পৃথিবী . . .। যেন ভাবতে পারছিলাম না মদীনায় এলে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাক্ষাত পাবো না। বেদুঈন পল্লীর মসজিদে সালাতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, হঠাৎ সেকেলে পরিবেশ দেখে সবকিছু গুলিয়ে ফেল্লাম, চৌদ্দশত বছরকে যেন চৌদ্দ বছর মনে হতে লাগল এবং কিভাবে কিভাবে যেন হিসাব-নিকাশ করে মনের মধ্যে এর সত্যতা দৃঢ় হতে শুরু করল। সালাতান্তে তো প্রায় এক বেদুঈনকে জিজ্ঞেসই করে ফেলেছিলাম আর কি যে, 'তোমরা কি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছিলে?' -কি কারণে যেন আবার সম্বিত ফিরে পেলাম। প্রিয় মানুষের প্রতি মানব-হৃদয়ের চিরন্তন আকুলতা বুঝি এমনি। (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




