Click This Link
== প্রথম সফর ==
অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম, যত প্রতিবন্ধকতাই থাকুক, যত অর্থ সংকটই থাকুক, মদীনা যাবই ইনশাআল্লাহ্। প্রবাসী মাত্রই প্রথম দিনগুলো হয় কষ্টের, সংগ্রামের, তারপর ধীরে ধীরে আসে প্রতিষ্ঠার দিন। নতুন দিনগুলোতে মরুর নতুন অতিথি; তথাপি সংকল্পে ছিলাম অটল আর নির্ভরতার সবটুকুই ছিল প্রতিপালকে। সত্যিই, যে তাঁর উপর নির্ভর করে, তিনি তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। শুরু হলো আমার যাত্রা; ইসলামের ইতিহাসের প্রথম মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতি (একদার)। ভাবাবেগের প্রাবল্যে মনে হতে লাগলো, মরুর বালির প্রতিটি কণা, খেজুর বাগানের প্রতিটি গাছ, আঁকা-বাঁকা পথের দু'ধারের প্রতিটি পাহাড়-পর্বত আমায় জানাচ্ছে 'আহ্লান ওয়াসাহ্লান' স্বাগতম-শুছেচ্ছা। এছাড়াও আমার অবস্থানস্থল উমলেজের বাইরে এটাই আমার প্রথম পদক্ষেপ।
অভিভূত! ঐ যে দু'চোখের সীমানায় ভেসে উঠলো মিনারগুলো। আমার প্রিয় দর্শন। মদীনার শহর-প্রান্ত ধরে বাসটি যতই এগিয়ে যাচ্ছে, ততই আমার হৃদয়জুড়ে ঘনীভূত হচ্ছিল আবেগ, পৃথিবীর সমস্ত ভূমিতলের মাঝে আমার প্রিয় ভূমিতে আমি আজ প্রথম আসলাম, প্রথম দেখলাম। কতই না দেখেছি ছবিতে, আজ প্রথম দেখে যেন মনে হলো ছবিতে যাকিছু দেখেছি, সব জীবন্ত হয়ে এ মেহ্মানকে জানাচ্ছে সাদর অভিনন্দন। "আল্লাহু আকবার! আল্লাহু আকবার!!" ধ্বনিত হলো মহানের মহানত্ব, মাগরিবের সালাতের আহ্বান। কিছু দূরে, বাসষ্ট্যান্ডের পাশের একটা মসজিদেই তা আদায় করলাম। সালাতান্তে ধীরে-সুস্থে চলতে লাগলাম পৃথিবীর দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ স্থানের দিকে।
আজ আমার অন্তর প্রশান্ত। খুব নয়, অনেকটা কাছাকাছি থেকে মিনারগুলোর মাঝখান যেন কাঁচের মনে হলো, আসলে আলোর প্রভাবেই এমন দেখালো। গলিপথ ধরে চলতে গিয়ে মনে পড়লো বার বার একটি গানের কলি- 'আমি যদি আরব হতাম, মদীনার ও পথ, যে পথে মোর চলে গেছেন নূর-নাবী হযরত'। এই তো সেই পথ, যে পথে কতই না চলেছেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম, চলেছেন তার প্রিয় সাহাবীগণ। কত ভালবাসতেন তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে, তার কথার জবাবে তারা বলতেনঃ 'আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক', যাকে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য তারা ঢাল হিসাবে ব্যবহার করতেন নিজ নিজ পিঠ, তার প্রতিটি কথা শোনার জন্য তারা থাকতেন উদগ্রীব, তার সুন্দর মুখখানা আর মিষ্টি মুচকি হাসি দেখে তারা ভুলে যেতেন নিজেদের সমস্ত কষ্টকে। আমি সেই পথে চলছি, যেন স্বপ্নের ভেতর, সত্যিই কি আমি চলছি সেই পথে, সে--ই মসজিদে? যা ছিল একদা ক্ষুদ্র মদীনা থেকে শুরু করে অর্ধ পৃথিবীর সংসদ, বিচারালয়। জীবনের প্রিয় বাসনার বাস্তবতা টের পেয়ে আমি সিজ্দায় লুটিয়ে পড়লাম এশার সালাতে। এই প্রথম সালাম জানালাম তাকে, যিনি একদা এসেছিলেন এই পৃথিবীতে সমস্ত সৃষ্টির জন্য রহমত স্বরূপ।
'আস্সালাতু আস্সালামু 'আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ্, আস্সালাতু আস্সালামু 'আলাইকা ইয়া হাবীবাল্লাহ্, আস্সালাতু আস্সালামু 'আলাইকা ইয়া সাইয়্যেদুল মুরসালীন, আস্সালাতু আস্সালামু 'আলাইকা ইয়া রাহমাতুলি্লল 'আলামীন'- সালাত এবং সালাম হে আল্লাহর রাসূল, হে আল্লাহর প্রিয় বন্ধু, হে নবী-রাসূলগণের নেতা, হে বিশ্ব-জাহানের রহমত! সালাম জানালাম তার প্রিয় বন্ধু আবু বকর রাদিয়াল্লাহু 'আনহুকে; যিনি ছিলেন তার সুখ-দুঃখে, বিপদে আপদে ছায়ার মত সাথী, হিজরতের সঙ্গী। আরো সালাম জানালাম তার পাশে শায়িত সেই উমার রাদিয়াল্লাহু 'আনহুকে; যিনি একদা নাঙ্গা তরবারী হাতে নিয়ে ছুটে এসেছিলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করতে, আর সেই উমারই রাসূলের মৃতু্যর পর প্রিয় মানুষটিকে হারানোর ব্যাথা এতই অসহনীয়ভাবে অনুভব করেছিলেন যে, তখনো নাঙ্গা তরবারী নিয়ে বলেছিলেন, 'যে বলবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা গেছেন, তার রক্ষে নেই'! অবশেষে ধৈর্যের প্রতীক আবু বকর তাকে শান্ত করেন আল্লাহর বাণী শুনিয়েঃ "মুহাম্মদ একজন রাসুল মাত্র; তার আগে বহু রাসূল গত হয়েছে। কাজেই যদি তিনি মারা যান বা নিহত হন তবে কি তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে? এবং কেউ পৃষ্ঠ প্রদর্শন করলে সে কখনো আল্লাহ্র ক্ষতি করবে না; বরং আল্লাহ্ শীঘ্রই কৃতজ্ঞদেরকে পুরস্কৃত করবেন।" [সূরা আলে-ইমরানঃ 144]
কি পরম বন্ধু ছিলেন তারা, দুনিয়াতেও সুখ-দুঃখ, সংগ্রাম-লড়াইয়ে ছিলেন পাশাপাশি আর আখেরাতের প্রথম মঞ্জিল 'কবর', এখানেও রয়েছেন পাশাপাশি। হে আল্লাহ্! আমাকে আপনার ও আপনার প্রিয় বন্ধুর বন্ধুত্বে ধন্য করুন এবং সন্তুষ্ট রাখুন, আমাদেরকেও। আমীন! (চলবে)
[আমার প্রথম সফর ছিল ভাবাবেগে ভরপুর, তাই পরবর্তীতে যখন মদীনার বাসিন্দা হয়ে মদীনায় প্রর্ত্যাবর্তন করবো, মানে লিখবো, তখন তথ্যভিত্তিক লেখার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ্।]
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০০৭ দুপুর ১২:৫০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




