বিছানায় উল্টো হয়ে শুয়ে বালিশে মাথা গুঁজে কাঁদছিল প্রমি। হঠাৎ পাশে রাখা সেল ফোনটা বেজে ওঠে। স্ক্রীনে তাকিয়ে দেখে হৃদয় ফোন দিয়েছে। অনিচ্ছা স্বত্তেও ফোনটা রিসিভ করে চুপ করে বসে থাকে প্রমি। হৃদয়ও চুপ। কিছুক্ষণ পর ওপাশ থেকে হৃদয়ের কন্ঠ ভেসে আসে - - বাবু? - হুম! - বাবুউউ? - হুম? - বাবু! - আরে বলবা তো কি হইছে - স্যরি! ( মন খারাপ করে) - হুহ ,লাগবেনা কিছু আমার , তুমি থাকো তোমার মতো। বলেই ফোনটা কেটে দেয় প্রমি। ভীষণ মেজাজ খারাপ হয়েছে তার আজকে। একটু মন খারাপ ও। হৃদয় ছেলেটা যে কি! আজ সারাদিন ছেলেটার কোন পাত্তাই নেই! একে তো সারাদিন একটা ফোনও রিসিভ করেনি আবার আজ বিকেলে দেখা করার কথা ছিলো, তাও করেনি। আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পর তার বার্থডে অথচ হৃদয় এ নিয়ে কিছুই বললোনা! বোধহয় ভুলেই বসে আছে সে। মনটা ভীষণ খারাপ প্রমির । ঠোঁট ভেঙ্গে কান্না আসছে তার অভিমানে। বিছানার পাশে রাখা ফোনটা আবার বেজে উঠেছে বিশেষ রিংটোনে। হৃদয় ফোন দিলে ওটা বাজে। প্রমি ফোনটা রিসিভ করে কানে লাগিয়ে চুপ করে শুনে - এবার আর ওপাশ থেকে কোন আওয়াজ নেই। হৃদয় চুপ করে আছে। প্রমিও চুপ। দু মিনিট ধরে কোন সাড়াশব্দ নেই দুপাশ থেকে। একদম নিশ্চুপ। কিছুক্ষণ পর হৃদয়ই ফোনটা কেটে দিলো। হৃদয় নিজে ফোনটা কেটে দেয়াতে প্রমির মুখটা কেমন হয়েছে ওটা ভেবেই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ল সে। আর ওদিকে , প্রমি ভেবেছিলো হৃদয় হয়তো এবার ওর বার্থডের কথা বলবে। কিন্তু কই! ফোন দিয়ে কথা না বলে টুস্ করে কেটে দিলো ফোন! প্রচন্ড অভিমানে প্রমি একসময় না পেরে হাপুস করে ঠোঁট বাকিয়ে কেঁদে দিলো। আর মাত্র ১৫ মিনিট পর প্রমির জন্মদিন। প্রমি ভাবছে , লাগবে না আর ওর বার্থডে সেলিব্রেট করা। প্রমি লাইট অফ করে বিছানায় শুয়ে কান্নাভেজা চোখে জানালার বাইরে তাকিয়ে রইলো। বাইরে তখন অঝোর শ্রাবণ। ঝমঝম শব্দ তুলে ভীষণ বৃষ্টি ঝরছে সেই কখন থেকে। সাথে প্রচন্ড বাতাস। বৃষ্টির চাদরের ফাঁক দিয়ে একটুখানি চাঁদ দেখা যাচ্ছে। কেমন মন খারাপ করা একটা রাত। অথচ কত্তো সুন্দর হতে পারতো আজ রাতটা! এটা ভেবেই প্রমি আবার ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে। ঘরের দেয়াল ঘড়িটা ১২ টা বাজার সাথে সাথে ঢং ঢং শব্দ তুলে সময় জানান দিলো। আজ প্রমির বার্থডে। হঠাৎ করে প্রমির ফোনটা আবার বেজে উঠল। প্রমি অভিমান করে ফোনটা রিসিভ করলো না। দ্বিতীয়বার ফোন বেজে ওঠাতে অনিচ্ছা স্বত্তেও ফোনটা রিসিভ করে কান পাতল। হৃদয় বলছে - - হ্যালো! - (প্রমি চুপ) - প্রমি ! - বলো (কান্না ভেজা কন্ঠে) - কি ভীষণ বৃষ্টি হচ্ছে দেখেছ! - হু ( কেঁদে) - ভিজবা? - না ( কেঁদে) - ওকে , একটা কাজ করো। জানালা দিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখো , একটা ভূত! - দুষ্টুমি করবা না একদম। তুমি আর আমার সাথে কথা বলবা না। তুমি একটা পচা , খুব পচা। ( কান্নাভেজা কন্ঠে) - প্লিজ তাকাও ই না! প্লিজ বাবুটা। - হু প্রমির জানালার ফোকর দিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখে আসলেই কে যেন নিচে দাড়িয়ে আছে! ফোনটা কানে ধরে এক দৌড়ে সে বারান্দার দরজা খুলে বারান্দা দিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখল এত্তোগুলো ফুল নিয়ে, বিশাল এক কাগজে "শুভ জন্মদিন বাবুটা!" লিখে হাসি হাসি মুখ নিয়ে হৃদয় নিচে দাড়িয়ে আছে। প্রমিকে দেখামাত্রই বাচ্চা ছেলেদের মতো লাফিয়ে হৃদয় চিৎকার করে বলতে লাগল - - হ্যাপি বার্থডে প্রমি !!! বাবুটা!! ফোনটা তখনো প্রমির কানে। প্রমি ডান হাতের তর্জনীটা ঠোঁটের সামনে এনে হৃদয়কে ' শশশ করে চুপ করতে বলল। পাশের রুমে ওর বাবা মা ঘুমুচ্ছে। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে প্রমির , আবার কান্না পাচ্ছে। হঠাৎ করে টুপ করে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল চোখের কোণ থেকে। কান্নাভেজা কন্ঠে বললো - - তুমি একটা পচা। খুউউব পচা! আবার কাঁদছে প্রমি, তবে এ কান্নায় কোন অভিমান নেই , আছে একটুকরো অকৃত্রিম পবিত্র ভালোবাসার স্পর্শ
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১০:৩৭