somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাগলী বউ

২০ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

" রাস্তার একমাথা থেকে আরেক মাথা হাঁটছি।বাসায় ঢুকার সাহস হচ্ছে না। প্রমি আজ বলে দিয়েছিল ঠিক চারটার সময় অফিস ছুটি নিয়ে বাসায় আসতে।কিন্তু আজ অফিসে বেজায় কাজ থাকায় ওর কথাটা ভুলেই গিয়েছিলাম।যখন মনে পড়েছে তখন খুব দেরী হয়ে গিয়েছে, সন্ধ্যা ছয়টা বেজে গিয়েছে। এখন বাসায় ঢুকলে কপালে শুধু শনি না রবি মঙ্গল বৃহস্পতি ইউরেনাস নেপচুন সবই আছে।ছোটবেলায় মায়ের বকুনির ভয়ে বাসায় ঢুকতে পারতাম না আর এখন বউ এর ভয়ে পারি না।ধূর কপাল টাই খারাপ। হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম বাসার কাছের চায়ের দোকান টার কাছে।সেখান থেকে ১ টা সিগারেট নিয়ে ধরতে গিয়ে মনে পড়ল গতবার সিগারেট খেয়ে বাসায় যাওয়ার পর প্রমি একটা ফুলদানি ছুড়ে মেরেছিল আর সেইটা লেগেছিল ড্রেসিং টেবিলের আয়নায়। আয়নাটা ক্রিকেট স্ট্যাম্প এর মতই ভেঙে পড়েছিল।সত্যি মেয়েটার হাতের টিপের কোন তুলনা নেই।আজ ও সিগারেট খেয়ে বাসায় ফিরলে সরাসরি আমাকেই বোল্ড আউট হতে হবে।থু করে সিগারেটা টা ফেলে দিতেই দেখলাম চায়ের দোকানি আর কাস্টমার গুলো তাকিয়ে আছে আমার দিকে।পাগল ভাবছে হয়ত।তা ভাবুক আমার বউ এর অত্যাচার তো আর এদের সহ্য করতে হবে না।আমারটা আমাকেই করতে হবে।আচ্ছা নারী নির্যাতন সংস্থা আছে পুরুষ নির্যাতন সংস্থা নেই? যদি এমনটা থাকত তাহলে প্রতিদিনই হাজার হাজার নির্যাতিত পুরুষ সেইখানে ধরনা দিত। সন্ধ্যা প্রায় হয়ে আসছে।বাসায় যাওয়া দরকার।আর বেশীক্ষন দেরী হলে হয়ত প্রমি বাসায়ই ঢুকতে দিবে না।রাতটা কাটাতে হবে সিঁড়িতে।রাস্তার মোড়ের ফুলের দোকান থেকে এক তোড়া লাল গোলাপ নিয়ে নিলাম। গোলাপ দিলে ঝগড়া ঝাটি কিংবা চিল্লাচিল্লির পরিমান টা হয়ত কমবে না কিন্তু মনে মনে রাগটা কমে গেলেও যেতে পারে।আর তখনি জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে ভালবাসি বললেই সব রাগ কমে পানি হয়ে যেতে বাধ্য। বাহ নিজের মাথার বুদ্ধিতে নিজেই আশ্চর্য হলাম। চেস্টা করতে ক্ষতি কি?কাজ হলেও হতে পারে। বাসার গেটের সামনে এক ফকির কে ১০ টাকা দিলাম। ফকির আমায় বলল, "বাবা তোমার সব পেরেশানি আল্লাহ দুর করে দিক আমিন।"মনে মনে বললাম," আমিও তো তাই চাই বাবা এখন আমাকে এই পেরেশানি থেকে দূর করতে পারে স্বয়ং আল্লাহ। যা ভয় করছিলাম তাই হল, প্রমি দরজা খুলছে না। বুঝলাম আজ সিঁড়িতেই করতে হবে আমার বিছানা।হঠাৎ মনে পড়ল আমার কাছে বাসার ডুপ্লিকেট চাবি রয়েছে। ভাবলামএকবার শেষ চেস্টা করে দেখি ঘরে ঢুকতে পারি কিনা। খুট করে দরজা খুলে গেল।বাসা এত অন্ধকার কেন বুঝলাম না।পুরো বাসার বাতি জালিয়ে দিলাম।বেড রুমের বাতি জ্বালাতেই দেখলাম মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে প্রমি। বুকের ভিতরটা কেমন জানি ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।মাথা ঘুরে পড়ে যেতে যেতে নিজেকে সামলে নিলাম।ছুটে চলে এলাম আমার বউটার কাছে।মাটি থেকে তুলে বিছানায় শুয়ে দিলাম।কপাল কেটে রক্ত পড়ছে আমার বউটার।এম্বুলেন্স ডেকে হাস্পাতাল নিলাম প্রমিকে। ডাক্তার আমাকে রুম থেকে বাহিরে বের করে দিয়ে চেকাপ করতে লাগল।আমি রুম এর বাহির থেকে দেখতে লাগলাম আমার বউটাকে।কখন যে চোখে পানি চলে এসেছে বুঝতে পারিনি।কিছু পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে।আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার স্মৃতি,কাছে আসার স্মৃতি,বিয়ের স্মৃতি।একটু আগে আল্লাহর কাছে পেরেশানি দূর করে দেওয়ার জন্য দোয়া করছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমার এই ভালবাসার মানুষটার আমার উপর রাগ,অভিমান,ঝগড়া আরেকবার শোনার জন্য আমি জীবনটাও দিয়ে দিতে পারি। শাটের হাতা দিয়ে চোখের পানি মুছলাম।এই সময় রুম থেকে বের হয়ে এল ডাক্তার।আমি তাকে ধরে বল্লাম, —আমার বউয়ের কি হয়েছে ডাক্তার? —তেমন কিছু না।মাথা ঘুরে পরে গিয়েছিলেন বোধহয়। এই সময় মাথা ঘোরা স্বাভাবিক। —আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না ডাক্তার। এই সময় মানে? —কেন আপনি যে বাবা হতে যাচ্ছেন জানেন না?আপনার স্ত্রী তো জানে।যাই হোক এখন যখন জানলেন তখন ভালমত বউ এর যত্ন নেবেন। আমার ডাক্তারের কথা কিছুই মাথায় ঢুকছে না। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসলাম। আবারো এক তোড়া লাল গোলাপ কিনে বউ এর কেবিনের দিকে রওনা দিলাম। চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে আমার বউটা।আমি আস্তে করে তার বিছানার পাশে এসে বসলাম। হাতটা ধরতেই আমার সাদা পরীটা চোখ মেলে চাইল। আমাকে দেখে তার ঠোঁটে একটুখানি হাসি ফুটে উঠতেই মিলিয়ে গেল। অভিমানি গলায় বলল, "আসলে কেন? অফিসেই থাকতা।আমার মত অত্যাচারী বউ এর কাছে না আসাই ভাল।তাই না?আমি তো খুব খারাপ।” আমি এবার তার নরম হাতটা শক্ত করে ধরে বললাম,"বউ তুমি যান,তোমার এই রাগ অভিমান শোনার জন্য সারাদিন অপেক্ষা করে বসে থাকি। অফিসে যতক্ষন থাকি শুধু মনে মনে বলি কখন বাসায় যাব? আমার বউটার রাগারাগি দেখব।সে রাগ করে থাকবে আমি কোন কথা না বলে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকব।রাগারাগির পরে তাকে বুকে জড়িয়ে নিব।কপালে চুমু দিব।আর মন খুলে ভালবাসি বলব।” —হুম বুঝছি থাক আর বলতে হবে না। —বউ দেখ না তোমার জন্য কি এনেছি। প্রমি তাকাল।তাকে লাল গোলাপের তোড়াটা দিতেই অভিমান মুছে সেখানে একরাশ ভালবাসা দেখলাম।তার এই আনন্দ টা আরেকটু বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য কানে কানে বললাম,"তাড়াতাড়ি বাসায় চলো আমাদের বাবুটার জন্য অনেক কেনাকাটা করতে হবে।"অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল প্রমি। এবার চোখে ভর করেছে লজ্জা। মিস্টি লাজুক একটা হাসি দিয়ে চোখ নামিয়ে ফেলল আমার বউটা।আর আমার মাথায় ঘুরতে লাগল একটি গানের দুইটা লাইন, "ভালবাসি তোমায়,ভালবেসে যাব জনম জনমের সাথী হবো।" :) :)


ফরিদ আহমেদ হৃদয়
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:৫০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×