somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নামের প‌্যাচাল

১৩ ই নভেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক বড়ো পরিবার আমাদের। গ্রামে থাকাকালীন সময় পর্যন্ত মোটামুটি কনজারভেটিভ পরিবেশে বড়ো হতে হয়েছে। জন্মের পর থেকে দেখে আসছি বিরাট টিলার উপরের বাড়ি মাটির দেয়াল দিয়ে বাইরের থেকে ভিতরের অংশ আলাদা করা। যাতে বাইরে থেকে অপরিচিত কেউ বাড়ির ভিতরের কাউকে দেখতে না পারে। আমাদেরও বিশেষ করে মা-বোনদের জোরে কথা বলা নিষেধ ছিলো। কথা যাতে বাড়ির মাটির দেয়াল টপকিয়ে রাস্তায় লোকজন শুনতে না পারে তারজন্য ছিলো ব্যাপক কড়াকড়ি। টিলা কেটে বাড়ি তৈরী করার সময়ই মাটির দেয়ালটা রেখে দেওয়া হতো। আমাদের এলাকার প্রতিটি টিলায় এই রেওয়াজে ঘর-বাড়ি তৈরী হতো। তখনো ইট,বালি, সিমেন্টের এতো প্রতুলতা ছিলো না। বর্তমানে পুরো বাড়ি ইটের দেয়ার। তবে স্মৃতি হিসেবে মাটির কিছু দেয়াল এখনো রয়ে গেছে।
মামাতো, খালাতো, মিলিয়ে ভাইবোন অনেক। ভাইবোনদের কি নামে ডাকবো সেটাও বিরাট ঝামেলার বিষয়। মা-বাবার/মামা-মামীর কড়া নিষেধ ছিলো বড়ো কাউকে নাম ধরে ডাকা যাবে না। মানে, করিম ভাই, রহিম ভাই অথবা সুলতানা আপা, অমুক আপা এইসব নামে ডাকা যাবে না। উনাদের বক্তব্য ছিলো, যদি নাম ধরেই ডাকতে হয় তাহলে আর ভাই অথবা আপা কেনো? এজন্য আমাদেরও বিভিন্ন নামে ডাকার জন্য বিভিন্ন স্টাইলের আশ্রয় নিতে হতো। কারো নাম বড়োভাই, ছোটভাই, মেঝোভাই, লালভাই, ধলা(সাদা)ভাই সহ ইত্যাদি। আপাদেরও একই অবস্হা। সময়ের আবর্তে পরিবারের অনেকেই শহরমুখো হয়েছেন। যারা শহরে গিয়ে বড়ো হয়েছে ওরা আর ঐসব (সাদা,লাল, কালো) নামে কাউকে ডাকে না। ওরা ডাইরেক্ট নামের সাথে ভাই অথবা আপা লাগিয়ে দেয়। ধীরে ধীরে সবকিছু সয়ে গেছে অথবা সবাই মেনে নিয়েছে। কিন্তু আগের নামের টাইটেলোগুলো যাদের পেছনে লেগেছিলো উনাদের তা নিয়েই চলতে হচ্ছে। আমি মা কে "মাই" বলে ডাকা শুরু করেছিলাম (মামাদের অনুকরনে)। এখনো সেই নামেই আছি। বাবাকে অবশ্য আব্বাই ডাকি (মামারা ডাকে বাজি)। একদিন আমাদের বাসায় মোটামুটি বয়স্ক একজন গেষ্ট এসেছিলেন। আমি মা'কে মাই বলে ডাকার পর লোকটি বল্লো কি নামে ডাকলে? আমি একটু লজ্জা পেয়ে গেলাম (ইউরোপে থেকেও আধুনিক হতে পারলাম না)। রিপিট করতেই লোকটি কেঁদে দিলো। বল্লো আমিও আমার মাকে এই নামে ডাকতাম। অনেক বছর হলো উনার মা মারা গেছেন। আমার ছোট বোন মা-বাবাকে তো যখন যা খুশি ডাকে। তবে আমাদের ডাকা সেই নামগুলো খুবই মধুর।

এবার আসি আমার বর্তমান নামের ঝামেলা নিয়ে। বড়ভাইদের তুলনায় আমি ক্রমান্বয়ে একটু নীচে। তাই বড়ো মেঝো অথবা ছোট কোন টাইটেলই আমার ভাগ্যে ঝুটেনি। চামড়ার কালার একটু ফর্সা তাই ঐনামটাই আমার পেছনে সিল মেরে গেলো (গতবছর এক পিচ্চি ফাজিল মেয়ে আমাকে দেখে বলে তুমি তো সাদা লাউ X((। আজকের পিচ্চিগুলো কথা বলতে কোন পরোয়া করে না। সবগুলো বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে X(()। নিজ বাড়িতে অথবা আত্মীয়দের মাঝে সিলমারা নামে পরিচিত। গ্রামে পরিচয় ডাক নামে। স্কুল, মক্তবে ডাকনামে সবাই চিনে। এস.এস.পি পরীক্ষার সময় আসল নামের ডাক পড়লো। এতোদিন আসল নামের কোন হদিছ ছিলো না। মামা এসে নাম লিখালেন। আসল নামের সামনে পেছন মোহাম্মদ, আহমদ কোনকিছুই বাদ যায়নি। সার্টিফিটেকগুলোও হয়ে গেলো সেই অনুপাতে। পিতার নামের আগেও মোহাম্মদ, আহমদ লাগানো হলো। পরবর্তিতে আব্বার পাসপোর্টে দেখা গেলো উনার নামের শেষে আহমদ আছে কিন্তু নামের আগে মোহাম্মদ নেই। তখন কেউ এতো কিছু মাথায় নেয়নি। সার্টিফিকেট হওয়ার পর যখন পাসপোর্ট করতে যাবো তখন খেয়াল হলো। কিন্তু নামের প্রথমের মোহাম্মদ বদলানোর ঝামেলা দেখে আর সাহস হয়নি। কলেজ, ইউনিতে বন্ধুরা অথবা শিক্ষকেরা মধ্যম নাম দিয়ে ডাকতো। যা সাধারনত দেশে দেখা যায়। নামের প্রথম আর শেষের উপাধি তো শুধুমাত্র সার্টিফিকেটের জন্য অথবা মরার পর মাইরের হাত থেকে বাচার জন্য বলা যে আমি মোহাম্মদের (স: ) উম্মত।

দেশের ইতি টেনে যখন বিদেশমুখো হলাম তখন নামের আসল মোজেঝা শুরু হলো। বিভিন্ন ফরম পুরনে ওরা প্রথম নাম আর শেষ নামের (ফ্যামেলি নেম) জন্য জায়গা থাকে । কিন্তু আমার প্রথম নাম যে এতো বড়ো (পুরো মোহাম্মেদ। সাথে ডাবল এম) যা ঐ খালি জায়গায় ধাক্কাধাক্কি করে অথবা নীচে লিখতে হতো (এবং এখনো হয়)। কোনমতে পড়াশোনার ঝক্কি শেষ করে যখন কামলা দিতে আসলাম। তখন শুরু হলো আরেক ঝামেলা। এমনিতেই তখন ৯/১১ পর থেকে মুসলিম নাম দেখলেই ওদের চেহারা সেই রকম হয়। তারপর আগে পিছে পুরো মুসলিম টাইটেল নিয়ে আমি ইন্টারভিউ দিচ্ছি। চাকরী একটা হলো। এখন কলিগরা কি নামে ডাকবে? ওরা সাধারনত নামের প্রথম অংশ দিয়েই ডাকে। এখন আমার প্রথম অংশ তো দুইটা /:)। বল্লাম তোদের যা খুশি তাই দিয়ে ডাক। আমার কোন অসুবিধা নেই। এখন একজন মোহাম্মদ, কেউ আহমদ নামেই ডাকে। মধ্যিখানে মা-বাবার দেওয়া আসল নামটা উদাও :((:((

দেশে মোহাম্মদের পরিবর্তে অনেক সময় এম.ডি লিখা হয়। একজন বাংলাদেশী বড়ভাই সার্টিফিকেটেই এম.ডি লাগিয়ে দিয়েছেন। উনার পাসপোর্টেও এম.ডি। অথচ এম.ডি মেডিক্যালের একটি ডিগ্রী। উনি যখন চাকরীতে জয়েন করলেন তখন উনার কলিগরা এম.ডি এর মিনিং জানতে চাইলো। উনি ভয়ে আর মোহাম্মদ বলেননি। যদি চাকরী চলে যায়। তারপর থেকে উনি অফিসে এম.ডি নামেই পরিচিত। আমি অবশ্য ভয়ের কথা চিন্তা করি না। কাউকে পরিচয় দিতে কখনো মোহাম্মেদ কখনো আহমেদ বলি। নতুনভাবে মা-বাবার দেওয়া নাম (মিডেল নেম) বলে ঝামেলা বাড়াতে চাই না। এখন কেউ ভালো কথা বল্লেও আমাকে না বলে মোহাম্মদ অথবা আহমদকেই বলে। গালি দিলেও মোহাম্মদ অথবা আহমদকেই দেয়। আমার কিছু কলিগ এবং বস আছে যারা খুবই ক্লোজ। এইরকম ক্লোজ যে গালাগালি থেকে শুরু করে একদিন আলাপে তার গার্লফেন্ড কি টাইপের সেনিটেশন নেকপিন ব্যবহার করে সেইটা বলেছে। কলিগগুলোও সেই রকম। নামের আগে সাধারনত গালি দিয়েই আমাদের দিন শুরু হয়। মাঝেমাঝে ভাবি, গালিটা কি আমাকে দিলো নাকি যাকে (মোহাম্মদ (স: ) )সম্মান করে নামের আগে, পেছনে টাইটেল লাগিয়েছিলাম উনাকেই দিলো? কিন্তু এখন এইটাই বাস্তবতা।

কয়েকমাস থেকে বড়ো ভাইয়ের শখ হয়েছে উনার নাম পরিবর্তন করার। উনার নামের নাকি কোন অর্থই নেই। আমার ধারনা উনার শশুর আব্বা অন্য নামে ডাকেন। তাই নাম পরিবর্তন। আমার আবার কোন কিছুতে মুখ আটকায় না। আমাকে বলার পর হালকা একটু ঝাড়ি দিলাম। বল্লাম, আমাদের মামা বাংলাদেশে বেশ বড়ো একজন ডাক্তার। টাকা পয়সাও সেইরকম। প্রচন্ড ধার্মিকও। উনার নামের কোন অর্থ নেই। তাইবলে কি উনি নাম বদলাইছেন? ভাইজান এখন আমাকে পাশ কাটিয়ে দেশে বিভিন্ন জনের সাথে যোগাযোগ করতেছেন। আমিও আপাতত ঝামেলা মুক্ত। তবে নিজের নামটা যে হারিয়ে যাচ্চে সেইটা নিয়ে চিন্তিত/:)
১২টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×