somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাহিত্যিকের বিরুদ্ধে প্রগতির ভেক ধরা শব্দ-তালেবানদের মধ্যযুগীয় লড়াই

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'অনুভূতি' আসলে সব শালারই আছে! প্রগতিশীলতার ভেক ধরা কেউ কেউ এতোদিন নিপুণভাবে অভিনয় করে আসছিল যে, 'অনুভূতি' জিনিসটা শুধু হেফাজতিদেরই আছে, ধর্মান্ধদেরই আছে, মৌলবাদিদেরই আছে। এই বেলা হাসনাত আবদুল হাইয়ের ছোট্ট একটি গল্প একেবারে হাতেনাতে প্রমাণ করিয়ে ছাড়লো যে, প্রগতিশীলতার ভেক ধরে যারা হেফাজতিদের বিরোধিতা করে আসছিল, বাক-স্বাধীনতার কথা বলে চোখের জল ফেলছিল, তারাও আসলে হেফাজতি গোত্রেরই, তারাও আসলে মৌলবাদিই, হেফাজতিদের মতো তারাও ভিন্নমতকে সহ্য করতে পারে না। রসুনের সবগুলো কোয়াই আসলে এক জায়গায়। এতোদিন ধরে বাক-স্বাধীনতার ধ্বজা ধরার অভিনয় যারা করে আসছিলেন, ছোট্ট একটি গল্প তাদের মুখোশটা পুরোপুরি খুলে দিয়েছে। এই লোকগুলোই এতোদিন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যেভাবে চোখের জল ফেলে আসছিলেন, তার সব একত্র করলে উত্তরবঙ্গের কোনো এক মরা নদীতে প্রাণ সঞ্চার করা যেতো নিশ্চিত। হেফাজতের ধর্ম-'অনুভূতি' নিয়ে এতোদিন ধরে কতোই না ঠাট্টা, কতোই না মশকরা তারা করে আসছিলেন! অথচ ছোট্ট একটি গল্পের ভার বহন করতে গিয়ে তাদের 'অনুভূতি' এতোটাই আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে যে, রীতিমতো হেফাজত স্টাইলে তারা সাহিত্যিকের কল্লা চাইছে, পত্রপত্রিকা পোড়ানোর উৎসবে মেতেছে। আমার নিজের ধারণা, প্রথম আলো শ্রেফ বাণিজ্যিক স্বার্থে ক্ষমা চেয়েছে। সেটিই স্বাভাবিক। কারণ প্রথম আলো তো আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম কিংবা গাণ্ধী আশ্রম নয় যে, তারা জনসেবা করার জন্য পত্রিকা বের করেছে। বিশ্বের যে কোনো দেশেই সংবাদপত্র হলো একটি বাণিজ্যিক পণ্য। তবু প্রথম আলোর এই ক্ষমাপ্রার্থনা মুক্তচিন্তাকে কিছুটা হলেও ব্যাহত করবে। তাদের এই ক্ষমাপ্রার্থনার নিন্দা জানাই।

লেখক কী লিখবেন, সেটি তার স্বাধীনতা
হাসনাত আবদুল হাইয়ের সেই ছোট গল্পে সীমা নামের একটি মেয়ের জীবনকথা চিত্রিত হয়েছে। চাঁদে যেমন সাঈদীর ছবি খুঁজে পেয়েছেন অনেকে, ঠিক তেমনি ওই গল্পে গণজাগরণ মঞ্চের কোনো এক নারীকর্মীর জীবনকাহিনী খুঁজে পেয়েছেন কল্পনার জোর খাটিয়ে। অনেকে এনেছেন অশ্লীলতার অভিযোগ। সাহিত্যে যৌনতা থাকাটা কি অবৈধ কোনো কিছু? কোনো লেখা কারো ভালো লাগতে না পারে, কারো কোনো লেখা একজনের কাছে অশ্লীল মনে হতে পারে, তিনি আপত্তি জানাতেই পারেন। ক্ষুব্ধ কেউ সমালোচনাও করতে পারেন শালীন ভাষায়, সাহিত্যের প্রথা মেনে। আবার কারো কাছে সেই একই লেখা অশ্লীল মনে নাও হতে পারে। কিন্তু একজন লেখকের লেখা একেবারে বাতিল করে দেওয়া যায় না। লেখকের কলমের ওপর ফিল্টার বসানো যায় না। লেখক কী লিখবেন, সেটি পুরোপুরিই তার নিজের স্বাধীনতা। অমুক-তমুক এই নির্দেশ দিতে পারেন না যে, লেখক এই শব্দ ব্যবহার করতে পারবেন আর ওই শব্দ ব্যবহার করতে পারবেন না। অমুক বিষয়ে লেখা যাবে আর তমুক বিষয়ে লেখা যাবে না। এগুলো শ্রেফ তালেবানি মানসিকতা। জামায়াতে-হেফাজতে ইসলামীর সঙ্গে এইসব প্রগতিশীল-মোল্লার খুব বেশি তফাৎ নেই। হাসনাত আবদুল হাইয়ের লেখাটির ক্ষেত্রে যা ঘটছে, তা হচ্ছে লেখকের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ - স্পষ্ট করে বললে শব্দ-তালেবানি। ব্লগ ও ফেসবুকের কল্যাণে এই শব্দ-তালেবানি ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে। এই তালেবানদের হাতে লেখকের স্বাধীনতা পরাস্ত হতে পারে না। একপাল শব্দ-তালেবানের হাতে লেখকের স্বাধীনতা ভূলুন্ঠিত হবে- এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তা না হলে হয়তো এমন একদিন আসবে, প্রগতিশীলতার ভেক ধরা এই শব্দ-তালেবানরা তাদের পছন্দসই শব্দ কিংবা প্লটের তালিকা ধরিয়ে দেবে লেখকের হাতে। আর লেখক সেই তালিকা দেখে দেখে শ্লীল সাহিত্য-আইনসম্মত সাহিত্য রচনা করবেন।

শব্দ-তালেবানদের প্রতিহত করা জরুরি
প্রগতির স্বার্থে যে কোনো মূল্যে এই শব্দ-তালেবানদের প্রতিহত করা জরুরি। এই স্বাধীনতা রক্ষার জন্য লড়েছি অতীতে, লড়বো সারাজীবনই।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৩:০৮
৪৩টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×