ভুমিকা
একটা গল্প দিয়ে শুরু করতে চাই। ক্লাসে শিক্ষকের উচ্চারন আঞ্চলিকতা দোষে দুষ্ট। একবার এক ছাত্র তাকে প্রশ্ন করলো, “স্যার, আপনি বলেন Horse মানে গুরা, Round মানে গুরা আবার Powder মানেও গুরা। এই তিনটার মধ্যে পার্থক্য কি?” উত্তরে শিক্ষক বললেন, “আরে বুইজলানা- একটা হইল দৌরাইন্যা গুরা, একটা হইল বাকাইন্যা গুরা আর বাকিটা হইল গুরা গুরা”। উল্লেখ্য তিনি ‘গ’-‘ঘ’, ‘র’-‘ড়’ এবং ‘ও’কার -‘উ’কার এর উচ্চারন একাকার করে ফেলায় এই বিভ্রাট।
এবার আসি বাস্তব ঘটনায়- স্কুলে শিক্ষকের নির্দেশ ‘গ’ ও ‘ঘ’ শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য- “যারা গরুর ‘গ’ তারা মাঠের উত্তর পাশে আর যারা গোরার ‘গ’ তারা মাঠের দক্ষিন পাশে থাকবে”। এটাও ঘটে উচ্চারন বিভ্রাটের কারণে। আমরা ভাল রেজাল্ট করার জন্য যতটা আগ্রহী আসলে উচ্চারনে ততটা নই। আমাদের অধিকাংশের ধারনা ‘পরীক্ষার খাতায় লিখতে পারলেই হয়, উচ্চারন তো আর দরকার হয় না’। আসলে পরীক্ষার খাতায় হয়ত এটা দরকার হয় না, কিন্তু সঠিক উচ্চারনের প্রয়োজন জীবনের সকল ক্ষেত্রে। এজন্যই পরীক্ষায় পাস করে হয়ত টিচার হওয়া যায়, কিন্তু সঠিক উচ্চারনের অভাবে ‘গ’ কে গরুর গ, ‘ঘ’ কে ঘোড়ার গ বলে নির্দেশ করতে হয়, তা ও ঘোড়া উচ্চারন করতে গিয়ে “কত ঘোড়া গেল তল” দশার সৃষ্টি হয়। আমরা সঠিক উচ্চারন পারিনা বলেই কোথাও গিয়ে দু’কথা বলতে গিয়ে গলা এবং পা কেঁপে যায়।
কোথাও কোথাও আঞ্চলিকতার প্রভাবে ‘ও’ কার এবং ‘উ’ কার উচ্চারন ওলট পালট হয়ে যায়। তেমনি একজন নবীন সঙ্গীত শিক্ষার্থীর প্রথম গাইতে পারা গান শুনাতে লাগল “আলু আমার আলু উগ আলু ভুবন ভরা!”
সুশীল পাঠক সমাজ! হয়তো ভ্রূ কুঁচকে ভাবছেন এত ভনিতা করে উচ্চারন নিয়ে এত ব্যাখ্যানা কেন? কারণ একটা অবশ্যই আছে। তা হল এবারের আলোচক ওয়ার্কশপে শ্রদ্ধেয় গুরুজী একটি বিষয় সঠিক উচ্চারনের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন তা হোল “কোয়ান্টাম মেথড”। আমরা কেউ কেউ ম্যাথড, কেউ বা মেথোড বলি। সঠিক হবে মেথড। ‘থ’ এর উচ্চারন হবে ‘অ’ কারান্ত। ‘ড’ এর অ বর্জিত বা হস যুক্ত। এ ছাড়া কখনও কখনও কোন উপস্থাপকের ঘোষণার বেলায় এমন ঘটে থাকে, “এবার আমরা মেঈটেশনে যাব”। এখানে ‘ট’ বর্গের দুটি অক্ষর পাশাপাশি থাকার কারনে এবং বিশেষ সচেতন না থাকায় ‘মেডিটেশন’ বলতে গিয়ে হয়ে যায় ‘মেঈটেশন’।
অনেকটা “পাখি পাকা পেপে খায়” বা “কাঁচা গাব, পাকা গাব” বারবার বলতে গিয়ে আমাদের যে বিপত্তি ঘটে অনেকটা সেরকম। এটি অবশ্য সঠিক চর্চার মাধ্যমে আয়াসলব্ধের ব্যাপার। আমি নিজে যদিও উচ্চারনে এত পাণ্ডিত্য অর্জন করি নেই তার পরেও যে বিষয়গুলি আমাদের কানে এরকম ভুল হিসেবে বাজে তা নিয়ে আলোকপাত করতে চাই। (যদি সবাই রাজি থাকেন) আমরা চাইলে সবাই এরকম ছোট ছোট টিপস দিয়ে একে অপরের সঠিক উচ্চারনের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে পারি। ততক্ষন সবাই সুস্থ থাকুন, ভাল থাকুন, প্রশান্তিতে থাকুন!