somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শীত তুমি কি, বড় জানতে ইচ্ছে করে ....... [ ছবি ও লেখা ব্লগ ]

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
শীত তুমি কি, বড় জানতে ইচ্ছে করে .... [ ছবি ও লেখা ব্লগ ]


[ চতুর্থ পর্ব ]


“ সুখ তুমি কি বড় জানতে ইচ্ছে করে
আমার জানতে ইচ্ছে করে
কিশোরীর মিষ্টি আশা
নাকি ষোড়শীর ভালোবাসা .....”

রুনা লায়লার এই গানটির মতো আমারও জানতে ইচ্ছে করে ,
শীত তুমি কি ....
কুয়াসার মিষ্টি একটু হাসা
নাকি নকশী কাঁথার উষ্ণ ভালোবাসা ।

হ্যা , শীতকে নিয়ে অনেকের ভাবনাটা হয়তো এমনই ।
শিশিরের আয়নায় নিজের মুখ দেখা কিম্বা কাঁথা মুড়ি দিয়ে উষ্ণতার ছোঁয়ায় নিজেকে শপে দেয়া । কুয়াশায় ভেজা মেঠো পথে, নাঙা পায়ে পায়ে পৃথিবীর ঘ্রান তুলে আনা । মেহগনির মতো সকালের ঐ পারে কুয়াশার ওড়নায় মোড়া সূর্য্যের ওম গায়ে মাখা ।
আসলে শীতকে খেজুর রসে ভেজা পিঠার মতো হরেক ঢঙের সাজে সাজিয়ে মনের পাত্রে তোলা যায় । এ যেন ------নতুন করিয়া লহো আরবার চিরপুরাতন মোরে ।

দূরের আকাশের গায়ে
হয়তো দেখিবে তাহারে এক শীতবিকেলে ।
কোমল কুসুম রঙে, জলে ছায়া ফেলে
ধীরে ধীরে কুমারী সন্ধ্যার আয়োজন নিয়ে আসে
ধরিত্রীর কোলে .......





অন্ধকারের জরায়ু ছিঁড়ে এক সূর্য্য প্রসব
দিগচক্রবালে লালিমা মেখে আসে,
কুয়াসায় ঢেকে মুখ এক সকাল উদ্ভাসে
মাঠের ওপারে শুয়ে থাকা আকাশে... আকাশে ......

উত্তরের বাতাস গায়ে লেগে যৌবনবতী হয়ে ওঠা খেজুরের গাছ , শিশির গায়ে মেখে খড়ের চালে অলস শুয়ে থাকা ডগমগে লাউ , সরষে হলুদ ফুলছাপ ফ্রক গায়ে মাঠের নয়নকাড়া হাসি নিয়ে ধরিত্রী, পরিযায়ী পাখির মতো কুয়াশার সাদা সাদা ডানা মেলে উড়ে আসে এক পৌষ প্রাতে। কুয়াশার জরায়ু ছিঁড়ে সূর্য্য প্রসবে সকাল গড়িয়ে যায় দিনে । পৌষ গড়ায় শীতে মগ্ন এক মাঘে । ভেজা খড়ের গন্ধ মেখে শীতের রিক্ত মাঠ শুয়ে থাকে ....... শুয়ে থাকে ।

এ হলো পালাবদলের ধারা । আকাশের আয়নায় মুখখানি দেখে দেখে এ যেন প্রকৃতির নিজেকে সাজানো ....................






কী করুন বাতাসে ভর করে
আকাশের কান্না ঝরে
মাঠের পরে , চারিদিক ঢাকি -
ধুম পৌষের হীম
কুয়াসার ডানা মেলে আসে --
কবেকার প্রাচীন এক পৃথিবীর পথে......





শৈত্য হাওয়া ঘিরিয়াছে জাল ফেলি
মানুষ আর প্রকৃতি নিদ্রাময় চোখ মেলি
দেখিতেছে -
গাঢ় ধূম্রের কুন্ডলী উদ্বেলিছে হেথা,
শীত নিবারিতে উঠোনে উঠোনে
কাষ্ঠবহ্নি অনিবার উঠিতেছে জ্বলি ।

বাংলার দুঃখি মাঠঘাট ছুঁয়ে , ক্ষীন হয়ে আসা হিজলের বনে হীম মেখে, মরে যাওয়া ধরলার জলে শিরশির কাঁপন তুলে হিমালয় হাওয়া ছায়া ফেলে যায় আমাদের গাঁয়ে । হেমন্তের শেষ বিকেলের আলো ফুরিয়ে গেলে, শীতের সজারু কাঁটা ধীরে ধীরে গেঁথে ফেলে উত্তরের জনপদ । “মাঘের শীত বাঘের গায়” প্রবাদটি যেন হুঙ্কার ছেড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে লোকালয়ে । হাড় কাঁপনো শীতে বাংলার আদুল শিশুটি গুটিশুটি মেরে উষ্ণতা খোঁজে শীর্ণকায়া মায়ের কোলে । জনপদে এই উষ্ণতার ছোঁয়া চিত্রিত হয়ে উঠে রঙে রঙে ..................







শুধু বয়ে যায় শীতের বাতাস
এমন করে ধরিয়ে কাঁপন
পৌষ যায় , যাবে মাঘ মাস ।
দেখে যেও একদিন পথে এসে
শীতের ঝরা পাতার মতো ভেসে
কি নিদারুন বয়ে চলে,
শ্রমজীবী মানুষের জীবন যাপন .................






খেজুর গাছেরা ইতস্তত , একাকী থামের মতো
দাঁড়ায়ে আছে কতোকাল
ভরা যৌবন শরীরে উথলি ওঠে
মিষ্টি জল , ছলছল ।
কবেকার হৃদয় নিংড়ানো সেই প্রেম ঢালি
ভরে তোলে পেতে রাখা অচুম্বিত অঞ্জলি ।






পাখি আর মানুষে
নিমগ্ন রসে
টেনে আনে স্মৃতির অতল থেকে
দামাল সকাল, হারানো কৈশোরে ।
হীম ধরা রোদ মন্দ্র সপ্তকে
গেয়ে যায় জীবনের ফেলে আসা গান
তবুও বারবার চোখ মেলে দেখি,
মনে হয় চিনি উহারে ......


বাংলার ঘরে ঘরে একসময় রসের মৌ মৌ গন্ধ নিয়ে ফুঁটতো শীত ভোরের আলো । পিঠা পুলির পশরা নিয়ে বসতো গৃহলক্ষীরা । ঋতুকন্যা শীত নেচে নেচে যেত কোনও নরম হাতের চম্পকাঙুলিতে । বাহারী নকশা ফুঁটে উঠতো পিঠার গায়ে একে একে ।
সে গ্রাম আর নেই । নেই বলক ওঠা রসের মহুয়া ঘ্রান । কদাচিৎ দেখা মেলে এখন তার ।
মানুষ এখন আর গ্রামে ছোটেনা রসের আমেজে । পিঠা-পুলির কারুকাজ আজ আর তাকে টানেনা তেমন করে । গ্রাম পড়ে রয় গ্রামের মতো , শীত চলে যায় অনাদরে ।

মান্না দে’র গানের কথাগুলো তাই মনে পড়ে যায় বারে বারে –
পৌষের কাছাকাছি রোদ মাখা সেই দিন
ফিরে আর আসবে কি কখনও ........


এক শীতের সকালে দেখি চোখ মেলে
কে যেন যায় কাঁধে হাড়ি ফেলে ।
রসের গন্ধে মৌতাতে চারিধার
কাছে এসে ভালোবাসিবার
এক সুভদ্রা গ্রাম .......







আবার আসিব ফিরে এক সকালে
কুয়াশায় মাখা খেজুর পাতায় পাতায়,
হরিদ্রাভ কুমড়োর ফুলে ।
জড়ায়ে রবো সবুজ মটরশুটির গায়ে
শিশিরবিন্দু হয়ে, আলতো পায়ে
হেটে যাবো ভেজা কলমির মেঠোপথ -
অনেকদূর চলন বিল অবধি
পারিজাত পাখির মতো,
ডানা ঝাঁপটে উড়ে যাবো উৎপলা রোদে ।

জয়তুন বিবির মাটির চুলোয় রস হয়ে উৎলাবো
কারুকাজময় ডানা মেলে পিঠা-পুলি হবো
তবুও তোমায় জড়ায়ে ধরে,
নকশী কাঁথার মতো আদুরে ওমে
টেনে নেবো বুকের উপর নিঃশব্দ ঘুমে
কোন দূর হিমালয় বাতাস যদি
তোমারে উতলা করে !



চলবে ..........

প্রথম পর্ব - Click This Link
দ্বিতীয় পর্ব – Click This Link
তৃতীয় পর্ব - Click This Link

[ এই ছবি ও লেখা ব্লগটি সাজানো হয়েছে কয়েকটি অধ্যায়ে – বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্ত আর গ্রীষ্ণ নিয়ে ঋতুচক্র – পালাবদলের দিন, নিঃস্বর্গ, দেশ ও জীবন গাঁথা ; এমন করে। ]

ছবি – ইন্টারনেট থেকে ।
প্রতিটি ছবির জন্যে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি তাঁদেরই যারা ছবিগুলোর প্রকৃত দাবীদার ।
আর স্বনামধন্য যে সব কবি-লেখকের দু’একটি চরন তুলে এনেছি, কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি সেই মহাগুনীজনদের ও ।
এদের সকলের কাছেই ঋনী হয়ে রইলুম ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১৭
৬৭টি মন্তব্য ৬৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার বাকস্বাধীনতা সব সময়ই ছিলো, এখনো আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৯



ছোটকালে ক্লাশে অপ্র‌য়োজনীয় কথা বলে, অকারণ অভিযোগ করে, অন্যকে কটু কথা বলে শিক্ষকের মার খেয়েছিলেন নাকি? আমি অপ্রয়োজনীয় কথা বলে ক্লাশে কিংবা সহপাঠিদের বিরক্তির কারণ হইনি; ইহার পেছনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিডলাইফ ক্রাইসিস: বাঁচতে হলে জানতেই হবে

লিখেছেন মন থেকে বলি, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০০



"ধুর ছাই!
কিচ্ছু ভাল্লাগে না।
বা**, কী করলাম এতোদিন।
সব ফালতু।"


ক্যালেন্ডার কী বলছে? চল্লিশ পেরিয়েছে?

তাহলে দশটা মিনিট দিন। কারণ ব্যাপক সম্ভাবনা ৯৯% যে এই মুহূর্তে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের বাড়ির কাজের বুয়া যদি ব্লগে আসত ! :D

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:২৩

কয়েক বছর আগের কথা। আমাদের বাড়ির দীর্ঘদিন এক মহিলা কাজ করেছেন । তারপর তার ছেলেদের অবস্থা একটু ভাল হয়ে গেলে আর তাকে কাজ করতে দেয় নি। তবে অভ্যাসের কারণে বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি ১১ বছর ১ সপ্তাহ

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:৪২


গত কয়েকমাস যাবত চাকরিগত ঝামেলায় ব্লগে তেমন সময় দিতে পারিনি। দেশের পরিস্থিতির মতো আমার পরিস্থিতিও ছিল টালমাটাল। আগের চাকরি ছেড়ে নতুন চাকরি টিকিয়ে রাখতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় চলেছি। অফিসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ এবং কিছু কথা......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৩০

আমাদের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ এবং কিছু কথা.........

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমাদের সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার বিষাদময় গ্লানির সঙ্গেই বোধকরি বেশি সম্পর্ক। কদাচিৎ কোনো বড় দলকে পরাজিত করার পর আমরা পুরো বাংলাদেশ এখনো আবেগে আপ্লুত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×