somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খন্ড মেঘে ভেসে আসা আগন্তুক সিদ্ধির বরাভয়....

০৫ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নিলীমার বুকের অবারিত নীল উপত্যকায় জমে থাকা খন্ড খন্ড, ছেঁড়াখোড়া রঙিন মেঘের নিষন্ন দেয়াল আচমকা ভেঙে গেলে ওপারে চার ক্রোশ পথ জুড়ে দেখা গেলো তুমুল কালবৈশাখীর আয়োজন । বড় বেশী ঘোর এ আঁধারে নিলীমার বুকের প্রজাপতি সব গেলো উড়ে । উপত্যকার জানালাগুলো একে একে বন্ধ হয়ে গেলে নৈঃশব্দের কিশোরীকুল উপত্যকার ঝরনার জলে নেমে গেলো বিপ্রতীপ ছন্দে। থেমে গেলো জল-উপলের সঙ্গম । ঝিঁঝিঁর ডানা ঝাঁপটানো সঙ্গীত, নেশাখোর বাতাসে হারিয়ে গেলে জোনাকিরা মাঝপথে খেলা সাঙ্গ করে ফিরে গেলো ঘরে । জলের নীচে নদীর পাড় ভাঙার মতো নিলীমার বুকের দুয়ারগুলি শব্দহীন ভেঙে গেলে, উঁকি দিয়ে দেখা গেলো উদোম একটুকরো উঠোন; ওধারে ভাঙা বেড়ার দহলিজ । চিরল পাতার মতো ঝিরঝিরে আলো আঁধারিতে নিলীমার ভেতর বাড়ী থেকে উঠে এলো নোনা গাঙের এক যোজনব্যাপী দীর্ঘশ্বাস ।
খুব চতুরতার সাথে নিয়ম করে সূর্য্যটাকে ডুবিয়ে দিয়ে ঘোলা চাঁদটাকে কেন যে ডেকে আনে নিলীমা !

প্রতিবার এমন নিদেন কালে গালে হাত রেখে নিলীমা একা একা কথা কয় - “ অভ্যেস......”

নিলীমার বুকের উপত্যকায় ঘুমিয়ে থাকা পাহাড়-পর্বতে জোছনার চাঁদ চুমু খেতে চাইলে সে সব দিনে কালো কালো মেঘের ওড়নায় দিগন্ত ঢেকে দিত নিলীমা । তার বুকের জানালা খুলে চাঁদের মুখে মুখ রাখতে গেলে লজ্জায় নিলীমা কালো হয়ে যেতো । ঋতুস্রাবের মতো নিয়মিত বিরতিতে এমনই ম্রিয়মান হয়ে উঠতো নিলীমা ক্ষনে ক্ষনে । কাল-ভ্রমনে এ তার দীর্ঘ লালিত নিত্যকার অভ্যেস । বদলে যাওয়া ক্ষনে ক্ষনে । কখনও গোমড়া মুখে বসে থাকা , কখনও ঝরঝর কান্নার জলে দুকূল ভাসিয়ে উথলে ওঠা , কখনও নূপুরের কিঙ্কন ধ্বনিতে ফুলেদের ডাক দিয়ে প্রজাপতি হয়ে উড়ে যেতো সে । শীতের মঞ্জরীতে জড়সড় হয়ে কাঠকয়লার ওম খুঁজতো কখনও বা । আদরে সোহাগ কাছে টানলেই আলতো সরে সরে যেতো নিলীমা । তখন বুঝে ওঠা ভার হয়ে, পেরেকের মতো গেঁথে রইতো এ বুকে । এ এক নিঠুর দরদির প্রেম অপ্রেমের বৌ-ছি খেলা জীবন ভর । না পারলুম আমি তাকে চিনতে , না সে আমাকে ।

নিলীমার মনে থিতু করে রাখা যতো ঘর-গৃহস্থালী কই কই যে হারিয়ে যেতো এমনি করে ! নিলীমা মনের জানালার গ্রীলে হাত রেখে, গালটি ছুঁইয়ে তাদের আসা যাওয়া দেখতো । যেন জানতো, “ কী চমৎকার দেখা গেলো ” বাইস্কোপের মতো ঘুলঘুলির ওপারে একে একে সারি বেঁধে এক একটি দিনের ছবি ভেসে আসবে অনায়াসে । তার নিজস্ব ঘর-গৃহস্থালীর দরমার বেড়াতে লতিয়ে উঠবে পুঁইশাক , মাচানে ফুঁটবে সতেজ লাউ ।
দেখতে দেখতে বৈশাখের নিদাঘ খরতাপে পুড়বে সে তখন । সে তাপে পুড়ে যাওয়া বুকের সব ঘাস নেতিয়ে গেলে নিলীমার চোখ জলে ভাসবে । ঝরঝর বাদল দিনের মতো অঝোরে ঝরবে নিলীমা ।
ঐ পেতে রাখা চোখে এতো জল কোথায় রাখবে নিলীমা ! বেলা শেষে চোখের জল ফুরিয়ে গেলে মেঘমুক্ত আকাশের ছায়া ফুঁটবে তার চোখে । সে আকাশের দরিয়ায় ছেঁড়াখোড়া সফেদ মেঘের নাও যাবে ভেসে । নিলীমার বুকের চালচিত্র তাতে পাল্টে যাবে সব । সাজানো উপত্যকার ঢালে তখন সোনার বরন ঢেউ খেলে গেলেই অপেক্ষায় থাকবে সে কারো পথ চেয়ে । খুব নিষ্ঠার সাথে তার এই প্রতীক্ষায় সিদ্ধির বরাভয় হয়ে নিয়ম করে কেউ আসবে । আসবেই । শিউলি বকুলের ফুলছাপ কুয়াশার চাদরে গতরটি ঢেকে ............

নিলীমা জানে , এমন আকুলতা কার জন্যে তার !

নিলীমাকে শুধাই ।

এমনি করে নিলীমার শাড়ীর ভাজ খুলে খুলে দেখলে ভেতরের শুভ্র অর্ন্তবাসের মতো জীবনের সত্যটা বেরিয়ে আসে । ডাগর আঁখি তুলে , কোমল অধরে অস্ফুট শব্দ ঢেলে চিরায়ত কথাটি বলে যাবে সে ...বসন্ত ।
সন্দেহের তীরবিদ্ধ ক্ষরনেও নিলীমা অটুট, জানে ; সে আসবেই ।

সে আসবেই ....... এ হলো বিশ্বাস ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১১:০৯
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×