somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কপাল পোড়া পুরুষ ........ নপুংসক ?

১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছোটবেলায় শুনেছিলুম, শেষ জমানায় নাকি পৃথিবী ভরে যাবে নারীতে। শত শত নারীর ভাগে একজন পুরুষেরও দেখা মেলা নাকি কঠিন হয়ে পড়বে। সম্ভোগের জন্যে দলে দলে মেয়েরা পুরুষদের পেছনে পেছনে দৌঁড়ুবে আর ভয়ে পুরুষেরা তালগাছ আর নারকেল গাছের মাথায় চড়ে বসে থাকবে! সেই চ্যাংড়া বয়সে মনে হয়েছিলো, আহারে..... সেই দিন কবে আসবে!!!!!!!

সেই দিন কি আসতে চলেছে ?

নতুন করে আবার এ নিয়ে তর্ক শুরু হয়েছে যদিও “পুরুষের দিন শেষ হয়ে আসছে” তর্কের শুরু বেশ অনেক বছর আগে থেকেই।
জেনেটিক বিজ্ঞানীদের কেউ বলছেন, শেষ পর্যন্ত মেয়েরাই মনে হয় রাজত্ব করতে চলছে বিশ্বজুড়ে! পুরুষদের হারিয়ে মেয়েরা জিতে যাচ্ছে প্রজাতির টিকে থাকার ম্যারাথন দৌঁড়ে। এখন থেকে সময় ধার করে চলতে হবে পুরুষদের। পুরুষরা হারিয়ে যাবে একদিন।
আবার কেউ কেউ বলছেন - না তা হবেনা.... পুরুষেরা বিবর্তনের ধারাতেই পরাজয়টা সামলে নিতে পারবেন।
সাম্প্রতিক তর্কটা শুরু হয়েছিলো ২০১১ আগষ্টের শেষের দিনটিতে, ম্যানচেষ্টারে অনুষ্ঠিত ১৮তম “ইন্টারন্যাশনাল ক্রোমোজম কনফারেন্স” এ যখন অষ্ট্রেলিয়ান জেনেটিসিষ্ট প্রফেসর জেনি গ্রেভস বললেন, যে “Y” ক্রোমোজমের কারনে পুরুষেরা পুরুষ হয়ে ওঠে তা গত মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে ধীরে ধীরে তার চরিত্র হারিয়ে ফেলে এখন ধুঁকছে বেঁচে থাকার জন্যে। সময় হয়ে আসছে তাদের শেষ নিঃশ্বাসটি ফেলার। আগামীতে পুরুষ মানুষেরা পুরুষ থাকবেন কিনা, রয়েছে সংশয়। সৃষ্টির শুরুতে “Y” ক্রোমোজমের যে চরিত্র ছিলো তা এরই মধ্যে ধুঁয়ে মুছে শেষ। মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে বাড়তি যেটুকু তারা অর্জন করেছিলো তাও এখন ধংসের পথে। সামনের দিন শুধু মেয়েদের, যাদের শরীরে কোনও “Y” ক্রোমোজম নেই, বদলে রয়েছে দু’দুটি “X” ক্রোমোজম। নিজেকে, পুরুষ বিদ্বেষী নন বলে ঊল্লেখ করে জেনেটিক্সের জটিল সব অংক কষে গ্রেভস দেখিয়ে দেন - পুরুষের দিন শেষ, গাড্ডায় পড়েছে পুরুষ প্রজাতি। প্রজননের জন্যে আর পুরুষের প্রয়োজন হবেনা!

এর পাল্টা জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের কেমব্রীজের হোয়াইটহেড ইন্সটিটিউট ফর বায়োমেডিক্যাল রিসার্চের জেনিফার হিউজেস বলেন, ব্যাপারটি অত সহজ নয়। “X” ক্রোমোজমের তুলনায় “Y” ক্রোমোজম দূর্বল হলেও মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে সে বিবর্তিত হয়েছে, সেই বিবর্তনের ধারাতেই অতল খাদে পড়ার আগেই ব্রেক কষে ফেলবে “Y” ক্রোমোজম। তার লক্ষনও আছে। তিনিও জেনেটিক্স মহাকাব্যের শ্লোক তুলে ধরে মেঘনাদ বধ যে হবেনা তা দেখিয়ে দেন।

তাদের কষে দেয়া অংকের ফল দেখিয়ে দু’জনার কেউই কিন্তু কনফারেন্সে উপস্থিত বিজ্ঞানীদের সন্তুষ্ট করতে পারেন নি । ভোটে তুলতে হলো বিষয়টি। জিতলোনা কোনও পক্ষই, সমানে সমান। ৫০/৫০ ভোটে বিষয়টি ঝুলে রইলো। মজার ব্যাপার হলো, খুব একটা অপ্রত্যাশিত না হলেও পক্ষে বিপক্ষের বিজ্ঞানীদের লিঙ্গভেদের অনুপাত বেশ লক্ষ্য করা গেছে এই ভোটাভুটিতে! হায়রে এখানেও নারী পুরুষ বৈষম্য!

আপনারা যারা পুরুষ তারা হয়তো এখন কপাল চাপড়াতে পারেন আর যারা নারী তারা বগল বাজাতে পারেন! নারী স্বাধীকার বা নির্যাতন নিয়ে যারা চেল্লাচিল্লি করেন তারাও পুলকিত হতে পারেন। পাপিয়ারা অট্টহাসি দিয়ে সেলফি তুলতে পারেন, কুড়িগ্রামের মহিলা ডিসির মতো আরও কেউ রণহুঙ্কার ছাড়তে পারেন!
কিন্তু সাধু সাবধান! কারোই বিষাদগ্রস্থ বা উল্লসিত হবার কোনও কারন নেই যেহেতু বিষয়টি বিজ্ঞান। জেনেটিক্সের মতো অতি জটিল একটি বিষয়ের বিজ্ঞান।

বিজ্ঞান তো হিসেব নিকেষ করেই সত্যটি বলে কিম্বা সত্যের কাছাকাছি কিছুর আভাস দেয়! তাই ভয়, করোনা ভাইরাসের মতো কখন যে সত্যটা হামলে পড়ে!

এই যেমন, আমরা জেনে এসেছি, ২৮ দিনের ফেব্রুয়ারী মাসটি চার বছর পর পর ২৯ দিন হয়ে যায়। ভবিষ্যতে নাকি ২৯ ফেব্রুয়ারি বলে আর কিছু থাকবেই না পৃথিবীতে! অর্থাৎ পৃথিবীর ক্যালেন্ডার থেকে হারিয়ে যাবে লিপইয়ার। তবে সে জন্যে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আরো ৪০ লক্ষ বছর। মহাকাশীয় সূত্রের অমোঘ নিয়মেই মহাকাশের বস্তুসমূহ ছুঁটে চলছে নিরন্তর । সেই হিসেবে চাঁদও আমাদের ছেড়ে একটু একটু করে দূরে চলে যাচ্ছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন,এর ফলে আমাদের ওপর চাঁদের টান ( টাইডাল ফ্রিকশন ) কমে যাচ্ছে। আর তাই পৃথিবীর নিজ অক্ষের চার দিকে ঘূর্ণনের গতিও উত্তরোত্তর কমে আসছে। তাই একটু একটু করে বেড়ে যাচ্ছে দিনের আয়ু। প্রতি শতাব্দীতে ১৪ মিলিসেকেন্ড করে! পরিণতি হিসেবে পৃথিবী থেকে ২৯শে ফেব্রুয়ারী দিনটি হারিয়ে যাবে একদিন।

তেমনি হিসেব নিকেষের পাল্লায় পড়ে আসলে পুরুষ মানুষও কি হারিয়ে যাবে পৃথিবী থেকে ?
তাহলে বুঝে নেয়া ভালো, আসলে রহস্যটা কি! অংকটিই বা কি !

এই যে আমি-আপনি যারা “মানুষ” নামে পরিচিত তাদের প্রতিটি দেহকোষে রয়েছে ২৩ জোড়া ক্রোমোজম। আমাদের জন্মের সময় এই এক একটা জোড়ার একটি এসেছে আমাদের পিতার থেকে বাকীটি মায়ের থেকে। ক্রোমোজম থাকে আমাদের প্রতিটি কোষের নিউক্লিয়াসে। এরা দেখতে পাকানো দড়ির মতো বা বলতে পারেন স্প্যাগেটির মতো, প্রোটিন আর ডিএনএ দিয়ে তৈরী। এরাই বহন করে আমাদের জন্মগত চরিত্রগুলো ( জেনেটিক ইনফর্মেশন), চোখ ও চুলের রং থেকে শুরু করে স্বভাব , উচ্চতার যোগান দেয় এরাই। এই ২৩ জোড়ার ভেতর ২২ জোড়াকে আমরা বলি “অটোসোমস”। এদেরকে ক্রমিক নম্বর দিয়ে প্রকাশ করা হয়। যেমন ক্রোমোজম নম্বর-১ থেকে ক্রোমোজম নম্বর-২২, এমনি করে। এরাই আমাদের বংশগতির চরিত্রকে নিয়ন্ত্রন করে। পুরুষ এবং নারীদের মধ্যে এই ২২ জোড়া ক্রোমোজমে কোনও পার্থক্য নেই। ২৩ জোড়ার বাকী ক্রোমোজমটি হলো আমাদের লিঙ্গ নির্ধারণকারী “সেক্স ক্রোমোজম”। এই “সেক্স ক্রোমোজম” এর কারনেই আমাদের লিঙ্গ ও তার সঙ্গতিপূর্ণ শারীরিক গঠন নির্ধারিত হয়। এই সেক্স ক্রোমোজমই হলো আপনাদের চেনা “X” ও “Y” ক্রোমোজম। পুরুষ আর নারীতে এখানেই পার্থক্য।

ছবি - অটোসোমাল ক্রোমোজমস

ছবি - সেক্স ক্রোমোজম । খর্বাকায় “Y” ।

আপনি পুরুষ হলে আপনার এই সেক্স ক্রোমোজমের জোড়াটি গঠিত হবে একটি “X” ও একটি “Y” ক্রোমোজম দিয়ে অর্থাৎ আপনি হবেন “XY” । আপনি মেয়ে হলে ক্রোমোজমের জোড়াটি গঠিত হবে দু’টো “X” মিলে অর্থাৎ আপনি “XX” ।
বলে রাখা ভালো, পুরুষের শুক্রকীট বা স্পার্ম এবং মেয়েদের ডিম্বানুর কোষগুলো যাদেরকে গ্যামেট (Gamete) বলা হয় সেগুলি কিন্তু অন্যান্য কোষদের মতো নয়। এখানে পুরুষের শুক্রকীটের কোষগুলিতে একটি মাত্র ক্রোমোজমই থাকে অর্থাৎ কোনও কোষে শুধু মাত্র X ক্রোমোজম থাকে, কোনও কোষে থাকে শুধু Y । তেমনি মেয়েদের বেলাতে ডিম্বানুর সকল কোষেই থাকবে একটি করে ক্রোমোজম আর তা X ক্রোমোজম যেহেতু X ছাড়া মেয়েদের অন্য ক্রোমোজম নেই। তাই মেয়েদের ডিম্বানুর কোষগুলোর চরিত্র একই রকমের। পুরুষের চরিত্রে রকমফের আছে।
আপনি পুরুষ (XY) হয়ে জন্ম নিলে এই X ক্রোমোজমটি আসবে আপনার মায়ের ডিম্বানুর X থেকে আর আপনার পিতার, যিনিও XY; তার শুক্রকীট বা স্পার্ম থেকে আসবে Y ক্রোমোজমটি। যদি পিতার থেকে Y এর বদলে X চলে আসে তবে আপনি আর ছেলে থাকবেন না, মেয়ে (XX) হয়ে জন্ম নেবেন! নাবিল থেকে নাবিলা হয়ে যাবেন!
তেমনি আপনি নাবিলা হয়ে থাকলে আপনার বেলায় একটি X আসবে আপনার মায়ের ডিম্বানু থেকে আর বাকী X টি আসবে আপনার পিতার শুক্রকীট বা স্পার্ম থেকে। ভুলক্রমে পিতার Y টি চলে আসলে আপনি আর নাবিলা থাকবেন না, নাবিল হয়ে যাবেন !
এই পর্যন্ত পড়ে এসে এখন কিছু অনুসন্ধিৎসু প্রশ্ন আপনার মনে আইঢাই করতেই পারে, কখন ছেলে বা মেয়ে হবে কিম্বা কারা সংখ্যায় বেশী হবে।




উপরের ছবিতে দেখুন ছেলে বা মেয়ে হবার সম্ভাবনার হার। আর যেহেতু ছবির ৪টি ক্রোমোজমের ভেতর ৩টিই যখন X তখন অংকটি আপনিই কষে ফেলুন। এটা হলো সোজা সরল হিসেব। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই তা হয় না।
আসলে একজন পুরুষের যতোগুলি শুক্রকীট আছে তাতে যদি Y ক্রোমোজমওয়ালারা বেশী থাকে সংখ্যায় তবে সেক্ষেত্রে ছেলে সন্তান হবার হার বেশী হবে।
আবার X ক্রোমোজমওয়ালারা দলেবলে ভারী হলে মেয়ে জন্মদান স্বভাবতই বাড়বে।
এটা হলো অতি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তিয় প্রক্রিয়া, বেসিক জেনেটিক্স। ক্রোমোজমের এমন জোড়া বাঁধার ভেতরেও কখনও কখনও ব্যতিক্রমও হয়ে থাকে এবং তাতে বেশ কিছু শারীরিক ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটতে পারে।
তবে এখানে আমাদের আলোচ্য বিষয় তা নয় এবং বিষয়টি অত্যন্ত জটিল বলেই এই বিষয়ে কিছু বলা থেকে বিরত রইলুম।

যে Y ক্রোমোজম নিয়ে এতো কথা, এতো বাকবিতন্ডা, ফিরে যাই সেখানে। কারন Y ক্রোমোজমের যখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা তখন আমাদের মতো পুরুষ ব্লগাররা কখন যে অপুরুষ হয়ে ব্লগটা পুরুষ শূন্য হয়ে গিয়ে মেয়ে ব্লগারে ভরে যায়, সেই ভয়টা কতোখানি ঝাঁকুনি দেয়ার মতো তা বুঝে নেয়া ভালো!
ঝাঁকুনির ভয় পাবো নাই বা কেন ?
Y ক্রোমোজম না হয় পৌরুষের প্রতীক কিন্তু বেঁচে থাকার জন্যে এর কি কোনও প্রয়োজন আছে ? যদি থাকে তবে Y ক্রোমোজম ছাড়াই শুধুমাত্র X ক্রোমোজম নিয়ে নারীরা কিভাবে বেঁচেবর্তে দোর্দন্ড প্রতাপে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে এখনও?
Y ক্রোমোজমওয়ালারা এবারে নিশ্চই গাঁড্ডায় পড়বেন! তাইতো !!!!!!!
ব্যাপারটি আর একটু তলিয়ে দেখা যাক।

এখন না হয় X ক্রোমোজম Y এর চেয়ে গায়ে গতরে বেশ ভারী আর দীর্ঘাঙ্গী।

ছবি -২৩ নম্বরে সেক্স ক্রোমোজম। খর্বকায় Y

সে তুলনায় Y যথেষ্ট খর্বকায়, শীর্ণ আর দুর্বল। এটা জেনে পুরুষেরা লজ্জা পাবেন না। আদিতে পুরুষরাও তাদের পার্টনার দোর্দন্ড প্রতাপী X ক্রোমোজমের মতোই বলিষ্ঠ আর সমানে সমান ছিলেন। ঘড়ির কাঁটাকে যদি ১৬৬ মিলিয়ন বছর পিছিয়ে নিয়ে যাই, যে সময়ে প্রথম স্তন্যপায়ী প্রানীর উদ্ভব, তখন চিত্রটি ছিলো বর্তমানের চেয়ে ভিন্ন। সে সময়ে পুরুষের “প্রোটো-Y” ক্রোমোজমটিও ছিলো X এর সমানে সমান। তাতেও ছিলো মেয়েদের মতোন সমান সংখ্যক জিন (Gene )। মেয়েরা তখন যদি ছিলো ওয়ান্ডার উওম্যান, তবে ছেলেরাও ছিলো হারকিউলিস-স্যামসন-গোলিয়াথের মতোন। কিন্তু কপাল পোড়া ছেলেদের! সময়ের বিবর্তনে মেয়েরা তাদের বংশানুক্রমিক ধারা অনেকটা বজায় রেখে বর্তমানে পৌঁছুতে পারলেও পুরুষেরা তা পারেনি। মেয়েরা যেমন প্রতিদিনকার বাস্তবের ঘর-সংসার সামলে রাখে এবং রাখছে তেমনি মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে শরীরের অন্দর-বাহিরের সংসার মেয়েরাই সামলে এসেছে ঠিকঠাক। অপরদিকে ছেলেরা সব সময়ই উড়নচন্ডী, উশৃঙ্খল। সব কিছু উড়িয়ে দিতেই অভ্যস্থ। হেন আকাম নেই যা তারা করেনা! হারকিউলিসের মতোন শক্তির মাস্তানী দেখাতে গিয়ে শক্তিই হারিয়ে ফেলছে প্রতিদিন একটু একটু করে!
এখন যে হিসেবটা দিচ্ছে জেনেটিক বিজ্ঞানের কেউ কেউ, সেখানে X ক্রোমোজমের জিন (Gene ) সংখ্যা ১০৯৮টি আর Y ক্রোমোজমের ২৬টি, দু’জনে আর সমান সমান নয়। সমান সংখ্যক জিন নিয়ে শুরু করেও গাঁথুনীতে জোর না থাকায় পুরুষের Y ক্রোমোজম খসে খসে জরাজীর্ণ ২৬ টিতে এসে ঝুলে আছে। মনে হয় পুরুষেরা ক্রমে ক্রমে যেন ইঁদুরে পরিনত হয়েছে!

কেন এই গড়মিল, কেনই বা Y ক্রোমোজমে জিন সংখ্যা এতো এতো কমে গেলো ?

এই অংকটি করতে হলে কিছু যোগ-বিয়োগ জেনে নিতে হবে। জিন (Gene ) দিয়েই শুরু করি-

ছবি - গোলাপী রঙে চিত্রিত ডিএনএ’র একটি ইউনিট যেটাকে জিন বলে।

ক্রোমোজম যে প্রোটিন আর ডিএনএ দিয়ে তৈরী, সেই ডিএনএর একটি ইউনিটকে বলা হয় জিন। এদের কাজ হলো চারিত্রিক বৈশিষ্টগুলিকে নিয়ন্ত্রন করে বংশপরম্পরায় জেনেটিক ইনফরমেশানগুলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দেয়া। যেমন চেঙিস খান এশিয়া জুড়ে যে হত্যাযজ্ঞ, ত্রাস আর ধর্ষন চালিয়ে এসেছে, সে একই ধাঁচের ধ্বংসযজ্ঞ তার সন্তানেরাও করে এসেছে। চেঙিস খানের Y ক্রোমোজমের জিন, বংশ পরম্পরায় চেঙিস খানের ঐ চারিত্রিক বৈশিষ্টগুলিই ছড়িয়ে দিয়েছে তার সন্তানদের। জেনেটিক বিজ্ঞান বলে, এখনও এশিয়ার ঐ অঞ্চলে ৮% অর্থাৎ ১৬ মিলিয়ন লোক প্রায় একই রকমের চারিত্রিক বৈশিষ্টের অধিকারী এবং তা সম্ভবত চেঙ্গিস খানেরই!
X ক্রোমোজমে যে বেশী জিন রয়েছে সেগুলোর প্রতিরূপ বা প্রতিমূর্তি কিন্তু পুরুষের Y ক্রোমোজমে নেই ফলে পুরুষের সেক্স ক্রোমোজমে মেয়ে জিনগুলিই সংখ্যাধিক্যের কারনে ডমিন্যান্ট বা প্রভাববিস্তার কারী। এর মানে দাঁড়াচ্ছে এই যে, পুরুষেরা না চাইলেও তাদের ভেতরে মেয়েলী একটা ভাব প্রচ্ছন্নে সক্রিয় থাকবে। মেয়েদের এই জিনগুলিকে বিজ্ঞানীরা বলেন-“ X লিংকড জিনস” আর ছেলেদেরটাকে বলেন “ Y লিংকড জিনস”। মেয়েদের ১০৯৮টি X লিংকড জিনের সব জিনগুলিই যে স্ত্রী চরিত্র রচনা করবে তেমনটা কিন্তু নয়। এর অনেকগুলিই “জেনেটিক ডিসঅর্ডার” যেমন হেমোফিলিয়া, ফ্রাজাইল এক্স সিনড্রোম, মাসকুলার ডিসট্রোফি ইত্যাদি জন্মগত ত্রুটিগুলোর জন্ম দেবে আর তা পুরুষদের মাঝেও ফুটে উঠবে।
অন্যদিকে পুরুষদের Y লিংকড জিনস মাত্র ২৬ টি। এদের ১৬টিই কোষের কাজগুলো নিয়ন্ত্রনে ব্যস্ত। ৯ টি ব্যস্ত পুরুষদের ব্রান্ডেড জিনিষ শুক্রকীট বা স্পার্ম উৎপাদনে! এই প্রোডাকশন লাইনে গন্ডগোল হলেই কি হবে বুঝতেই পারছেন! বাকী যে ১টা থেকে গেলো সেটাই আপনার-আমার পুরুষত্বের ধ্বজ্জাধারী! এটাই হলো SRY gene ( সেক্স ডিটারমিনিং রিজিয়ন অব ওয়াই ) যা পুরুষের অন্ডকোষ বা Testis তৈরী করে দিয়ে “মেল সেক্সুয়াল ট্রেইট” বজায় রাখছে আপনার-আমার মাঝে। এমনকি প্রকৃতিতেও। বলতে পারেন SRY gene হলো ভোটের “ইভিএম” মেশিনের মতো, জায়গা মতো টিপলেই ভোটটি “স্ত্রী” ঘরে না পড়ে পড়বে গিয়ে “পুরুষ” ঘরে। ডিম্বাশয় বা “ওভারী”র বদলে আপনি পাবেন “অন্ডকোষ”।
উপরে জেনেটিক বিজ্ঞানীদের যে তর্ক-বিতর্ক আর ভোটাভুটির কথা বললুম তা এই “ইভিএম” মেশিনেরই সক্ষমতা আর অক্ষমতা নিয়ে বিতর্ক।
এতোক্ষন যা জানলেন তাতে ধরে নিতে হয় আপনি এই সোজা বিষয়টি বুঝেছেন যে, শরীরের সমস্ত কোষেই একজোড়া ক্রোমোজম বা ক্রোমোজমের দুইটি করে কপি থাকে, কেবল মাত্র পুরুষের Y ক্রোমোজমের আছে একটি মাত্র কপি যা তাদের পিতা থেকে ছেলে সন্তানে প্রবাহিত।
এর অর্থ দাড়াচ্ছে এই, Y ক্রোমোজমের জেনেটিক রিকম্বিনেশান হয়না। জেনেটিক রিকম্বিনেশান তখনই হয় যখন দুইটি ডিএনএ (DNA) অনু নিজেদের ভেতরে তাদের জেনেটিক মেটেরিয়ালের কিছু অংশ আদান-প্রদান করে থাকে।

ছবি - রিকম্বিনেশান যেভাবে হয়.....

যেহেতু Y ক্রোমোজমের একটিই মাত্র কপি তাই কারো সাথে আদান-প্রদানের সুযোগ তাদের নেই। ফলে তাদের পক্ষে জেনেটিক সাফলিং (shuffling) করাও সম্ভব নয় যে সাফলিংয়ের মাধ্যমে ক্ষতিকারক জিন মিউটেশান (gene mutation) বা জিন এর খারাপ চরিত্র বদল রোধ করে প্রতিটি প্রজন্মে সঠিক চরিত্রের জিন ছড়িয়ে দেয়া যায়। এই দু’টি গুন থেকে Y ক্রোমোজম বঞ্চিত বলেই সময়ের বিবর্তনে ধংসপ্রাপ্ত হতে বাধ্য হয় এবং হিউম্যান জেনোম (genome) থেকে বাতিল হয়ে যায়।এই SRY অংশটুকু বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয় বলেই পুরুষের কপাল নাকি পুড়ছে। অন্ডকোষ তৈরীর এই কারখানা লে-আউট ঘোষনা করলে “পুরুষ” প্রোডাক্ট পাওয়া যাবে কই ? এই কারনেই যেখানে X ক্রোমোজম অনেক বাঁধা বিঘ্ন পেরিয়ে শুরু থেকেই আজও অনেকটা যেমন তাদের চরিত্র আর গাঁথুনী ঠিকঠাক ধরে রাখতে পেরেছে সেখানে Y ক্রোমোজম ব্যর্থ। আদি পিতৃপুরুষের গুন তাদের মধ্যে এখন আছে সামান্যই। অর্থাৎ পুরুষের বারোটা বেজে এখন চৌদ্দটার দিকে রওয়ানা দিয়েছে!
এ থেকে আপনার মনে হতেই পারে X ক্রোমোজম একটা “ডিসেন্ট সাইজড” ক্রোমোজম। প্রকৃতি প্রদত্ত চমৎকার ক্ষমতা বলে ১০০০ এর উপর সংখ্যক প্রোটিন কোডিং জিনস নিয়ে X ক্রোমোজম উত্তরসূরীদের জন্যে বুদ্ধিমত্তা সাপ্লাই দিতে কিম্বা প্রজননে সহায়তা অথবা উভয় কাজেই নিয়োজিত। আপনি বলতেই পারেন X ক্রোমোজম আসলে “ ব্রেইনস এ্যান্ড বলস ” ( “brains-and-balls” ) এর ভূমিকায় রয়েছে।
অপরদিকে খর্বকায় Y ক্রোমোজম যেন একটি আগাছার জঙ্গল, ফসল উৎপাদনের সুযোগ নেই এখানে। ২৬টি প্রোটিন কোডিং জিনস নিয়ে তার কাজ কেবল বিভিন্ন প্রোটিন তৈরীর নির্দেশনা দেয়া, তাও আবার বেশীর ভাগটাই যার অন্ডকোষে সীমাবদ্ধ। ভাবুন তো, বুদ্ধিমত্তা নিয়ে পুরুষ ক্রোমোজমের কোনও মাথাব্যথা নেই , তার দৃষ্টি শুধু অন্ডকোষ বা সেক্স এর দিকে! এ কারনেই কি পুরুষেরা যৌনতার দিকে ঝুঁকে পড়ে বেশী বেশী ?

তাই প্রশ্ন উঠেছে - এই ধংসের ধারা কি চলবেই, নাকি পুরুষেরা একটা না একটা ব্রেক কষে সমতায় ফিরে আসবে!
শুরুর তর্কে জেনি গ্রেভস পুরুষদের পিলে চমকানো এমন কথাই বলেছেন যে , পুরুষের আর সমতায় ফেরা হবেনা। পুরুষের আসল পৌরুষত্ত্বের আর কিছু বাকী নেই । অবশ্যম্ভাবী ভাবেই Y ক্রোমোজম এখন খাঁদের কিনারায়। বেশ কিছু প্রানী প্রজাতির সেক্স ক্রোমোজম সহ সব ক্রোমোজমের বিবর্তন নিয়ে বছরের পর বছরের গবেষণার ফল থেকে উদাহরণ দিয়ে গ্রেভস দেখিয়েছেন, ইতিমধ্যেই অন্য কিছু স্তন্যপায়ী প্রানীদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের ভেতরে Y ক্রোমোজমের লীলাখেলা ক্রমাগত অস্তাচলের পথে এমনকি কিছু রডেন্ট (rodent) যেমন ইঁদুর এর বেলাতে এই খেলা চিরতরেই নাকি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ধারনা এমনটাই যে, একটি সাধারণ অটোসোমাল ক্রোমোজমের জোড়া থেকে জন্ম নেয়া সেক্স ক্রোমোজমের Y টি খুব দ্রুতই নিঃশেষিত হতে চলেছে যার প্রমান পাওয়া যাচ্ছে অনেক মেরুদন্ডী, অমেরুদন্ডী প্রানী সহ উদ্ভিদেও।
গ্রেভসের ধারনা, Y ক্রোমোজমের ভাগ্যে এই নিঃশেষিত হবার ঘটনাটি অনেক ভাবেই ঘটে থাকতে পারে। এসবের উপর ভিত্তি করেই তিনি Y ক্রোমোজমকে চিত্রিত করেছেন তিনটি ভাগে। প্রথমটি -“ডমিন্যান্ট Y” যা তার ক্ষুদ্র আকৃতি নিয়েও পুরুষের পৌরুষত্বের উপরে বীরদর্পে প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে। দ্বিতীয়টি - “সেলফিস Y” যে আবার অন্য অটোসোম কোষগুলি থেকে জিন ছিনিয়ে নিয়ে আসছে। শেষেরটি -“উইম্পি Y” যেটি তার পূবর্পুরুষেরই ছায়া।
এই “উইম্পি Y” টিকে নিয়েই জেনেটিক বিজ্ঞানীরা পড়েছেন ধাঁধায়। Y ক্রোমোজমের এই বিভিন্ন ধরনের কারনে ধারনা করা হয় -সম্ভবত এখানে ঘটে গেছে অসংখ্য মিউটেশান, সংযুক্তি আর বিযুক্তির খেলা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে Y ক্রোমোজম অন্ডকোষেই বন্দী, ডিম্বকোষে নয়। আর কে না জানেন যে , অন্ডকোষ একটি ভয়ঙ্কর জায়গা! গ্রেভস সে দিকেই তার অঙুলি তুলে বলেছেন - এখানে কোষ বিভাজন হয় খুব বেশী হারে, ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সুযোগও বেশী আর এদেরকে সারিয়ে তুলে উদ্ধার করার প্রক্রিয়ার রয়েছে ঘাটতি। এখানে জেনেটিক রি-কম্বিনেশান হয়না ( আগেও এর উল্লেখ আছে ) বলেই ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাটিকে চিহ্নিত করে রিপেয়ার করা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়না। তাই একটি ক্ষতিগ্রস্ত Y ক্রোমোজমে থাকা ভালো অংশটুকুর বেঁচে থাকার চান্স খুব একটা থাকেনা। ক্ষতিগ্রস্ত বা খারাপ Y ক্রোমোজম নিয়ে তাই প্রকৃতিকে চলতেই হচ্ছে অগস্ত্যযাত্রার পথে। আদিতে যে ১৭০০টি জিন নিয়ে Y ক্রোমোজমের পথ চলা শুরু সেখান থেকে বর্তমানের ২৬ বা ৪৬টিতে তা নেমে আসার আনুপাতিক হার ধরে গ্রেভস দেখিয়েছেন, এই চলা চলতে পারে আরও বেশী হলে ৪.৬ মিলিয়ন বছর মাত্র। তারপরেই নাই হয়ে যাবে সে।

এই লম্বা সময় দেখে আপনার হয়তো খুশি খুশি লাগবে এটা ভেবে যে, যাকগে বাঁচা গেলো- এখনই নপুংসক হচ্ছিনে! কিন্তু ৪.৬ মিলিয়ন বছর পরে পৃথিবী নামক গ্রহটিতে আপনার কোনও উত্তরসুরী আর থাকবেনা কখনও, এটা মেনে নিতে পারা যাবে কি; কবি যেখানে বলে গেছেন - “মানুষের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই................” ? আসলে সময়টা মোটেও তেমন লম্বা নয় যেখানে পৃথিবীতে প্রানের জন্ম ৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে, এই তো যেন সেদিনের কথা!

করোনা ভাইরাসের হাত থেকে না হয় বাঁচা গেলো কিন্তু ধ্বংসের আলামত নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলা Y ক্রোমোজমের হাত থেকে পুরুষ প্রজাতি বাঁচবে তো ?
বাঁচবে .......বাঁচবে !
পুরুষের জন্যে শ্বাস নেয়ার ভেন্টিলেটর নিয়ে এসে হোয়াইটহেড ইন্সটিটিউট ফর বায়োমেডিক্যাল রিসার্চের জেনিফার হিউজেস বলেছেন -ওস্তাদের মা’র শেষ রাতে! আস্তিনে লুকানো ট্রাম্প কার্ডটি তো Y ক্রোমোজম এখনও খেলেনি।
গেলো ২৫ মিলিয়ন বছর ধরে মানুষ-শিম্পাঞ্জী আর রেসাস বানরের Y ক্রোমোজমের সিকোয়েন্সের বিবর্তনের ধারা পর্যবেক্ষন সাপেক্ষে জেনিফার হিউজেসের ধারনা এমনটাই। ছুঁড়েছেন লাখ টাকার প্রশ্নও - এতো মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরেও যখন Y ক্রোমোজম মরেনি তখন সে কেন মরবে এখন ?
তুরুপের তাসটি Y ক্রোমোজমের হাতেই। সে এমন একটি প্রক্রিয়ায় পারদর্শী হয়ে উঠেছে যে, খাঁদের অতলে যাবার আগেই ব্রেকটি কষে ফেলতে পেরেছে। তার জিন সংখ্যা কমে যাওয়াটাকে সে থামিয়ে দিতে পেরেছে।

একটি ড্যানিস (Danish) পরীক্ষায় তেমন পারদর্শিতার কথাই প্রকাশিত হয়েছে ২০১৭ সালের আগষ্টে PLoS Genetics জার্নালে । বলা হয়েছে - মানুষের উপরে গবেষনা চালিয়ে দেখা গেছে, Y ক্রোমোজমগুলি তাদের গাঁথুনীতে বিশাল মাত্রায় পূনঃ পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম যা জিনগুলির অনেক অনেক কপি (জেনেটিক এ্যাম্পলিফিকেশান) বানিয়ে ফেলতে পারছে। এতে শুক্রকীটের কাজ শানিয়ে তুলতে পারা যাচ্ছে পাশাপাশি জিনের ক্ষয়ক্ষতির লাগামও টেনে ধরা যাচ্ছে।
তুরুপের এই তাসটি হলো এ্যাম্পলিকোনিক সিকোয়েন্স ( ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জেনোমিক অঞ্চলের কয়েকটি সংলগ্ন নকল নিয়ে গঠনের ধারা যেটা অন্ডকোষের ভেতরেই বেশী সীমাবদ্ধ ) এর “প্যালিনড্রোম” ষ্ট্রাকচার। একটা কিছু গেঁথে তোলার অস্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া যেখানে একটা সুস্থ্য ( আন-ড্যামেজড) জিনকে টেম্পলেট হিসেবে ধরে ক্ষতিগ্রস্থ জিনের ভেতরে তা উল্টো ভাবে কপি-পেষ্ট করে বসিয়ে দেয়া। অনেকটা আপনার খুব পরিচিত “রমাকান্তকামার” শব্দটির মতো যেখানে অক্ষরগুলো উল্টো করে বসালেও একই রকম দেখায়। এভাবেই এই জিনগুলি নিজেরা নিজেরাই পুনঃসংযোজিত হতে পারছে এবং ক্রমোজমটি টিকে থাকছে।
Y ক্রোমোজমের রেপ্লিকেশান ক্ষমতা নেই বলে তার জেনেটিক ক্ষয়প্রাপ্তি সে রোধ করেছে, গাড়ী চালানোর স্বাভাবিক জৈব জ্বালানীর গোষ্ঠী কিলিয়ে সূর্য্যালোক ব্যবহার কিম্বা নৌকার মতো পাল খাটানোর ট্রিকস খাটিয়ে।

জেনিফার হিউজেস শিম্পাঞ্জীর সাথে তুলনা করে দেখিয়েছেন ৬ মিলিয়ন বছর আগে শিম্পাঞ্জী ও মানুষের বংশকুল আলাদা হয়ে যাবার পরে আজ পর্যন্ত কিন্তু মানবকুলে Y ক্রোমোজমের MSY (male-specific region of the Y chromosome) যা লিঙ্গ নির্ধারন করে সেই অংশে ( ইভিএম মেশিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান) জিন সংখ্যার ঘাটতি পড়েনি যেটা ঘটেছে শিম্পাঞ্জীর বংশকুলে। অন্যদিকে যে জিনগুলি মানবকুল হারিয়ে ফেলেছে বলে বলা হয় তা কিন্তু শিম্পাঞ্জীর বংশকুলের MSY অংশে একেবারেই অনুপস্থিত।
এর অর্থ মানবকুল গেলো ৬ মিলিয়ন বছর ধরে তার MSY কে স্থিতাবস্থায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। কোনও কিছুই তার হারায়নি।

ছবি- MSY gene loss in the human and chimpanzee lineages over the course of sex chromosome evolution. Tree represents evolutionary relationships between autosomal progenitors of mammalian sex chromosomes (AA) and present-day human X and human and chimpanzee Y chromosomes. Gene contents for each chromosome are indicated. Timeline of major events is shown at right (not drawn to scale)

খাদের কিনারে ঝুলে থাকা নয়, Y ক্রোমোজম বেশ ভালো ভাবেই যেন হাইওয়েতে রয়েছে।

সম্প্রতি করা একটি গবেষনার কথাও তুলে ধরেছেন জেনিফার হিউজেস, যেখানে বানরের উপরে গবেষনা করে তাদের MSY এর সিকোয়েন্সগুলো দেখা সমাপ্ত হয়েছে। বানরকুলের এই MSY অংশ বিবর্তিত হলেও ২৫ মিলিয়ন বছর আগে বানরকুল থেকে মানবকুল আলাদা হয়ে যাবার এই দীর্ঘ সময়েও কিন্তু মানবকুলের Y ক্রোমোজম অবিশ্বাস্য ভাবেই অপরিবর্তিত রয়েছে। পাশাপাশি পুরুষদের জন্যে তিনি এমন আশার বানীও শুনিয়েছেন যে, প্রাচীন স্তন্যপায়ী প্রানী যেমন Callithricidae প্রজাতির বানর, নেংটি ও ধাঁড়ী ইঁদুর এমনকি বলদের MSY সিকোয়েন্স নিয়েও গবেষণা চলছে যা থেকে সুদীর্ঘ কাল থেকে চলে আসা জিন হারানো কিম্বা নতুন করে জিন জোটানোর ইতিহাসের অজানা জানালা খুলে যায় আমাদের সামনে। তখন হয়তো জানা যেতে পারে - পুরুষের বারোটা ছাড়িয়ে চৌদ্দটা বাজবে কবে!

পুরুষের যারা বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছেন তাদের মাথায় আবার পানি ঢেলে দিয়েছেন বেইজিং ইনস্টিটিউট অব জেনোমিক্স এর প্রফেসর সান ইঙ্গলি। চায়নিজ আর আফ্রিকার মানুষদের উপর গবেষণা চালিয়ে তিনি শুনিয়েছেন আরেক কথা। গত ৫০ হাযার বছর ধরে DNA methylation প্রক্রিয়ায় মানুষ তার জিনের চরিত্র বজায় রেখে এসেছে যখন থেকে প্রথম সভ্য মানুষটি আফ্রিকা থেকে মাইগ্রেট করেছে অন্যত্র। এই মিথাইলেশানের ফলেই Y ক্রোমোজমের গাঠনিক প্যাটার্ন এতো সময় ধরে স্থিতাবস্থাতেই রয়েছে ।

ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনের প্রফেসর ক্রিস ম্যাসন পুরুষ বিদ্বেষীদের বক্তব্যগুলি সাজিয়ে রাখা বাক্সে একটা পেরেক ঠুকে দিয়েছেন এই বলে- ৪ বা ৫ মিলিয়ন বছরের মতো লম্বা সময় যদি লাগেই Y ক্রোমোজমের ডিগবাজী খেতে তবে ততো বছর ধরে আধুনিক মেডিসিন কি আঙুল চুষবে? একটা না একটা উপায় বের করে ফেলবেই সে।

পক্ষে বিপক্ষে যারা যতো কথাই বলুক, আমার -আপনার তাতে কিছু যায় আসেনা। আমরা নপুংসক হচ্ছিনে শীঘ্রই অন্তত আগামী একশো-দু’শো বছরে তো নয়-ই!
শুনতে হয়তো স্বস্তি লাগছে কিন্তু পুরুষের বিদায় ঘন্টা যারা শোনাতে চাইছেন তাদের বাজানো বাদ্য যদি সত্যি সত্যিই শব্দ করে বাজে, তখন কি হবে ? তখন কি, এই লেখার শুরুতেই পুরুষেরা যে তালগাছ - নারকেল গাছে চড়বেন বলা হয়েছে তেমন করে কি সত্যি সত্যিই পুরুষেরা গাছে চড়ে ইজ্জত বাঁচাবেন ?????


স্বীকারোক্তিঃ
চারদিকে মরনঘাতী করোনাকে নিয়ে যে অস্থিরতার, যে শঙ্কার, যে মৃত্যু ভয়ের দমবন্ধ করা পরিবেশ সেখান থেকে আপনাদের দৃষ্টি খানিকটা সময়ের জন্যে হলেও অন্যদিকে সরিয়ে রাখার ইচ্ছে থেকে সময়ের বৈপরীত্যে এমন লেখাটি।

সূত্রঃ
১- Click This Link
২- Click This Link
৩- http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/22083302
৪- Click This Link
৫- Click This Link

ছবিঃ নেট থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৩
৬৭টি মন্তব্য ৫৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×