বেশ ক'দিন থেকেই তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি । রাখছি চোখে চোখে । কি করে তার নতমুখখানি তুলে ধীরে ধীরে সে তার শরীরের জেল্লা ছড়ায়, চেয়ে চেয়ে দেখি । দেখি, আমার জানালার ফাঁক দিয়ে চুপিচুপি। কখনও এক চিলতে উঠোনে পাতানো চেয়ারে বসে তার আড়মোড়া ভাঙা শরীরখানি দেখি। সে লজ্জা পায়না বরং বেলা গড়াতে থাকলে সে তার বসন খুলতে থাকে এক এক করে। আমি অবাক হয়ে দেখি তার শরীরের সর্ষে হলুদ জেল্লা। ঘুটে কুড়ানীর ঘরে এ যেন এক রাজকন্যে! আগাছার মাঝেও যেন রঙের নাচন দিয়ে যাওয়া এক মোহময়ী!
স্বভাবটাই যে তার অমন । বিশেষ কারো আদর না পেলে তার নতমুখ সে তোলেনা কখনও । তার শরীর বিশেষ কারো স্পর্শ না পেলে ওম ছড়ায়না। কারো আদর পুরোপুরি গায়ে জড়ালেই তবে সে আড়মোড়া ভেঙে তার শরীর অনাবৃত করে । আলো ছড়িয়ে ছড়িয়ে নিজেকে সাজিয়ে তোলে পরিপাটি করে।
কারো মুখের দিকে চেয়ে চেয়ে নয় , কারো আদরে সোহাগেই শুধু সে যে সোহাগী হয়ে ওঠে । তাই, সে তো সূর্য্যমুখী নয়! আমি তাকে নাম দিয়েছি সূর্য্যসোহাগী । মাঝে মাঝে আদর করে ডাকি “সূর্য্যভূক” । সে জানেনা এই নামটি। আর আমিও তার নাম জানিনে।
ছবিঃ নাম না জানা সেই একজনা..........
শীতের মাঝে এখানে এসেছি আজ ক’দিন হলো। চারিদিকের ক্ষয়ে আসা সবুজে ন্যাড়া ন্যাড়া ভাব। এই রুক্ষ পরিবেশের মাঝেও সে তার রূপের আবেদন নিয়ে পড়ে আছে মাটির কাছাকাছি।
ছবিঃ পাতাঝরা শীতের মাঝেও মাটির কাছাকাছি......
আমার ঘরের উঠোনেই তার ঘরশয্যা। শীতের হিম সকালে এককাপ ধোঁয়া ওঠা চা নিয়ে আমি যখন তার পাশে পেতে রাখা লন চেয়ারটার দখল নিই তখন সে তন্দ্রাচ্ছন্ন।
নেতানো শরীর নিয়ে সে শুয়ে আছে । আমাকে দেখেও সে সন্ত্রস্ত হয়না। আস্তে আস্তে বেলা
গড়ায়, সূর্য্য ওঠে কুয়াশার চাদর ছিঁড়ে।
ঘরের ভেতরে এখানে সিগারেট খাওয়ার সুযোগ নেই তাই লনের চেয়ারখানাই আমার মুশকিল আসান হয়ে সঙ্গী হয় চা-সিগারেট খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে। আমার বাড়ীর সীমানার কাঠের দেয়ালের (ফেন্সিং) আড়ালে তখনও ঢাকা পড়ে থাকে সূর্য্যের অহংকার। সূর্য্যসোহাগী তখনও তন্দ্রাচ্ছন্ন। কৃশকায় নেতানো দেহখানি তখনও বেতস লতার মতো এলিয়ে থাকে।
ছবিঃ সূর্য্যের সোহাগবিহীন গতর না খোলা সূর্য্যসোহাগী ......
ছবিঃ সূর্য্য উঠে গেছে আকাশে অথচ দেয়ালের ছায়া পড়াতে অভিমানে নেতিয়ে থাকা সোহাগী...
আমি একাগ্রে চেয়ে থাকি তার নেতানো শরীরখানার দিকে - সে জেল্লা কই তার! সোহাগ ভরে হাত দিয়ে পরশ বুলিয়ে যাই যদি রূপবতী তার শরীরের জড়তা ভেঙে খিলখিল হেসে ওঠে। আমার স্পর্শে তার কোনও সাড়া মেলেনা !
সময় গড়ায়। রবি ঠাকুর তার কবিতার খাতাখানি খুলে বসে। আলো ছড়িয়ে যায় আকাশে।
সে আলো আমার বাড়ীর দেয়াল টপকে ঢুকে পড়ে আমার আঙিনায়। রূপবতীর গায়ে আছড়ে পড়ে। আর তাতেই ডগমগ হয়ে উঠতে থাকে তার শরীর। ধীরে ধীরে এক এক করে তার বসন খুলতে শুরু করে সে। আমার সোহাগ সে দু’হাতে ঠেলে সরিয়ে সূর্য্যের সোহাগ আঁচল ভরে গায়ে মাখতে থাকে। আমার রাগ হয় !
ছবিঃ ঘাসের শয্যায় আড়মোড়া ভাঙার খেলা ...........
সূর্য্যভূক বলেই না এমন সে! বেলা বাড়ে , সূর্য্যের আলো আরো আবেগ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার গায়ে । রূপবতীর সব বসন প্রজাপতির মতোন ডানা মেলে তখন। আমার আঙিনা থির থির করে কেঁপে কেঁপে সেজে ওঠে হলুদ আভায়। আমি অবাক হয়ে তার বসন খুলতে দেখি একেক করে। মুগ্ধ হই।
নাম না জানা এক রূপবতী ফুলের অপরূপ হয়ে ওঠার কাহিনী লিখছি আমি। আমার বাড়ীর ব্যাক ও সাইড ইয়ার্ডে লম্বা লম্বা সবুজ ঘাসের এখানে ওখানে তার শয্যা পাতা । সূর্য্যের আলোর সাথে এক রহস্যময় লীলাখেলা চলে তার। সূর্য্য আছে তো সে হাসে, সূর্য্য নেই তো সে দুঃখে নেতিয়ে থাকে।
ছবিঃ ওধারে আলো নেই সে নেই....এধারে আলো আছে সে আছে ......
ছবিঃ দোলা দিয়ে যাওয়া সূর্য্যভূক ..........
ক’দিন থেকেই এটা খেয়াল করছি আমি। ভেবেছিলুম স্বভাবে সে সূর্য্যমুখি। অথচ দেখি সে তো সূর্য্যভূক! জানলুম, সূর্য্য আকাশে উঠলেই হবে না , সূর্য্যের আদর তার গায়ে মাখতেই হবে। সূর্য্যের আলো খেয়ে খেয়ে তবেই না তার যুবতীর মতো শরীর ডগমগ হবে, বসন খুলে দেবে একটি একটি করে! এতো এতো সোহাগ চাই তার। সূর্য্যের আলো খাগী নাকি সূর্য্যসোহাগী ?
প্রকৃতি কি অদ্ভুত! কতো রহস্যময় ................
ছবি - স্যাকরামেন্টো, ক্যালিফোর্নিয়া থেকে আমার মোবাইলে তোলা।
সংযুক্তি - এই ফুলের নামটি আমি জানিনে দেখে, ব্লগে উদ্ভিদ ও ফুল বিষয়ক লেখার একমাত্র বিজ্ঞ কান্ডারী সহ ব্লগার " মরুভূমির জলদস্যু" ফুলটির অনেকগুলো নাম জানিয়েছেন- অম্লিকা, আংববতী, আমরুক, আমরুল, আমরুল শাক, ক্ষুদ্রাম্লী, চতুশ্ছদা, চাঙ্গেরী, চুকত্রিপাতি, চুকা শাক, চুক্রা, চুত্রিকা, চৌপতিয়া, চ্যাংদোলা, টক পাতা, বড় আমরুল।
আমি এ থেকে আংববতী নামটি জুড়ে দিচ্ছি এই আমার নাম না জানা ফুলের সাথে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০২১ সকাল ৯:৫৭