বেকুব বলিয়াই প্রশ্নটি মাথায় লইয়া কেবলই ঘুরিয়া মরিতেছি। লজ্জার মাথা খাইয়াও কাহাকেও শুধাইতে পারি নাই। দূরের মানুষ তো দূর, কাছের মানুষদেরও বলিতে সংকোচ বোধ হইতেছে। শুধাইলেই হয়তো তাহারা বলিয়া বসিবেন , আহারে বেকুব! গুগলে সার্চ দিলে বা দেশের সংবিধান হাতড়াইলেই তো উত্তর পাওয়া যাইতো! তুই তো দেখছি শুধু বেকুব-ই না, মহাবেকুব!
যে প্রশ্নটি করিতে চাহি নাই তাহার কথা এই যে অকস্মাৎ কহিয়া ফেলিলাম, তাহাতেও বেকুবী হইলো কিনা বুঝিতে পারিতেছি না। যখন তাহা করিয়াই ফেলিয়াছি তখন মহাবেকুব বলিয়াই এক্ষনে প্রশ্নটি লইয়া আপনাদের বিজ্ঞ মতামতের দ্বারস্থ হইতে হইলো।
প্রশ্নটি এই – “ বাংলাদেশের স্থানীয় বা জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে একজন প্রার্থীকে নির্বাচিত হইতে হইলে মোট ভোটারের নূন্যতম কতো শতাংশ ভোট পাইতে হইবে ?”
মহাবেকুব বলিয়া নিজের বুদ্ধি দিয়া গুগল ঘাটিয়াছি, সংবিধান হাতড়াইয়াছি,কোত্থাও উত্তর খুঁজিয়া পাই নাই। যাহা পাইয়াছি তাহা কোন দেশের সংসদ/সিনেটে উচ্চকক্ষ , নিম্নকক্ষ ইত্যাকার কক্ষ কিভাবে গঠিত হইবে তাহার ফিরিস্তি। কিন্তু একজন প্রার্থীকে কতো শতাংশ ভোট পকেটে ভরিয়া সেসব কক্ষে প্রবেশ করিতে হইবে তাহার উত্তর মেলে নাই। বিভিন্ন পদ্ধতির ভোটের কথা পাইয়াছি কিন্তু কতো শতাংশ ভোট না পাইলে একজন প্রার্থী নির্বাচিত বলিয়া গন্য হইবেনা তাহা দেখি নাই।কেবলমাত্র গু’টি দুয়েক দেশে প্রেসিডেন্টকে কতো শতাংশ ভোট পাইতে হইবে তাহা দেখিয়াছি।
দেশের সংবিধানের সপ্তমভাগে “ নির্বাচন” অংশের ১১৮ হইতে ১২৬ ধারার কোথাও এ সংক্রান্ত কোন তথ্যও পাই নাই।
তাহা হইলে কি ধরিয়া নিতে হইবে, আপনি যদি কোন নির্বাচনে প্রার্থী হইয়া থাকেন তাহা হইলে আপনার কোনও ভোট না পাইলেও চলিবে? যেহেতু ভোট কতো শতাংশ পাইতে হইবে এমন কোনও নির্দেশনা নাই বলিয়া কি কেবল মাত্র নির্বাচন কমিশনের দেয়া প্রার্থী হইবার যোগ্যতা লইয়া নিজেকে একজন প্রার্থী ঘোষনা দিলেই আপনার কপালে “নির্বাচিত” হইবার শিকেটি ছিড়িবে ?
কেন ছিড়িবেনা ? ছিড়িয়াছে তো! ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে তো অনেকের কপালেই তো তেমন শিকেটিই ছিড়িতে দেখিয়াছি। ১টি ভোটও না পাইয়াই তাহারা অবলীলায় জনপ্রতিনিধি হইয়া গিয়াছেন। তাহাদের যোগ্যতা একটাই – প্রতিদন্ধীবিহীন। তাহা হইলে গনতন্ত্রে কি প্রতিদন্ধীতা বলিয়া কিছুই নাই ? নাকি থাকিতে নাই ? নাকি বৃহত্তর জনগনের কার্যকর অংশগ্রহণ না থাকিলেও গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে বলিয়া ধরিয়া নিতে হইবে ? গণতন্ত্র যেখানে “সর্বস্তরের জনগণ” এর কথাই বলে সেখানে এক অংশকে “ভোটার” চিহ্ন দিয়া আলাদা করিয়া বাকী জনগণের বৃহৎ অংশকে অপাংতেয় করিয়া রাখা কেন ???
কিন্তু যতোদূর জানি আমাদের দেশে “ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট” ভোটদান পদ্ধতি চালু আছে। এই ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট বা “এফপিটিপি” পদ্ধতি প্রচলিত আছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতের পাশাপাশি অনেক দেশেও। এই পদ্ধতিতে ভোটাররা নিজেদের পছন্দের একজন মাত্র প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন এবং যে প্রার্থী সবচাইতে বেশি ভোট লাভ করেন সে প্রার্থীই জয়ী হন। মহাবেকুব বলিয়াই মাথায় ইহা কিছুতেই আসিতেছে না যে, এই পদ্ধতিতে একজন ভোটার কি আসলেই নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন ? কারন, এমন পদ্ধতিতে তো বিভিন্ন দল হইতে তাহাদের নিজেদের বাছাই করা লোকদের প্রার্থী বানানো হইয়া থাকে। এবং সর্বক্ষেত্রেই তাহারা দুর্বৃত্ত ও লুটেরা কিসিমের হইয়া থাকেন। ভোটারদের পছন্দের নহে। ভোটাররা তো উহাদের কাহাকেও পছন্দ না-ও করিতে পারেন! সত্য কথা বলিতে কি, ভোট দিতে হয় বলিয়া কিম্বা পাছে ভোটের অধিকার হারাইয়া না ফেলেন বলিয়া বা পাঁচটি বচ্ছর পরে ভোটের সুযোগ পাইয়াছেন এই আনন্দেই তাহারা ভোটে অংশগ্রহন করিয়া থাকেন। ইহা একটি বেকুবের মতো কথা হইলেও হইতে পারে!
যাহা হউক, এইতো কয়েক বৎসর আগে (২০১৯) ঢাকা সিটির দুই অংশের মেয়র নির্বাচনে ভোট পড়িয়াছিলো গড়ে ২৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। তবে মিডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, উত্তর ও দক্ষিনের নির্বাচনে বিজয়ী মেয়র প্রার্থীরা যথাক্রমে মাত্র ১৪ দশমিক ৮৪ এবং ১৭ দশমিক ৩০ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পাইয়াছিলেন। সদ্য বিগত ৫টি সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচনে যে প্রদত্ত ভোটের হার খুব বেশী ছিলো তাহাও কিন্তু নহে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দিয়াছেন ৪৬ শতাংশ, খুলনা সিটি করপোরেশনে ৪২ থেকে ৪৫ শতাংশ, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৫১.৪৬ শতাংশ, রাজশাহীতে ৫৬.২০ শতাংশ , গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ৪৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ ভোটার। তাহার মানে, নির্বাচন কমিশনের তথ্য সঠিক বলিয়া ধরিয়া লইলেও সংখ্যা গরিষ্ঠ ভোটাররা তিনটি জায়গাতে কাহাকেও নির্বাচিত করেন নাই। সব জায়গাতে জয় হইয়াছে সংখ্যালঘিষ্ঠদের। আর সবে সমাপ্ত জাতীয় পর্যায়ের উপ নির্বাচনে দেখিয়াছেন যে, ঢাকা -১৭ আসনে ভোট পড়িয়াছে মাত্র ৭ শতাংশেরও কম। এইখানে ৯৩ শতাংশ ভোটারই কাহাকেও তাহাদের প্রতিনিধি হিসাবে চাহেন নাই। এর বাহিরে ভোটার নহেন এমন লাখো মানুষ তো রহিয়াছেন যাহারা উপরিউক্ত কাহাকেও পরোক্ষ ভাবে হইলেও তাহাদের প্রতিনিধি হইবার সার্টিফিকেট দেন নাই। তাহার পরেও সংখ্যালঘিষ্ঠ ভোটে কেউ একজন জনপ্রতিনিধি হইয়া গিয়াছেন।
তবে গনতন্ত্রে যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হয় তাহাও কি মিথ্যা ? এই মহাবেকুবের এমন বেকুবী মন্তব্যে আপনাদের অনেকেরই মুখ চুলবুল করিবে এই বেকুবকে ধুঁইয়া দেওয়ার জন্য। গনতন্ত্রের সবক, নির্বাচনের প্রক্রিয়া ইত্যাদি শিখাইলেও শিখাইতে মন চাইতে পারে আপনাদের। বলিবেন , বিশ্ব জুড়িয়া ইহাই হইয়া আসিতেছে,তুমি কোন বিদ্যাসাগর আসিয়াছো যে আমাদের বিদ্যা শিখাইবে ?
শিখাইতে চাহিনা তবে কিছু নিয়ম তুলিয়া ধরি - মনে পড়ে, প্রয়াত নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলিয়াছিলেন , “কোনো নির্বাচনে শতকরা ৫০ ভাগ ভোট না পড়লে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এ জন্য বিশ্বের অনেক দেশে ৫০ শতাংশের কম ভোট পড়লে আবার ভোট গ্রহণ করা হয়।“
তাইতো তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আমরা দেখিয়াছি, ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ ভোট পাইয়াও এরদোয়ানকে দ্বিতীয়দফার নির্বাচনে যাইতে হইয়াছে ৫০ শতাংশের অধিক ভোট নিশ্চিত করিতে।
এমনকি আমেরিকাতে প্রেসিডেন্ট পদে ৫৩৮ টি ইলেকোরাল ভোটের ২৭০ টি পাইতে হয়। মোট ইলেকটোরাল ভোট ৫৩৮ এর অর্ধেক ২৬৯ এবং জয়ী হইয়া হোয়াইট হাউজে যাওয়ার জন্যে আরো একটি ভোট এভাবেই ২৭০টি ভোট পাইতে হইবে একজন প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য। অর্থাৎ ৫০ শতাংশের উর্দ্ধে ভোট পাইতেই হইবে । তাহা হইলেই সংখ্যাগরিষ্ঠ হইবে।
তাহা হইলে বাংলাদেশের ব্যাপারে কি !!!!!!!
সংবিধান লইয়া মুখে ফেনা তুলিয়া, প্রায় অজ্ঞান হইয়া যে মাতামাতি হইতেছে সেই সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে “রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি” অধ্যায়ে “গণতন্ত্র ও মানবাধিকার” অংশে বলা হইয়াছে ----- প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে [এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে]৷
এতোক্ষন যাবৎ মহাবেকুব যাহা তুলিয়া ধরিয়াছে তাহার ভিত্তিতে বলিবেন কি, প্রতিনিধি নির্বাচনে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইয়াছে কি যেখানে বৃহত্তর জনগনের ( ভোটার , নন-ভোটার সহ) কোনও অংশগ্রহণই নাই? নাকি যেনতেন ভাবে জনগণের পছন্দ- অপছন্দের কেহ নির্বাচিত প্রতিনিধি হওয়ার পরেই শুধু তিনি জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করিবেন ? জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ কি শুধু ভোটের পরেই নিশ্চিত করিতে হইবে ? আগে বা সর্বক্ষেত্রে নহে ? ভোটের আগে জনগণ কি কোনও জনগণই নয় ????
বেকুব বলিয়া মাথায় ইহার কিছুই কুল –কিনারা পাইতেছি না!
এই কথা বলিয়াছি বলিয়া মহাবেকুবকে যতোই আহাম্মক বলুননা কেন, আর একটু জ্ঞান দেই--- নির্বাচনে অংশগ্রহনকারীর জামানত বাজেয়াপ্ত করিবার জন্য নির্বাচন কমিশনের যে আইনটি রহিয়াছে তাহা হইলো, নির্বাচনে যতগুলো ভোট পরিবে, ঐ মোট ভোটের ৮ ভাগের ১ ভাগ-ও যদি কোন প্রার্থী না পাইয়া থাকেন, তাহা হইলে তাহার জামানত বাজেয়াপ্ত হইবে।
ঠুনকো একটা বিষয়, “জামানত বাজেয়াপ্ত” করার জন্যে আইন প্রনীত হইয়াছে অথচ মোট ভোটের কতো ভাগ ভোট না পাইলে একজন প্রার্থী নির্বাচিত হইতে পারিবেন না, এমন জরুরী এবং যাহাতে জনগণের অংশগ্রহণ কার্যকর ভাবে প্রতিফলিত হইতে পারে এমন একটি নীতিমালা না আছে নির্বাচন কমিশনের কাছে না আছে সংবিধানে। বাঁশের চেয়ে কঞ্চির দর বেশী বলিয়া মনে হইতেছে! মহাবেকুবের ভাবনায় ইহা হইলো, মা’কে ছাড়িয়া মাসীর ননদকে লইয়া টানাটানি করিবার মতো!
বেহুদা প্রশ্নটি সম্পর্কে জানিতে চাহিতেছি, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করিতে হইলে কিম্বা জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করিতে হইলে ন্যূনতম ভোটের প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করার কোনও প্রয়োজন এযাবৎ আপনার মনে একবারের জন্যে হইলেও উদিত হইয়াছে কিনা ? এর জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর আইনে সংশোধনী আনার কোনও প্রয়োজন আছে কিনা ?
যদি প্রয়োজন আছে বলিয়া মনে করেন তবেই বোঝা যাইবে, আপনি আমার মতো মোটেও আহাম্মক বা বেকুব নহেন বরং জ্ঞানী-প্রজ্ঞাবান-সুচিন্তক ।
ছবির কৃতজ্ঞতাঃ
www.ClipartsFree.de
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০২৩ সকাল ৯:৩০