somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নানা ও নাতির মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি দর্শন অভিযান ……..

০৯ ই অক্টোবর, ২০২৩ সকাল ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তো হয়েছে কি, গেলো সেপ্টেম্বরের এক বৃহষ্পতিবারের বিকেল সাড়ে পাঁচটায় আমার নাতি পিঠে তার ক্যামেরার ঝোলাটি নিয়ে বাইরে যাবার জন্যে গ্যারেজের সাটার খোলার বাটনে চাপ দিয়েছে। শব্দ করে সাটার খুলছে, কানে আসতেই জিজ্ঞেস করলুম – কিরে এই সময় পোটলা- পাটলী নিয়ে যাচ্ছিস কই ?
- হা…হা…. মিল্কিওয়ের ছবি তুলতে যাচ্ছি।
- কি করতে যাচ্ছিস ?
- আরে বললাম তো আকাশের ছবি তুলতে যাচ্ছি। আজকের রাত নয়টা থেকে এগারোটার মধ্যে না তুলতে পারলে ছয় মাসের আগে আর তুলতে পারবোনা।
জানি, আমার এই নাতিটির ফটোগ্রাফির সখ আছে । একেক সময়ে অনেক দূরে চলে যায় প্রকৃতির ছবি তুলতে, একা একাই। এটাও তেমন হবে হয়তো। আবার জানতে চাইলুম –
- কোথায় যাচ্ছিস ,কতো দূরে, ফিরবি কখন ?
মুখে একটা দৃঢ়তার ছায়া ফেলে “কোনও ব্যাপার না” ষ্টাইলে তার জবাব –
- ঘন্টা দুয়েকের ড্রাইভ। পাহাড়ের উপরে একটা জঙ্গলে। কোনও মানুষ নাই ওখানে, জঙ্গল তো ভাল্লুক-টাল্লুক থাকতে পারে। নেট ঘেটে দেখে নিয়েছি, ধারেকাছে ঐটাই সবচেয়ে নির্জন এলাকা। জায়গাটাতে সব চেয়ে কম লাইট পল্যুউশন হয়। ফিরতে রাত বারোটা-একটা হবে।
- অতো দূরে এই রাত্তিরে একা যাচ্ছিস ? সাথে আর কারা আছে?
- আর কেউ না।
শঙ্কা হলো আর তাই বললুম-
- আর কেউ না মানে ? একা একা এই রাত্তিরে জঙ্গলে যাবি, ভাল্লুক আছে জেনেও যাবি? আমিও যাবো তোর সাথে।
- মাথা খারাপ, চারদিকে জঙ্গল তার উপরে আবার ভাল্লুক । আমি তো দৌঁড়ে ফিরতে পারবো তুমি ভাল্লুকের হাত থেকে জানটা বাঁচাবে কি করে? তার উপরে ওখানে কোনও মোবাইলের নেটওয়র্ক থাকেনা। কাউকে খবরও দিতে পারবোনা।
- তোর কি হবে তাহলে ?
- ভাল্লুকে খেলে খাবে। একদিন তো মরতেই হবে……….
আমাকে উৎকন্ঠায় রেখে সে হাসতে হাসতে পগার পার।

রাত দশটার দিকে ওর নিরাপদে ফিরে আসার জন্যে দোয়া-দরূদ পড়ে শুতে যাবো এমন সময় ওর ফোন। উত্তেজিত কন্ঠ !
- তোমরা কি ঘুমিয়ে গেছো? ঘুমিওনা…. ঘুমিওনা । আমি আসছি, সজাগ থেকো।
- কেন কি হয়েছে? ঠিক আছো তো? কোনও এ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে ?
- আরো নাহ! আমি পথে, একঘন্টা লাগবে আসতে। ঘুমিওনা। একজনও ঘুমাবেনা।
কি হতে পারে ভেবে ভেবে আমি আর আমার গিন্নী সারা। সে এলো এগারোটার বেশ খানিকটা আগেই। এসেই উত্তেজিত হয়ে বলতে শুরু করলো –
- জানো, কি হয়েছে? গেছিলাম তো ভাল্লুকের পেটে! জঙ্গলে গিয়েতো পৌছুলাম সন্ধ্যা হওয়ার আগে আগেই। পথে কোনও গাড়ী-ঘোড়া, মানুষজন চোখে পড়েনি। পাহাড়- জঙ্গলের মাঝে আমি একা। দশ বারো মাইলের মধ্যে কেউ নেই। সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথেই ঝপ করে অন্ধকার নেমে এলো। নিজের হাত –পা দেখা যাচ্ছিলো না। টের পাচ্ছি, পায়ের আশেপাশে খরগোস, কাঠবেড়ালী, ইঁদুর এই সব কি কি যেন সরসর করে দৌঁড়ে যাচ্ছে । আকাশে আলোকসজ্জার মতো কোটি কোটি তারা দেখতে পাচ্ছি। ওরকমটা জীবনেও দেখি নাই। তোমরাও দেখো নাই। মোবাইলে নেটের ফটো-পীলস ( Photo pills) এ্যাপের নির্দেশ মতো পার্কিং করা গাড়ীর পেছনে ট্রাইপডের উপর ক্যামেরা বসিয়ে তাক করে আছি আকাশে। রাত নয়টার দিকে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিকে দেখা যাবে পরিষ্কার। ফটো-পীলস এর নির্দেশ মতো রাত দশটার দিকে গ্যালাক্সিটা চলে আসবে সেখানে, যেখান থেকে আমি ওর পুরোটা ছবি তুলতে পারবো। ক্যামেরাও ঐদিকে তাক করা। তাই রাত বারোটা –একটার দিকে ফিরবো বলেছিলাম। নয়টার দিকে ছবি মাত্র তুলতে শুরু করেছি, হঠাৎ পেছনে জঙ্গলের মধ্যে থেকে গাছের ডাল ভাঙার মতো মটমট আওয়াজ হলো। তারপরে কোনও কিছুর চলাচলের পরিষ্কার শব্দ… থপথপ। এখানে আশেপাশে দশ মাইলের মধ্যে মানুষ থাকার কথা না। ঝট করে মনে পড়লো পাহাড়ী ভাল্লুকের কথা। অন্ধকার এতো যে কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা। ভয়ে বুকটা ধরফর করে উঠলো। ভয়ে টর্চ লাইটটাও জ্বালাতে ভুলে গেছি। ভাগ্য ভালো যে, গাড়ীটা ষ্টার্ট করে রেখেছিলাম যাতে বিপদ হলে গাড়ী ষ্টার্ট করতে যেন ঝামেলায় না পড়ি। ইন্টেরিয়র লাইটও অন ছিলো। ট্রাইপড সহ ক্যামেরাটা ঝটকরে তুলে পিছনের সীটে দড়াম করে ফেলে আমি ড্রাইভিং সীটে। তারপর সাঁ সাঁ করে নুড়িপাথরের রাস্তায়। শব্দটা কিসের জানিনা কিন্তু এতো কষ্ট করেও মিল্কিওয়ের ছবি তুলতে পারলাম না, এটাই দুঃখ। যাক আগামী শনিবার আবার যাবো।
- কি আবার যাবি ? তোর সাহস তো কম না!
- যেতেই হবে ! ঠিকমতো একটা ছবি তুলতে না পারলে আর ছয় মাসের মধ্যে তোলা হবেনা।
- তুই গেলে আমিও যাবো। একা একা যেতেই পারবিনা। যাওয়ার প্রশ্নই আসেনা।
- ঠিক আছে চলো কিন্তু ভয় পেলে চলবেনা। ভাল্লুকে খেলে আমি দায়ী না।

রাতের মতো নিশ্চিন্ত হওয়া গেলো।



ছবি-১ ও ২ - বৃহষ্পতিবারে রাত ৯টায় আমার নাতির তোলা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির আংশিক ছবি। ভালুকের ভয়ে পালিয়ে আসার আগে।

একদিন পরের শনিবার। নাতি আগের দিনে যে ভয়াল বর্ণনা দিয়েছে তাতে তাকে একা ছাড়তে মোটেও রাজি ছিলুম না। আমি প্রস্তুত যাওয়ার জন্যে। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি দেখার শখ আমারো। ছবিতেই কেবল দেখেছি। এবার নিজের চোখে দেখবো। উত্তেজনা তো ছিলোই তবে ভাল্লুকের ভয়টাও সরানো যাচ্ছিলো না। নেট ঘেটে জায়গাটা বের করলুম। এল্ক ক্রীক এলাকার “ষ্টোনী গর্জ রিজারভয়ের” পার্ক, সমতল থেকে প্রায় ৭৫০ফুট উপরে । আমার শহর থেকে প্রায় দুঘন্টার পথ। ঐ এলাকার জীব বৈচিত্রও ঘেটে দেখলুম। পার্ক এরিয়া। কিভাবে ঐ এলাকার জীবজন্তুর সাথে মোকাবেলা করতে হয় তাও ঘেটে দেখলুম। আলোক দূষন মাপার কাজে ব্যবহৃত Brotel Scale অনুযায়ী এই জায়গাটার মান ২। Brotel Scale কোনও জায়গার আলোর দূষন মাত্রার খবর দেয়। Brotel Scale এর ১ মানে নিচ্ছিদ্র অন্ধকার। যা শুধু আকাশেই পাওয়া যায় অর্থাৎ মহাকাশে গেলে।বুঝতেই পারছেন ২ মানে আলোর দূষন নেই। ঘুটঘুটে অন্ধকার না হলেও খুব কাছের জিনিষও ঠিকমতো দেখাই যাবেনা, এমন অন্ধকার। রাতের আকাশ পর্য্যবেক্ষনের জন্যে আদর্শ। আমার নাতি নেট ঘেটে ঘেটে কাছাকাছি এই জায়গাটাকেই পেয়েছে।

শনিবার আগে ভাগেই রওয়ানা দিয়েছি, কারন আলো থাকতে থাকতে আমি দেখতে চাই, আমার নাতি যেভাবে বলেছে, জঙ্গলটা আসলেই অতোখানি ভয়ঙ্কর কিনা। তাই যদি হয় তবে এক্সপিডিশান ক্যান্সেল!
সুন্দর মসৃন পথ, সুন্দর দৃশ্যপট। আমার চোখে প্রকৃতির ঘোর। হাইওয়ে থেকে বামে বাঁক নিয়ে মাইল ত্রিশেক যে পথ পাহাড়ের বুকের মধ্যে একেবেঁকে চলে গেছে তা ধরেই আমরা যাচ্ছি । সুনসান রাস্তা। কোন গাড়ী নেই আশেপাশে বা সামনে-পেছনে। পথে আমরা দুজন শুধু। হাইওয়েতে থাকতেই দেখেছি দিগন্তে মেঘের আনাগোনা। সেটা এখন যেন বেড়ে গেছে এবং বাড়ছেই। মিল্কিওয়ের ছবি তুলতে হলে আকাশ পরিষ্কার থাকা চাই। ভয় হলো এমন মেঘের চাদরে আকাশ ঢাকা থাকলে মিল্কিওয়েটাকে আর দেখা হবেনা। এতোদূরে এসে হতাশ হতে হবে ? শ্বান্তনা দিলুম নিজেকে যে, আর কিছু না হোক প্রকৃতির নির্জনতায় ঘোরাঘুরি তো হবে!
পাহাড়ী আকাবাঁকা পথে যেতে যেতে, সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে সম্ভাব্য বিপদ থেকে কিভাবে উদ্ধার পেতে হয় সে সম্পর্কে নেটে পড়া বিষয়গুলো আবারও মনে মনে ঝালাই করে নিলুম বার কয়েক। তাছাড়া খান চারেক বড় বড় ছুরি, বিভিন্ন রকমের টর্চ-ফ্লাড লাইট সাথে আছে । তা দিয়ে কিভাবে কি করবো তারও রিহার্সাল দিলুম মনে মনে।
সন্ধ্যের আগেই পৌছে গেলুম পার্ক এলাকায়। এটা একটা রিক্রিয়েশনাল এলাকা, শুধু দিনের বেলার জন্যে এটা খোলা থাকে। অবশ্য রাতেও কেউ কেউ আসে ক্যাম্পিং করতে।
পাহড়ের গায়ে গায়ে উইলো জাতীয় গাছের জঙ্গল আছে বটে তবে কোথাও ঘন, কোথাও ফাঁকা ফাঁকা ভাবে । তেমন ভয়ঙ্কর কিছু মনে হলোনা। পাথুরে নুড়িতে ছাওয়া পথ পেরিয়ে একটা হ্রদের পাশে ক্যাম্পিং সাইটে পৌছলুম। একদিন আগেই আমার নাতি এখানেই ঘাঁটি গেড়েছিলো এবং ভালুকের ভয়ে পালিয়ে এসেছিলো। আশেপাশে এবং ধারে কাছেই হালকা জঙ্গলের দেখা মিললো কিন্তু সেটা ভালুকের বিচরণ ক্ষেত্র বলে মনে হলোনা। ওখানে ভালুক থাকলে দিনের বেলাতে চোখে পড়বেই। সন্ধ্যের আলোতে চারপাশ ভালোভাবে দেখে নিলুম, সম্ভাব্য ভয়ের কারন কি কি হতে পারে তা খতিয়ে দেখলুম। আর সাবধানতা স্বত্ত্বেও ভালুক যদি এসেই পড়ে আর পালিয়ে যেতে না পারি তবে ছোটবেলার বইতে পড়া কাহিনীর সঙ্গে মিলিয়ে মড়ার মতো মাটিতে পড়ে থাকতে তো পারবো! দেখা যাক , আল্লাহ-ভরসা।
নাতিটি আমার বলেছিলো, সে যেদিন এসেছিলো সেদিন একজন লোকও ছিলোনা। সে ছিলো একা। আজ দেখলুম কয়েকটি পরিবার ক্যাম্পিং করছে। বললুম-
- কিরে, বললি যে কোনও লোক আসেনা এখানে । এখন তো দেখছি লোক আছে।
- সেদিন আসলেই কোনও মানুষই ছিলোনা। আজ শনিবার, উইক এন্ড। তাই হয়তো লোকজন উইক এন্ড কাটাতে এসেছে।
যাই হোক, মানুষজন থাকাতে ভালুকের আক্রমনের সম্ভাবনা অনেক কমে গেলো হয়তো । এটাও একটা স্বস্তির কারন। কিন্তু আমরা তো এসেছি মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি দেখতে আর ছবি তুলতে, তার কি হবে! আকাশে মেঘ তো বাড়ছেই।

ছবি- ৩ দুই পাহাড়ের ঐ ফাঁক তাক করে ক্যামেরা তাক করে রাখা হয়েছে যেখান থেকে মিল্কিওয়েকে দেখা যাবে লেজ সহ পুরোটা অথচ আকাশে মেঘের আনাগোনা।

নাতি তার ক্যামেরা-ট্রাইপড বের করে সামনের হ্রদটির ওপারে থাকা দু’টি পাহাড় চুড়ার মাঝখানের জায়গাটি তাক করে বসিয়েছে। আর মোবাইল বের করে কি সব টিপছে আর ক্যামেরার পজিশন পাল্টাচ্ছে। সামনের পাহাড়ের দিকে মোবাইল তুলে ধরে কি সব যেন মাপছে। থেকে থেকে ক্যামেরার ফোকাস- এ্যাপারচার-সাটার স্পীড এই সব ঠিক করছে।
যেহেতু আকাশ মেঘে ছেয়ে আছে তাই কখন যে অন্ধকার চেপে বসেছে ঠাহর করা গেলোনা। নাতি বলেছিলো, এখানে নাকি ঝট করে গাঢ় অন্ধকার নেমে আসে, নিজের হাত-পা পর্য্যন্ত দেখা যায়না। সেই স্বাদ আর পাওয়া গেলোনা মেঘের কারনে। একটা থ্রীল হতে হতেও হলোনা।
আটটা বাজতে চলেছে। আলোবিহীন জায়গা হলেও স্বাভাবিকের চেয়ে আসলেই যথেষ্ট অন্ধকার। নিজের হাত-পা অস্পষ্ট ভাবে দেখতে পাচ্ছি। আকাশে তারার মেলা। অতো তারা একসাথে আমি কেন অনেকেই দেখেন নি জীবনে। লক্ষ কোটি তারা আকাশের গায়ে যেন মেয়েদের শাড়ীর চুমকির মতো লেগে আছে। আকাশের এতোটুকু জায়গাও যেন ফাঁক নেই।

ছবি- ৪ তারার মেলা । ( আমার মোবাইল থেকে)

আমি সন্মোহিত হয়ে ঘাড় উঁচুকরে আকাশের দিকে তাকিয়ে নাতিকে বললুম-
- কিরে তোর মিল্কিওয়ে কই ?
সে তার মোবাইলটি আমার চোখের সামনে তুলে ধরলো। সেখানে জ্যামিতিক সব আকৃতি আর কিসব যেন লেখা। Photo pills এর এ্যাপ। এ্যাপে চোখ রেখে সে হাত তুলে সামনের পাহাড় দেখিয়ে বললো –
- এই যে দেখো রাত আটটার পরেই আকাশের ঐখানেই মিল্কিওয়ে দেখা যাবে। এই যে দেখো মিল্কিওয়ে দেখা যাচ্ছে কিন্তু মেঘের কারনে আমরা দেখতে পারছিনে।
ভ্যালা মুসিবৎ! দুই ঘন্টার রাস্তা ঠেঙ্গিয়ে এতোদূর এসেছি যাকে দেখবো বলে সেটাকে ঢেকে দিয়েছে মেঘ! শালার মেঘ….. একটু সর হারামযাদারা…….। গালি না দিয়ে পারা যায় ? গালি দিলুম কষে। সে গালির ভয়েই হয়তো মেঘেরা একটু দ্রুত ডান দিকে সরে গেলো। তার ফাঁক দিয়েই অস্পষ্ট করে মিল্কিওয়ের চেহারা খানিকটা ভেসে উঠলো। পুরোটা নয়। নাতিকে তাগাদা দিলুম, তোল তোল ছবি তোল। আমি এটা নিয়ে ব্লগে পোস্ট দেবো।

নাতি আমার ব্লগিং করার কথা জানে। ক্ষেদের সাথে বললো- রাখো তোমার ব্লগ। আমি যদি এই মেঘের কারনে মিল্কিওয়ের সবটা তুলতে না পারি আজকে তবে আবার ছয়-সাত মাসের আগে আর ছবি তুলতে পারবোনা। মোহাবে ডেজার্টে যেতে হবে সামনের বছর। মোবাইলের চার্ট দেখিয়ে বললো – রাত সাড়ে নয়টা থেকে দশটার সময় পুরো মিল্কিওয়ে দেখা যাবে ঐদিকে। হাত তুলে দেখালো সে।
যাই হোক সে ছবি তুলতে লাগলো। আস্তে আস্তে মেঘের দল আমাদের মাথার উপরে সরে আসলো। দূর পাহাড়ের পেছনের আকাশটা তখন মেঘেদের ত্যাদরামীর কিছুটা বাইরে। মেঘের ফাঁক-ফোঁকড় দিয়ে আমি গ্যালাক্সির একটা অংশ ভাঙা ভাঙা দেখতে পেলুম। নাতি অনেকক্ষন সময় নিয়ে, ক্যামেরা এ্যাডজাষ্ট করে করে ছবি নিতে লাগলো। মুখে বললো – না পুরোটা ধরা যাচ্ছেনা। মেঘ কখন সরবে কে জানে।

ছবি – ৫ মেঘের (ছবিতে কালো কালো অংশ) পেছনে ছায়াপথ, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির অংশ বিশেষ।

নাতি আমার অখুশি। বললুম- ব্যাটা যা পারো তোল। সে ছবি তুলতে তুলতে বললো – আমরা কি রাত সাড়ে নয়টা পর্য্যন্ত থাকবো?
এতোদূরে এসেও যদি গ্যালাক্সির সবটা দেখতে না পারি, এতোদিন ছবিতে যেমনটা দেখেছি; তবে দুঃখের কিছু বাকী থাকবেনা। তবুও আমি খুশি। ব্লগে দেয়ার মাল-মসল্লা পেতে যাচ্ছি । ভাল্লুকের ভয়, মেঘের দল এড়িয়ে এখানে ওখানে গিয়ে ক্যামরা তাক করে ছবি তোলা, সব মিলিয়ে একটা থ্রিলার কাহিনী হবে ।
বললুম – দশটা পর্য্যন্তই থাকি। এখনতো আর ভাল্লুকের ভয় নেই । আশেপাশে লোকজন আছে, তারা বারবিকিউ করছে। সুতরাং ভাল্লুক আর এদিকে আসবেনা এবং ভাল্লুকের থাবায় জানটাও দিতে হবেনা ।
রাত দশটা হয়ে গেছে। খালি চোখেই মিল্কিওয়ে দেখা যাচ্ছে। মেঘের দঙ্গলের ফাঁক দিয়ে যতোটুকু দেখা যায় আর কি! তবে নাতির ক্যামেরার চোখ যেমনটা দেখেছে নানার খালি চোখে তেমনটা ধরা পরেনি।

ছবি- ৬ অবশেষে মেঘের পেছনে উজ্জ্বল রঙিন মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি।

কি আর করা! ফিরে আসছি। মেঘের যন্ত্রনায় মেজাজটা খারাপ হলেও নাতিকে ধন্যবাদ, এমন একটা থ্রীলড অভিযানে ইচ্ছেয় হোক অনিচ্ছেয় হোক আমাকে নিয়ে এসেছে।
আর সৃষ্টিকর্তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই কারনে যে, ভালুকের পেটে না দিয়ে সৃষ্টির এক অপূর্ব রহস্যময় নিদর্শনের কিছুটা দেখিয়ে দিয়েছেন বলে ...........


( স্বীকারোক্তিঃ ছবির সাইজ বহুৎ চেষ্টা করেও এক রকম করতে পারিনি। দুঃখিত।


ছবির কৃতজ্ঞতাঃ আমার নাতি শামিনের ক্যামেরা থেকে।


স্যাকরামেন্টো, ক্যালিফোর্নিয়া থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০২৩ সকাল ৯:০০
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাঘ আর কুকুরের গল্প......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৩২

বাঘ আর কুকুর দুটোই হিংস্র এবং সাহসী প্রাণী। বাঘ, কুকুর যতই হিস্র হোক মানুষের কাছে ওরা নেহায়েতই পোষ মেনে যায়। আমাদের সমাজে, রাজনীতিতে অনেক নেতাদের 'বাঘের বাচ্চা' বলে বিরাটত্ব জাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমরা উকিলরা কেউ চিন্ময়ের পক্ষে দাঁড়াবো না , না এবং না

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২




সাবাস বাংলাদেশের উকিল । ...বাকিটুকু পড়ুন

আগরতলায় হাইকমিশনে হামলা কাকতালীয় না কি পরিকল্পিত?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩২

গতকাল (২ ডিসেম্বর) ভোরে আগরতলার হিন্দু সংগ্রাম সমিতির বিক্ষোভকারীদের দ্বারা বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে হিংসাত্মক বিক্ষোভের পর ন্যাক্কারজনকভাবে আক্রমণ করে। বিভিন্ন তথ্যে চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত যে বিক্ষোভকারীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের সাথে যুদ্ধ করে ভারত লাভবান হবে বলে মনে করি না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০



আমাদের দেশে অনেক মুসলিম থাকে আর ভারতে থাকে অনেক হিন্দু। ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম যুদ্ধে মুসলিমদের সাফল্য হতাশা জনক নয়। সেজন্য মুসলিমরা ভারতীয় উপমহাদেশ সাড়ে সাতশত বছর শাসন করেছে।মুসলিমরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূস গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড - শেখ হাসিনা।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৩৬


৫ই আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পলায়নের পর বাংলাদেশের ক্ষমতা গ্রহণ করা নতুন সরকার কে বিপদে ফেলতে একের পর এক রেকর্ড ফোন কল ফাঁস করতে থাকেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×