সক্কাল বেলায় ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই মেয়ের ফোন, আব্বা তুমি উঠছো ঘুম থিক্কা?
ঘুম ঘুম চোখেই জবাব দিলুম- ক্যানো! কি হৈছে?
ফোনের ওপারে মেয়ের গলা- ওঠো ওঠো, একটা জায়গায় যাওয়ার কতা কৈছিলাম না!
----- কোতায় ?
----- ক্যানো, সেইদিন কৈলামনা ভুট্টা ক্ষেতে ঘুরতে যামু।
----- ওহ…. হো, ভুইল্লাই তো গেছিলাম। তা এখুনি যাবি?
----- হ…… ওঠো ওঠো, আমি আইতেছি আধঘন্টার মইদ্যে।
----- ঠিক আছে আয়!
তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়লুম। ওয়াশরুমের কাজ সেরে এককাপ চা বানিয়ে একটা সিগ্রেট ধরিয়ে মেয়ের অপেক্ষা। মেয়ে এলো, সাথে তার সব সময়ের ছায়াসঙ্গী “লাডলা” , আমার ছোট্ট নাতি। মর্নিং উইশ করে গাড়ীতে উঠলুম।
বললুম – কতোদূর যাবি ? কয় ঘন্টা লাগবে।
মেয়ে – আরে….. বেশীদূর না। আধঘন্টা চল্লিশ মিনিটও লাগবেনা।
আধঘন্টাও লাগলোনা, তার আগেই দেখি মেয়ে বা’য়ে ষ্টিয়ারিং ঘুরিয়ে ঘাস-মাটির রাস্তায় নেমে গেলো। সামনেই বেশ কিছু গাড়ী পার্ক করা। অদূরে কাটা তারের ফেন্সিং দেয়া বিশাল বাগানের মতো জায়গা দেখা গেলো। সেখানে দেখা গেলো জটলা জটলা মানুষজনও ।
গাড়ী থামলে নামলুম।
অক্টোবরের শেষ হপ্তার কিছুটা ঠান্ডা বাতাস গায়ে ঝাপটা দিয়ে গেলো। শীত শীত লাগলো অথচ আমি কেবলমাত্র একটা ফুল হাতা গেঞ্জী আর ঘরে পড়ার ট্রাউজার চাপিয়ে এসেছি। পায়ে ক্রক্সের স্যান্ডেল। মেয়ে যেদিন বলেছিলো ভুট্টার ক্ষেত ঘুরতে যাবো তখন মনে হয়েছিলো গাড়ীতে করেই তো ঘুরবো। এখানে সব চলাচলই গাড়ীতে গাড়ীতে। আর ভুট্টার ক্ষেতও দেখেছি পথের এপাশে ওপাশেই দিগন্ত জুড়ে ছড়িয়ে আছে। সেখানে চলার পথও আছে। তাই মাথার মধ্যে গাড়ীতে বসেই ভুট্টা ক্ষেত ঘুরতে হবে বলে ধারনা জন্মে গেছিলো। তাই বেশভূষায় অতি সাধারণ একটা ভাব ছিলো!
ছবি - ১ চক্কর খাওয়ার আগে মাঠে ঢোকার মুখে ....
মেয়েকে বললুম – কিরে তোর ভুট্টার ক্ষেত কই ? এতো দেখছি কুমড়ার মেলা!
---- হুম! এখানে হ্যালোউইনের মেলা চলতেছে। অক্টোবর এদের কুমড়া তোলার মাস। ভদ্রভাষায় কয় – ফসলের মাস। এ মাসের শেষেই হ্যালোউইন। লোকজন তাই কুমড়া কেনতে আইছে।
কিছুদূর হেটে গিয়ে কুমড়ার রাজ্যে ঢুকে পড়লুম। চারদিকে কুমড়ো ক্ষেত আর তাতে নানা ঢংয়ের, নানা আকারের কুমড়ো। সামনে দেখি শত শত কুমড়ো সারি দিয়ে রাখা হয়েছে।
ছবি – ২ ) শুরুতেই কুমড়ো ক্ষেত।
ছবি – ৩ ) সারি সারি সাজিয়ে রাখা কুমড়ো ।
দুষ্ট বুদ্ধি দিয়ে বুঝলুম, হ্যালোউইন উৎসব পালন করার শানে-নযুল আসলে কি। অক্টোবর মাস এখানে ফসল তোলার মাস। এই সময় মাঠে এতো এতো কুমড়োর ফলন হয় যে তা যদি মানুষ না খায় বা কেনে তবে মাঠেই ফেলে যেতে হবে উৎপাদনের ৪ ভাগের ৩ ভাগই । তাই বেচা-বিক্রির ধান্ধায় চতুর বিক্রেতারা হ্যালোউইন নামের বুজরুকি তরিকাটি বানিয়েছে যেখানে কুমড়োই প্রধান অনুষঙ্গ। এই যেমন ফুল, গিফট কার্ড, বিভিন্ন আলতু ফালতু জিনিষের মজমা বসিয়ে তার বাম্পার বিক্রির ধান্ধার নামে “ ভ্যালেনটাইনস ডে”- “মা-দিবস” - “বাবা দিবস” - “বন্ধু দিবস” জাতীয় দিবস পালনের হুজুগ তোলা হয়, সেইরকম আর কি! এসব আমার মহাবেকুবীয় ভাবনা নয়, দূর্মুখেরা এমনটাই বলেন!
ছবি – ৪ ) ইয়া ইয়া ঢাউস কুমড়ো।
যাকগে, কুমড়োর কুমারীত্ব নিয়ে বলি! ইয়া ইয়া ঢাউস ( ব্লগার শেরজা তপনের রুশী সুন্দরীদের মতো ঢাউস), তন্বী, পিচ্চি সব ধরনের মিষ্টি কুমড়ো একদম তাজা তাজা মাটিতে শুয়ে আছে কুমড়ো লতার সাথে । আমি মুগ্ধ হয়ে তন্বী কুমড়ো কুমারীদের ছবি তুলছি।
ছবি – ৫ ) তন্বী, কিশোরী, পিচ্চি-গুড়াগাড়া!!!!.
গায়ে বসন্ত ওঠা কুমড়ো!!!!
ভাববেন না এটা পঁচা কুমড়ো। এটা হলো দোতলা কুমড়ো!!!!
আলাদা কিসিমের দোতলা কুমড়ো!!!!
কামরাঙ্গা কুমড়ো!!!!
কাকে ছেড়ে কাকে ধরবো এই ভাবনাতে ছাই ঢেলে মেয়ে বললো – চলো আব্বা সামনে যাই , মজার চক্কর আছে।
শীতে কিছুটা কাঁপতে কাঁপতে স্যান্ডেল পায়ে এগিয়ে সামনে যেতেই দেখি শত শত কুমড়োর পাহাড় সাজিয়ে রাখা হয়েছে ।এক একটির ওজন হবে ৩০/৩৫ কেজির মতো, কোন কোনটা তারচে’ও বেশী। আবার পিচ্চি সাইজেরও অসংখ্য নমুনা দেখা গেলো। আর পাবলিক তা বেছে বেছে কিনছে হ্যালোউইন উৎসবে কুমড়োগুলিকে রং-চং করে ঘর সাজাবে বলে।
ছবি – ৬ ) হ্যালোউইন ডেকোরেশান্ ( নেট থেকে)
মনে মনে হাসলুম- পাগল আর কাকে বলে! হুজুগে পাবলিক সবখানেই থাকে ? স্পেনেও টমেটো উৎসব কালে টমেটো নিয়ে ছোঁড়াছুঁড়ি- গড়াগড়ি কি না হয়! বেকুবের মতো ভাবলুম – টমেটোর মতো এই ঢাউস কুমড়োগুলো মানুষের দিকে ছুঁড়ে মারলে কি হবে!
ঘুরে ঘুরে দেখছি। আমার চঞ্চল নাতিটি যাতে বাঁধন ছিঁড়ে কুমড়োগুলির পিঠে তবলা বাজাতে বসে না যায় তাই হাত ধরে আছি। মেয়েও তার “লাডলা”কে আমার হাতে গছিয়ে যেন নিশ্চিন্ত। ধীরে ধীরে লোক সমাগম বাড়ছে। মেয়ে বললো – "আব্বা আরও পরে আসলে এইখানে দাঁড়াইতেই পারতা না। গাড়ী পার্ক করতে হইতো এক মাইল দুরে। "
বুঝলুম, এত্তো সকালে এখানে আসার কারন। অতো সকালেও আমাদের পার্ক করতে হয়েছিলো মেলায় ঢোকার গেট থেকে একশো গজের মতো বেশী দূরে।
ঘুরছি আর হরেক কিসিমের কুমড়ো দেখছি। তো ঘুরতে ঘুরতে একটা জায়গায় এসে মেয়ে বললো -- দাঁড়াও আব্বা। আমি টিকিট কিনে আনি।
--- টিকিট ? কিসের টিকিট?
--- আরে এইডার জন্যই তো তোমারে নিয়া আসা। মজা লাগবে তোমার। কর্ণ মেইজের টিকিট।
ভুট্টা বাগানে ঢুকতেও টিকিট ? আমার বেকুবী প্রশ্ন মেয়েকে।
মেয়ে হেসে বললো--- হা…হা.. পয়সা ছাড়া এদেশে ফ্রি কিছু নাই।
ভুট্টা বাগানের গোলকধাঁধার টিকিটের সাথে দেখি ঢাউস এক প্যাকেট পপকর্ণও কিনলো মেয়ে।
বললুম- পপকর্ণ খাবে কে ?
আরে লাগবে …… লাগবে! মেয়ের রহস্যময় জবাব!
আমার হাতে টিকিটের সাথে আরও দু’টো গোলকধাঁধা আঁকা কাগজ ধরিয়ে দিলো মেয়ে।
বললুম – এডা কি?
ছবি – ৭ ) গোলকধাঁধার ম্যাপ।
---- এইডা ম্যাপ। গেট দিয়া ঢুইক্কা এইডা দেইখ্যা দেইখ্যা ভুট্টা ক্ষেতের ভিত্রের রাস্তা দিয়া আরেক মাতায় বাইরাইতে হইবে।
----- কতোক্ষন লাগবে ঘোরতে ?
----- হেডা তো তোমার স্কীলের উপর নির্ভর করবে।
---- যদি এই জঙ্গলে হারাইয়া যাই?
----- হারাবা ক্যান ? আমি আছি না! আর এই চক্করের ম্যাপ তো আছেই।
পিচ্চি নাতিকে পপকর্ণের বস্তাটা টানার জন্যে ধরিয়ে দেয়ার বাহানায় বললুম—ভাইয়া, তুমি খেতে থাকো।
সে একমুঠো পপকর্ণ নিয়ে আমাকেই বললো – য়্যু কীপ ইট এ্যান্ড ইট।
হায়রে পাজী পোলা! আমার এই নাতিটি বেশ চটপটে এবং চঞ্চল। কি করি! পপকর্ণের বস্তার একমাথা কোমড়ে গুঁজে ঝুলিয়ে রাখলুম।
তো ঢোকার গেট টি দিয়ে ঢুকলুম। প্রবেশ পথের এ্যাটেনডেন্ট “ হ্যাভ আ নাইস জার্নি” বলে উইশ করলো।
ছবি – ৮ ) “ Cool Patch Pumkins এর Corn Maze” এ ঢুকতে কুমড়ো আকারের ঢোকার পথ।( নেট থেকে)
ঢোকার পরে মজাই লাগলো । পায়ে চলার সরু পথ। দু’পাশে আমাদের মাথা ছাড়িয়ে হাত তিন চারেক উঠে গেছে ভুট্টা গাছের মাথা। পাতার ফাঁকফোকড়ের ভিতর থেকে ভুট্টা গাছের সবুজ ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছেনা। মনে হলো পৃথিবী বিচ্ছিন্ন কোথাও এসে পড়েছি।
ছবি – ৯) হাতে গোলকধাঁধার ম্যাপ নিয়ে ভাবছি কোন পথে যাবো! সাথে আপাতঃ শান্ত-সুবোধ নাতি।
কোন দিক দিয়ে কোন দিকে যেতে হবে ভাবছি। চলার পথ তো আছে এদিক সেদিক ছড়িয়ে। কোনটা ধরে এগুবো এবং এই গোলকধাঁধা থেকে নির্বিঘ্নে বেরুতে পারবো তা নিয়ে শঙ্কা হলেও মজাই লাগছে। হাতে ধরা ম্যাপটিতে নম্বর সহ পথের হদিস দেয়া আছে। সেটা দেখে দেখে পথের নম্বর মিলিয়ে এগুচ্ছি। যৌবন থাকলে বলতুম – “ এই পথ যদি শেষ না হয়…..”। (গোলকধাঁধার ম্যাপটি দেখুন) পথের নম্বর দেয়া আছে এমন সব জায়গায় সহজে যা চোখে পড়েনা। বেশ কিছুদূর এসে আর তো পথের নম্বর পাইনে।
সামনে তিন দিকে গেছে পথ। কোনটা ধরবো ? দাঁড়িয়ে আছি, দেখি আর একটি দল আসছে আমাদের উল্টো দিক থেকে। কি ব্যাপার ? আমরা কি পথ ভুল করেছি নাকি ঐ দলটি ভুল করেছে? ওরা আমাদের “হাই” করে চলে গেলো। আমি মেয়ের দিকে প্রশ্ন নিয়ে তাকাতেই মেয়ে বললো – “আমরা ঠিক পথেই আছি। এই যে দেখো আমরা ম্যাপের এইখানে”। দেখি পথের বিশ ভাগের এক ভাগও আমরা পেরুইনি। এর মধ্যে আমার নাতি একা একা একটা পথ ধরে শেষ মাথায় গিয়ে ইশারায় আমাদের ডাকলো—“মাম্মি কাম…..দিস মে বি দ্য ওয়ে”। ওর কাছে গিয়ে দেখি দুদিকে দুটো পথ। আমি সেখানে গাছের পাতায় আর মাটিতে লাঠি পুঁতে রাখা নম্বর খুজঁতে লাগলুম। হঠাৎ দেখি নম্বর সহ পুঁতে রাখা একটি লাঠি কাত হয়ে পড়ে আছে মাটির সাথে মিশে, গোটা কয়েক ভুট্টা গাছের পেছনে। নম্বর ধরে ধরে আসা আমাদের পথের পরের নম্বর সেটা। পিচ্চিকে একটা থ্যাংকিউ দিতে হলো। পরিশ্রম্ কমে গেলো না হাঁপ ছেড়ে বাঁচলুম, বোঝা গেলোনা। তবে থ্রীলড লাগছে এটা বুঝতে পারছি। দেখি মেয়ে হাঁটতে হাঁটতে ম্যাপ দেখছে গভীর মনযোগের সাথে। আমার চেহারা দেখে বললো- “ভয় নাই আব্বা, হারাইয়া যাবানা। হাতের আন্দাজে না হাইট্টা ম্যাপ দেইখ্যা চললেই হবে। ক্যাবোল নম্বরগুলা খুইজ্জা পাই কিনা দ্যাখো ।”
তবুও এরকম ঘটলো আরো বার তিনেক। একবার তো দুই বার চক্কর দিয়ে একই জায়গাতে ফিরে এসেছি। মেয়ে বললো- “কী! মজা লাগতেছেনা ?”
বললুম –“ মজা তো লাগতেছে কিন্তু কতোক্ষনে বাইরামু ? সাপ-খোপ যদি থাহে ? ”
--- না…. না …. সাপটাপ নাই। আমি আগে একবার আসছিলাম তখন বেশ কষ্ট কইর্যা বাইরাইতে হৈছে।
----- ও…. এই জন্যই তোর চিন্তা নাই।
ম্যাপ দেখে আমি খুঁজছি একটা কমলা রংয়ের ব্রীজ। এরকম তিনটা ব্রীজ আমাদের পেরুতে হবে। গাছের ডগা নুইয়ে নুইয়ে দেখছি কোনও কমলা রংয়ের কিছু দেখা যায় কিনা। পেলুম । কিন্তু সেটা আমার কারিশমা নয়, আমাদের মতো পাগল একটা দল ঐ ব্রীজটায় উঠেছে বলে অনেকটা দূরে গাছের মাথা ছাড়িয়ে তাদের মাথা দেখতে পেয়েছি তাই।
দিক ঠিক রেখে পথ-বেপথ দিয়ে দশ মিনিটের মধ্যে সেটার দেখা মিললো। উঠে পড়ি ব্রীজে। এখান থেকে দেখতে থাকি দ্বিতীয় ব্রীজ যেটা সবুজ রংয়ের, সেটাকে। বেশ দূরেই মনে হলো। দিক ঠিক করে বিসমিল্লাহ বলে আবার চক্কর দিতে নামলুম।
এবার ম্যাপের নির্দেশ মানলুম না খুব একটা। পথ ছেড়ে ব্রীজের দিক ঠিক রেখে মাঝে মাঝেই ভুট্টা গাছের মধ্যে দিয়েই পরবর্তী পথটাতে পৌঁছে যাবার চেষ্টা।
ছবি – ১০) পথ ছেড়ে বেপথে। ভুট্টা গাছের সারির মধ্যে দিয়ে। কোমড়ে ঝোলানো পপকর্ণের বস্তা……..
এসব আকামের ব্যাপারে আমার পিচ্চি নাতিটা ওস্তাদ। বেশীর ভাগটাতেই সে পথপ্রদর্শকের কাজটা করে যাচ্ছিলো। পথ ছেড়ে দুহাতে গাছ সরিয়ে সরিয়ে সে আমাদের পথ দেখাচ্ছিলো আর উল্লসিত গলায় বলছিলো - “কাম….কাম, আই ক্যান সী আ পাথ ওভার দেয়ার” আর আমি পুরস্কার হিসেবে তাকে একমুঠো পপকর্ণ ধরিয়ে দিচ্ছিলুম। কিন্তু পপকর্ণের বস্তা সমান প্যাকেটটা সে কিছুতেই নিলোনা।
এই করে করে সবুজ ব্রীজটাও খুঁজে পাওয়া গেলো।
ছবি – ১১) দ্বিতীয় ব্রীজ্ । ভুট্টা ক্ষেতে গোলকধাঁধার আভাস। একটা এদেশীয় পরিবার আমাদের পিছে পিছেই উঠে এলো……
হাতে থাকা ম্যাপ অনুযায়ী “কর্ণ মেইজ” এর প্রথম গোলকধাঁধাটা পেরুতে আর একটা কমলা ব্রীজ পার হতে হবে। এই ব্রীজটাতে দাঁড়িয়ে মাথা ঘুরিয়ে দেখলুম সেটা কোথায়। অনেকটা কাছেই মনে হলো। আবারও সেই পথ- বেপথ করে করে ওটাতেও পা রাখা গেলো। ঘড়িতে দেখি এরই মধ্যেই দু’ঘন্টার কাছাকাছি সময় খরচ করে ফেলেছি । শীতের সকালেও কপালে যে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে তা টের পাচ্ছি। অথচ ভুট্টা বাগানের গোলকধাঁধার অর্ধেকটা মানে দ্বিতীয় পর্বটা বাকী। (গোলকধাঁধার ম্যাপটি দেখুন)
মেয়েকে বললুম- “কি রে আর কতোক্ষন। দুই ঘন্টা তো হৈলো। এহান থাইক্কা বাইরাইতে পারা যাইবে না শর্টকাটে?
“ যাবে না ক্যান? গোলকধাঁধার চক্করের মজাটা পাবানা তাইলে।” মেয়ের উত্তর।
আমার তখন সিগ্রেট এর প্রবল তেষ্টা। যতো তাড়াতাড়ি পারি এখান থেকে বেরিয়ে একটা সিগ্রেট টানা দরকার। সিগ্রেট না খেলে যে মরে যাবো এমনটা নয়! তবে ঐ মূহুর্তে সেটাকেই আরও কাঙ্খিত মনে হলো।
বললুম – “আর মজার দরকার নাই। অনেক মজা হৈছে। ছোড কালের “পলাপলি” ( পালানো পালানো খেলা) খেললাম এই বুড়াকালে! চল, শর্টকাট মারি।”
তো, ম্যাপ দেখে এই গোলকধাঁধা থেকে বেরুনোর গেটটার কাছাকাছি পৌঁছানোর পথটা দেখে নিলুম। অনেক হ্যাপা আছে। নির্দেশিত পথ ধরে যাওয়া যাবেনা, মাঝে যেখানে যেখানে পথ নেই সেখানে ভুট্টা গাছের সারির ভেতর দিয়েই যাবো ঠিক করলুম। নাতিকে বললুম – “ব্যাটা এবারে গাছের মধ্যে দিয়ে, মধ্যে দিয়ে যেতে হবে কিন্তু!”
সে তো মহা খুশি।
আবার শুরু দ্বিতীয় রাউন্ড। বেরুনোর গেটটা পশ্চিমে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে ম্যাপের সর্ব বামের পথটি ধরলুম।(গোলকধাঁধার ম্যাপটি দেখুন) কয়েক জোড়া তরুন-তরুনী হেলে দুলে, কফি খেতে খেতে আমাদের পেরিয়ে গেলো। আমরা ওদের সোজা পথে গেলুমনা। বাঁকাপথ ধরলুম। মানে পথ ও বেপথে। ম্যাপের পথ ধরে কিছুটা, আসল পথকে ফাঁকি দিয়ে অনেকটা পথ গাছের সারির ভেতর দিয়ে একটা ত্রিমুখী পথে আসতেই পথের একটা নম্বর দেখতে পেলুম। নম্বর মিলিয়ে দেখি কাছাকাছিই পৌঁছে গেছি। এখন কোনদিকে যাবো ? বায়ে না ডানে নাকি সোজা? ম্যাপে দেখছি তিনটি পথই বৃত্তাকার। ডানের পথটি ধরে এগিয়ে খামোখা অনেক লম্বা একটা চক্কর খেয়ে আবার একই জায়গায় হাজির। ভয় হলো, এতো কাছাকাছি এসে আবার উল্টো পথে গিয়ে দূরে সরে না যাই! এর মধ্যেই আরও আধা ঘন্টা খরচ হয়ে গেছে।
মেয়ে বললো – “সোজা চলো আব্বা।”
এদিকে নাতিটিকে কব্জায় রাখাই দায়। সে এদিকে যায়, ওদিকে যায়। তাকে ধরতে ওর পিছু পিছু গিয়ে ওর মা চেঁচিয়ে বললো – “ আব্বা! রাস্তা পাইছি মনে হয়। এই দিকে আসো। ”
কাছে গেলে মেয়ে হাত তুলে পথের শেষে অনেক দূরে দেখালো। পথের মাথায় খোলা জায়গা দিয়ে দূরে পামকিন প্যাঁচের মেলার চত্তরটি দেখা যাচ্ছে।
ছবি – ১২) অবশেষে …………
ওয়াও! বাপ বেটির চক্কর খাওয়া তাহলে শেষ ………….
………….
[ যারা ছবি দেখতে পারছেন না তাদের জন্যে নীচে মন্তব্য আকারে সব ছবি দেয়া হয়েছে ]
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৪ ভোর ৬:২০