somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের ঝাপসা আয়না........

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক চিন্তা করে দেখলাম যে আয়নাই একমাত্র জিনিস যাতে নিজের সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটাকে দেখা যায়। যদিও উল্টো করে, কিন্তু তাতে কি আসে যায়? যা কিছু আমাদের ভালো লাগে, সেটা সোজা হলেই কি আর উল্টো হলেই কি! নিজের চেয়ে প্রিয় আর কি হতে পারে, কিন্তু যখনই নিজেদের আমরা দেখি কেন যেন খুঁতগুলোই আগে চোখে পড়ে। শেভ করে বের হবার সময় মনেহয় জুলফিদুটো মনেহয় সমান হলনা, স্পাইক করা চুলটা কেমন যেন নেতিয়ে পড়া মনেহচ্ছে। শুধু নিজেদেরই না, অন্যদের খুঁতগুলোও আমাদের চোখে পড়ে যায় প্রথমে, হয়ত এটাই আমাদের বৈশিষ্ট্য।ঐতিহ্যগতভাবে এই বৈশিষ্ট্য আমরা ধারন করে চলেছি বহুদিন থেকে। বাঙ্গালী/ বাংলাদেশী হতে হলে এই গুন থাকা বাধ্যতামূলক। "বাঙ্গালী" লেখা দেখে ইতিমধ্যে হয়ত কয়েকজন ভ্রূ কুঁচকে ফেলেছেন, "দাদা নাকি" ভেবে। সমালোচনা এড়াতে "বাংলাদেশী" ব্যবহার করাটাই বোধহয় শ্রেয়।

যাইহোক, আমার এই লেখার মূল উদ্দেশ্য নিজেদের ভাল গুনগুলো খুঁজে বের করা। যে যাই বলুক, আমরা অনেক গুনেই গুনান্বিত, কিন্তু আয়না দেখার মতই সেসব গুন আমাদের চোখে পড়েনা। তাই আমাদের এইসব অঘোষিত এবং উপেক্ষিত গুনগুলোর ব্যাপারে জানতেই আমার এই লেখা।

আমাদের অনেক গুণগুলোর একটা হচ্ছে বড় বড় কথা বলে ভুলিয়ে ভালিয়ে সময়মত সটকে পড়া। যদিও আমাদের সময়জ্ঞান নিয়ে অনেকের আপত্তি আছে, কিন্তু সময়মত সটকে পড়ার ক্ষেত্রে আমাদের ধারে কাছে তো দূরের কথা, কয়েক মাইলের মধ্যেই কেউ নেই। আমাদের কলোনীতে ক্রিকেট খেলার জন্য পিচ বানাতে হবে, কিন্তু রোলার পাশের কলোনীতে। যারা কলোনীতে থাকেন বা থাকতেন, তারা নিশ্চয়ই জানেন, পাশের কলোনী থেকে রোলার আনতে যাওয়া আর সাপের ফণা দিয়ে পশ্চাৎদেশ চুলকানোর চেষ্টা করার মধ্যে তেমন কোন ফারাক নেই। কিন্তু কষ্ট না করলে কেষ্ট মিলবেনা, তাই শেষ ভরসা পাড়ার বড় ভাই এর কাছে গেলাম।

আমরা: অমুক ভাই, রোলারটা ছাড়া তো পিচ হচ্ছেনা, যদি পলাশী কলোনীর তমুক ভাইকে একটু বলে দিতেন......
অমুক ভাই: আরে এইটা কি কস? কাউরে কিসু কওয়া লাগবনা, যখন দরকার ঐ পাড়ায় যাবি, রোলার লয়া আবি, কেউ কিসু জিগাইলে কবি অমুক ভাই কইসে লয়া যাইতে, উনারে ফোন দেন।
আমরা থাংক ইউ, অমুক ভাই বলে বগল বাজাতে বাজাতে সেদিন বিকেলেই গেলাম পাশের কলোনীতে। তখনও কেউ মাঠে নামেনি, ১০জনের একদল নিয়ে টেনে হিঁচড়ে যখন হাফটনি রোলার প্রায় বের করে ফেলেছি ঐ কলোনীর গেট থেকে, তখনই চেহারায় দূর্যোগের ঘনঘটা নিয়ে তমুক ভাই হাজির।
তমুক ভাই : ঐ রোলার কই লস? তোরা কে?
আমি: স্লামালিকুম তমুক ভাই, না মানে আমরা পিচ বানাচ্ছি তো, তাই রোলারটা একটু দরকার ছিল, তাই অমুক ভাই বললেন আপনাদের রোলারটা দিয়ে দুইটা ডলা দিয়ে আবার ফেরত দিয়ে আসতে।
তমুক ভাই: ও আচ্ছা, তুই মৌচাক কলোনীতে থাকোস না? তোগো তো দেখি পাখনা গজাইছে। কত্তোবড় সাহস আমগো পাড়া থেকা না কইয়া রোলার লইতে চাস! কোথাকার কোন অমুক কইসে আর দৌড় পাইরা আয়া পরছস রোলার নিতে। দিমু নাকি একটা বন?
আমি: সরি তমুক ভাই, ভুল হয়ে গেছে, আসলে বুঝতে পারিনাই।
তমুক ভাই: বুঝতে যখন পারছস তখন রোলার জায়গামত রাইখা যা। আর যেন না দেখি এই পাড়ায়। আজকে তো মুখে কইলাম, এরপর দেখলে এক্কেরে ডুগডুগি বাজায় দিমু।
আমিও ভালমানুষের মত "জ্বী তমুক ভাই " বলে সটকে পড়লাম।

আমাদের আরেকটি বড় গুণ হচ্ছে আমরা "খাল কেটে কুমির" আনতে ওস্তাদ। কুমিরকে বিশ্বাস করে আমরা খাল কেটে নিজেদের পুকুরে জায়গা করে দেই, সেসব কুমিরদের পাঁচ বছর পরপর আমরাই খাল কেটে নিজেদের কাছে নিয়ে আসি, পরবর্তী পাঁচ বছর এরা একটু একটু করে আমাদের পুকুরের সব মাছ খায়, তবুও তাদের পেট ভরেনা। শেষে সেই কুমির আমাদেরকেই কামড়ে দেয়, তবু আমাদের শিক্ষা হয়না।খাল কেটে কুমির আনা প্রসঙ্গে একটা গল্প মনেপড়ে গেল।

এক ভদ্রলোকের রেস্টুরেন্টের ব্যবসা, তিনি আর তার পত্নী মিলে ব্যবসা চালান। এক শনিবার তাদের রেস্টুরেন্টে আসলেন এক অন্ধ ভদ্রলোক। মালিক ভাবলেন অন্ধ ভদ্রলোক কি করে অর্ডার করবেন? তিনি নিজেই এগিয়ে গেলেন অন্ধের সাহার্যার্থে:

মালিক: আমি কি আপনাকে মেনু পড়ে শোনাবো? আজ আমাদের স্পেশাল মেনু হচ্ছে.......
অন্ধ ভদ্রলোক: ধন্যবাদ, তার দরকার পড়বেনা, আপনি শুধু আপনাদের ব্যবহৃত চামচগুলো নিয়ে আসুন, আমি অর্ডার করছি।
মালিক কথামত তার রেস্টুরেন্টের ব্যবহৃত চামচগুলো নিয়ে আসলেন। অন্ধ ভদ্রলোক সেগুলো শুঁকে বললেন, হুমম.... মাছের মাথাভর্তাটা বোধহয় ভালোই হবে খেত.... আর সব্জীটাও তাজা মনেহচ্ছে। ভাতের সাথে এদুটো আইটেম চাই আমার।
মালিক ভদ্রলোক তো হতবাক। পরের শনিবারও সেই অন্ধ ভদ্রলোক এসে একই কাজ করলেন। শুধু গন্ধ শুঁকেই খাবার অর্ডার করলেন মালিককে অবাক করে দিয়ে। কিন্তু তৃতীয় শনিবারও যখন সেই অন্ধ ভদ্রলোক আসলেন, মালিক ঠিক করলেন তিনি তাকে পরীক্ষা করে দেখবেন যে উনি আসলেই অন্ধ কিনা। তো তিনি একটা চামচ তার পত্নীকে দিয়ে বললেন, এটা ঐ জায়গায় ঘষে একটু ভিজিয়ে দিতে। যেই কথা সেই কাজ। মালিক অন্ধ ভদ্রলোককে বললেন, আজ আমাদের স্পেশাল ডিশের নাম বলতে পারলে বুঝবো আপনি একটা জিনিস। এই নিন, এইটা শুঁকে দেখুন।
অন্ধ ভদ্রলোক কিছুক্ষণ চামচ শুঁকে মৃদু হেসে বললেন, আরে আমিতো জানতামই না জরিনা এখানে কাজ করে!

আমরাও এই মালিক ভদ্রলোকের মত খাল কেটে কুমির আনি যার জন্য আমাদের পরে ঝামেলায় পড়তে হয়। হয়ত আমরা একদিন শিখবো কি করে এইসব ঝামেলা এড়াতে হয়, সেই দিনের প্রতীক্ষাতেই আমরা বেঁচে থাকতে চাই। হয়ত একদিন আমরা সত্যিই পারব নিজেদের ঝাপসা আয়নার মধ্যেই আমাদের খুঁজে পেতে।
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×