somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভাব

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত তিন চার দিন হোসেন রাস্তার মোড়ের চা দোকানে চা খেতে যায় না। তার মানে যে ঘর থেকে বের হয় না তা নয়। দোকান টা এড়িয়ে যায়। দোকানের মতি মিয়া দেখলেই ডাক দিয়ে বসে, ভাই, চা খাবেন না। জগতের সকল আহবান উপেক্ষা করা গেলেও মমতা দিয়ে ডাকা চায়ের আহবান উপেক্ষা করা যায় না। মতির সাথে সমস্যা নেই কোনো, সমস্যা হোলো দোকানের সামনে কুকুর আর তার তিন ছানাগুলো কে নিয়ে

নিয়ম টা এমন, মতি চা বানিয়ে দেবে, হোসেনের হাতে কাপ আসা মাত্রই মা কুকুরের নির্দেশে ছানাগুলো লেজ নাড়তে নাড়তে হোসেনের সামনে এসে কুইকুই করবে। প্রতিদিন হয় বিস্কুট না হয় কেক না হয় রুটি ছানা গুলোর জন্য বরাদ্ধ। ছোট ছোট টুকরো করে হোসেন খেতে দেবে আর ছানাগুলো পড়িমরি করে এসে খাবে, দূর থেকে মা কুকুর টা যেন তৃপ্তির একটা চাউনি দেয় ছানা গুলো কে খেতে দেখে। মাঝে মাঝে দূপুরের ভাত আলাদা করে রেখে বক্সে করে নিয়ে আসে হোসেন, সেদিন মা কুকুর টাও খায়, খাওয়া শেষে হোসেনের পায়ের সামনে গুটি পাকিয়ে শুয়ে থাকে। চলে যেতে গেলে দাঁড়িয়ে খানিক আগিয়ে দিয়ে আবার গিয়ে শুয়ে থাকে। এরা ভালোবাসা, স্নেহ বোঝে। সামর্থ্যর শেষটুকু দিয়ে প্রতিদান দেয়। এই প্রানী আবেগের কি বোঝে তা বোঝা দায়।

মাসের শেষে টাকা পয়সার ব্যপক টানপোড়েন। নিজেকে নিয়ে চিন্তা নেই। বাকি তে মতির দোকানে খেলেও কোনো সমস্যা নেই কিন্তু বাকি রেখে না হয় নিজে চা খাওয়া যায়, এই অবলা প্রানীদের খাওয়ানো যায় না।

অর্থের টানপোড়েন মানুষ বুঝতে পারলে করুনার চাদরে ঢেকে নিতে চায়। এ যেন এক দূর্বলতা৷ এক ধরনের অসহায়ত্ত। মানুষকে অসহায়ের চোখে দেখা মানুষের গোপনে লালিত একধরনের সুখ। তাই অভাব দেখাতে নেই।

কুকুর গুলোকে খাওয়ানোর সামর্থ্য এখন শূন্যের কোঠায়। এরা কি আর এত কিছু বোঝে, আশা নিয়ে চলে আসবে, মুখের দিকে উপেক্ষা যেখানে হার মানে সেভাবে তাকিয়ে থাকবে আর হোসেন শুন্য হাতে বসে থাকবে এই দৃশ্য মেনে নিতে পারবে না। তাই এড়িয়ে চলা।

কয়েকদিন যাওয়া হয়নি দেখে মতি আজ নিজেই খবর নিতে চলে এসেছে। অসুস্থ কিনা আমি।
দিব্যি সুস্থ দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেসাবাদ করে গেছে এবং রাতে যেন চা খেতে যাই তার কড়া নির্দেশ ও দিয়ে গেছে। উভয় সংকট।
রাতে বের হতেই, মতি খপ করে ধরল
- জানতাম, আপনে আইবেন না। কি সমস্যা কন দেখি? টেকা পয়সা নিয়া কনদিন কিসু কইসি।দোকানদারী করি দেইখা পাত্তা দেন না এমন মানুষ ত আপ্নে না। চলেন। চা খাইয়া, যেদিক মন চায় জাইবেন।

এর পর আর কথা চলে না।
দোকানে কোন ঘেসে বসে আছি। কুকুর গুলো দেখা যাচ্ছে না। চা এল। মা কুকুর উকি দিল সাথে সাথেই। হোসেন চুমুক দিতে গিয়েও আটকে গেল। দুটি প্রানী চোখাচোখি। কি ভাষার আদান প্রদান হোলো তা বোঝা গেল না। মা কুকুর টি এল না কাছে। দূরে ছানা গূলো নিয়েই বসে আছে। ছানাগুলো একবার এদিক আসতে গিয়েও আসছে না।
ওরা কি বুঝতে পারছে?
ছানা গুলি হঠাত হোসেনের পায়ের সামনে চলে এলো। হোসেন কি করবে বুঝতে পারছে না। অনেকক্ষন ধরেই তাকিয়ে আছে। মতি মিয়া দূর দূর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে তাও যাচ্ছে না।
হোসেন হঠাৎই বলে উঠল,
এই যাহ!!
ছানাগুলো তাকিয়ে আছে চুপ করে হোসেনের দিকে। মা কুকুর টাও।
খুব আপন করে আগলে রাখা মমতার বিষয়গুলো উপেক্ষা সহ্য করার ক্ষমতা সবার থাকে না। সামান্য টোকা কিন্তু তার ক্ষত কত খানি যে গভীর তা বুক চিড়ে দেখবার উপায় নেই দেখেই কেউ হয়ত পরিমাপ করতে পারে না।
ফিরিয়ে দিয়ে কতখানি দূরত্ত যে নিমিষেই তৈরী হতে পারে তা যদি মন গহীনে ঢুকে দেখা যেত তাহলে হয়ত নিকষ অন্ধকারে কিছুই দেখা যেত না।
ছানা গুলি ফিরে যাচ্ছে মায়ের কাছে। মা কুকুর টাও চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
অতকিছু সে বোঝে না। সে বোঝে শুধু স্নেহ। নি:সার্থ। এই অভাব, টান পোড়েনের জটিল সমীকরন তার কখনোই সমাধানের চিন্তা করতে হয় না।
হোসেন চা না খেয়েই উঠে পড়ল।
এগিয়ে যাচ্ছে, দোকান ছাড়িয়ে। মা কুকুর টা উঠে খানিক এগিয়ে এসে হোসেন কে সামনে এগিয়ে দিলো।

হোসেনের কি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিৎ?

মধ্যরাতের এ শহরে একজন হোসেন রাস্তায় হেটে চলেছে চাওয়া পাওয়ার হিসেব আর খানিক কৃতজ্ঞতার বা অকৃতজ্ঞতার সমীকরন নিয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১২:৪৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×