বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম
বাংলা সাহিত্যে দ্রোহ, প্রেম, সাম্য, মানবতা ও শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। মূলত তিনি বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তাঁর রসিক রূপটিও প্রবাদ প্রতিম। তাই নজরুলের লেখনীতে অনায়াসেই উঠে আসে, ‘আমি খেলিব খেলাব, হাসিব-হাসাব, কাঁদিব কিন্তু কাঁদাব না।’
তাঁর হাসি,মজা,আনন্দ বিষয়ে নানা গল্প প্রচলিত আছে। সেই গল্পগুলি থেকে বাছাই করা কিছু গল্প এই অংশে সন্নিবেশ করা হল।
রুটির দোকানে ছড়া
কবি নজরুল আসানসোলে রুটির দোকানে কাজ করতেন। তিনি রুটি বানাতে বানাতে ছড়া কাটতেন। আটা মাখছেন আর কিশোর নজরুলের গা বেয়ে টপটপ করে ঘাম ঝরছে। আর মুখে ছড়া, ‘মাখতে মাখতে গমের আটা/ ঘামে ভিজল আমার গা-টা।’
‘আর কত নিচে নামব
কাজী নজরুল তখন গ্রামোফোন কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত। একদিন তিনি ওখানে দোতলায় বসে আছেন। এমন সময় এক কমর্চারী এসে বললেন, ‘কাজীদা, ইন্দুদি (সংগীতশিল্পী ইন্দুবালা) আপনাকে নিচে ডাকছেন।’
এ কথা শুনে কবি সকৌতুকে বললেন, ‘আর কত নিচে নামব, ভাই?’
জম্পেশ চা
একবার কবি কাজী নজরুল ইসলাম পল্লীকবি জসীম উদদীনের বাড়ি বেড়াতে গেলেন। নজরুল চা পান করার আগ্রহ প্রকাশ করলে পল্লীকবি বাজার থেকে চা পাতা এনে বাড়ির বউ-ঝিকে বানানোর জন্য দেন। বউ-ঝিরা এর আগে চা বানাননি। তারা বাড়িতে যত রকম মসলা ছিল (আদা, মরিচ, পেঁয়াজ, ধনে, জিরা ইত্যাদি) সবকিছু দিয়ে জম্পেশ এক কাপ চা খাওয়ালেন নজরুলকে।
ডবল প্রমোশন
কাজী নজরুল ইসলাম শিয়ারশোল রাজ হাইস্কুলে ক্লাস সেভেনে ভর্তি হয়েছেন। পড়াশোনার চেয়ে বন্ধুরা মিলে কার বাগানে কোন লিচুতে রং ধরেছে, কোন গাছের পেয়ারা ডাঁসা হয়েছে- এসব দিকেই বেশি মনোযোগ।
সবাই ধরেই নিল এই বাউণ্ডুলকে দিয়ে আর যাই হোক পড়াশোনা হবে না। কিন্তু বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর দেখা গেল নজরুল খুব ভালো করেছেন। এতটাই ভালো যে, স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে ডবল প্রমোশন দিয়ে দিল। অর্থাৎ ক্লাস সেভেন থেকে এক লাফে ক্লাস নাইন। সঙ্গে রাজবাড়ী থেকে মাসে সাত টাকা করে বৃত্তিও ঘোষণা করা হলো তাঁর নামে।
‘তুমি টিকটিকি জানি ঠিকঠিকই’
সুফিয়া কামাল কাজী নজরুল ইসলামকে ডাকতেন দাদু বলে। কবি আবার প্রায়ই সুফিয়া কামালের বাড়ি যেতেন। সেখানে গানের আসর বসত। সে আসরে সাহিত্য অনুরাগী অনেকেই থাকতেন। এ সময় নজরুলের পেছনে গোয়েন্দা লাগে। সাহিত্য অনুরাগীদের সঙ্গে মিশে কয়েকজন গোয়েন্দাও আসতেন। একদিন এক ভদ্রলোকের মুখের ওপর নজরুল কবিতা আওড়ালেন, ‘তুমি টিকটিকি জানি ঠিকঠিকই।’
কবিতার ধরন শুনে লোকটি মুখ লাল করে উঠে যেতেই কিশোরী সুফিয়া কামাল অবাক হয়ে বললেন, ‘দাদু। তুমি একে চিনলে কী করে?’
‘গায়ের গন্ধে। বড়কুটুম যে।’ নজরুলের উত্তর।
হুজুগে দেশে এসব একবারই চলে
কবি নজরুল তখন খুব ব্যস্ত। নিয়মিত গ্রামোফোন কোম্পানির রিহার্সাল রুমে আসেন, গান লিখেন, সুর করেন, গান শিখিয়ে দেন। বেশীর ভাগ গান গাইছেন কে মল্লিক। একদিন এই কে মল্লিকের কাছে এক লোক এল। লোকটির নাম প্রফেসর জি দাস। এসে ধরল মল্লিককে, সে গান গাইতে চায়। গান গাইতে হলে তো পরীক্ষা দিতে হবে কোম্পানিতে, পরীক্ষা নেয়া হলো। ফলাফল, একেবারে অচল! গান নেওয়া হবে না শুনে ওখানেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠলেন বেচারা প্রফেসর। কে মল্লিক যতই সান্তনা দেন, বেচারা ততই কাঁদেন। আওয়াজ শুনে এলেন কোম্পানির বড়বাবু। তিনি সব শুনে প্রফেসরকে বললেন, 'আপনার গলা এখনও ঠিক হয়নি। সুর-তাল-লয় ঠিক থাকছেনা, কদিন পর আসুন, দেখা যাক কী হয়।'
প্রফেসর লোকটি তখন বড়বাবুর কাছে কয়েকজনের নামে বিচার দিলেন যারা তাকে ফুঁসলিয়ে মিষ্টি খেয়ে নিয়েছে তার কাছ থেকে। ওরা নাকি তাকে এও বলেছে যে তোমার গলা ভাল হলেও কে মল্লিক হিংসা করে তোমাকে গান গাইতে দিবে না। বড়বাবু বুঝলেন যে বেচারা খুব সরল মানুষ, তাকে যেভাবে বুঝানো হয়েছে সে বুঝেছে। প্রফেসরের কান্না আর থামছে না।
এমন সময় রুমে ঢুকলেন কাজী নজরুল। কী ব্যাপার? বলে তিনি মনোযোগী হলেন কান্নাকাটির কারণ জানতে। বড়বাবু আর কে মল্লিক তাকে সব খুলে বললেন। কবি তখন বললেন, বেচারা থেকে রেকর্ডের আশ্বাস দিয়ে যখন মিষ্টি খাওয়া হয়েছে, অতএব তার একটা গান রেকর্ড করতেই হবে।
কে মল্লিক বললেন, 'আরে কাজীদা, কী বলছেন আপনি? দেখছেন না লোকটা একজন পাগল।'
কবি উত্তর দিলেন, 'আরে মল্লিক, আমারা বাঙালীরাও কিন্তু কম হুজুগে নই, দেশটাও হুজুগে।' এই বলে কবি প্রফেসরের দিকে তাকিয়ে বললেন, 'শোনো, তুমি কাল এসো, তোমাকে শিখিয়ে আমি রেকর্ড করিয়ে নিব।' কবি নজরুল বলে কথা। মল্লিক আর বড়বাবু তাকে ভাল করেই জানেন। কাজেই সবাই পরবর্তী কান্ড তামাশা দেখার অপেক্ষায় থাকলেন।
কবি গান রেকর্ডের সব ব্যবস্থা করলেন। গান লেখা হলো, কবি প্রফেসরকে বললেন যে এই গানের কথা যেন কেউ জানতে না পারে, যখন গান বাজারে আসবে তখনই শোনা যাবে প্রথম। রেকর্ডের সব ঠিকঠাক করে কবি বললেন, 'আচ্ছা, এবার গান ধরো--কলা গাড়ি যায় ভষড় ভষড়/ ছ্যাকরা গাড়ী যায় খচাং খচ/ ইচিং বিচিং জামাই চিচিং/ কুলকুচি দেয় করে ফচ...'
অদ্ভুত এমন গান শুনে উপস্থিত বাকি দুজন ওখানেই হাসতে লাগলেন, কবির কান্ড দেখে তারা ততক্ষণে খেই হারিয়ে ফেলছেন। পরের দিন এর আরেক জোড়া লিখে আনলেন কবি, এবার অপর পিঠে রেকর্ড করালেন--'মরি হায় হায় হায়, কুব্জার কী রুপের বাহার দেখো।/ তারে চিৎ করলে হয় যে ডোঙা/ উপুড় করলে হয় সাঁকো।/ হরি ঘোষের চার নম্বর খুঁটো, মরি হায় হায় হায়...'
খুব উৎসাহে প্রফেসর রিহার্সাল করতে থাকল। রেকর্ডিং ম্যানেজারকেও জানানো হলো না, কী গান কাকে দিয়ে রেকর্ড হচ্ছে। চরম গোপনে গান দুটো রেকর্ড হল, তারপর বাজারে ছাড়া হল।
বাজারে প্রকাশিত হওয়ার দু একদিন পর কবি মল্লিককে ডেকে বললেন, 'একটু দেখে আসুন তো বাজার থেকে, কেমন বিক্রি হচ্ছে গান দুটো?'
বাজারে খোঁজ নিয়ে এসে মল্লিক হাসতে হাসতে বললেন কবিকে, 'কাজীদা, খুব বিক্রি হচ্ছে অদ্ভুত গানদুটো। ক্রেতারা কিনছে আর গাইছে, কলা গাড়ী যায় ভষড় ভষড়...'
কোম্পানির ম্যানেজার তো দারুণ খুশী। বড়বাবুকে ডেকে বললেন, 'তুমি তো বলেছিলে, লোকটি পাগল। ওর গান তো বেশ সেল হচ্ছে, আরও দু একটা নাও না ওর গলায়...'
মল্লিক সাহেব দৌড়ে গিয়ে কাজীকে কর্তার প্রস্তাব জানালেন। কবি হাসতে হাসতে বললেন, 'মল্লিক সাহেব, এবার কিন্তু গালাগাল খেতে হবে, হুজুগে দেশে এসব একবারই চলে।' বলেই আবার জোরে হাসিতে ফেটে পড়লেন কাজী নজরুল ইসলাম।
‘হে নামাজী আমার ঘরে নামাজ পড় আজ'
অসামান্য প্রতিভাবান কবি কাজী নজরুল ইসলাম যখন ইসলামি হামদ, নাত, গজল রচনা শুরু করলেন, তখনকার একটি ঘটনা । শিল্পী আব্বাসউদ্দিন একদিন অনেক খোঁজাখুজি করে নজরুলকে না পেয়ে সকালে তার বাসায় চলে গেলেন। বাসায় গিয়ে দেখলেন নজরুল গভীর মনোযোগ দিয়ে কী যেন লিখছেন । নজরুল ইশারায় আব্বাসউদ্দিনকে বসতে বললেন । আব্বাসউদ্দিন অনেকক্ষণ বসে থাকার পর জোহরের নামাজের সময় হলে তিনি উসখুস করতে লাগলেন ।
নজরুল বললেন 'কী, তাড়া আছে, যেতে হবে?'
আব্বাসউদ্দিন বললেন 'ঠিক তাড়া নেই, তবে আমার জোহরের নামাজ পড়তে হবে। আর এসেছি একটা ইসলামি গজল নেবার জন্য। গজল না নিয়ে আজ যাওয়া হচ্ছে না।' (নজরুলকে যেহেতু বাউন্ডুলে স্বভাবের কারণে পাওয়া যেত না, তাই সবাই এইভাবে লেখা আদায় করত!)
নামাজ পড়ার কথা শুনে নজরুল তাড়াতাড়ি একটি পরিষ্কার চাদর তার ঘরের আলমারি থেকে বের করে বিছিয়ে দিলেন। এরপর আব্বাসউদ্দিন যথারীতি জোহরের নামাজ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে নজরুল তাঁর হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বললেন 'এই নাও তোমার গজল'। এই গজলটিই হলো--‘হে নামাজী আমার ঘরে নামাজ পড় আজ/ দিলাম তোমার চরণ তলে হৃদয় জায়নামাজ...’
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে
একদিন কবি নজরুল আর শিল্পী আব্বাসউদ্দীন গ্রামোফোন কোম্পানির স্টুডিওতে বসে খোশগল্প করছিলেন। সে সময় পাশের রুমে উর্দু কাওয়ালীর রিহার্সেল করছিলেন শিল্পী পিয়ারু কাওয়াল।
সেদিকে ইঙ্গিত করে আব্বাসউদ্দীন বললেন- কাজীদা, এই যে পিয়ারু কাওয়াল, কাল্লু কাওয়াল- এরা উর্দু কাওয়ালি গায়, এদের গানও শুনি অসম্ভব বিক্রি হয়।হিন্দিতে কাওয়ালী আছে,উর্দুতে আছে কিন্তু বাংলা ভাষায় কোন কাওয়ালী নাই, বাংলায় এ ধরনের ইসলামি গান দিলে হয় না?
তাছাড়া আপনি তো জানেন এক দল ধর্মান্ধ কীভাবে কাফের-কুফর ইত্যাদি বলে বাংলার মুসলমান সমাজের কাছে আপনাকে অপাঙ্ক্তেয় করে রাখার জন্য আদাজল খেয়ে লেগেছে। আপনি যদি ইসলামি গান লেখেন, তাহলে মুসলমানের ঘরে ঘরে আবার আপনার জয়গান উঠবে’।
কথাটা নজরুলের মনে লাগল। তিনি বললেন, ‘আব্বাস, তুমি ভগবতীবাবুকে বলে তার মত নাও।‘
আব্বাসউদ্দিন ভগবতী ভট্টাচার্য অর্থাৎ গ্রামোফোন কোম্পানির রিহার্সেল-ইনচার্জকে বিষয়টা বললেন।
ভগবতী বাবু তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন, ‘না না না, ওসব গান চলবে না। ও হতে পারে না’।
মুসলমানরা গান শুনে নাকি?
মনের দুঃখ মনেই চেপে চলে গেলেন আব্বাসউদ্দিন। এর প্রায় ছয় মাস পর। একদিন দুপুরে বৃষ্টি হচ্ছিল,আব্বাসউদ্দিন অফিস থেকে গ্রামোফোন কোম্পানির রিহার্সেল ঘরে গিয়েছেন। দেখেন, একটা ঘরে শিল্পী আশ্চর্যময়ী আর ভগবতীবাবু বেশ রসালো গল্প করছেন।আব্বাসউদ্দিন নমস্কার দিতেই বললেন, ‘বসুন, বসুন’।
আব্বাসউদ্দিন তার রসাপ্লুত মুখের দিকে চেয়ে ভাবলেন, এ-ই উত্তম সুযোগ। বললেন, ‘যদি কিছু মনে না করেন, তাহলে বলি। সেই যে বলেছিলাম ইসলামি গান দেওয়ার কথা। আচ্ছা; একটা এক্সপেরিমেন্টই করুন না, যদি বিক্রি না হয় আর নেবেন না, ক্ষতি কী’? তিনি হেসে বললেন, ‘নেহাতই নাছোড়বান্দা আপনি, আচ্ছা আচ্ছা, ঠিক আছে’।
পাশের ঘরে কাজী নজরুল ইন্দুবালাকে গান শিখাচ্ছিলেন। আব্বাসউদ্দিন দৌড়ে গিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম কে বললেন,কাজীদা, ইসলামী কাওয়ালী করার জন্য ভগবতীবাবু রাজি হয়েছেন।কাজী নজরুল ইসলামের চোখে ঝিলিক দিয়ে উঠলো। তিনি বলে উঠলেন, ‘ইন্দু, তুমি বাড়ি যাও, আব্বাসের সঙ্গে কাজ আছে’। ইন্দুবালা চলে গেলেন।
কাজী নজরুল এক ঠোঙা পান আর চা নিয়ে আব্বাসউদ্দিনকে সাথে নিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে বসলেন। তারপর আধঘণ্টার ভেতরই লিখে ফেললেন একটি কালজয়ী গান, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’।
গানে তখনই সুর সংযোগ করে তা শিখিয়ে দিলেন আব্বাসউদ্দিনকে।তখন এক রেকর্ডে দুপিঠে দুটি গান থাকতো। অপর পিঠের জন্য আরেকটা গান দরকার তাই পরের দিন ঠিক এই সময় আবার আসতে বললেন আব্বাসউদ্দিনকে। পরের দিন লিখলেন, ‘ইসলামের ঐ সওদা লয়ে এল নবীন সওদাগর’। গান দু’খানা লেখার ঠিক চার দিন পরই রেকর্ড করা হল। নজরুলের আর ধৈর্য মানছিল না। তাঁর চোখেমুখে আনন্দ খেলে যাচ্ছিল!
তখনকার দিনে গানে যন্ত্র ব্যবহার হতো শুধু হারমোনিয়াম আর তবলা। গান দু’খানা আব্বাসউদ্দিনের মুখস্থ হয়নি।তাই নজরুল গান লিখা কাগজটাকে আব্বাসউদ্দিনের চোখের সামনে ধরলেন আব্বাসউদ্দিন গেয়ে চললেন।
এটাই ছিল বাংলায় ইসলামী গানের প্রথম রেকর্ড। রেকর্ডটি কবে বাজারে ছাড়া হবে তার কিছুই জানা ছিলনা।
বাজার করতে একদিন ধর্মতলার দিকে গিয়েছিলেন আব্বাসউদ্দিন।সেখানে সেনোলা রেকর্ড কোম্পানির বিভূতি বাবুর সঙ্গে দেখা। বিভূতি বাবু বললেন, ‘আব্বাস, আমার দোকানে এস’। তিনি এক ফটোগ্রাফার ডেকে নিয়ে এসে বসলেন, ‘এর ফটোটা নিন তো’। আব্বাস উদ্দিন অবাক! বললেন, ‘ব্যাপার কী’? তিনি বললেন, ‘তোমার একটা ফটো নিচ্ছি, ব্যস, আবার কী’?
ঈদের বন্ধে বাড়ি গেলেন আব্বাসউদ্দিন।...কলকাতা ফিরে এসে ট্রামে চড়ে অফিসে যাচ্ছিলেন। ট্রামে একটি যুবক আব্বাসুদ্দিনের পাশে গুনগুন করে গাইছে, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে’। আব্বাসউদ্দিন একটু অবাক হলেন। এ লোক এ গান কী করে শুনল! অফিস ছুটির পর গড়ের মাঠে বেড়াতে গিয়েছেন, মাঠে বসে একদল ছেলের মাঝে একটি ছেলে গেয়ে উঠল, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে’। আনন্দে-খুশিতে মন ভরে উঠল আব্বাস উদ্দিনের, তিনি অনুমান করলেন ঈদে রেকর্ডটি বাজারে ছাড়া হয়েছে।তিনি ছুটলেন কাজী নজরুল ইসলামের বাড়ি, সেখানে গিয়ে শুনেন , তিনি রিহার্সেল রুমে গেছেন।
সেখানে গিয়ে দেখেন , দাবা খেলায় মত্ত কাজী নজরুল। দাবা খেলতে বসলে দুনিয়া ভুলে যান তিনি। কিন্তু আব্বাসউদ্দিনের গলার স্বর শুনে একদম লাফিয়ে উঠে বুকে জড়িয়ে ধরলেন আব্বাসকে,বললেন, ‘আব্বাস, তোমার গান কী যে পরিমাণে বিকোচ্ছে--’। আব্বাসউদ্দিন নজরুলের পা ছুঁয়ে কদমবুসি করলেন।হই হট্টগোল শুনে দৌড়ে এসেছেন ভগবতী বাবু, আব্বাসউদ্দিন ভগবতীবাবুকে বললেন, ‘তাহলে এক্সপেরিমেন্টের ধোপে টিকে গেছি, কেমন’?
ভগবতী বাবু হো হো করে হেসে উঠে বললেন, ‘এবার তাহলে আরও ক’খানা এই ধরনের রেকর্ড হয়ে যাক...’
পরে এই কোম্পানি থেকে ত্রিশটি ইসলামী গানের রেকর্ড বেরিয়েছিল। সকল গানের সুরকার ও গীতিকার ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম।
আজ আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২০তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে কবির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।