গৌরী সেনের সঙ্গে আমার একবার দেখা হয়েছিল।
যেমন লম্বা গড়ন, তেমন গৌর বর্ণ।
আবাক হবার কিছু নেই এতে।
তাঁর নাম শুনে শুনে এমনিই মোহ তৈরী হয়েছিল, যে
কোনো এক রাতে ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে তাঁকে পেয়ে গেলাম।
রাতের আবহাওয়াটাও ছিল নিরবিচ্ছিন্ন ঘুমের উপযোগী।
ভাদরের জন্মাষ্টমী রাতের মত।
তাই গল্প দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছিল শুধু, সারারাত ব্যাপী।
আমাকে শ্রোতা হিসেবে ভারি পছন্দ হয়েছিল তাঁর, আর
আমিও তন্ময় হয়ে শুনছিলাম তাকে।
কী বুকভরে দম নিয়ে গল্প বলে গেলেন একে একে!
সেই সপ্তদশ শতাব্দীর তাঁর কাজের যত কথা।
অনুজ প্রতিম হরি ঘোষের কথাও উঠেছিল সেথা।
দেখেছি, আজও তাঁর অন্তর-মুখ উদ্ভাসিত সুখ-স্মৃতি ভারে।
কারো ঋণ পরিশোধ, কারো কন্যার বিয়ের যৌতুক,
কারো বা অসুখে যত খরচ, মিটিয়েছিলেন উদার হস্তে, অকাতরে
জ্ঞানত ফিরিয়ে দেনন নি কাউকে খালি হাতে। তাই
’টাকা লাগে দেবে গৌরী সেন’ আজ প্রবাদ প্রতীম হয়ে আছে।
এমনি করে শুনেছিলাম তাঁর নানা গাথা।
প্রশান্তিতে চোখ তাঁর চিকচিক করছিল।
তবু শেষে এসে বললাম:
আছে আর কোনো কথা? না কি সবই দরদে মাখা?
মহৎ কর্মজীবন, সেতো একপেশে হয় না এমন।
সেনবাবু মাথা নেড়ে বললেন: হ্যাঁ, মনে পড়ে খানিক,
তেমন কিছু নয়। তবু বলছি, যদিও সে সুখের নয়।
কিছু মানুষ বলতেন: সেন, ভারি টাকার অপচয় করছেন।
অর্থ জমানোরও দরকার আছে, দুর্যোগ-দুর্দিন কখন আসে।
কিন্তু তারাই চাইতেন, অন্তত: তার প্রয়োজনটা যেন মেটায়,
কি কাজ বাকীদের দিকে গৌরী সেন তাঁর হাতটি বাড়ায়।
২৫-০৮-২০১৬, জন্মাষ্টমী। স্বামীবাগ, ঢাকা।