কাছাকাছি দুটি গাড়ি, জ্যামের মধ্যেও চলছিল,
থেমে থেমে, ধীর গতিতে।
একটিতে আমি অন্যটিতে অচেনা কেউ।
তবু আমার দৃষ্টি পড়েছিল সেদিকে।
শাহবাগ থেকে গুলিস্থান, পাশাপাশি চলা।
তারপর বিচ্ছিন্নতা। পথে যেটা হয়।
এ শুধু আমি জানতাম, উনি নন।
উনি কী ছিলেন, আমার জানা ছিলনা
পুরুষ কিংবা নারী, কোন পেশার বা নেশার ।
তবে মানুষ হিসেবে আমাদের
অমিলের চেয়ে মিলই থাকার কথা বেশী।
অমিল যা কিছু ছিল, ছোটখাট সে সব
মানুষ মাত্রেই যেমনটি হয়।
তবে দু’একটিতে তফাৎ ছিল বিস্তর।
দেখলাম:
ওনার ভবিষ্যত নেই। আমার একটু হলেও আছে।
আমি যখন চারপাশ দেখছিলাম, উনি ছিলেন চোখ মুদে।
আমি রুদ্রের কবিতা পড়ছিলাম,
উনি হয়তো আগেই পড়ে নিয়েছিলেন।
আমার পকেটে অনেকগুলো কেনাকাটার রশিদ ছিল
হিসেব-নিকেশ তখনো হয়নি।
ওনার ওসব গেছে চুকে।
আমি ছিলাম বসে, উনি শুয়ে।
আমি সময় দেখছিলাম। ওনার সে প্রয়োজন ছিল না।
বড় পার্থক্য- উনি পাশে থেকেও নেই, আমি আছি।
সম্ভবত: ডাক্তাররা ওনাকে আজই মৃত ঘোষণা করেছেন।
গাড়িটি ছিল লাশবাহী,
যে কারণে আমার চোখ পড়েছিল প্রথমে।
কিছুক্ষণ তরে ভাবনা ছিল সব জড় হয়ে।
মনে হল -এত ছুটছি কেন ? কিসের এত তাড়া ?
এ মানুষটির জন্য রাস্তার জ্যাম কিংবা ফাঁকা
সে কি কোনো বিষয় ?
ক্ষণকালের জন্য আমরা এক পথে ছিলাম বটে, তবু
আমার গন্তব্য ছিল জানা, যদিও অস্থায়ী।
ওনারটি ছিল অজানা-অনন্তে তবে স্থায়ী
যেখানে সব পথ গিয়ে মিশে। আর সেখানে
নিশ্বাসে নি:শ্বাসে আমাদেরও পথ বেয়ে চলা ।