বৃষ্টিস্নাত কাইলি শহরে একটা ছোট্ট ক্লিনিক। ক্লিনিকটাতে দেখা যায় দুইজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তার এক বিমূর্ত জীবন যাপন করেন। তাঁদের মধ্যে একজন যার নাম চেন, একদিন উনার প্রয়াত মায়ের ইচ্ছাপূরণের জন্যে ভাইয়ের ত্যাজ্যপুত্রের খোঁজে বের হোন। খুঁজতে বের হয়ে তিনি একটি ট্রেনে ভ্রমণ করেন। ক্লিনিকের আরেক চিকিৎসক, একজন একাকী প্রৌঢ়া মহিলা চেনকে উনার প্রাক্তন প্রেমিককে খুঁজে বের করার অনুরোধ করেন। প্রেমিকের উদ্দেশ্যে উনি একটি পুরোনো ছবি, একটি শার্ট এবং একটি গানের ক্যাসেট চেনের কাছে দিয়ে দেন। কিন্তু যাত্রাপথে চেন দাঙ্গমাই নামে এক রহস্যময় শহর অতিক্রম করেন। এই শহরে সময়টা যেনো লিনিয়ার নয়, বরং অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যৎ মিলেমিশে চলছে। মানুষের জীবন যেনো পরষ্পরকে জড়াজড়ি করে চলছে। সময়ের উর্ধ্বে চলে যাওয়া এমন এক শহরে গিয়ে চেন তাঁর স্বপ্নে নাকি বাস্তবে আছেন সেটা বুঝতে পারেন না।
এই গেলো সিনেমাটার সারসংক্ষেপ। এমনই এক সুরিয়ালিজমের মধ্য দিয়েই চাইনিজ পরিচালক বি গান তৈরি করেছেন সিনেমা কাইলি ব্লুজ। সুরিয়ালিজম তথা পরাবাস্তববাদ নিয়ে অনেক লেখা ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে। এই মতবাদের সারমর্ম এই দাঁড়ায় যে, অবচেতন মনের চিন্তাকে মেটাফোরের মাধ্যমে প্রকাশ করা। এই প্রকাশ হতে পারে উদ্ভট এবং আশ্চর্জজনক সুন্দর। প্রচলিত আর্টের ধারাকে চ্যালেঞ্জ করার জন্যে সুরিয়ালিজমের উদ্ভব হয় ১৯২০ সালে, ফ্রান্সের প্যারিসে। সুরিয়ালিজমের উপরে ভিত্তি করে অসংখ্য ছবি, সাহিত্য এবং সিনেমা তৈরি হয়েছে। অবচেতনের স্বপ্নকে বাস্তবে ফুটিয়ে তুলার ভাষা দিয়েছে সুরিয়ালিজম। আমেরিকান পরিচালক ডেভিড লিঞ্চ সুরিয়ালিস্ট চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক আলফ্রেড হিচককের সিনেমা স্পেলবাউন্ডেও (১৯৪৫) সুরিয়ালিজমে ছুঁয়া আছে। সেখানে একটি স্বপ্নের দৃশ্যপট তৈরির জন্যে হিচকক সাল্ভাদোর দালির সহায়তা নেন এবং কাজের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করেন।
আইএমডিবির ট্রিভিয়াতে দেখা গেলো কাইলি ব্লুজে একটানা ৪০ মিনিটের মতো লম্বা সময়ের একটা শটও আছে, যদিও সিনেমা দেখার সময়ে দৃশ্য নিয়ে এত মুগ্ধ ছিলাম যে ডিউরেশন নিয়ে কোনো ভাবনাই ছিলো না। পুরোটা সিনেমা জুড়ে ছিলো যেনো একের পর এক মোহময় চিত্রপট। চলচ্চিত্র পরিচালনার পাশাপাশি বি গান একজন কবি। তাই শিল্পপ্রেমী যে কারো কাছে সিনেমার দৃশ্যপটগুলো কবিতার মতো মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০২১ বিকাল ৫:০০