somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার জীবনের অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশের ডাক্তারদের ব্যবহার !!!

০৩ রা অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ১২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমেই বলে নিচ্ছি আমি একজন পুরাতন ব্লগার হলেও আমার পোস্টের সংখ্যা অনেক কম। লেখালেখির চেয়ে অন্যের লেখার উপর মন্তব্য করতে আমার বেশি ভাল লাগে। তাছাড়া লেখার জন্য যে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা উচিত তা আমার নেই বললেই চলে। তবে কিছু জীবন ঘনিষ্ট ঘটনা সবার জানা উচিত বলে আমি মাঝে মাঝে লিখি।

ইদানিং আমার প্রচন্ড পরিমাণে চুল ঝরে যাচ্ছে। বিষয়টি আশংকাজনক হওয়ায় আমি গত মাসে গেলাম ডাক্তারের কাছে। এ্যালিফ্যান্ট রোড এর জেনারেল মেডিক্যাল হাসপাতালের তৃতীয় তলায় একজন ডার্মাটোলজিস্ট বা ত্বক বিশেষজ্ঞ বসেন। নাম ডাঃ ওয়ানাইজা। তিনি আবার একটি জাতীয় দৈনিকে মানুষের ত্বক ও চুল নিয়ে নিয়মিত স্বাস্থ্য বিভাগে লেখালেখি করেন। ওই দৈনিকে আমার এক বন্ধু সাংবাদিক হিসেবে চাকুরী করে, সে আমাকে ডাঃ ওয়ানাইজার কাছে যাবার পরামর্শ দিল। সন্ধ্যার পর তিনি রোগী দেখেন। আমি আমার এক বন্ধুসহ ডাক্তারের কাছে উপস্থিত হয়ে সমস্যার কথা জানালাম। ডাক্তার আমাকে চার পাচটা প্রশ্ন করলেন। তারপর ¯েপ্র, শ্যাম্পু আর ওষুধ লিখে দিলেন এবং সেইসাথে কিছু টেস্ট দিয়ে একমাস পর দেখা করতে বললেন। খুব ভাল কথা। প্রেসিক্রিপশনের নিচে শাহবাগের একটা ফার্মেসীর সীল মেরে দিলেন এবং সেই ফার্মেসী থেকে ওষুধ কিনতে বললেন। সেইসাথে মেডিকেল টেস্টগুলো করার জন্য কাটাবন মোড়ের কমপ্যাথ ডায়াগনস্টিকের ঠিকানা সম্বলিত একটি লিফলেট হাতে ধরিয়ে দিলেন। খুব ভাল কথা। আমি জানি ওই ফার্মেসী আর ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে তিনি কমিশন পাবেন। ডাক্তারদের যেহেতু সংসার চলে না, সেহেতু এসব জায়গা থেকে দালালী তিনি খেতেই পারেন। তাতে আমার কোন আপত্তি নেই।

ল্যাব এইডে আমার বন্ধু চাকুরী করা সত্ত্বেও আমি অনেক বেশি টাকা ফি দিয়ে ডাক্তারের রিকমান্ড করা মেডিকেল সেন্টার থেকে রক্ত, প্রস্রাব, হরমোন সহ ৮টি পরীা করালাম। তারপর সেই রিপোর্ট নিয়ে গতকাল ২ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যায় দ্বিতীয়বারের মত গেলাম ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার আমার ৪ পৃষ্ঠা মেডিকেল রিপোর্ট এর প্রথম পৃষ্ঠা কোনরকম তাকিয়ে দেখেই প্রেসক্রিপশন লিখতে শুরু করলেন। আমার মনে খটকা জন্মালো- তাহলে কি অন্য তিন পৃষ্ঠার পরীা তিনি আমাকে কমিশন খাওয়ার জন্য করিয়েছেন? তবে এসব কিছু বললাম না।

আমি শুধু বললাম “ম্যাডাম, আপনি তো সব রিপোর্টগুলো দেখলেন। এখন কি কাইন্ডলি আমাকে জানাবেন আমার অনবরত চুল ঝরে যাওয়ার কারণটা কি?” আমার কথার উত্তরে ডাক্তার যা বললেন তাতে আমি অবাক। তিনি বললেন, “আপনার অসুখের কারণ কি মানে? কারণ কি আপনাকে আমার বলতে হবে? আমি তো এখানে রোগী দেখতে বসেছি, কারণ বলতে বসি নাই। ডাক্তারী কাশ করাতে বসি নাই। আপনার যদি কারণ জানার দরকার থাকে তাহলে আপনি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। আমার কাশে আসেন। সেখানে আমি আপনাকে বলবো অমুক ভাইরাস থেকে তমুক ভাইরাস............ (ইত্যাদি আরো কি যে বলল আমি তা বুঝতে পারলাম না) আপনি আমাকে একটা কথা বলেন তো, আপনি কি আসলে কারণ জানতে এসেছেন নাকি চিকিৎসা নিতে এসেছেন?” এরকম টানা দুই মিনিটের বক্তব্য শুনে আমি তো হতভম্ব হয়ে গেলাম। আমি যে কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। তারপরেও বললাম- “ম্যাডাম, আমি তো আসলে ব্যাখ্যা জানতে চাইনি। আমি শুধু জানতে চেয়েছি কি কারণে আমার এমন অবস্থা হয়েছে। ডাক্তাররা তো অন্তত বলে যে, আপনার পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে এই জন্য আপনার পেটে ব্যাথা করে। আমি সেরকমভাবে জানতে চেয়েছি।” উত্তরে তিনি বললেন- “আপনার তো পিত্তথলিতে পাথর হয়নি, আমি আপনাকে তা বলবো কেন? আর যেসব ডাক্তাররা বলে তাদের কাছে যান, আমার কাছে কেন এসেছেন? আমি এত বছর যাবৎ রোগী দেখি, কোনদিন কেউ তো আমাকে রোগের কারণ জানতে চায়নি। আপনি তো কি, আপনাকে কি বলবো। যেসব ডাক্তাররা রোগের কারণ বলে তাদের কাছে যান, আমার কাছে আসবেন না। আমার কাছে দেখাতে এসে আজ পর্যন্ত কেউ এত কথা বলেনি। আপনার প্রেসক্রিপশন লিখতেই তো আমার এখন ইচ্ছে করছে না। রোগীরা বলে আমি নাকি অনেক কথা বলি আর এখন একজন রোগী পেলাম যে আমার উপর দিয়েও কথা বলে। আপনাকে দেখে তো আমার আশ্চর্য লাগছে। এখন তো মনে হচ্ছে আপনার নাম টামসহ পুরো ঠিকানা আমার রেখে দেয়া উচিত এবং আপনার সম্পর্কে আমার খোজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আপনি আসলে কোথাকার কোন সাহেব সেটাতো আমি অনুসন্ধান করে দেখি।”

ডাক্তারের প্রথম বক্তব্যে আমি হতভম্ব হয়েছিলাম আর পরের বক্তব্য শুনে আমার তো রাগ উঠে যাওয়ার কথা। মহিলা বলে কি? আমি কি জিজ্ঞেস করলাম আর উনি কি উত্তর দিচ্ছেন? আমার কথার মধ্যে যদি কর্কশ ভাব থাকতো তাও একটা কথা ছিল। কিন্তু আমার রাগ হলো না, বরং মনে মনে হাসলাম। সে আমার পুরো ঠিকানা চেয়ে ভয় দেখাচ্ছে। অথচ আমার কর্মস্থলের কথা শুনলে উনি হয়তো নিজেই সুন্দর একটা হাসি দিয়ে কথা বলতে শুরু করতেন। উনি আমাকে আইনী ভয় দেখালেন হয়তোবা, কিন্তু আমার উনাকে হাইকোর্ট থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসার ক্ষমতা আছে সেটা উনি জানেন না বিধায় এমনভাবে কথা বলেছেন। সমস্যা হলো মহিলা মানুষ। পুরুষ মানুষ হলে না হয় ছেড়ে দিয়ে কথা বলা যায়, কিন্তু মহিলা মানুষ উল্টাপাল্টা কথা বললেও আমি সব সময় ঠান্ডা মাথায় কথার উত্তর দেই। এখানেও ব্যতিক্রম না করে বললাম, “ম্যাডাম, দুঃখিত আমার মনে হয় প্রশ্ন করতে আমার ভুল হয়েছে। আমি এভাবে মিন করিনি।” এরপর প্রেসক্রিপশন লেখা শেষ হলে ডাক্তারের ফি দেবার সময় জানতে চাইলাম কত দিব, বললেন- ৪০০। আমি হেসে হেসে বললাম, “ম্যাডাম, আমি তো জানি পুরাতন রোগীদের জন্য ৫০% ডিসকাউন্ট আছে।” তিনি উত্তর দিলেন, “আমি তো ইতিমধ্যে আমার ফি বাড়িয়ে ৫শ টাকা করেছি। কিন্তু পুরাতন রোগীদের কাছ থেকে ৫শ টাকা নিচ্ছি না। আপনি যতবার আসবেন ৪শ টাকা দিবেন। অনেক কথা বলে ফেলেছেন। আর বলবেন না।” আমি আর বেশি কথা না বলে টাকা দিয়ে এবং পরবর্তী তারিখ নিয়ে সোজা বেরিয়ে এলাম আর চিন্তা করলাম বাংলাদেশের ডাক্তারদের ব্যবহার এত সুন্দর কেন? তবে আমার ধারণা হলো ডাক্তার আসলে আমার রোগটা কি তা শনাক্ত করতে পারেননি। তাই তার কাছে কারণ জিজ্ঞেস করাতে তিনি আমাকে এমন ঝাড়ি মেরেছেন যাতে আমি আর বাড়তি প্রশ্ন করে তাকে বিব্রত না করি। আরো ভাবলাম, এনথ্রাক্স রোগের কারণ যে এনথ্রাক্স আক্রান্ত গরুর মাংস খাওয়া, সেটা তো আকাশের ফেরেসতারা আমাদের জানায়নি। যে কোন ডাক্তারই সেটা জনগণকে জানিয়েছেন। তাহলে আমার রোগের কারণটা কি ডাক্তারের কাছে জানতে চাওয়া অন্যায়? একটা ছোট্ট প্রশ্ন করাতে ডাক্তার আমার সাথে যে ধরণের আচরণ করলেন তাতে আমি অত্যন্ত মর্মাহত। হয়তো বাড়িতে তিনি স্বামীর সাথে ঝগড়া করেছেন, সেই রাগ এনে আমার উপর ঢাললেন। এখন ভাবছি আমি কি আসলে আর তার কাছে চিকিৎসার জন্য যাবো? চিকিৎসার জন্য যাই আর না যাই তাকে আমি একটা চিঠি অবশ্যই লিখব।
৩৩টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×