ছবি: গুগল থেকে
জীবনে বাঁচতে গেলে বহু কিছু লাগে
জীবন সঙ্গীটি যদি মন মতাে হয়!
অর্ধাঙ্গীকে পাশে পেলে মনে বল জাগে
অযুত বিপদ তবু মনে নাহি ভয়।
হতাশায় ডুবি যদি ঘোরে শয়তান
সৎ জায়া সঙ্গিনী হলে চিন্তা কিছু নয়,
সমস্যা যতই থাক পাহাড় সমান,
দায়িত্বের বুঝাগুলো লাগে ধূলিময়।
বয়সটা যত বাড়ে মৃত্যু কাছে আসে
জীবন সংহারকারী যেন প্রাণ নাশে
তোমার কোমল স্পর্শে তবু প্রাণ বাঁচে।
দু'জনের স্মৃতিময় কতশত কথা
বিদায়ের ধ্বনি শুনে মনে জাগে ব্যথা
ওপারেও পাই যেন তোমাকেই কাছে।
ভালবাসুন আপনার অর্ধাঙ্গীকে:
বিশ্ব আজ অনেক উন্নত তথ্য প্রযুক্তির অগ্রগতির কারনে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা তাদের প্রতিভার সাক্ষর রেখে চলছে সংসার থেকে বিশ্বের আনাচে কানাচে। প্রতি প্রান্ত থেকে যখন নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে এই সময়ে এসেও যদি শুনতে হয় যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতন, তখন আমরা পুরুষরা মুখ দেখাই কি করে? সংসারে সুখ-দু:খ ভাগাভাগি করে পরিবার সুন্দর করার দায়িত্ব স্বামী-স্ত্রী দু'জনেরই। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতিযোগী নয়, পরিপূরক।
স্বামী স্ত্রীর যৌথ প্রচেষ্টায় সংসার ও সমাজ জীবন সুন্দর ভাবে গড়ে ওঠে। কোরআন মজীদ বিশ্ব মানবতাকে জানিয়ে দিচ্ছে যে, জীবনের সব রকম তৎপরতা ও উত্থান পতনের ক্ষেত্রে সর্বদাই নারী ও পুরুষ পরস্পরকে সহযোগিতা করছে। ঊভয়ে মিলে জীবনের কঠিন ভার বহন করছে এবং ঊভয়ের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সভ্যতা ও তমদ্দুনের ক্রমবিকাশ ঘটছে। আল্লাহর ঘোষণাঃ আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু । তারা ভাল কাজের আদেশ দেয়, মন্দ কাজ করতে নিষেধ করে। ( আত্ তওবা- ৭১)
নবী (সঃ) বলেছেনঃ নারীরা পুরুষের অর্ধাংশ- (আবু দাউদ, তিরমিযী)
নারী পুরুষ প্রত্যেকেই সমপরিমানে পরস্পরের মুখাপেক্ষী । এতে লাঞ্ছনা ও অপমানের কিংবা মর্যাদা ও গৌরবের কোন প্রশ্নই আসে না। আল্লাহ বলেনঃ “হুন্না লেবাসুল্ লাকুম ওয়া আন্তুম লেবাসুঁল্লাহুন্না- তারা তোমাদের পোশাক আর তোমরা তাদের পোশাক।” তাই স্ত্রীদের ইজ্জত আব্রু রক্ষা করার দায়িত্ব স্বামীর উপরে বর্তায়। তাদের কোন দুর্বলতাকে (যদি থাকে) মানুষের সামনে প্রকাশ না করা স্বামীর মহৎ গুণ। একই ভাবে উত্তম স্ত্রীর কর্তব্য স্বামীর ইজ্জৎ সমাজে কী ভাবে বৃদ্ধি পাবে তার দিকে নজর রাখা।
কোরআনের এ আয়াতের ঘোষণা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে নবী (সঃ)-এর ঘোষণায়। গোটা বিশ্ব যখন নারীকে অপরাধের উৎস এবং সাক্ষাত পাপ ও গোণাহের কারণ মনে করে বসে ছিল তখন বিশ্ব জাহানের সর্ব কালের অতি পবিত্র ব্যক্তি পাপ ও অশ্লীলতায় ভরা চিন্তার মূলে পরিবর্তন আনতে ঘোষণা দিলেন, “দুনিয়ার বস্তু নিচয়ের মধ্যে আমি ভালবাসি নারী, এবং সুগন্ধি আর আমার চক্ষু শীতলকারী হল নামায। (নাসায়ী- অনুচ্ছেদ- হুব্বুন নিসা)
স্বামীর ভালবাসা পাওয়ার অধিকার স্ত্রীদের মূূল অধিকার। বিবাহ শুধুমাত্র শরিয়তি ব্যবস্থা ও আইনের বিধান নয়। আইনের ঊর্ধ্বে প্রেম ভালবাসার এক সম্পর্ক সৃষ্টি হয় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে। এই ভালবাসা আল্লাহ মেহেরবানী করে মানব মানবীর হৃদয়তলে পয়দা করে দিয়েছেন। আল্লাহর ঘোষণাঃ এবং তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে তিনি তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা তাদের সাথে শান্তিতে বসবাস করতে পার এবং তোমাদের মাঝে ভালবাসা ও মেহেরবানী সৃষ্টি করে দিয়েছেন। ( সূরা রূমঃ ২১)
স্ত্রী শিশুকাল, কৈশোর ও যৌবনের ছোঁয়ায় বেড়ে ওঠা বাড়ি ঘর, বাবা মাকে, স্নেহের ভাই-বোন ছেড়ে চলে আসে স্বামীর ঘরে। এক নতুন পরিবেশে নিজেকে সামলিয়ে নিতে হয়। এ সময় সব চাইতে বেশি প্রয়োজন হয় স্বামীর ভালোবাসা। তাই স্ত্রীর প্রতি স্বামীর থাকতে হবে আন্তরিক অনুরাগ ও আকর্ষণ। প্রত্যেক স্ত্রী কামনা করে স্বামী তার সমস্ত শরীর-মন জীবন যৌবন তার উপর বিন্যস্ত করে নিতান্ত নির্ভর করে চলুক। এই ইচ্ছার প্রতি স্বামীর সম্মান দেখান উচিত।
স্বামীকে হতে হবে উদার চিত্তের অধিকারী। স্ত্রীর কোন দুর্বলতাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে স্ত্রীর মনে কষ্ট দেয়া স্বামীর উচিত নয়। স্ত্রীর চাল চলনে কোন প্রকার সন্দেহ নিয়ে তাকে বিব্রত করা হলে পরস্পরের ভালবাসায় চির ধরে । ফলে সংসার বিষময় হয়ে ওঠে। তাই স্বামীকে ভালবাসার ডালি নিয়ে হাজির হতে হবে স্ত্রীর কাছে। বাইরের লোকে মেয়েদের জেঠামি সইতে পারে না, তাদের কথায় স্বামীকে কান দেয়া চলবে না। স্বামীকে বুঝতে হবে স্ত্রীকে, তাকে ভাল বাসতে হবে অন্তর দিয়ে। এটাই স্বামীর প্রতি স্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ অধিকার।
স্বামীর কাছ থেকে সদ্ব্যবহার পাওয়ার অধিকার স্ত্রীর অন্যতম অধিকার। সামুরা বিন জুনদুব (রাঃ ) বর্ণনা করেন - “রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন: স্ত্রী লোকদেরকে পুরুষের পার্শ্বদেশের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে । যদি তুমি তাকে সম্পূর্ণ সোজা করতে চাও তবে ভেঙ্গে ফেলবে , সুতরাং তার সাথে নরম ব্যবহার কর , তাহলে সুখময় ও স্বাচ্ছন্দ জীবন যাপন করা যাবে।( তারগীব ও তারহীব)
পারিবারিক ব্যবস্থায় স্বামীর হাতে থাকে কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব, যদি কোন স্বামী নিজ স্ত্রীর ভাবাবেগ ও অনুভূতির প্রতি ভ্রক্ষেপ না করে শুধুমাত্র নিজের কথা মানাবার জিদ করে তবে পাবিারিক জীবন প্রকৃত সুখ ও আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবে । তাই রাসুল (সা.) পুরুষদেরকে স্ত্রীদের সংগে কোমলও ভালবাসাপূর্ণ ব্যবহার করতে উপদেশ দিয়েছেন। স্ত্রীদের সাথে কেমন আচরণ করতে হবে তার একটি উত্তম উদাহরণ রয়েছে হযরত ওমর (রা.)-এর জীবনে।
খলিফা হযরত ওমরের খেলাফত কালের ঘটনা। এক ব্যক্তির স্ত্রী ছিল বেশ মুখরা ও ঝগড়াটে। সব সময় সে স্বমীকে জ্বালাতন করত। স্বামী বেচারা স্ত্রীর দুর্ব্যবহারে অতিষ্ট হয়ে এ ব্যাপারে নালিশ জানাতে একদিন সে হাজির হল হযরত ওমর (রাঃ) এর দরবারে। সে হযরত ওমরের বাড়ির ফটকে দাঁড়িয়ে খলিফার বের হওয়ার অপেক্ষা করতে লাগল। এ সময় সে শুনতে পেল খলিফাকে তাঁর বিবি কঠোর ভাষায় বকাবকি করছেন। কিন্তু হযরত ওমর (রাঃ) কোন জওয়াব দিচ্ছেন না , বরং নীরবে সব শুনে যাচ্ছেন। এ ভাবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে লোকটি চলে যেতে উদ্যত হল। সে মনে মনে ভাবল, এমন প্রতাপশালী খলিফার যখন এমন হাল তখন আমি আর কোন ছাই।
এমন সময় খলিফা বাড়ির বের হয়ে দেখতে পেলেন লোকটি চলে যাচ্ছে। তিনি লোকটিকে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন: “ কি হে বাপু, তুমি এলেই বা কেন, আর কিছু না বলে চলে যাচ্ছ কেন? ”
লোকটি জওয়াব দিল, “হুজুর, আমার স্ত্রী আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে , আমার সাথে ঝগড়া করে । তার বিরুদ্ধে নালিশ করার জন্য আপনার দরবারে এসেছিলাম। কিন্ত দেখতে পেলাম আপনার হাল আমার চেয়ে ভাল নয়। তাই কিছু না বলেই চলে যাচ্ছি।” হযরত ওমর (রাঃ) বললেন : “শোন ভাই, আমার উপর আমার বিবি সাহেবার বেশ কিছু অধিকার কাছে, আমি তাই তার এ বকাবকি সহ্য করছি। দেখ সে আমার খাবার রান্না করে, রুটি বানায়, কাপড় চোপড় ধোয় , বাচ্চাদেরকে দুধ খাওয়ায়। অথচ এ সব কাজ তার জন্য বাধ্যতামূলক নয়, সে স্বেচ্ছায়ই এ সব করে। এ সব কাজ করে সে আমাকে হারাম উপার্জন থেকে বাচিয়ে রাখে। এখন বল আমি কি তাকে সহ্য না করে পারি?”
লোকটি বললঃ “আমিরুল মুমিনীন,আমার বিবিও তো এরূপ। ”
হযরত ওমর (রাঃ) বললেন , “তা হলে তাকে সহ্য করতে থাক, ভাই । দুনিয়ার জীবনটা তো নিতান্তই ক্ষণস্থায়ী। ”
খলিফাতুল মুসলিমীন- এর এ ভাষণ থেকে স্বামীদের শিক্ষা গ্রহণ করে স্ত্রীদের প্রতি উত্তম ব্যবহার করা প্রয়োজন। কারণ নূর নবী (সঃ) বলেছেনঃ ‘তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ঐ ব্যক্তি, যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে সব চেয়ে ভাল ব্যবহার করে।’
পরিশেষে রাসুল সা. এর জীবনের একটি ঘটনা সনেট আকারে উপস্থাপন করছি:
ভালবাসা আল্লাহর নেয়ামত:
একদিন শ্রান্ত-ক্লান্ত রাসুল এলেন
রান্না সমাধা করেনি আয়েশা তখনো
সেদিন দয়ার নবী ক্ষুদার্ত ছিলেন,
ক্রুদ্ধ হয়ে তবু তিঁনি না বকেছে কোন।
পরিশ্রান্ত তবু তিঁনি বিশ্রাম না নিয়ে
আয়েশার রান্না কাজে গেলেন এগিয়ে,
আকাশের চেয়ে বড় হৃদয়টা যেন
এঘটনায় তোমাতে লাভ হবে কোন?
একটুতেই গালমন্দ তুমি করছো কি?
জীবনে তোমার কোন ভুল হয়না কি?
ছোট ভুল যত আছে ক্ষমা করে দাও।
অপরাদ যত তার উপদেশে রাখো
আল্লাহর দরবারে হাত তুলে থাকো
শুধরিয়ে যেতে পারে ভালোবাসা দাও।
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা:
"যেমনি করে পৃথিবীতে রয়েছি একসাথে
তেমনি করে থাকি যেন দুইজনে জান্নাতে।"
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৫৮