
ছবিসূত্র: গুগল
চলে গেল ২০১৮ সাল। গেল বছর অনেক প্রাপ্তিই আছে, আবার এসবের বিপরীতে হারিয়ে গেছে অনেক প্রিয় মুখ। যাদের অকাল প্রয়ানে সাহিত্যঙ্গন অপূরণীয় ক্ষতির মুখোমুখি। তবুও নতুন দিনে নতুনেরা তাদের স্থান দখল করবে এমনই প্রত্যাশা সবার। আনন্দ বেদনার মিশেলেই জীবনের চলমানতা রয়ে যায় অব্যাহত। সামনের দিনগুলোর সোনালি অর্জন সমৃদ্ধ করবে আগামী জীবন—এই প্রত্যাশায় চলমান থাকবে সামনের পথে এগিয়ে যাওয়া।
জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো সাহিত্যেও ঘটেছে অনেক স্মরণীয় ঘটনা, কিছু আনন্দের প্রাপ্তি, কিছু বেদনার বিয়োগ। পেছনের দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দেখে নেওয়া যেতে পারে সাহিত্য অঙ্গনে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু চিত্র।
(১) কথাসাহিত্যিক শওকত আলীর প্রস্থান

বাংলা কথাসাহিত্যে শওকত আলী এক প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব। ১৯৩৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরের রায়গঞ্জে তার জন্ম। পারিবারিকভাবেই রাজনীতি-সচেতন ও সংস্কৃতিমনা পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই সংস্পর্শে এসেছেন বইয়ের।
শওকত আলীর লেখা পাঠকনন্দিত উপন্যাসের তালিকায় রয়েছে ‘যাত্রা’, ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’, ‘দক্ষিণায়নের দিন’, ‘উত্তরের খেপ’ প্রভৃতি। এর মধ্যে ‘উত্তরের খেপ’ অবলম্বনে তৈরি হয়েছে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।
সাহিত্য চর্চার স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৮৬ সালে ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার পান শওকত আলী। ১৯৫৮ সালে এমএ পাস করে দিনাজপুরের একটি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। ১৯৫৯ সালের শেষের দিকে ঠাকুরগাঁও কলেজে বাংলার শিক্ষক হন গুণী মানুষটি।
১৯৬২ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত জগন্নাথ কলেজে লেকচারার হিসেবে চাকরি করেন শওকত আলী। ১৯৮৮ সালে জেলা গেজেটিয়ারের ঢাকার হেড অফিসে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন তিনি। ১৯৮৯ সালে সরকারি সংগীত কলেজের প্রিন্সিপাল করা হয় তাকে। সেখান থেকে ১৯৯৩ সালে অবসরে যান তিনি।
তিনি ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্যসূত্র:
১) কথাসাহিত্যিক শওকত আলী আর নেই
২) কথাসাহিত্যিক শওকত আলীর চির প্রস্থান
৪) চলে গেলেন প্রান্তিক মানুষের কথাকার শওকত আলী
(২) বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণা :

২০১৮ সালের ২৭ জানুয়ারী বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। এ বছর বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় ১০ বিভাগে ১২ জন বিশিষ্ট কবি, লেখক ও গবেষক। গতকাল শনিবার একাডেমির শহিদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।
পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন- কবিতায় মোহাম্মদ সাদিক ও মারুফুল ইসলাম, কথাসাহিত্যে মামুন হোসাইন, প্রবন্ধে অধ্যাপক মাহবুবুল হক, গবেষণায় রফিকুল্লাহ খান, অনুবাদসাহিত্যে আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যে কামরুল ইসলাম ভূঁইয়া ও সুরমা জাহিদ, ভ্রমণ কাহিনীতে শাকুর মজিদ, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে মোশতাক আহমেদ, নাটকে মলয় ভৌমিক এবং শিশুসাহিত্যে ঝর্নাদাশ পুরকায়স্থ।
(৩) কবি বেলাল চৌধুরীর প্রয়াণ

গত ২৪ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি বেলাল চৌধুরী। সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৪ সালে তিনি একুশে পদক পেয়েছিলেন। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছিলেন ১৯৮৪ সালে।
‘স্থিরজীবন ও নিসর্গ’-এর কবি বেলাল চৌধুরীর ‘যাবজ্জীবন সশ্রম উল্লাস’ শেষে যেন তাঁর অন্তর্ধান ‘নিষাদ প্রদেশে’। এসবই তাঁর কাব্যগ্রন্থের নাম! নিভৃতচারী ও নিম্নকণ্ঠ অথচ অনন্য স্বাতন্ত্র্যের অধিকারী কবি বেলাল চৌধুরীর সাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতির প্রায় সমান পরিচিতি অসাধারণ একজন সজ্জন ও পরোপকারী ব্যক্তিত্ব হিসেবে। তাঁর রচনা যে পড়েছে, সে তাঁকে যেমন মনে রাখবে, তেমনই যে একবার তাঁর সাথে পরিচিত হয়েছে, সে তাঁকে মনে রাখবে তাঁর সারল্য, হৃদয়ের উষ্ণতা, অনাবিল হাসি ও উপকারী স্বভাবের জন্য।
তথ্যসূত্র: ১) কবি বেলাল চৌধুরীর প্রয়াণ
২) ‘নিষাদ প্রদেশে’ কবি বেলাল চৌধুরী
(৪) কথাসাহিত্যিক আফসার আমেদের মৃত্যু

২০১৮ সালের ৩ আগস্ট ২৭টি উপন্যাস ও ১৪টি অন্যান্য বইয়ের রচয়িতা এবং সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক আফসার আমেদ কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ২০০২ সালে তার লেখা ‘ধান জ্যোৎস্না’ উপন্যাস নিয়ে মৃণাল সেন তৈরি করেছেন ‘আমার ভুবন’ সিনেমাটি।
তথ্যসূত্র:
১) চলে গেলেন কথা সাহিত্যিক আফসার আমেদ
২) আফসার আমেদ: এক নিখোঁজ লেখকের কিস্সা
৩) আফসার আমেদ : এক অনন্য কথাকার
(৫) চলে গেলেন নোবেলজয়ী ভি এস নাইপল

১১ আগস্ট ত্রিনিদাদে জন্মগ্রহণকারী নোবেল পুরস্কারজয়ী ব্রিটিশ সাহিত্যিক স্যার ভিএস নাইপল লন্ডনের নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮৫ বছর বয়স।
১৯৩২ সালের ১৭ অগাস্ট জন্মগ্রহণ করেন নাইপল। পড়াশোনা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। মাত্র ২৫ বছর বয়সে দা মিসটিক মেজার নামে প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত করেন। প্রচুর উপন্যাস লিখেছেন তিনি। নাগরিক জীবনের অন্ধকারময়দিকগুলি তাঁর লেখনীতে বারবার ফিরে এসেছে।
লন্ডনের এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লেখকের স্ত্রী নাদিরা নাইপল বলেছেন, সৃজনশীলতার জগতে বসবাস করতেন তাঁর স্বামী। নিরলস তাই করে গেছেন। ২০০১ সালে সাহিত্যে নোবেল পান ভি. এস. নইপাল।
স্যার বিদ্যাধর সূর্যপ্রসাদ নাইপল ১৯৩২ সালের ১৭ আগস্ট ত্রিনিদাদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে অধ্যয়ন করেছেন। ইংল্যান্ডে স্থায়ী হলেও সারা দুনিয়াব্যাপী ঘুরে বেড়িয়েছেন নাইপল।
এক একটি দেশ ঘুরেছেন আর লিখেছেন কালজয়ী এক একটি সাড়াজাগানো বই। ২০১৬ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসব ‘ঢাকা লিটারেরি ফেস্টিভ্যাল’-এর ষষ্ঠ পর্বে অংশ নিতে বাংলাদেশেও এসেছিলেন ব্রিটিশ লেখক ভি এস নাইপল।
নোবেলজয়ী এই লেখক ৩০টিরও বেশি বই লিখেছেন। ১৯৭১ সালে বুকার পুরস্কার এবং ২০১১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান ব্রিটিশ এই লেখক। ‘এ হাউস ফর মি. বিশ্বাস’, ‘এ বেন্ড ইন দ্য রিভার’, ‘অ্যামং দ্য বিলিভার্স’, ‘দি অ্যানিগমা অব অ্যারাইভাল’ ভি এস নাইপলের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম।
তথ্যসূত্র: ১)চলে গেলেন নোবেলজয়ী ঔপন্যাসিক ভি এস নাইপল
(৬) নোবেলের পরিবর্তে নিউ একাডেমি প্রাইজ :

যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগে এবছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার স্তগিদ করা হলেও এর বিকল্প হিসেবে প্রদান করা হয়েছে ‘নিউ একাডেমি প্রাইজ’। ফ্রান্সের জনপ্রিয় লেখক ও বিখ্যাত সেগু উপন্যাসের লেখক ম্যারিস কোনডে এ পুরস্কার লাভ করেন। এদিকে সংক্ষিপ্ত তালিকা ঘোষিত হওয়ার পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর মুরাকামি নিউ একাডেমিকে সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে তার নাম প্রত্যাহারের আবেদন জানান।
শুধুমাত্র এ বছরের জন্য এই পুরস্কারের আয়োজন করছে সুইডেনের প্রায় শতাধিক লেখক, অভিনয়শিল্পী এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘নিউ একাডেমি’। এই দিক থেকে বলা যায় এটি জনগণের পক্ষ থেকে দেয়া পুরস্কার।
তবে এ পুরস্কারের শর্ট লিস্টে স্থান পাবার পর সেখান থেকে নিজের নাম প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন বিখ্যাত জাপানী লেখক হারুকি মুরাকামি।
চলতি বছরের মে মাসে সুইডিস একাডেমি সাহিত্যে নোবেল না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলো।
‘নিউ একাডেমি প্রাইজ’-এর বিজয়ী নির্বাচন আর নোবেল পুরস্কারের বিজয়ী নির্বাচনের মধ্যে বেশ তফাৎ রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ‘নিউ একাডেমি’ থেকে লেখক মনোনয়ন করার জন্য সুইডেনের সকল গ্রন্থাগারকে বলা হয়। বিশ্বের যে কোন স্থানের লেখক মনোনয়ন পেতে পারেন—তবে শর্ত হলো, তাদের কমপক্ষে দুটি প্রকাশিত বই থাকতে হবে যার মধ্যে একটি গত ১০ বছরে প্রকাশিত হয়েছে।
একাডেমি থেকে আরো বলা হয়—এমন একজনকে মনোনয়ন দিতে হবে, যার লেখায় মানুষের কথা প্রতিফলিত হয়েছে। আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছানুসারে লেখা ও লেখককে সম্মানিত করার উদ্দেশ্যে ‘নিউ একাডেমি’ এমন একজন লেখকের সন্ধান করছে।
প্রথম পর্যায়ে সুইডিশ বিভিন্ন গ্রন্থাগার থেকে প্রস্তাবিত নাম বাছাই করে সারাবিশ্বের পাঠকদের উদ্দেশ্যে প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হয়। এরপর পাঠকদের ভোটেই নির্বাচিন করা হয় চারজনের সংক্ষিপ্ত তালিকা। প্রাথমিক তালিকায় ছিলেন তিন কানাডীয় নারী লেখক মার্গারেট অ্যাটউড, অ্যান কারসন এবং কিম থুয়ে, ভারতের অরুন্ধতী রায়, জাপানের হারুকি মুরাকামি, কেনিয়ার নগুগি ওয়া থিয়ংগো সহ যুক্তরাষ্ট্রের মোট ১৩ ও সুইডেনের ১২ জন লেখক।
দ্বিতীয় ধাপে পাঠকদের ভোটে সংক্ষিপ্ত তালিকায় যারা স্থান পেয়েছেন, তারা হলেন— ফ্রান্সের জনপ্রিয় লেখক ও বিখ্যাত সেগু উপন্যাসের লেখক ম্যারিস কোনডে, ব্রিটিশ লেখক নীল গাইমান, ভিয়েতনামে জন্মগ্রহণকারী কানাডিয়ান লেখক কিম থুয়ে এবং জাপানের হারুকি মুরাকামি।
কিন্তু সংক্ষিপ্ত তালিকা ঘোষিত হওয়ার পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর মুরাকামি নিউ একাডেমিকে তার নাম প্রত্যাহারের আবেদন জানান। যে কারণে সংক্ষিপ্ত তালিকায় বর্তমানে রয়েছেন তিনজন— কোনডে, গাইমান ও কিম থুয়ে।
নাম প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়ে মুরাকামি বলেছেন, ‘সাহিত্যের নোবেলের বিকল্প হিসেবে নিউ একাডেমি প্রাইজকে আমি সমর্থন করছি না। এছাড়া মিডিয়ার মনযোগ থেকে দূরে থেকে আমার লেখাতেই বেশি মনোনিবেশ করতে চাই।’
আগামী ১২ অক্টোবর ‘নিউ একাডেমি প্রাইজ’ বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে। আর পুরস্কারটি প্রদান করা হবে চলতি বছরের ১১ ডিসেম্বর। সেদিনের পরপরই বিলুপ্ত হবে ‘নিউ একাডমি’ নামের অলাভজনক প্রতিষ্ঠানটি। তবে, ২০১৯ সালে একইসাথে সুইডিশ একাডেমি ঘোষণা করবে ২০১৮ ও ২০১৯ সালের সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীর নাম।
প্রসঙ্গত, এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার না দেওয়া এবং সুইডিস একাডেমির সংকটের মূল হোতা ফরাসি আলোকচিত্রী জাঁ ক্লোদ অ্যারানাল্ট। চলতি বছরের শুরুর দিকে সুইডিশ একাডেমি থেকে পদত্যাগ করা ছয় সদস্যের একজন কবি ক্যাটরিনা
ফ্রসটেনসনের স্বামী তিনি। তার বিরুদ্ধে একাডেমির কর্মকর্তা, সদস্যদের আত্মীয়সহ একাধিকজনকে যৌন নিপীড়ন ও হয়রানির অভিযোগ ওঠে।
অ্যারানাল্টের বিরুদ্ধে এই যৌন নিপীড়নের খবর প্রথম প্রকাশ করে সুইডেনের একটি সংবাদপত্র। এ পদত্যাগের ঢলে ২৩০ বছরের পুরনো এই প্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক কার্যক্রমে বড় ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।
সুইডিশ একাডেমির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১৯০১ সালে নোবেল পুরস্কার চালুর পর থেকে এ পুরস্কার ঘিরে এটাই সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি। যে কারণে জনমনে আস্থার ঘাটতি থেকেই তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অবশ্য একাডেমির কয়েকজন সদস্য যুক্তি দিয়ে বলেছেন, ঐতিহ্য ধরে রাখা উচিত ছিল। কিন্তু অন্যদের মত হচ্ছে— একাডেমি পুরস্কার দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই।
অভিযোগ প্রকাশের পর একাডেমির স্থায়ী সেক্রেটারি সারা ডানিয়াস বলেন, অ্যারানাল্টের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছে। একাডেমির স্টাফ ও সদস্যদের আত্মীয়রাও অ্যারানাল্টের ‘অনিচ্ছাকৃত অন্তরঙ্গতা’র শিকার হন।
তথ্যসূত্র: ১)নোবেলের পরিবর্তে ‘নিউ একাডেমি প্রাইজ’
(৭) পেন ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেসে বাংলাদেশ প্রতিনিধি :

২৫ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর ভারতের পুনেতে লেখক, ব্লগার ও সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন পেন ইন্টারন্যাশনালের ৮৪তম কংগ্রেসে যোগ দেন পেন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট, কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি জেনারেল, কথাসাহিত্যিক মুহাম্মদ মহিউদ্দিন। এতে নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিকসহ বিশ্বের প্রায় ১৪০টি শাখার খ্যাতিমান সাহিত্যিক ও সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। কংগ্রেসে পেন বাংলাদেশ প্রতিনিধি বাংলাদেশের কথাসাহিত্য ও সিভিল সোসাইটি প্রজেক্টের আওতায় রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন।
পেন ইনটারন্যাশনাল সম্পর্কে জানতে:
১) ওয়েব সাইট
২) উইকি থেকে
তথ্যসূত্র: পেন ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস : যোগ দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রতিনিধি
(৮) যৌন নিগ্রহের পটভূমিতে লেখা উপন্যাসের ‘ম্যান বুকার’ জয়

প্রথমবারের মতো ‘ম্যান বুকার’ পুরস্কার-২০১৮ জিতেছেন উত্তর আয়ারল্যান্ডের লেখক আনা বার্নস। ‘মিল্কম্যান’ নামে উপন্যাস লিখে তিনি এই অসামান্য পুরস্কার পেলেন। পুরস্কারের অর্থ হিসেবে তিনি পাচ্ছেন ৫০ হাজার পাউন্ড।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনে এবারের ‘ম্যান বুকার’ পুরস্কার বিজয়ী আইরিশ লেখক আনা বার্নসের নাম ঘোষণা করা হয় বলে জানিয়েছে ‘দ্য গার্ডিয়ান’। ‘মিল্কম্যান’ উপন্যাসে প্রভাবশালী এক ব্যক্তির যৌন হেনস্তার শিকার এক তরুণীর জীবনসংগ্রাম চিত্রায়িত হয়েছে। গবেষণামূলক ‘মিল্কম্যান’ আনা বার্নসের তৃতীয় উপন্যাস।
Eprothom Aloবুকারের বিচারকদের প্রধান কোয়ামি অ্যান্থনি অ্যাপিহার ভাষ্যমতে, অজ্ঞাতপরিচয় ১৮ বছর বয়সী তরুণীর বর্ণনায় বার্নসের তৃতীয় উপন্যাস রচিত হয়েছে। যে তরুণী ‘মিডিল সিস্টার বা মেজো বোন’ হিসেবে পরিচিত। সেই তরুণী আধাসামরিক বাহিনীর এক বয়স্ক ব্যক্তির শিকারে পরিণত হন।
দার্শনিক কোয়ামি অ্যান্থনি অ্যাপিহা বলেন, ‘আমদের কেউই এর আগে এই ধরনের লেখা পড়েননি। সম্পন্ন স্বতন্ত্র ঢঙে মোহনীয় ও বিস্ময়কর গদ্য লিখে প্রচলিত ধারাকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন আনা বার্নস।’
অ্যান্থনি অ্যাপিহা বলেন, ‘এটি নিষ্ঠুরতার গল্প, যেখানে তীব্র হাস্যরসের সঙ্গে যৌন আক্রমণ ও প্রতিরোধের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। “মিল্কম্যান”-এর মতো প্রতারণাপূর্ণ নিপীড়নের ঘটনা প্রত্যেকের জীবনেই ঘটতে পারে।’
৫৬ বছর বয়সী আনা বার্নস উত্তর আয়ারল্যান্ডের রাজধানী বেলফেস্টে ১৯৬২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর রচিত অন্য দুটি উপন্যাস হলো ‘নো বোনস’ (২০০১) ও ‘লিটিল কনস্ট্রাকশনস’ (২০০৭)।
যুক্তরাজ্য প্রতিবছর সাহিত্যে ‘ম্যান বুকার’ পুরস্কার দেয়। ইংরেজি ভাষায় লেখা সেরা মৌলিক উপন্যাসের জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়। ১৯৬৯ সাল থেকে এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।
তথ্যসূত্র:
১) প্রথমবারের মতো ‘ম্যান বুকার’ পুরস্কার জিতলেন উত্তর আয়ারল্যান্ডের লেখক
২) ম্যান বুকার জয়ী আনা বার্নসের সাক্ষাৎকার
৩) ম্যান বুকার পুরস্কার জিতলেন আইরিশ লেখক আনা বার্নস
৪) যৌন নিগ্রহের পটভূমিতে লেখা উপন্যাসের ‘ম্যান বুকার’ জয়
(৯) প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো ‘ঢাকা অনুবাদ উৎসব’:

২৬ অক্টোবর বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম 'ঢাকা ট্রান্সলেশন ফেস্ট'। উদ্বোধনী পর্বে বাংলাদেশের সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং ভারতের এস সি নারুলাকে 'ঢাকা ট্রান্সলেশন ফেস্টিভ্যাল পুরস্কার ২০১৮' প্রদান করা হয়। দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন দেশ ও দেশের বাইরের ১৭০ জন কবি, কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক।
তথ্যসূত্র:
১) প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো ‘ঢাকা অনুবাদ উৎসব’
(১০) অষ্টমবারের মতো ঢাকা লিট ফেস্ট অনুষ্ঠিত:

৮ নভেম্বর বাংলা একাডেমি চত্বরে শুরু হয় তিন দিনব্যাপী অষ্টম ঢাকা লিট ফেস্ট। অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিদেশি অতিথিদের মধ্যে এবার অংশ নেন পুলিৎজার বিজয়ী মার্কিন সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ অ্যাডাম জনসন, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক ও কলামিস্ট মোহাম্মদ হানিফ, ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক ফিলিপ হেনশের, বুকার বিজয়ী ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক জেমস মিক, ভারতীয় জনপ্রিয় লেখিকা জয়শ্রী মিশরা, লন্ডন ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব রাইটিংয়ের পরিচালক ও কথাসাহিত্যিক রিচার্ড বিয়ার্ড, ভারতীয় লেখিকা হিমাঞ্জলি শংকর, শিশুতোষ লেখিকা মিতালি বোস পারকিন্স, ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল এশিয়ার প্রধান হুগো রেস্টল, মার্কিন সাংবাদিক প্যাট্রিক উইন, লেখক ও সাংবাদিক নিশিদ হাজারি। বাংলাদেশের সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য সবচেয়ে বড় চমক হিসেবে ছিলেন ভারতীয় লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকা লিট ফেস্টে যোগ দেন অস্কার বিজয়ী অভিনেত্রী টিলডা সুইন্টন। তারকাদের তালিকায় এবার ছিলেন বলিউড কাঁপানো অভিনেত্রী মনীষা কৈরালা। লিট ফেস্টে প্রকাশিত আত্মজীবনী নিয়ে তিনি কথা বলেন। এসেছিলেন অভিনেত্রী ও অ্যাক্টিভিস্ট নন্দিতা দাস। নারী অধিকার, অভিনয় জীবন ও বহুল আলোচিত হ্যাশট্যাগ মি টু আন্দোলন নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে প্রদর্শিত ‘মান্টো’ সিনেমার প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশের প্রায় দেড়শ’ লেখক, অনুবাদক, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ। এদের মধ্যে রয়েছেন ড. আনিসুজ্জামান, আফসান চৌধুরী, আসাদুজ্জামান নূর, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, কামাল চৌধুরী, আসাদ চৌধুরী, ফকরুল আলম, ইমদাদুল হক মিলন, মঈনুল আহসান সাবের, আলী যাকের, সেলিনা হোসেন, শামসুজ্জামান খান, আনিসুল হক, কায়সার হক, খাদেমুল ইসলাম, অমিতাভ রেজা, মুন্নী সাহা, শাহনাজ মুন্নী, নবনীতা চৌধুরীসহ আরও অনেকে।
তথ্যসূত্র:
১)ঢাকা লিট ফেস্টের অষ্টম আসর শুরু হচ্ছে কাল থেকে
২)পর্দা উঠল ঢাকা লিট ফেস্টের
৩) ঢাকা লিট ফেস্টের অষ্টম আসর শুরু
৪)ঢাকা লিট ফেস্ট নজরে এসেছে আন্তর্জাতিক সাহিত্য মহলের
৫) কেন এই লিট ফেস্ট?
(১১) জেমকন সাহিত্য পুরস্কার-২০১৮

৯ নভেম্বর লিট ফেস্টের দ্বিতীয় দিন বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনের সবচেয়ে বড় সম্মাননা ‘জেমকন সাহিত্য পুরস্কার-২০১৮’ ঘোষণা করা হয়। ‘ডুগডুগির আসর’ উপন্যাসের জন্য কথাসাহিত্যিক প্রশান্ত মৃধাকে ‘জেমকন সাহিত্য পুরস্কার-২০১৮’, 'সোনাইলের বনে' শিরোনামের ছোটগল্পের পাণ্ডুলিপির জন্য তরুণ লেখক হামিম কামালকে ‘জেমকন তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কার-২০১৮’ ও 'দিল নিলামের হাট' কাব্যগ্রন্থের পাণ্ডুলিপির জন্য হাসান নাঈমকে ‘জেমকন তরুণ কবিতা পুরস্কার-২০১৮’ প্রদান করা হয়।
তথ্যসূত্র:
১)জেমকন সাহিত্য পুরস্কার পেলেন প্রশান্ত মৃধাসহ তিন লেখক
২) জেমকন সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত বই সমূহ
(১২) কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর প্রয়াণ:

২৫ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে দক্ষিণ কলকাতার মুকুন্দপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। উলঙ্গ রাজা তাঁর অন্যতম বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থ লেখার জন্য তিনি ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।
তথ্যসূত্র:
১)প্রয়াত কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
২)যিশু-জন্মদিনে প্রয়াত ‘কলকাতার যিশু’-রচয়িতা
(১৩)বইমেলা ২০১৮ তে বেশি বিক্রিত বই:

মেলায় প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে তাম্রলিপি থেকে মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা কিশোর উপন্যাস ‘সাইক্লোন’, সময় থেকে প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী 'ত্রাটিনা' ও পার্ল থেকে 'তবুও টুনটুনি তবুও ছোটাচ্চু' বই তিনটি রয়েছে বিক্রির তালিকার শীর্ষে। তালিকায় রয়েছে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘কারাগারের রোজনামচা’। এছাড়া নতুন মোড়কে এসেছেন হুমায়ূন আহমেদের বিভিন্ন সংকলন গ্রন্থ।
ইন্তামিন প্রকাশনী থেকে সদ্য প্রয়াত কথাসাহিত্যিক শওকত আলীর শেষ বই 'শুধু কাহিনী' পাঠকদের টানছে বেশ। এছাড়া পার্ল থেকে প্রকাশিত সাকিব আল হাসানের ‘হালুম’ ও তাম্রলিপি থেকে হুমায়ূন আহমেদের ১ম স্ত্রী গুলতেকিন খানের প্রথম উপন্যাস ‘চৌকাঠ’ এবং আয়মান সাদিকের ‘নেভার স্টপ লার্নিং’ রয়েছে বেশি বিক্রি হওয়া বইয়ের তালিকায়।
মেলায় বেস্ট সেলার বইয়ের ব্যাপারে পার্ল পাবলিকেশন্সের স্বত্বাধিকারী হাসান জাহেদী তুহিন বাংলানিউজকে বলেন, এবারের বেস্ট সেলার বইগুলো দেখে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, পাঠকের রুচির পরিবর্তন হচ্ছে। তারা উপন্যাস যেমন পড়ছেন, আবার ভ্রমণের মতো মননশীল বিষয়েও ঝুঁকছেন।
মেলায় ভালো বিক্রি হওয়া বইগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে- বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘ইংরেজি থেকে বাংলা অভিধান’ ও ‘ব্যবহারিক বাংলা অভিধান’, ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত রাফিক হারিরির ‘ওমর’, বুলবুল সরওয়ারের ‘মহাভারতের পথে ১ ও ২’, দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের ‘নায়ক’, মোজাফফর হোসেনের গল্পগ্রন্থ 'খুন হয়ে যাচ্ছে সব সাদেক',
তাছাড়া সুমন্ত আসলামের ‘স্পর্শের বাইরে’, ইমদাদুল হক মিলনের ‘একটি রহস্য উপন্যাস’, ড. মো. আনোয়ার হোসেনের ‘রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার পথচলা’, আনিসুল হকের ‘আলো-আঁধারের যাত্রী’, আসিফ নজরুলের ‘বেকার দিনের প্রেম’ ও গোলাম মুরশিদের ‘বিদ্রোহী রণক্লান্ত নজরুল জীবনী’, মোশতাক আহমেদের ‘ছায়াস্বর্গ’ রয়েছে বেস্ট সেলার বইয়ের তালিকায়।
মেলায় কবিতার বই কম চলে এমনটাই মন্তব্য করতে দেখা যায় অনেককে। তবে তরুণ কবি জুননু রাইন, পিয়াস মজিদ ও ইমরান মাহফুজ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এবারের মেলায় প্রকাশ হয়েছে তাদের কাব্যগ্রন্থ ‘এয়া’, 'নাচ মারবেল ও অনান্য' এবং 'দীর্ঘস্থায়ী শোকসভা'। ইতিমধ্যে এ বইগুলো যথেষ্ট সমাদর পেয়েছে।
তথ্যসূত্র:
১) এবারের বইমেলায় (বইমেলা ২০১৮) বেস্ট সেলার বই কোনটি?
২) যে বইগুলো বেশি চলছে এবার
৩)রকমারি সালতামামি ২০১৭-বেস্ট সেলার ১০ ক্যাটেগরি
৪) রকমারি ডটকমে বিক্রির শীর্ষে যে ১০ ইসলামি বই
সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। গুণীদের রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার দায়িত্ব আমাদেরই। আমরা স্বপ্ন দেখি আমাদের মধ্য থেকে উঠে আসবে আগামীর নজরুল, ফররুখ, কায়কোবাদ সহ বিশ্বকবিদের মত মানুষেরা। সেই প্রত্যাশায় নতুন দিনে পথচলা।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:০৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




