এইতো সেদিনকার কথা........ আয়েশার সাথে গেলাম এক কাপড়ের দোকানে। ঐ দোকানে এবারই প্রথম। মেয়েদের কাপড় কেনার উদ্দেশ্যে। ওসব কাপড় সাধারণত আয়েশা নিজেই কিনে। দোকানে ছিলো এক মহিলা বিক্রেতা। মহিলার সাথে কথাবার্তা বলে কিছু টাকা কম দেয়ার চেষ্টা করলাম। বললাম, আমি তো আপনার দোকান থেকেই কাপড় কিনি। কিছু কম রাখেন। আর যাবি কই...... মহিলা দেখি আমার চাইতেও চালাক......... "কি যে বলেন ভাই, আপনি তো মাঝে মাঝেই আমার কাছ থেকে কাপড় নেন, এজন্যই তো কম বলে দিছি......" এমন আরো কথা যাতে তিনি বুঝাতে চাইলেন আমি সপ্তাহে কমপক্ষে একবার তার দোকান থেকে ওসব কাপড় কিনি। আমিও তার কথায় হু, হ্যাঁ টাইপের সাঁই দিয়ে যাচ্ছিলাম। আর সেটাই যেন আমার জন্য কাল হলো......... পাশে দাঁড়ানো বউয়ের অগ্নিমূর্তি দেখে আমি তো ভয় পাবার বদলে হেসেই ফেললাম। সেই হাসি যেন কাটা ঘাঁয়ে নুনের ছিটা হলো। বহু কষ্টে তাকে বিশ্বাস করালাম, আমি ঐ দোকানে আগে কখনোই যাইনি.........।
মার্কেটে যাবার আগে ও বলেছিলো অনেক খিদে পেয়েছে। মার্কেট শেষ করে এখন বলছে কোন খিদে নেই........ কি মুশকিল! মনে হচ্ছে আগুনটা নিভলেও ধোয়া উড়ছে। আরেকটু পানি ঢালতে হবে। পানিতে কাজ না হলে বরফও লাগতে পারে। আগেই বরফের ব্যবহারে না গিয়ে ঠান্ডা পানিই ঢাললাম বেশি করে। ব্যাস.......কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুন-ধোয়া সব নিভে পানি। হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। হেড অফিস ঠান্ডা করে যুদ্ধজয়ী বীরের মতো লাগছে নিজেকে। আর কোন ঝামেলা চাইনা।
রেস্টুরেন্টে খাবার শেষ করে বসে আছি। এই রেস্টুরেন্টটাতে এর আগে আরো দুইবার এসেছি ওকে নিয়ে। কোনবারই বখশিশ দেইনি। আমার কথা হলো, ওরা এখানে চাকরি করে বেতন নেই। টাকার বিনিময়ে খাবার দেই। এমনতো নয় যে টাকা ছাড়া খাবার দিচ্ছে, কিছু বখশিশ না দিলে কেমন হয়। সেদিন টাকা নেয়ার সময় খুবই তাড়াহুড়া করছিলো ওয়েটার। মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে দিচ্ছিলাম। মনে হলো ঠিকি দিয়েছি। টাকাটা নিয়ে কাউন্টারে জমা দিতে গিয়ে ফিরে এসে বলে আমি নাকি ২০ টাকা কম দিয়েছি। কি মুশকিল........ কথা না বাড়িয়ে আরো বিশ টাকা বের করে দিলাম। দেয়ার সময় বললো, "হুজুররা এরকমই...........।" কথাটা আমি স্পষ্ট শুনলাম। আয়েশা একটু সামনে ছিলো বিদায় পুরোপুরি শুনেনি। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় বললো, "কি বললো ঐ বেটা"। আমার কথা শুনে ও তো ওয়েটারকে মারতে যাবে মনে হলো। কোনমতে ওকে থামিয়ে বললাম, "বাদ দাও তো।" মনে হলো স্বামীর জন্য কত দরদ........ যে কিনা একটু আগে আমার উপর রেগে ছিলো, তার এমন ভালোবাসা দেখে মনটা সত্যিই ফুরফুরে হয়ে গেলো।
১. এই ছবিটা আয়েশার ছোটবেলার। এই একটা ছবিই পেয়েছি। ওর মা বলে, ছোট বেলায় নাকি খুব বেশি লিপস্টিক দিতো। আয়েশা যখন রাগ করে তখন এই ছবিটা মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে দিয়ে বলি, "আমার লিপস্টিক খাওয়া পিচ্চি বউ"। আর তখনই ও হাসে। (বি:দ্র: এই ট্রিক্স শুধুমাত্র দূরে থাকলে কার্যকরী।)
২. মেয়েটি যে কি পাগলামি করে....... সেদিন দেখি Rapping পেপারে মোড়ানো একটা প্যাকেট আমার হাতে দিচ্ছে। এটাই প্রথম নয়। ও এর আগেও দিয়েছে.......। আমি যে খরচের টাকা দেই সেখান থেকেই বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে এসব করে।
৩. আমার কাছে তার চাওয়াটা খুবই অল্প। কত কত জিনিস আছে খাবার, সেগুলো বাদ দিয়ে এই ছবিটা পাঠিয়েছে আমাকে নেয়ার জন্য। খুব নাকি খেতে ইচ্ছে করছে। বার্গার-পিৎজা, আরো কত খাবার আছে সেগুলো খেতে চাইবে না...... বড়জোর আইসক্রিম, চিপস। দুইটা ড্রিংকো কিনেও রেখেছি ওর জন্য। বাড়িতে যাবার সময় নিয়ে যাবো।
৪. ছবিটা এবারের শীতের। শীতে ছুটিতে যখন গ্রামে গেলাম তখনকার। বিকেলবেলা হাটতে বেড়িয়েছিলাম আয়েশাকে নিয়ে। সরিষা খেতে এসে একটু ফিল্মি স্টাইলে প্রেম নিবেদন করতে মন চাইলো। যেই ভাবা সেই কাজ। সরিষা ফুল হাতে নিয়েই কাজটা সারলাম। ছবিতে দেখতেই পাচ্ছেন, আয়েশা অবাক হওয়ার ভঙ্গি করছে। ছবির ক্যাপচার যে করেছে তিনি আমার চাচাতো বোন। তাকে এতো করে বললাম লুঙ্গি না তোলার জন্য........ কিন্তু সেটাই করেছে! ছবি তোলার পর দেখি হাতের সরিষা ফুল আর খেতের সরিষার ফুল মিলে মিশে একাকার..........
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৯ ভোর ৬:৩৬