২০০১ থেকে ২০০৮ সাল।
সময়টা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ছাত্রজীবনের সবচেয়ে বেশি সময় পার করতে হয় হাই স্কুলে। প্রইমারী কিংবা ভার্সিটির স্যারদের থেকে হাই স্কুলের স্যারদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে বেশি। সবার ক্ষেত্রেই সম্ভবত এমনটি হয়। আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। পড়াশুনা করেছি স্থানীয় একটি দাখিল মাদ্রাসায়। ক্লাস ফোর থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত। মাদ্রাসায় পড়ার সময়টাতে পরিচয় হয় এক সুশ্রী ম্যাডামের সঙ্গে। অন্যান্যদের তুলনায় আমার সাথে স্যারদের সম্পর্ক একটু বেশিই ভালো ছিল। ব্যবহারে নম্র-ভদ্র (নিজের ঢোল নিজেই পিটাই.. ) আর ক্লাসের ফার্স্ট বয় হওয়াতে ম্যাডামদের সাথেও সম্পর্ক ছিল বেশ ভালো।
যে ম্যাডামের কথা বলছি তিনি আমাদের সায়েন্স পড়াতেন।
ক্লাস নাইন-টেনে সায়েন্স পড়ার কারণে ম্যাডামের ক্লাস পেয়েছি। ম্যাডামের বুঝানোর স্টাইল যা ছিল তার বর্ণনা দিতে গেলে একটা মহাকাব্য রচনা করে ফেলা যাবে। রিডিং দেখে দেখে পড়তেন আর বলতেন বুঝছো? আমরাও সুবোধ বালকের মতো বলতাম বুঝছি.. । ফলাফল সায়েন্স ভীতি তৈরী হয় আমার মাঝে। সায়েন্সের ভিত্তি এতটাই নড়বড়ে হয় যে সেই ভিত্তির উপর টিনের ঘর তো দূরের কথা ছনের ঘরও টিকবে না। রিখটার স্কেলের ১ মাত্রার ভূমিকম্পে সেই ঘর ধ্বসে পরতে বাধ্য.. । অবশ্য নিজের প্রচেষ্টায় আর ছোট চাচার সহযোগিতায় পাঠ্য বই ভালোই দখলে নিয়েছিলাম।
এসএসসি (দাখিল) পাস করি ২০০৮ সালে।
মোবাইল ফোন তখনো সবার হাতে হাতে পৌঁছেনি। আমার হাতে মোবাইল পেয়েছি ২০১০ সালের পর। স্যার-ম্যাডামদের কারোর নাম্বারই আমার জানা ছিলো না। অবশ্য আমাদের প্রধানশিক্ষক যিনি ছিলেন তাঁর নাম্বার আমার মুখস্থ ছিলো। এখনো আছে।
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ের কথা বলছি।
ফেসবুকে হঠাৎ একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পেলাম। আমার সেই ম্যাডামের নাম দেখে রিকুয়েস্ট একস্পেট করলাম। রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করার পরপরই ম্যাডামের ম্যাসেজ পেলাম।
-"হাবিব কেমন আছো? আমি তোমাদের ম্যাডাম বলছি। মনে আছে? সেই দাখিলের ম্যাডাম।"
আমি সালাম আর কুশলাদি বিনিময় পর্ব শেষ করে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলাম ম্যাডামের প্রতি। বললাম, আমাকে মনে রাখার জন্য অনেক ধন্যবাদ। সেদিনের কথাবার্তা বেশি লম্বা করিনি।
পরের দিন আবার ম্যাডামের টেক্সট। ভালো-মন্দ জিজ্ঞাসা, কি খেলাম কি করছি, কোথায় আছি, চাকরি বাকরি কেমন চলে ইত্যাদি ইত্যাদি। সব শুনে ম্যাডাম খুব খুশী হলো মনে হচ্ছে। এরপর থেকে নিয়মিতই কথা হতে থাকে ম্যাডামের সাথে। ম্যাডামের হাসব্যান্ডের সাথেও কথা বলিয়ে দেন আমাকে। তিনি আরও আন্তরিকতার সাথে কথা বলেন। ম্যাডামের সাথে কথা হয় প্রতিদিন আর তার স্বামীর সাথে সপ্তাহে একদিন কি দুই সপ্তাহে একদিন।
এক মাস পার হলো এরই মধ্যে।
ম্যাডামের দুই মেয়ে আর এক ছেলে। মেয়ে দুইটা বড়। ম্যাডাম আমাকে মেয়েদের ছবি আর বায়োডাটা দেখিয়ে বললেন হাবিব আমার মেয়েদের জন্য ভালো পাত্রের ব্যবস্থা কইরো তো। মেয়েরা বড় হয়েছে, বিয়ে নিয়ে টেনশনে আছি। তিনি আমাকে পাত্রের কোয়ালিফিকেশনও বললেন। সেই কোয়ালিফিকেশনের সাথে আমি নিজেকে মিলিয়ে দেখলাম ম্যাচ করে কি না। তা দেখলাম ভালোই ম্যাচ কর।.... দুই একটা পাত্র দেখালাম ম্যাডামকে। একদিন মিললে আরেক দিক মিলে না। এভাবেই চলছিলো। ম্যাডামও খোঁজ খবর নেয়া বাড়িয়ে দিলেন আমার। টেক্সেটের রিপ্লাই না দিলে দু:শ্চিন্তা করা, দেরী হলে কৈফিয়ত চাওয়া ইত্যাদি । আমি কিছুটা বিরক্ত হলেও প্রকাশ করি না।
একদিন আমার ছেলের সাথে ফেসবুকে ছবি আপলোড দিলাম।
ছবি দেবার পর ম্যাডামের টেক্সট পেলাম অনেকগুলো। সেসবের সারাংশ যা পেলাম তা হলো আমি বিয়ে করছি সেটা ম্যাডাম জানতেন না। ম্যাডামের টেক্সটগুলোকে বিষন্ন মনে হলো। আমি অবশ্য মিটমিট করে হাসলাম। ম্যাডাম যে আমাকে মনে মনে পাত্র ভেবে রেখেছেন বুঝলাম তখন যখন দেখলাম আর আগের মতো খোঁজ নিচ্ছেন না। কখন কি খেলাম জিজ্ঞেস করছেন না। এখন অবশ্য মাস ছয় হবে কোন কথায় হয় না ম্যাডামের সঙ্গে। ম্যাডামের মেয়ে দুইটা ভালোই সুন্দরী। আমাকে বলেছিলো কি কি দেবে মেয়ের বিয়েতে। সে সব এখন শুধুই স্মৃতি আমার কাছে। আর কোনদিন ম্যাডাম হয়তো খোঁজ নেবেন না। অপরাধ আমি তার মন ভেঙ্গেছি!!
ছবি সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০২১ সকাল ১১:৩০