সারাদেশে করোনার ভয়াল থাবা।
করোনার আগ্রাসন থেকে পিছিয়ে নেই আমাদের গ্রামও। কিন্তু এটি কেউ মানতেই চাচ্ছেন না মনে হয়। মানতে চাচ্ছেন না বলছি তার কারণ হলো হাট কিংবা বাজার চলছে আগের মতোই। স্বাস্থ্যবিধির কোন বালাই নেই। কোন দোকানপাট বন্ধ নেই। বেঁচা-বিক্রি চলছে সাধারন সময়ের মতোই। গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই করোনার উপসর্গ নিয়ে অবস্থান করছেন এমন রোগীর সংখ্যা কম নয়। কোন কোন পরিবারেরর সবাই ঠান্ডা-কাশি-নাকে ঘ্রাণ না পাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ নিয়েই দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। করোনাকে কেউ গোনায় ধরছেন না। দিনে দুই-একবার বাজারে পুলিশের অভিযান চললেও সারাদিন যেই-সেই অবস্থা।এরই মধ্যে গ্রামের অন্তত ১৫ জন মারা গেছেন করোনার উপসর্গ নিয়ে। কেউই করোনা টেস্ট করাননি। সরকারের তালিকায়ও এদের নাম নেই। সুতরাং বললতে হবে সরকার করোনার সঠিক হিসাব পাচ্ছেন না।
আমাদের গ্রামের নাম উত্তর পেকুয়া।
পূর্বে অবশ্য পেকুয়া নাম ছিলো। গ্রামটি বেশ বড় হওয়াই দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি উত্তর পেকুয়া, আরেকটি পেকুয়া নামেই রয়েছে। গ্রামে আমাদের পাড়াকে সবাই মৌলভী বাড়ি নামেই চিনেন। আমার দাদা, তাঁর দাদা, এভাবে কয়েক পুরুষ ধরে বংশে মৌলভী ছিলেন। খুব একটা সম্ভ্রান্ত নয় আমাদের বংশ। সবাই বেশ পরিশ্রম করে জিবিকা নির্বাহ করতেন। আমার দাদা পর্যন্ত সবাই তাঁতের কাজ করতেন। মানে শাড়ি লুঙ্গি গামছা এসব হাতে চালিত তাঁতে বুনতেন এবং স্থানীয় হাটে বিক্রি করতেন। বেশ উন্নত মানের কাপড় বুনলেও দাম পেতেন না তেমন। যা পেতেন তা দিয়ে সংসার আর চলতো না। আমার জন্মের পরও এই তাঁতের কাজ ছিলো কিছু দিন। আমি যখন ক্লাস এইটে, সে সময় থেকেই বাড়িতে তাঁতের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আমার বাবা সহ আর যারা কাপড় বুনতেন তারা সবাই চলে যান দোহারের জয়পাড়ায়। সর্বশেষ ২০০৮ পর্যন্ত দোহারের জয়পাড়াতেই কাজ করতেন বাবা।
আমাদের পরিবারের পুরুষরা ৭০ পেড়িয়েছেন এমন খুব কমই আছে।
আমার ৫ জন চাচাতো দাদা (দাদার ভাই), ৬ চাচাতো চাচা (বাবার চাচাতো ভাই) মারা গেছেন আমার দশ বছরের সময়। এখনো তাদের স্ত্রীরা জীবিত আছেন। আমি বিষয়টা নিয়ে ভাবি মাঝে মাঝে। এই কথা আমি আরিশের আম্মুকেও বলেছি। এমন কথা উঠতেই আয়েশার মন খারাপ হয়ে যায়। আয়েশা বলেন, আমি তোমাকে ছাড়া একদিনও বাঁচতে চাই না। বৃদ্ধ বয়সে তোমাকে কাছে চাই, না হলে দুজনকেই যেন এক সাথে আল্লাহ মরন দেন। আমি বেশি কিছু বলে আর কথা বাড়াই না। শুধু বলি, "আমিন"।
এই দিক থেকে অবশ্য আমার দাদা-দাদী খুবই ভাগ্যবান।
ওনারা দুজনেই মারা গেছেন আমার এসএসসি টেস্ট পরীক্ষার সময়। দাদী মারা যাবার এক সপ্তাহ পর মারা যান আমার দাদা। আমি খুব কেঁদেছিলাম। দাদা-দাদীকে নিয়ে একদিন বিস্তারিত ব্লগ লিখবো আশা আছে। সেই ব্লগে বাকি কথা বলবো।
আল্লাহর কাছে আমি সবসময় চাই আমি-আয়েশা দুজনে যেন এক সাথে বাঁচি অথবা মরন এলে দুজনেই যেন এক সাথে মরতে পারি। আয়েশা ছাড়া একটি দিনও আমি ভাবতে পারি না। আয়েশাও আমাকে ছাড়া অসহায় হয়ে যাবে। আল্লাহ যেন আমাদের প্রার্থনা কবুল করে নেন। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:১৭