somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হারিয়ে যাওয়া "কবি রমেশ শীল "

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন মানুষকে নিয়ে কথা বলা জরুরি হয়ে পরেছে।। আমি জানি, এই মানুষটা সম্পর্কে ধারণা আছে মাত্র কয়েকজনের। লোকটার নাম কবি রমেশ শীল। লোক সঙ্গীত নিয়ে পড়তে গিয়ে এই রমেশ শীলকে আবিষ্কার করলাম।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির মাইজভান্ডারি পীরের আধ্যাত্মিকার ধারার অনুসারীদের গাওয়া
মরমী গান গুলো চট্টগ্রামের প্রায় দেড়শো বছরের পুরোনো। এ ধারার প্রবর্তক সৈয়দ আহমদুল্লাহ
মাইজভান্ডারী।
আজ পর্যন্ত
শতাধিক ভক্ত কবি হাজারের ও বেশি গান রচনা করেছেন। আর এই মাইজভান্ডারি গানের এক অন্যরকম মাত্রা যোগ করে এখনো জনপ্রিয় রমেশ শীলের মরমী দরদী গানগুলো।
এবং এর চেয়ে বড় কথা এই কবি রমেশ শীল একজন প্রতিবাদী স্বাধীনচেতা কবি ও বটে।

কবিগানের অন্যতম রূপকার। কবিগানের লোকায়ত
ঐতিহ্যের সাথে আধুনিক সমাজ সচেতনতার সার্থক
মেলবন্ধন ঘটিয়ে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন
করেছিলেন। তিনি ছিলেন মাইজভান্ডারী গানের
কিংবদন্তি সাধক। জনপ্রিয় এই শিল্পী ভারতের স্বাধীনতা
সংগ্রাম ও বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনে এবং সেই সাথে
১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন পরবর্তী নুরুল আমিন
বিরোধী আন্দোলনে তিনি প্রত্যক্ষ ভাবে অংশ নেন।
জন্ম ও শৈশব
কবিয়াল রমেশ শীল ১৮৭৭ সালে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম
বিভাগের বোয়ালখালি থানার অন্তর্গত গোমদন্ডী
গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম চন্ডীচরণ
শীল। চন্ডীচরণ শীল ছিলেন পেশাতে নাপিত ও
কবিরাজ। কবিয়াল রমেশ শীলের স্কুলজীবন ৪র্থ
শ্রেণীতে অধ্যায়নকালে পিতার মৃত্যুর সাথে সাথে
শেষ হয়ে যায় ও পরিবারের সকল দায়িত্ব এসে পড়ে কবির
কাধে। তার নিজের লেখণীতে রয়েছে,
“ আমিই বালক, চালক,পালক, আমার আর কেহ
নাই। মায়ের অলংকার সম্বল আমারা বিক্রি
করে খাই' ”।।
কবির
দেশাত্মবোধ ছিল সুগভীর – ‘বাংলার জন্য জীবন
গেলে হব স্বর্গবাসি/ আমার বাংলার দাবি ঠিক থাকিবে যদিও হয়
ফাঁসি’।
সংগ্রামী জীবন ও কারাভোগ
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে বাংলাদেশের ১৯৫২
সালের ভাষা আন্দোলন পর্যন্ত কবিয়াল রমেশ শীল
সক্রিয় ভাবে অংশ নেন। তার গণসঙ্গীত দেশের
মানুষদের এই সব সংগ্রামে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। ১৯৫৪
সালে জণগণের ভোটে নির্বাচিত যুক্তফ্রন্ট সরকারকে
ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং নুরুল আমিনকে পূর্ববাংলার গভর্নর
বানানো হয়। এই নুরুল আমীন চট্টগ্রামে এলে
জনগণের কাছে লাঞ্চিত হন। এই নিয়ে তিনি বিখাত একটি
ব্যাঙ্গাত্মক গান রচনা করেন। গানটি হচ্ছে,
“ শোন ভাই আজগুবি খবর
মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন করে চট্টগ্রাম
সফর।
দিনের তিনটা বেজে গেল পল্টনে
সভা বসিল
হায় কি দেখিলাম কি ঘটিল।
মানুষ ভয়ে জড়সড়
হঠাৎ দেখি পচা আণ্ডা
মন্ত্রীকে করিতেছে ঠাণ্ডা।
উড়তে লাগলো কাল ঝাণ্ডা,
মন্ত্রীর চোখের উপর।
বিপ্লবী চট্টগ্রাম গেলা সূর্যসেনের
প্রধান কেল্লা
মন্ত্রী করে তৌব্বা তিল্লা,
করবো না জনমভরে চট্টগ্রাম শহর। ”
এই গানটি এতো জনপ্রিয় পেয়েছিল যে তা সাড়াদেশে
ছড়িয়ে পড়েছিল। এই জন্য তাকে কারাগারে নেওয়া হয়।
সেখানে তিনি এক বছর ছিলেন। এই সময় তার বয়স হয়েছিল
সত্তর বছর এবং তাকে প্রচুর মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে
হয়েছিল। সেই সময় তাকে অঢেল বিত্তবৈভবের লোভ
দেখিয়ে পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত লেখার জন্য
প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখান করেন।
এই প্রলোভনের জবাব দিয়েছিলেন তিনি নিচের কবিতা
দিয়ে,
“ আমার খুনে যারা করেছে মিনার
রক্তমাংস খেয়ে করেছে কঙ্কালসার
আজ সেই সময় নাই ত্বরা ছুটে আসো
ভাই
বেদনা প্রতিকারের সময় এসেছে। ”

জীবদ্দশায় অর্জন করেন কিংবদন্তীর খ্যাতি। এই জীবন দুঃখী কবি
১৯৬৭ সালের ৬ এপ্রিল ৯০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন অনেক
দেরীতে ২০০২ সালে তিনি মরনোত্তর একুশে পদকে
ভূষিত হন। এবং কষ্টের ব্যাপার হলো এই প্রতিবাদী , মরমী গানের স্রষ্টাকে নিয়ে আমাদের ভাবার সময় নেই।।।

তথ্যসূত্র : চট্টগ্রামের পত্রিকা : আজাদী পূর্ব দেশ, লোক সঙ্গীতে চট্টগ্রাম, গাউছুল আজম মাইজভান্ডারি আধ্যাত্মিকতার মরমী গান সমূহ।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:১৩
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×