somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'স্বাধীনতা শব্দটি কিভাবে এলো ' ( ১লা মার্চ থেকে ৭ ই মার্চ )>১৯৭১

০৭ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আলোচনা স্থগিত! !!
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাথে কোন প্রকার আলোচনা না করে অধিবেশন স্থগিত করায় পূর্ব বাংলার জনগণ রাস্তায় নেমে আসে। বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলন ডাক দেন।
স্লোগানে মুখরিত পুরো বাংলা, শিশু থেকে বুড়ো একই স্লোগানে নিমজ্জিত। সবাইরই একটি দাবি বাঙালি তার অধিকার চাই এবং চাই। সেদিন একটি স্লোগানে উজ্জীবিত এই বাংলা,
" তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব, শেখ মুজিব "
" শেখ মুজিবের পথ ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন করো "
" জয় বাংলা "

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উদ্যোগে ২রা মার্চ হরতালের সমর্থনে সেদিন বটতলায় ছাত্রদের বিশাল ছাত্রসমাবেশ হয়। স্লোগানে উত্তাল দেশ। ২ রা মার্চ হরতাল শুরু হয় এবং এই বাংলার মানুষ প্রথম দেখতে পাই তাদের পতাকা।
সবুজের মধ্যে বৃত্তাকার লাল এবং ৫৬ হাজার বর্গমাইলের মানচিত্র।
তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা এবং ডাকসুর ভিপি আ.স.ম আব্দুর রব প্রথম উত্তোলন করেন সেই স্বপ্নের পতাকা।

১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ইয়াহিয়া জাতীয় অধিবেশন আহবান করেন। ভুট্টো অধিবেশনে যোগদান করতে অস্বীকার করার অযুহাতে ইয়াহিয়া ৩ মার্চ অধিবেশন স্থগিত করেন।
১৯৭১ সালের ৩ মার্চ উত্তাল পুরো বাংলা। অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছে , দাবি একটাই বাঙালি তার অধিকার চাই। এই দিন পল্টনে স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রসংগ্রাম পরিষদে নেতৃত্তে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সে সভার কথা গুলো নিচে দেওয়া হল :

১) এইসভা পাকিস্তানী উপনিবেশবাদ শক্তির লেলিয়ে দেওয়া সশস্ত্র সেনাবাহিনী কর্তৃক বাঙালীদের উপর গুলিবর্ষণের ফলে নিহত
বাঙালী ভাইদের বিদেহী আত্মার
মাগফেরাত কামনা করিতেছে এবং শোকসন্তপ্ত
পরিবার পরিজনের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন
করিতেছে এবং পাকিস্তানী উপনিবেশবাদ
শক্তির সেনাবাহিনীর জঘন্য হত্যাকাণ্ডের
প্রতিবাদে প্রতিরোধ আন্দোলন
গড়িয়া তোলার জন্য আহ্বান
জানাইতেছে।
২. এই সভা ভাড়াটিয়া সেনাবাহিনীর গুলিতে আহত স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহনকারী বীর
বাঙালী ভাইদের বাঁচাইয়া রাখার জন্য স্বাস্থ্যবান বাঙালী ভাইদেরকে ব্লাডব্যাঙ্কে রক্ত
প্রদানের আহ্বান জানাইতেছে।
৩. এই সভা পাকিস্তানী উপনিবেশবাদের কবল হইতে মুক্ত হইয়া স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের জন্য
সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি ও নির্ভেজাল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করিয়া স্বাধীন বাংলাদেশে কৃষক-শ্রমিক রাজ কায়েমের শপথ গ্রহন করিতেছে।
৪. এই সভা স্বাধীন বাংলার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে পূর্ণ আস্থা রাখিয়া তাঁহার সফল সংগ্রাম চালাইয়া যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছে।
৫. এই সভা দলমত নির্বেশেষে বাংলার প্রতিটি নরনারীকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রাম চালাইয়া যাওয়ার আহ্বান জানাইতেছে।
জয় বাংলা

ইশতেহার নং/ এক
(স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশের ঘোষণা ও কর্মসূচী)
স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ
ঘোষণা করা হয়েছে :
গত তেইশ বছরের শোষণ, কুশাসন ও
নির্যাতন
এ'কথা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত
করেছে যে, সাত
কোটি বাঙালীকে গোলামে পরিণত
করার জন্য
বিদেশী পশ্চিমা উপনিবেশবাদীদের
যে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র
তা থেকে বাঙালীর মুক্তির
একমাত্র পথ স্বাধীন
জাতি হিসেবে স্বাধীন দেশের
মুক্ত নাগরিক হয়ে বেঁচে থাকা। গত
নির্বাচনের গণরায়কে বানচাল
করে শেষবারের
মতো বিদেশী পশ্চিমা শোষকেরা সে কথার
প্রয়োজনীয়তা হাড়ে হাড়ে প্রমাণ
করেছে।
৫৪ হাজার ৫ শত ৬ বর্গমাইল বিস্তৃত
ভৌগলিক এলাকায় ৭
কোটি মানুষের জন্য আবাসিক
ভূমি হিসেবে স্বাধীন ও সার্বভৌম
এ'রাষ্ট্রের নাম "বাঙলাদেশ"।
স্বাধীন ও সার্বভৌম "বাঙলাদেশ"
গঠনের মাধ্যমে নিম্নলিখিত
তিনটি লক্ষ্য অর্জন করতে হবে।

(১) স্বাধীন ও সার্বভৌম
"বাঙলাদেশ" গঠন করে পৃথিবীর
বুকে একটি বলিষ্ঠ
বাঙালী জাতি সৃষ্টি ও বাঙালীর
ভাষা, সাহিত্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির
পূর্ণ বিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।

(২) স্বাধীন ও সার্বভৌম
"বাঙলাদেশ" গঠন
করে অঞ্চলে অঞ্চলে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে বৈষম্য
নিরসনকল্পে সমাজতান্ত্রিক
অর্থনীতি চালু করে কৃষক, শ্রমিক
রাজ কায়েম করতে হবে।

(৩) স্বাধীন ও সার্বভৌম
"বাঙলাদেশ" গঠন করে ব্যক্তি, বাক ও
সংবাদপত্রের স্বাধীনতাসহ
নির্ভেজাল গণতন্ত্র কায়েম
করতে হবে।
বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলন
পরিচালনার জন্য নিম্নলিখিত
কর্মপন্থা গ্রহণ করতে হবে :

(ক) বাঙলাদেশের প্রতিটি গ্রাম,
মহল্লা, থানা, মহকুমা, শহর, জেলায়
'স্বাধীনতা সংগ্রাম কমিটি গঠন
করতে হবে।

(খ) সকল শ্রেণীর জনসাধারণের
সহযোগিতা কামনা ও তাদের
ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।

(গ) শ্রমিক এলাকায় শ্রমিক ও
গ্রামাঞ্চলে কৃষকদের সুসংগঠিত
করে গ্রামে গ্রামে, এলাকায়
এলাকায় 'মুক্তিবাহিনী' গঠন
করতে হবে।

(ঘ) হিন্দু-মুসলমান ও বাঙালী-
অবাঙালী সাম্প্রদায়িক মনোভাব
পরিহার
করতে হবে এবং সম্প্রীতি বজায়
রাখতে হবে।

(ঙ)
স্বাধীনতা সংগ্রামকে সুশৃংখলার
সাথে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য
পারস্পরিক যোগাযোগ
রক্ষা করতে হবে এবং লুঠতরাজসহ
সকল প্রকার সমাজবিরোধী ও
হিংসাত্মক কার্যকলাপ বন্ধ
করতে হবে।

স্বাধীনতা আন্দোলনের
ধারা নিম্নরূপ হবে :
(অ) বর্তমান
সরকারকে বিদেশী উপনিবেশবাদী শোষক
সরকার গণ্য করে বিদেশী সরকারের
ঘোষিত সকল
আইনকে বেআইনী বিবেচনা করতে হবে।

(আ) তথাকথিত পাকিস্তানের
স্বার্থের
তল্পীবাহী পশ্চিমা অবাঙালী মিলিটারীকে বিদেশী ও
হামলাকারী শত্রু সৈন্য
হিসেবে গণ্য করতে হবে এবং এ
হামলাকারী শত্রুসৈন্যকে খতম
করতে হবে।

(ই) বর্তমান
বিদেশী উপনিবেশবাদী শোষক
সরকারকে সকল প্রকার ট্যাক্স-
খাজনা দেয়া বন্ধ করতে হবে।

(ঈ) স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদের
উপর আক্রমণরত যে কোন
শক্তিকে প্রতিরোধ, প্রতিহত,
পাল্টা আক্রমণ ও খতম করার জন্য সকল
প্রকার সশস্ত্র প্রস্তুতি নিতে হবে।

(উ) বৈজ্ঞানিক ও
গণমুখী দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে সকল প্রকার
সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।

(ঊ) স্বাধীন সার্বভৌম
বাঙলাদেশের জাতীয় সংগীত
হিসেবে 'আমার সোনার
বাঙলা আমি তোমায়
ভালবাসি......' গানটি ব্যবহৃত হবে।

(ঋ) শোষক রাষ্ট্র পশ্চিম
পাকিস্তানী দ্রব্য বর্জন
করতে হবে এবং সর্বাত্মক অসহযোগ
আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

(এ)
উপনিবেশবাদী পাকিস্তানী পতাকা পুড়িয়ে বাঙলাদেশের
জাতীয় পতাকা ব্যবহার করতে হবে।

(ঐ) স্বাধীনতা সংগ্রামে রত বীর
সেনানীদের সর্বপ্রকার সাহায্য ও
সহযোগিতা প্রদান করে বাঙলার
স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ুন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন ও
সার্বভৌম বাংলাদেশের
সর্বাধিনায়ক :

স্বাধীন ও সার্বভৌম বাঙলাদেশ
গঠন আন্দোলনের এ
পর্যায়ে নিম্নলিখিত জয়ধ্বনি ব্যবহৃত
হবে--

* স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ--
দীর্ঘজীবী হউক।
* স্বাধীন কর স্বাধীন কর--
বাংলাদেশ স্বাধীন কর।
* স্বাধীন বাংলার মহান নেতা--
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।
* গ্রামে গ্রামে দূর্গ গড়--
মুক্তিবাহিনী গঠন কর।
* বীর বাঙালি অস্ত্র ধর--
বাংলাদেশ স্বাধীন কর
* মুক্তি যদি পেতে চাও--
বাঙালিরা এক হও।
বাংলা ও বাংগালীর জয় হোক
জয় বাংলা।
স্বাধীন বাংলাদেশ
ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ।।
সূত্র : বাংলাদেশের
স্বাধীনতা যুদ্ধ, দলিলপত্র : দ্বিতীয় খন্ড।

। [[৪ মার্চ ১৯৭১, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে অফিস আদালত ব্যাংক সব বন্ধ। স্বাধীনতা সংগ্রাম পূর্ণাঙ্গ রূপ পায় মূলত ইশতেহার ঘোষণার মধ্য দিয়েই। বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ঘোষিত এই ইশতেহারের সব নির্দেশনা দ্রুত ছড়িয়ে দেয়া হয় দেশের সব প্রান্তে।]] দেশের নাম বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক শেখ মুজিবুর রহমান, আমার সোনার বাংলা হবে জাতীয় সঙ্গীত এবং জাতীয় স্লোগান হবে জয় বাংলা-ইশতেহারে ঘোষিত বাঙালির প্রাণের এসব দাবিকে সবাই নিজেদের দাবি মনে করে সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয় বহু স্থানে। সমগ্র দেশ যেন একটি বারুদের গোলকে পরিণত হয়। সর্বত্র চলতে থাকে সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি। শহরে, গ্রামে, গঞ্জে, হাটে, মাঠেঘাটে সব জায়গায়ই উজ্জীবিত মানুষ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত জীবন-মরণ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। গোটা দেশ চলতে থাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একক নির্দেশনায়। চারদিকে শুধু একই আওয়াজ, ‘মুজিব তুমি এগিয়ে চলো- আমরা আছি তোমার সাথে।’ বাংলার গণমানুষের বন্ধু, পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই তখন পূর্ববাংলার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে একমাত্র প্রতীক এবং গোটা দেশের শাসকে পরিণত হন। হাইকোর্ট, সুপ্রিমকোর্ট, সচিবালয়, স্টেট ব্যাংক, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের সব অফিস, ব্যাংক, শিল্পকারখানা, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি কলকারখানাও বন্ধ হয়ে যায় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। তার নির্দেশেই গোটা দেশে চলতে থাকে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি। একই সঙ্গে পাকিস্তানকে প্রত্যাখ্যান ও স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার দাবিতে সর্বাÍক হরতাল। পাকিস্তান সরকারের বেসামরিক শাসনব্যবস্থা কার্যত সম্পূর্ণভাবে অচল হয়ে পড়ে পূর্ব পাকিস্তান তথা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে। ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন গবেষণাগার থেকে প্রচুর পরিমাণে বিস্ফোরক দ্রব্য লুট করে ককটেল তৈরি করে সেগুলোর বিস্ফোরণ ঘটাতে থাকে শহরময়। এ আন্দোলন-সংগ্রাম শুধু ঢাকা শহরেই সীমাবদ্ধ থাকেনি চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, ময়মনসিংহ, রংপুর, যশোর, টাঙ্গাইল, বগুড়া ও সিলেটসহ সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা পাকবাহিনীর গাড়িতে হামলা চালাতে থাকে বিভিন্ন এলাকায়। দেশের যে যেভাবে পারছেন, প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে। পাক সামরিক বাহিনী দেশে সান্ধ্য আইন জারি করলেও প্রকৃত বিচারে তা সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর হয়ে পড়ে। ৪ মার্চের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও পুলিশের গুলিতে তিন শতাধিক ছাত্র-জনতা নিহত হয়। রামপুরা টেলিভিশন ভবনের সামনে বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দিয়ে ফিরে আসার সময় পুলিশের গুলিতে মৌচাকে নিহত হন মালিবাগের আবুজর গিফারী কলেজছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ফারুক ইকবাল। এ মৃত্যু খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলে দেয়ার মতো দাউ দাউ করে ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। (মৌচাকের মোড়ে এখনও শহীদ ফারুক ইকবালের স্মৃতিসৌধটি রয়েছে)।
৪ মার্চ সকাল থেকেই হাজার হাজার মুক্তিকামী সংগ্রামী জনতা ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে সমবেত হতে থাকে। বিকাল না হতেই গোটা এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়ে যায়। সবার মনের একই আকাক্সক্ষা, নেতা কি নির্দেশ দেন। আজকের দিনে টঙ্গীর শিল্প এলাকায় আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই ৪ শ্রমিক নিহত হন এবং আহত হন ১৪-১৫ জন। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র টঙ্গী শিল্পাঞ্চলে। নিরস্ত্র-নিরীহ সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু আজকের দিনে পাকিস্তান সরকারের প্রতি কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আর যদি একটা গুলি চলে, এক ফোঁটা রক্ত ঝরে, বাংলার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়, তবে তার সব দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। বাংলার মানুষকে হত্যা করে স্বাধিকার আন্দোলন ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।’ দেশের বরেণ্য লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, কবি ও বুদ্ধিজীবীরাও যুক্ত বিবৃতি দিয়ে নিরীহ বাঙালির ওপর পাকিস্তান বাহিনীর গুলির তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষিত কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গুলিতে সাধারণ মানুষ হত্যার প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, আগামীকাল ৫ ও ৬ মার্চ দেশব্যাপী সকাল-দুপুর হরতাল অব্যাহত থাকবে। এদিকে টানা দুদিনের হরতালে কার্যত পূর্ব পাকিস্তান সরকারের সব প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছিল। আবার হরতালের সময় বৃদ্ধি করায় পাকিস্তান সরকার প্রমাদ গুনতে লাগলেন। এ সময় পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার ভালোভাবেই বুঝতে পারছিলেন যে, একমাত্র রাজনৈতিক ফয়সালা ছাড়া বল প্রয়োগ করে শেখ মুজিব ও তার লাখ লাখ অনুসারীকে দমন করা সম্ভব হবে না।
সুত্রঃ দৈনিক যুগান্তর

এবং ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চ একটি কবিতার সুরেই বলবো :

শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে,

রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে

অত:পর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।

তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল

হৃদয়ে লাগিল দোলা, জন সমুদ্রে জাগিল জোয়ার
সকল দুয়ার খোলা। কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠ বাণী?

গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতা খানি:

‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:২০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×