somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাধীন বাংলার প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন তেলওয়াতকারীর ভাগ্য

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


'বাবা আল্লাহর নাম নিয়ে তুমি কোরআন তেলাওয়াত করো। আল্লাহ তোমাকে পাঠিয়েছেন এই কোরআন তেলয়াওয়াতের জন্য'
--- অধ্যাপক ইউসুফ আলী ১৭ এপ্রিল ১৯৭১।

মেহেরপুরে স্বাধীন বাংলার প্রথম সরকারের শপথ বাক্যের সময় এই কথা বললেন।
বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ বাক্য পাঠ করানো হবে। চারপাশে আনন্দের রব রব।
উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, স্বরাষ্ট্র ও ত্রাণ মন্ত্রী কামরুজ্জামান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্ডকার মোস্তাক এবং প্রধান সেনাপতি ওসমানী এলেন আনুষ্ঠানিক শপথ অনুষ্ঠানে সকালে।।

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হবে পবিত্র কোরআন শরীফ তেলওয়াতের মাধ্যমে।। কিন্তু সেখানে কোন ক্বারি, মাওলানা, ইমাম বা হুজুর পাওয়া গেলো না। কারণ কি জানেন? এটা নাকি বিধর্মী, কাফের মুরতাদের ইন্ধনের হচ্ছে। কোন মতে পাওয়া গেলো না কোন হুজুর।। চারদিকে উৎসুক জনতার ভীড় , সবাই দেখতে এসেছে তাদের প্রথম সরকারকে। দেশি বিদেশী সাংবাদিক, ইস্ট বেঙ্গল রাইফেলের সদস্যরা কড়া নিরাপত্তা হিসেবে রয়েছে।
কিন্তু এমন ক্রাইসিস অবস্থায় কে পবিত্র কোরআন পাঠ করবে? ভীড়ের মধ্যে থেকে জনতা এক সুদর্শন কিশোর কে তুলে নিয়ে আসলো। বয়স কত আর? ১৫ বা ১৬ কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র।
অধ্যাপক ইউসুফ আলী তাকে গ্রহণ করলেন এবংমাইকে দাঁড়িয়ে বললেন 'বাবা তোমাকেই এই কাজ করতে হবে '।
ছেলের নাম বাকের আলী, সে এসেছে মিছিল করে বাংলাদেশের নব গঠিত সরকার দেখতে।
এখন তারই সুরেলা কন্ঠ ধ্বনিতে পাঠ হলো পবিত্র কোরআন শরীফ।।।
বিবিসি, আকাশ বাণি, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম গুলো যখন শপথ বাক্যের অনুষ্ঠানের ঘটনা প্রচার করলো ,ঠিক তখনই আকাশপথে স্থল পথে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে এলো পাক সেনারা। মেহেরপুরের কেয়ামতের দিন এলো ২৭ এপ্রিল।। পাক আর্মির বিরাট বাহিনী এগিয়ে আসতে থাকে ধ্বংশ চালাতে থাকে চারদিকে তাদের ক্ষোভ ঐ একজায়গায় কোন সাহসে তারা সরকার গঠন করলো মেহেরপুরে!
এমন কোন বাড়ি ছিলো না সেদিন যেখানে রক্তের দাগ দেখা যায় নি, হত্যা শুধুমাত্রই হত্যা। এক নীতিতে পাকিরা এগিয়ে গেলো।।
কিভাবে যেন পাকিরা জানতে পারলো যে বাকের নামে এক কিশোর ছেলে স্বাধীন বাংলার প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেছিলো। তাকে ধরা হলো, কিন্তু না তাকে গুলি করা হলো না উপহাস করে তাকে মারতে হবে নির্মম ভাবে।।
কোরআন তেলওয়াতের অপরাধে তাকে ধরার প্রথমে জিজ্ঞাসা করা হলো :
>তুই মুসলমান কিনা....
>খোল লুঙ্গি খোল, মুসলমানি হইছে কিনা দেখা ...
ভাগ্যের পরিহাস শুধুমাত্র সে স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন দেখতো এই কি তার অপরাধ? পবিত্র কোরআন পাঠ করেছে এই কি তার অপরাধ?
তাকে আমগাছের গুঁড়িতে বাধা হলো, ছুরি দিয়ে তার শরীরে চিরে দেওয়া হলো এরপর সেখানে দেওয়া হলো লবণ এবং মরিচ। যন্ত্রণায় কাতর বাকের তার মুখস্থ সব সূরা পাঠ করতে লাগলো,

না তাকে মারতে হবে আরো পাশবিক ভাবে একেবারে নতুন কায়দায়। । স্থানীয় রাজাকারদের (জামাতের রাজনীতিতে যুক্ত) সাহায্য নিয়ে পাক সেনারা শত শত পিঁপড়ার বাসা ভেঙ্গে ছড়িয়ে দিতে থাকে বাকেরের শরীরে, প্রায় দু ঘন্টা চলছে এই অত্যাচার। একসময় লক্ষ লক্ষ পিঁপড়ার আবরণে ঢেকে যায় তার মুখ। পাকি সেনারা বলতে থাকে, 'তুঝছে গুলিছে নেহি মারুঙ্গা, বুলকে চুটিয়েছে খাওয়াঙ্গা '।।
একসময় নির্জীবতা দেখে পাকিরা ভাবে, এই বার মরছে। তাই তারা চলে যায়, এই ফাঁকে গ্রামের কিছু দু:সাহসী ছেলে অর্ধমৃত বাকেরকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।। যখন বাকের কে তারা পাই তারা দেখে একটি পিঁপড়া ও বাকেরের পবিত্র শরীরকে কামড়াইনি। । মহান আল্লাহতালা হইতো সেদিন তার বান্দাকে রক্ষা করেছিলো সে কুৎসিত পাকি হায়েনাদের অত্যাচার থেকে।।
৭১ এর ইন্টারের ছাত্র বাকের বহু কষ্টে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স করেছিলো, কিন্তু দরিদ্র কৃষক সন্তান বাকের টাকার অভাবে এমএ আর পড়তে পারলো না।। চাকরির জন্য স্বাধীন বাংলার রাস্তায় তাকে ভিখারির মতো ঘুরতে হয়েছে।।। এই মূহুর্তে বাকের কোথায় কিভাবে আছে আমার জানা নেই, যদি বেঁচে থাকেন হইতো ভাবছেন স্বাধীন বাংলায় আমরা কি না দেখেছি? আজব দেশে রাজাকাররা দেশ শাসন করেছে আর মুক্তিযুদ্ধের কথা বললে প্রজন্ম অদ্ভুত আড় চোখে তাকিয়ে থাকে। । জানি না স্বাধীন ,মুক্তিযুদ্ধ এই সব কার কাছে কি? শুধু বলতে জানি 'জয় বাংলা এবং শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর জয় বাংলা '।

[ তথ্যসূত্র :আজকের কাগজ, ১৮।৪।১৯৯৪ ইং]
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:০১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×