বঙ্গবন্ধু যদি এত বড় নেতায় হয়ে থাকে, তাহলে
তাঁর জানাযা হই নি কেন??? কেন তাঁর লাশ
দেখতে বাংলার মানুষ সেদিন
গোপালগঞ্জে উপস্থিত হই নি? জিয়া
সাহেবের জানাযায় তো হাজার হাজার
মানুষ এসেছিলো উনার জানাযায় কেন মানুষ আসে
নি? কেন?
উপরের কথা গুলো কারা, কেন কি উদ্দেশ্য
নিয়ে বলে এটা আমাদের সবারই জানা।
স্বাধীনতা বিরুধিরা এই প্রশ্ন জনগণের মনে
ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল ফলাফল স্বরুপ এই
কথা গুলো আমাদের এখনো শুনতে হচ্ছে।
যে লোক নিজের মৃত্যুপথের সঙ্গী হওয়া পর্যন্ত
"জয় বাংলার " মানুষের কথা বলে গিয়েছে ,
যার জন্য আমরা মুক্তির স্বাদ পাই তার বিরুদ্ধে
এইসব কথা বলতে ঐ পশুদের মন কাঁদে নি।
সত্যিই আজও আমাদের প্রমাণ করতে হয় "জয়
বাংলা " বাঙলার হৃদপিন্ড থেকে গঠিত এক
স্লোগান, বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন
স্রষ্টা।
বঙ্গবন্ধুর লাশ নিয়ে খুনিরা সেদিন কি
করেছিল, কিভাবে তাঁর লাশ দাফন হয়েছিল
এই ব্যাপারে স্বাধীনতা বিরুধিরা বিভিন্ন
ধরণের নোংরা মতবাদ আজও বলে যাচ্ছে এর
জবার হিসেবে সেদিন কি হয়েছিল, দেখে
নিন :
বঙ্গবন্ধুর লাশ ৩২ নম্বরে বরফ দিয়ে রাখা হয়।
সাধারণ দুঃশ্চিন্তা নিয়ে কঠোর সতকর্তায়
পাহারায় থাকে একদল সৈন্য। লে: ক: হামিদুর
রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুর নিথর
দেহ টুঙ্গিপাড়ায় দাফন করে চলে আসতে।
সকালে লাশ মুড়ে একটা বাক্সে তাতে বরফ
দিয়ে বাক্স বন্ধী করে সৈন্যরা ক্যার্ন্টরমেন্ট
নিয়ে যায়। টুঙ্গিপাড়ায় ওসি বাড়ির
মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুল হালিমের
কাছে খবর নিয়ে আসলেন বললেন, লাশ আসছে।
সুতরাং কবর যেন খুঁড়ে রাখা হয়।
ইমাম সাহেব এক নিষ্ঠুর সত্য জেনে খুবই
শোকাবহ ছিলেন ,
বঙ্গবন্ধু শেষ সাক্ষাতের সময় তাকে
বলেছিলেন 'আমার জানাজা আপনাকে
পড়াতে হবে '।
ইমাম সাহেব মিস্ত্রী আলী আসগর মিয়ার
সাহায্য নিয়ে দুটো কবর করলেন।
১২ টা বেজে গেলে ইমাম সাহেব ঘরে গিয়ে
গোসল করে নামায পরলেন।
বেলা তখন দেড়টা, হেলিকপ্টার এলো। কর্নেল
হামিদের নেতৃত্ব দিয়ে ১২ জন সৈন্য লাশ বয়ে
আনলো। পুরো টুঙ্গিপাড়ায় কারফিউ জারি।
পুলিশ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ঘিরে রাখা হয়ে ছিল।
জনগণকে একবারো আসতে দেওয়া হয় নি।
বঙ্গবন্ধুর ২ মামা শ্বশুর শেখ মনসুর হক ও শেখ মনজুরুল
হক কফিন বুঝে নিলেন। বাড়ির লোকজন আগেই
সরে পরেছিল।
বঙ্গবন্ধুর মেজ চাচী ও ছোট চাচী লাশ দেখার
অনুমতি পেলেন।
রক্তমাখা লাশ থেকে বরফ সরানো হল, বরফ গলা
পানির সাথে রক্ত গড়িয়ে পরছে। বরফে ভিজে
যাওয়া রক্তাক্ত সাদা পাঞ্জাবি, গেঞ্জী ও
সাদা কালো লুঙ্গি এবং নিথর দেহ। পকেটে
চশমাটা তখনো ছিল।
যে মাটির জন্য লড়ে গেছেন সেই মাটিই
তাকে আবার নিয়ে যাচ্ছে।
কর্নেল হামিদ ইমাম সাহেবকে বললেন, দ্রুত
লাশ দাফন করেন। লাশ দেখার পর ইমাম সাহেব
বললেন ২ ঘন্টা সময় লাগবে। কর্ণেল জিজ্ঞাস
করলেন কেন? উত্তরে ইমাম সাহেব বললেন,
একজন মুসলমানের গোসল ও জানাযা পড়াতে
সময় লাগে। কর্নেল হামিদ বললেন, এসব ছাড়া
করা যাই না??
ইমাম সাহেব বললেন করা যায়, যদি সে শহীদ
হয়।
হামিদ উগ্র কণ্ঠে বললেন, " আপনি দাফন করবেন
কিনা?? " না পারব না, । যদি লিখে দেন শহীদ
করে এনেছেন তাহলে পারি।
ইমাম সাহেবের বুক জুড়ে যে শোকাবহ কান্না,
তা তাকে শক্তিশালী করেছিল।
হামিদ বলল, সেটা সে লিখতে পারবে না।
ঠিক আছে গোসল করান , তবে দেরি করতে
পারবেন না।
কর্নেল খুবই টেনশনে ছিলেন, খুব সতর্ক অবস্থায়
পুলিশ ও সৈন্যদের থাকার নির্দেশ দেন।
৫৭০ সাবান দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গোসল করানো হয়।
রেডক্রস থেকেচার ইজি পাড়ের সাদা শাড়ি
এনে পাড় ছিড়ে কাফনের কাপড় বানানো হয়।
যে মানুষ বাংলার বাঙলির মৌলিক
চাহিদার জন্য আমৃত্যু লড়াই করে গেছেন মাটি
চাপার আগে কাফনের কাপড় পেয়েছে একটি
ছিড়া সাদা শাড়ির অংশ। ভাগ্যের কি নির্মম
পরিহাস!!!
একটা গুলি মাথার পিছনে করা হয়েছিল,
আরেকটা আঙুলে। বাকি নয়টা গুলি বুকের
নিচের চক্রাকারে করা হয়েছিল।
খুব দ্রুত লাশ দাফন হলো। উপরে মাটি চাপা
দিয়ে, উঠোনের বরই গাছের কাঁটভরা ডাল
চাপানো হলো। হেলিকপ্টার চলে যাবার
পূর্বে বাইবার নদীর পানিতে রক্ত ধুয়ে
টুঙ্গিপাড়ার মাটিতে ফেলে যায়। রক্ত মুজিবের রক্ত, লাল রক্ত!
আর এভাবে খুনিরা বাংলার মাটিতে "জয়
বাংলার "স্লোগান মুছে ফেলার চেষ্টা
করেছিল