somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুরতে গেছিলুম ইউরোপ- ৫

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সুইজারল্যান্ডের লুজান থেকে জেনেভা যেতে হবে প্রথমত জেনেভা শহর দেখতে তারপর জাতিসংঘের অফিস দেখতে আর আমাদের কাউন্সিলর অফিসে কিছু অফিসিয়াল কাজ সারতে।
আমার আবাসস্হল থেকে মানে লুজান থেকে প্রায় ষাট কিলোমিটার দুরে জেনেভা। সকালেই রওয়ানা হলুম, গাড়ীতে সুজন তার এক বন্ধু সুজনের ছেলে আর আমি। বেশ বৃস্টির মধ্যেই রওয়ানা হলুম, গাড়ীর স্পীড ১২০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার, কিন্তু টেরই পাচ্ছিলুমনা! কাঁচের মত মসৃন রাস্তা, লেন পরিবর্তন খুব হয় না, শুধু সামনে কাভার্ড ভ্যান বা ট্রাক পড়লে তখন বাধ্য হয়ে ওভারটেক করতে হয়, না হলে সামনে কিছু দেখা যায়না।

তবে ওভারটেক করার সময় খুব সাবধানে ইন্ডিকেটর দিয়ে লেন পাল্টে ওভারটেক করে আবার নিজ লেনে আসতে হয়। কারো কোন অসুবিধা হয় না।রাস্তায় কোন পুলিশ দেখলুম না। মাঝে মাঝে ট্রাফিকের ক্যামেরা আছে, কোন প্রকার আইন ভাংলেই ধরা পড়বেন।

ঢাকার রাস্তায় বাস বা কার ড্রাইভারদের অদক্ষতা আর আইন না মানার প্রবল প্রবনতা আর পুলিশের অজ্ঞতা আর অদক্ষতা তামনে পড়ল। যদিও প্রায় সব পুলিশেরই ট্রাফিক নিয়ন্ত্রন সম্পর্কে কোন প্রকার ভাল জ্ঞান বা প্রশিক্ষন নেই! যার জন্য ট্রাফিক জ্যাম একটি প্রতিদিনের ক্রমবর্ধমান সমস্যা। এ নিয়ে কারো কোন মাথাব্যাথাও নেই!



জেনেভাতে লেখক

প্রথমে গেলুম আমাদের বাংলাদেশ কাউ্ন্সিলরের অফিসে। তবে গাড়ী পার্কিংয়ের জন্য আধ ঘন্টা চক্কর কাটতে হল। ছোট একটা ভবনের তিনতলায় অফিস। সিনথিয়ার বাংলাদেশী পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ, রিনিউ করাতে হবে। সেটা করাতে হয় কাউন্সিলরের অফিসের মাধ্যমে। ওদের কোন কাজ নেই খালি কাগজটা বাংলাদেশে পাঠানো আর তৈরী হয়ে আসলে হাতে দেয়া, শ্রেফ পোস্ট অফিসের কাজ। গেটে কলিং বেল বাজিয়ে প্রায় পনেরো মিনিট অপেক্ষা করতে হল, গেট খোলেনা! ষোল মিনিট পর একজন ভদ্রলোক গেটটি যেন দয়া করে খুললেন।



একটা বিদেশী নামকরা শহরে জেনেভার মত শহরে আমাদের কাউন্সিলরের অফিস দেখে হতাশ হলুম। বিভিন্ন কামরাতে ফাইল পড়ে আছে কেউ বসে আড্ডা মারছে কোন কোন কামরা খালি পড়ে আছে চেয়ার টেবিল আছে লোক নেই, তখন বেলা সাড়ে এগারোটা। লোকজন আছে জনা বারো, কারো কোন কাজ নেই মনে হল। সুজনের বন্ধুটি বলল এদের আসলে খুব একটা কাজ নেই, শুধু বাংলাদেশ থেকে মন্ত্রী ভিআইপিরা আসলে এরা সঙ্গ দেয় আর ভ্রমনটা অর্গানাইজ করে। অধিকাংশ মন্ত্রী ভিআইপিরা ব্যাক্তিগত সফরেই আসেন, অথবা সরকারী বানিয়ে নিয়ে আসেন, তাদের হুকুম পালন করাটাই এইসব স্টাফদের কাজ। এছাড়া সুইজারল্যান্ডে বসবাসরত বাংলাদেশীদের পাসপোর্ট সংক্রান্ত কাজ করে এই অফিস। ওদের দোষ না।

সিনথিয়ারটা রিনিউ করানোর সাথে আমার নাতির বাংলাদেশি পাসপোর্ট বানাতে হবে যদিও এরা সুইশ নাগরিক। অফিসের ওদের একজন বললেন ওর বার্থ সার্টিফিকেট আনতে হবে বাংলাদেশ থেকে! সুজন বলল ওর তো বার্থ সার্টিফিকেট সুইজারল্যান্ডের হাসপাতালের আছে আবার বাংলাদেশী কেন লাগবে? জবাব আসল 'ওসব বুঝিনা এটাই নিয়ম'। আমি একটু বললুম এটা তো বেআইনী, ছেলেটা জন্মেছে সুইজারল্যান্ডে, তার সুইশ হাসপাতালের বার্থ সার্টিফিকেট আছে, তো বাংলাদেশের বার্থ সার্টিফিকেট কেন লাগবে? পরে আমার একটু মেজাজ দেখিয়ে একটু কড়া করে বললুম, 'এটা কোন নিয়ম হতে পারেনা, আমি কথা বলব তোমার কাউন্সিলরের সাথে'।

মেজাজে কাজ হলো মনে হয়, একটু পরেই ভেতর থেকে স্যুট টাই পড়া একজন বঙ্গসন্তান আসলেন, এসে বেশ বিনয়ের সাথে বলেন 'আমিই হচ্ছি এই অফিসের পাসপোর্ট ডিলিং অফিসার, কাউন্সিলর সাহেব বাইরে গেছে, বসুন এককাপ চা খান । আর ব্যাপারটা হল বাংলাদেশের বার্থ সার্টিফিকেটে ষোল সংখ্যার একটা নম্বর থাকে সেই নম্বরটা না দিলে কম্পিউটার ফর্ম নিবেনা, এতে আমাদের কিছু করার নেই্'।

পরে আমি চেক করে দেখেছি তিনি ঠিকই বলেছেন। এ এক আজিব নিয়ম। ঐ বার্থ সার্টিফিকেটের ষোল সংখ্যার নম্বর না দিলে ফর্ম পূরণ করাই যায় না! মানে ঐ সফটওয়ার যারা বানিয়েছে আর যারা চেক করে গ্রহন করেছে তারা জানেইনা বাঙ্গালি বিদেশে জন্ম নিতে পারে! সুইশ হাসপাতাল ঘুষ খায় না।

এখন ঢাকার মিউনিসিপাল অফিস থেকে বার্থ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে সেটা সুইজারল্যান্ডে পাঠানো যে কি ঝামেলা সেটা ভুক্তভোগীরাই জানবেন। চলে এলুম কাউন্সিলর অফিস থেকে। অবশ্য সারাদিনেও কাউন্সিলর সাহেব আর অফিসে আসেননি। এনারা অফিসে খুব কমই থাকেন। সুজন বলল এমন হয় যে হয়ত কোন মন্ত্রী বা ভিআইপি আসবেন পনেরো দিন পর, তো এই পনেরো দিন এদের অফিসে গেলে কোন কাজ হবেনা শুধু বলবে মন্ত্রী আসবেন, কোন কাজ হবেনা আমরা সবাই ব্যাস্ত।



অবশ্য এরকম চিত্র বিদেশে আমাদের দূতাবাসগুলোর প্রায় সবগুলোতেই পাবেন। আরে ঢুকতেই পারবেননা আমাদের বিদেশে কর্মরত শ্রমিকগন! দূতাবাসের কর্মচারীরা একেকটা ভিআইপি না!



সেখান থেকে বের হয়ে দেখতে এলুম জাতিসংঘের অফিস। বিশাল এলাকা নিয়ে অফিস, ভিতরে ঢোকা যায় দেখা যায় তবে সময় তারিখ আছে। আমরা যখন গেছি তখন ওটা বন্ধ। বাইরে থেকেই দেখলুম। গেটের বাইরেই একটা বিশাল তিনঠ্যাং ওয়ালা চেয়ার রাখা আছে। ওটা এন্টি মাইন সংস্হার। প্রসঙ্গত বলি যুদ্ধক্ষেত্রে মাইন বসানো হয় শত্রুর গতি আটকানো বা কমানোর জন্য। আর মাইনে আহত হওয়ার মানুষের অধিকাংশেরই পা উড়ে যায় যাতে ঐ মানুষটি চিরজীবনের জন্য পা হারিয়ে পঙ্গু হয়ে যায়। বড় বেদনাদায়ক অবস্হা হয়। পরে জাতিসংঘের উদ্যোগে এই কিছু কাল আগে মাইন নিষিদ্ধ করা হয় যদিও অনেকে গোপনে ব্যাবহা্র করে। ঐ তিনঠ্যাং চেয়ারটা ঐ এন্টি মাইন সংস্হার প্রতীক।

জেনেভাতে এই জাতিসংঘের এই অফিসে প্রায় ত্রিশ চল্লিশটা জাতিসংঘ অফিসের সদর দপ্তর আছে যেমন আইএলও, ডব্লিউএইচও, ইউনএইচসিআর কমপেনসেশন ইত্যাদি অনেক আন্তর্জাতিক সংস্হার অফিস।


পথে গাড়ী চালাতে চালাতে চোখে পড়ল নীচের ছবির হোটেলটা।



উপরের ছবিটা জেনেভাতে অবস্হিত দুনিয়ার সবচাইতে দামী হোটেল! নাম প্রেসিডেন্ট উইলসন হোটেল। ওটার কয়েকটা স্যুট আছে যার ভাড়া দৈনিক ৬০,০০০ সুইস ফ্রাংক।
হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন দৈনিক ভাড়া ষাট হাজার সুইস ফ্রাংক, মানে বাংলাদেশি টাকায় রোজ প্রায় পন্চান্ন লক্ষ টাকা!!

হোটেলের ঐ স্যুটের একটা রুমের ছবি নীচে।


রুমটার আশে পাশে দিয়ে ম্যালা সময় ধরে গাড়ী চালাতে হয়েছে কারণ ঐ পার্কিং সমস্যা! জাতিসংঘ অফিসের সামনে পার্কিং মিলল।জেনেভা এত বিখ্যাত আর গুরুত্বপুর্ণ শহর কিন্তু লোকসংখ্যা নগন্য। রাস্তাঘাটে মানুষ নেই। বাস ট্রাম চলছে, প্রায় খালি। নিরব নিঃশব্দ শান্ত চমৎকার একটা শহর।



লেকের পারে একটা চমৎকার শক্তিশালী ফোয়ারা আছে, পানি পাম্পের সাহায্যে প্রায় পন্চাশ ষাট ফুট উপরে উঠে। ওখানে সাবধান বানী লেখা 'পানি বাতাসে স্হান বদলায় সুতরায় আশে পাশে পিছল হবে তাতে আর পানির ধাক্কায় আপনি পড়ে যেতে পারেন! জেনেভাতে তখন বেশ ঠান্ডা তাই পানিতে পড়ার কথা ভেবে কাছে গেলুমনা। ছবিতে দেখুন লেখকের পিছনে অনেক দুরে ফোয়ারা।

লেকের উপরে কংক্রীটের ব্রীজের উপর দিয়ে হাঁটার সময় ব্রীজটা প্রায় দু তিন ইন্চি দুলছিল। বেশ থ্রীলিং!
বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা।


জেনেভার পথে আপেলের বাগান, দুটো খেয়েছিলুম গাছ থেকে পেড়ে, গার্ড ফার্ড নেই তো!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৮
৩৫টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×