সিনেমার একটি দৃশে মা ও পাঁচ বছরের ছেলের কথোপকথনঃ
-Jack,I’m not a good enough Ma(Mother)!
-but you’re “Ma”!
পুরো গল্প নিয়ে আলোচনা করলেও এই সিনেমায় স্পয়লার পাওয়ার সম্বাবনা অথবা সিনেমার আসল স্বাদ নস্ট হওয়ার কোন কারন নেই কেননা গল্পে আহামরি কোন ট্রুইস্ট এবং গল্প শুনে,পড়ে অনুধাবন করার মত সিনেমাও এটি নয়।
সিনেমার স্বাদের আসল উপকরন হচ্ছে পর্দায় তা দেখা, প্রতিটি দৃশ্যের সাথে মিশে থাকা, অনুভব করা এবং অনেক ভাল লাগা নিয়ে সিনেমাটি দেখা শেষ করা।
রুম (২০১৫) । Room (2015)
জনরাঃ ড্রামা
আইএমডিবি রেটিংঃ ৮.৩/১০
রটেন টম্যাটোসঃ ৯৭% ফ্রেশনেস
কাস্টঃ ব্রি লার্সন, জেকব ট্রম্বলে, শন ব্রিজার প্রমুখ
স্ক্রিনপ্লেঃ এমা ডনাহিও
পরিচালকঃ লেনি এব্রাহিমসন।
তারপরও বেসিক প্লট নিয়ে কিছুটা ধারনা দেয়। মুল গল্প মা ও তার পাঁচ বছরের সন্তানকে নিয়ে।
মা (ব্রি লার্সন) তার পাঁচ বছর বয়সী ছেলে জ্যাক (জেকব ট্রম্বলে) কে নিয়ে একটি জীর্ণশীর্ণ ছোট রুমে বসবাস করে আসছে। গত পাঁচ বছরে একবারের জন্যও জ্যাক এই রুমের বাহিরে যায়নি কেননা ওল্ড নিক (শন ব্রিজার) তাদের দুজন কে একটি গোপন রুমে বন্ধী করে রেখেছে এবং এই রুমের ডোর পাসওয়ার্ড প্রোটেকটেড।
এই ছোট রুমই জ্যাকের দুনিয়া, বাহিরের পৃথিবী সম্পর্কে তার কোন ধারনা নেই। দুজনের সময় কাটে টিভি দেখে, পৃথিবী সম্পর্কে বিভিন্ন ফিকশনাল গল্প বলে, রান্না করে। মা জ্যাককে বাস্তবতা সম্পর্কে বিভিন্ন ভুল(!) ধারনা দিয়ে আগলে রাখে নিজের মত করে।
পরবর্তিতে দুজন মিলে এই রুম থেকে মুক্তি পাওয়ার প্ল্যান করতে থাকে।
মা ও ছেলের ভালবাসার বন্ধন, আবেগময় সম্পর্কের সার্থক মডেল হচ্ছে “রুম” নামক সিনেমাটি। নিজের সন্তান কে বিভিন্ন প্রতিকূলতায় আগলে রাখা, একান্ত নিজের করে লালন করা, সময়ের সাথে সামঞ্জস্যতা বজায় রেখে গড়ে তোলার বিষাদ ও একই সাথে স্বচ্ছ মায়াবী এবং হৃদয় ছুঁয়ে দেয়ার গল্পের নাম “রুম”
সিনেমাটি অনেক ভাল লাগার উপকরন হিসেবে মা-ছেলের মধুর সম্পর্ক তো আছেই তাছাড়া, পাঁচ বছর বয়সী জ্যাকের এই পৃথিবী সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা ও মতামত গুলো দেখলে একই সাথে হাঁসি ও ভাবনায় পরে যাবে যে কেউ। সিনেমার অনেকাংশয় জ্যাকের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখানো হয়েছে।
অভিনয়ের সম্পর্কিত আলোচনা যদি করি তাহলে, এক্ট্রেস “ব্রি লার্সন” এর সাথে আমার আগের পরিচয় (Scott Pilgrim vs. the World , The Spectacular Now) সুখকর ছিলনা। একে তো ছোট রোল তার উপরে টিনএইজ ক্যারেক্টার। কিন্তু এই সিনেমায় তার পারফমেন্স দেখে সত্যিই মুগ্ধ। অসহায়ত্ব, সন্তানের প্রতি টান, বিরহ সবকিছু সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে সে। এই ক্যারেক্টারটি ভাল ভাবে বোঝা ও ফিল করার জন্য সে একমাস নিজে একটি রুমে আবদ্ধ করে রেখেছিল। ব্রি লার্সনের এই পরিশ্রমের ফলাফলও পেয়েছে সে, এবারের গোল্ডেন গ্লোবে সেরা অভিনেত্রীর পুরষ্কার, অস্কারে লিডিং এক্ট্রেস হিসেবে নমিনেশন।
ছেলের চরিত্রে জেকব ট্রম্বলের পার্ফমেন্স জাস্ট সুপার্ব!!! এই পিচ্চির এত ভাল অভিনয় দেখে আমি অলমোস্ট “হা” করে ছিলাম। একে তো দেখতে এডোরেবল, সাথে ডায়লগ ডেলিভারি,এক্সপ্রেশন সত্যিই প্রশংসনীয়।
পরিচালক লেনি এব্রাহিমসন এই সিনেমার জন্য অস্কারে সেরা পরিচালকের নমিনেশন পেয়েছেন। আর সিনেমার গল্প, লেখিকা এমা ডনাহিও এর একই নামের উপন্যাস থেকে এডপ্ট করা। তিনিও সেরা স্ক্রিনপ্লের জন্য অস্কারে নমিনেশন পেয়েছেন। সিনেমাটোগ্রাফি ও ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও ভাল লেগেছে। বিশেষ করে জ্যাকের দৃষ্টিকোণ থেকে গল্প প্রেজেন্ট করার ক্ষেত্রে সিনেমাটোগ্রাফারের ক্যামারা এঙ্গেল এর কাজ প্রশংসনীয় ছিল। সসবকিছু মিলিয়ে একটি উপভোগ্য সিনেমা।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৪২