somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ- "পাগল"

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈশিতা.... এই ঈশিতা.. ঈশিতা বলে ডাকতে ডাকতে এক লোক রিধির পিছনে ঝাপটে ধরলো। রিধি হঠাৎ চিৎকার করে উঠে পিছনে তাকিয়ে দেখলো, একটি মাঝবয়সী পাগল মাথার চুল, গালের দাড়ি অনেক লম্বা লম্বা। কিছুক্ষণ পর পাগল টা আবার রিধির হাত চেপে ধরে। রিধির আরও জোরে চিৎকার দেয় তখন রাস্তার মানুষজন পাগল টাকে মারতে থাকেন। তখন পাগলের এক বন্ধু নাম শাহেদ। ওকে এদের কাছ থেকে নিয়ে যায়। পাগল টাকে দেখে রিধির অনেক মায়া হলো ও শাহেদকে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করলো কিভাবে উনার এই অবস্থা হলো।
শাহেদ তখন কিছু বলতে রাজি হলো না। বরং বললো, ম্যাডাম আপনি নীল শাড়ি পরে আর এ দিকে আসবেন না, নীল রঙের শাড়ি পরুয়া কাউকে দেখলেই ও ঈশিতা ঈশিতা বলে এমন করে।
রিধি কথা গুলো শুনে পাগলটির সম্পর্কে জানার জন্য ওর ইন্টারেস্ট আরও বেড়ে গেল। শাহেদ কে অনুরোধ করলো সব টা খুলে বলার জন্য। এবং অবশেষে শাহেদ পাগলটি সম্পর্কে সব বলতে রাজী হলো। ওরা একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলো। শাহেদ দু কাপ কফির অর্ডার দিয়ে রিধির কাছে সব ঘটনা বলতে শুরু করলো।
.,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
- ও আগে পাগল ছিল না। শিক্ষিত, ভদ্র, স্মার্ট একটা স্বাভাবিক ছেলে ছিল। অন্য আট দশ টা ছেলের মতো ও সব সময় বন্ধু বান্ধব নিয়ে মেতে থাকতো। আজ থেকে দুই বছর আগে ওর মোবাইলে একটা ফোন আসে। ও রিসিভ করে শুনলো একটা মেয়ের কণ্ঠ। কথা বলার পর জানলো রং নাম্বার। তারপর ফোন রেখে দিলো মেয়েটা। কিন্তু সে ঘটনা এখানেই শেষ হলে ভাল হতো। বরং সেদিন সে আবার ইচ্ছা করেই আবার মেয়েটিকে ফোন দেয়। এভাবে চলতে চলতে কয়েকদিন পর আমাকে জানালো ঐ মেয়েটার সাথে ওর প্রেম হয়ে গেছে। সে মেয়েটির ছবি দেখে নি কোনদিন। তবে নাম জানতো। নাম ছিল ঈশিতা। একদিন ওরা ঠিক করলো ওরা দুজনে দেখা করবে। ও পরবে আকাশী কালারের পাঞ্জাবি আর মেয়েটি পরবে নীল শাড়ী।
তখন রিধি বললো, ওদের কি দেখা হয়েছিল??
শাহেদ হালকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, দেখা হলে ত হতই। সেদিন দেখা হয় নি। সেদিন ঘটেছিল এক নির্মম ঘটনা। মেয়েটি রাস্তায় আসার সময় রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়।
রিধি বললো, এক্সিডেন্টের ব্যপার টা ও কিভাবে জানলো?? ও কি লাশ টা দেখতে গিয়েছিল??
শাহেদ বললো - না। ওর এক বান্ধবী পরের দিন যখন ফোন দিয়ে ঘটনা টা বললো। তখন মেয়েটিকে কবর দেয়া হয়ে গিয়েছিল। সেই ঘটনা টা সে ঠিক মতো এক্সসেপ্ট করতে পারে নি। খুব ভালবাসতো মেয়েটিকে। ওর সেদিন ব্রেইন স্ট্রক করেছিল। কয়েকদিন পর যখন ওর জ্ঞান ফিরলো তখন সে মানসিক ভারসাম্যহীন এক বদ্ধ পাগল। পাগলা গারদে ছিল। কিন্তু সেখান থেকে গত দুই মাস আগে পালিয়ে এসেছে। আর সেই জায়গায় বসে থাকে যেখানে ঐ মেয়েটার সাথে ওর দেখা করার কথা ছিল। ওর মনে এখন নীল শাড়ি পরুয়া ঐ মেয়েটার কথা ছাড়া আর কিছুই মনে নেই। তাই নীল শাড়ি পরা কাউকে দেখলেই সে ঝাপটে ধরে ঈশিতা.. ঈশিতা বলে।
.,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
ঘটনা টা রিধির খুব পরিচিত লাগছে। আজ থেকে দুই বছর আগে এমন একটা ঘটনার সাথে ও নিজেকে জড়িয়েছিল। এমন একটা ছেলের মোবাইলে রং নাম্বারে ওর কল গিয়েছিল। ও ছেলেটাকে সরি বলে সেদিন ফোন কেটে দিয়েছিল। কিন্তু ছেলেটি সেদিনের পর থেকে রোজ কল দেয়া শুরু করে। অনেক বুঝানোর পরও ছেলেটি বুঝতে রাজী হয় নি। ঘটনা টা ওর এক বান্ধবী কে বলার পর, ঐ বান্ধবী বললো চল ছেলেটাকে একটা শিক্ষা দেই। বান্ধবী বললো, ছেলেটার সাথে কিছুদিন প্রেম প্রেম খেলা যাক। তারপর ওকে একটা শিক্ষা দিয়ে সিম চেঞ্জ করে দিবো। তারপর শুরু হলো ছেলেটার সাথে প্রেম। ছেলেটাকে একটা ফেইক নাম বলে। বলেছিল ওর নাম ঈশিতা। দিন রাত কথা হতো। একদিন হুট করে ছেলেটা বললো, দেখা করার কথা। কিন্তু ও দেখা করে ঝামেলায় ঝড়াতে চায় নি। কারণ নেক্সট ইয়ারে রিধির বিয়ে ঠিক ছিল। বিয়েটা ওর পছন্দের পাত্রের সাথেই হচ্ছে। কিন্তু রংনাম্বারের ছেলেটা ওকে দেখা করার জন্য পাগল করে ফেলছে।
তখন ও একটা প্ল্যান করলো। ছেলেটাকে বলে একটা টাইম ও জায়গা ঠিক করলো দেখা করার জন্য। সেদিন রিধি ঠিক করলো যে আজকের পর থেকে আর কোনদিন ছেলেটার সাথে কথা বলবে না সে। তাই ও একটা নিউ সিম কিনলো এবং সিম টা চেঞ্জ করে ওর সেই বান্ধবী কে দিয়ে ছেলেটার মোবাইলে কল দিয়ে বলতে বলে যে, ঈশিতা দেখা করতে আসার সময় রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। আর ছেলেটার সাথে কথা হয় নি রিধির। কোন খোঁজও জানে না আর। ঐ ছেলেটার নাম ছিল আসিফ।
.,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
রিধি শাহেদকে বললো, আচ্ছা আপনার বন্ধুটির নাম কি??
- ওর নাম আসিফ।
রিধির আসিফের নাম শুনেই মনে একটা ধাক্কা খেলো। ওর বুঝতে বাকি রইলো না। এই পাগল টি ই সেই ছেলে যার সাথে ওর কথা হয়েছিল রংনাম্বারে। আর বলিয়েছিল ও মরে গেছে। ওর জন্যই আজকে এই ছেলেটা পাগল সেটা ভাবতে ভাবতেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। ও কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
তখনি ওর মোবাইলে রুদ্র নামে সেভ করা একটা ছেলের নাম্বার থেকে কল আসে। রিধি ফোন রিসিভ করলো। ফোনের ওপাশ থেকে রুদ্র বললো, রিধি তুমি কোথায়?? কতক্ষণ ধরে গাড়িতে বসে ওয়েইট করছি।
রিধি রুদ্রকে বললো , একটু অপেক্ষা করো আমি তাড়াতাড়ি আসছি।
তারপর রিধি শাহেদকে বললো, আমার স্বামী গাড়িতে আমার জন্য ওয়েইট করছে। কিছু মনে করবেন না, যাচ্ছি আমি।
শাহেদ বললো, কফি ত ঠাণ্ডা হয়ে গেলো। খেলেন না কেন। দাঁড়ান আমি আরেক কাপ কফি অর্ডার করছি। খেয়ে যান।
রিধি বললো, ঠিক আছে। অন্যকোন দিন দেখা হলে খাবো। আজ আর নয়। ও আমার জন্য অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে।
শাহেদ বললো, আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর রিধি চোখ থেকে জল মুছতে মুছতে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেলো।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:১৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×