হিরাক রাজার দেশের মগজ ধোলাইয়ের যন্ত্র নিছকই কল্পবিজ্ঞান নয়। অচিরেই তা বাস্তবে পরিণত হওয়ার মুখে। এমন তথ্য জানিয়েছে কানাডার একদল বিজ্ঞানী।যুক্তরাষ্ট্রে বস্টনে চলছে আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্সের বার্ষিক সম্মেলন। সেখানে বিজ্ঞানীদলের প্রধান, টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিওলজির অধ্যাপক শিনা জোসেলিন এমনই আশ্চর্য দাবি করেছেন।
যা বাস্তব হলে মাদকের নেশা ছাড়াতে বেশি সময় লাগবে না। ট্রমাটিক স্ট্রেস থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে অনেক সহজে।
জোসেলিনের দাবি, মানুষের মস্তিষ্কের গভীরে লুকিয়ে থাকা কোনো নির্দিষ্ট স্মৃতি মুছে ফেলা এখন সময়ের অপেক্ষা। তার গবেষণাগারে ইঁদুরের ক্ষেত্রে যে কাজটা বেশ সফল ভাবেই হয়েছে। তা আরো নিখুঁত করতে হবে মানুষের ক্ষেত্রে।
জোসেলিনের কথায়, ‘আমাদের গবেষণায় বুঝতে পারছি, নির্দিষ্ট একটি স্মৃতি মুছে ফেলা সম্ভব। তবে এর জন্য আমাদের এথিক্যাল পলিসি তৈরি করতে হবে।’ অর্থাৎ জীবনের যে স্মৃতিগুলো সুস্থভাবে বাঁচার পথে অন্তরায়, বেছে বেছে সেগুলো ধরে ‘মুছে’ দেয়া সম্ভব। সম্পর্ক ভাঙার স্মৃতি হোক, দুর্ঘটনার, বা কোনো অত্যাচারের, গবেষণা সফল হলে মানুষের রাতের ঘুম কেড়ে নেয়ার সুযোগ তারা আর পাবে না।
কত দূর এগিয়েছে ইঁদুরের উপর কাজ? এ ক্ষেত্রে চমকে দেয়ার মতো সাফল্য পেয়েছেন টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। ইঁদুরের ভয় সংক্রান্ত স্মৃতি মুছে ফেলতে পেরেছেন তারা। মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কিছু প্রোটিনকে তারা বেশি পরিমাণে তৈরি করেছিলেন মস্তিষ্কের মধ্যেই। তাতে বুঝতে পেরেছেন কোন স্নায়ুকোষগুলোতে আছে সেই প্রোটিনগুলো।
এভাবেই খারাপ স্মৃতির স্নায়ুকোষগুলো চিনে ফেলে জেনেটিক উপায়ে সেগুলোকে নিখুঁতভাবে সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন ওই বিজ্ঞানীরা। আর তাতেই মানুষের ক্ষেত্রে গবেষণায় সাফল্যের আশা বেড়েছে জোসেলিনদের।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নির্দিষ্টভাবে স্মৃতি মুছে ফেলা সম্ভব হলে সবচেয়ে লাভ হবে মাদকের নেশাগ্রস্তদের। কোকেন, হেরোইন সংক্রান্ত স্মৃতিগুলো মুছে ফেললে মাদকের নেশা তাড়ানোও সহজ হবে। তেমনই লাভ হবে পিটিএসডি-র রোগীদের। পিটিএসডি, অর্থাৎ পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসর্ডার। যা খুব বেশি হয় যুদ্ধ থেকে ফিরে আসা সেনাদের। তাদের ক্ষেত্রে উপকার পাওয়া সম্ভব নির্দিষ্ট স্মৃতি মুছে ফেলে।
একই সঙ্গে জুড়ে থাকছে বিতর্কিত কিছু প্রশ্নও। সাফল্য পেলেও জোসেলিনরাই দাবি তুলেছেন, স্মৃতি মুছে ফেলার এই গবেষণার ক্ষেত্রে তৈরি করা হোক নির্দিষ্ট কিছু নীতি।
জোসেলিনের কথায়, ‘এই গবেষণার একটা খারাপ দিকও আছে। আমরা নিজেদের ভুল থেকেই শিক্ষা নিই। তাই কোনো খারাপ স্মৃতি মুছে ফেললে হয়তো দেখা যাবে একই ভুল আবার করে ফেললাম।’
তার যুক্তি, ‘কিছু করা সম্ভব মানে সেটা করতেই হবে, এ রকম কোনো কথা নেই। তাই এই গবেষণার এথিক্যাল দিকগুলো ভালো করে খতিয়ে দেখা উচিত।’ তাই জোসেলিনরা আগে থেকেই সজাগ থাকতে চাইছেন স্মৃতি মুছে ফেলার খারাপ দিকগুলো নিয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:৩৮