এই মুহুর্তে কোন বানী বা আয়াত নাজিল হলে বাঙ্গালীরা থামে কিনা কে জানে ।গর্ধবদের ভাল করেই বলা হয়েছে কোন দেশের যুদ্ধের সময়ে হতাহতের সংখ্যা পুরোপুরি নির্নয় করা সম্ভব না ।নিজে নিজেই কতটা পচতে পারে আজ তারা এ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।৪৪ বছর পরেও এদের কান্ড জ্ঞান হলো না ।তাদের পচা দেখে পশ্চিমের লোকেরা আজ আঙ্গুল উঠায়ে হাসে ।
.
মুক্তিযুদ্ধে প্রকৃত নিহতের সংখ্যা বের করার জন্য কেউ কেউ দেখি কঠিন কঠিন চেষ্টা করেছেন ।আজ ৪৪ বছর পার হয়েছে, তারা এটুকু চিন্তা করেও ঐ চিন্তা করতে গিয়েছে । কারোও কারোও টেনশান দেখে মনে হয় এ বিষয়ে এর আগে কেউ এনিয়ে লেখালেখি করেনি, চিন্তা করেনি, দেশে এব্যাপারে মাথা খাটানোর কোন লোক ছিলনা,বুদ্ধিজিবি ছিলনা ।
.
দুই আড়াইশো এরও বেশি ওয়েবসাইট আছে যেগুলোনে বিভিন্ন দেশের যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতি ও নিহতের সংখা গড় করে, জরিপ করে । বাঙ্গলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথাও ঐসব ওয়েবসাইটে আছে । ওয়েবসাইটগুলোতে মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা কোনটিতে দশ লক্ষ, কোনটিতে সাতাশ লক্ষ, কোনটিতে বিশ লক্ষ , কোনটিতে সাড়ে বাইশ লক্ষ, কোনটিতে ১৫ লক্ষ, কোনটাতে ত্রিশ লক্ষ উল্লেখ আছে ।তারমানে দুই আড়াশ ওয়েবসাইটে ভিন্ন ভিন্ন মতামত দেওয়া আছে ,কেউ কারো কোনটার সাথে মিল নাই আবার কোনটার সাথে মিল আছে ।
.
এতদিন যাবৎ বাংলাদেশে যুদ্ধে নিহতের সংখ্যার তারাও সঠিক চিত্র তুল ধরতে পারে নি ।কারন যুদ্ধের সময় এদেশ এতো উন্নত ছিলনা, প্রযুক্তি ছিলনা,উদ্দেগ নেওয়ার লোক ছিল না ।অর্থনৈতিক অবস্থা এতই খারাপ ছিল যার কারনে এদেশের লোক মনে করেনি এসবের কোন দরকার আছে ।মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সঠিক তালিকা নির্নয় ব্যয় বহুল কাজ ।একাজে অনেক লোকের শ্রম ও পারিশ্রমিকের ব্যাপার আছে ।সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, এদেশ এখনকার মত এত ঘনবসতি, বাড়ি, বিল্ডিং ছিল না, গোটা দেশটা সবুজ গাছ-গোছালিতে বনের মত হয়েছিল ।
.
অনেক দেশে যুদ্ধে মৃত্যুর সংখ্যা গড় জরিপ করা সহজ হতেও পারে আবার অনেক দেশে অতিকঠিনও হতে পারে ।অনেক দেশ সমতল,তাদের হত্যাকান্ড হয়েছে খোলাখুলি ।অনেক দেশে হত্যাকান্ডে মাটিচাপা, লাশ গায়েব করার মত ঘটনা কম ছিল ।ঐ সমস্ত দেশগুলো উচু নিচু ঢাল,গাছগোছিল, ছিল কম ।লাশ পানিতে ভাষানোকে প্রয়োজন মনে করতেন না ঐদেশের শত্রু বাহীনিরা ।তাছাড়াও পৃথিবীতে এমন অনেক দেশে যুদ্ধ হয়েছিল যেগুলোনে জনসংখা কমছিল,যার ফলে তাদের নিহতের সংখ্যা নির্নয় মোটামোটি সম্ভব হয়েছিল ।তাছাড়াও তারা জাতি হিসেবে উন্নত ছিল ।
.
বাঙ্গলাদেশে স্বাধিনতা যুদ্ধ অনেক নির্মম নিপিড়িত, অত্যাচারের মাধ্যমে ঘটেছিল ।এদেশে অধিকাংশ গণহত্যা ঘটানোর পর সেগুলোকে মাটি চাপা দেওয়া হতো ।কোন পরিবারে হামলা চালানো হলে ঐসব পরিবারের সকলকেই মেরে ফেলা হয়েছে ।যুদ্ধে হত্যাকান্ডের সময় কোন পরিবারের গবাদি পশু পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয় না এটা ক্লাশ ফোরের বাচ্চারাও ভাল করে যানে ।একটা দুইটা করে অনেক গুলো পরিবার শেষ করে দেওয়া হয়েছে ।এমনও ছোট ছোট গ্রাম ছিল যেগুল সব শেষ করে দেওয়া হয়েছে ।গোটা পরিবার নিহত হলে যুদ্ধ পরবর্তিতে যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা জরিপের সময় ঐসব পরিবারের কেউ ছিলেন না যে নিবন্ধন করাবে ।যুদ্ধের সময় প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম ছিল নৌকা ।পাকি বাহীনিরা মানুষ পরিপুর্ণ নৌকা ডুবিয়ে মেরেছেন ।কোন কোন জায়গায় মানুষের মাথা কেটে আলাদা জায়গায় আর শরীরের হাত-পা কেটে চোখগুলো উপড়িয়ে খাটো করে বস্তায় পুরে রেখেছিলেন ।সেসব লাশ কতগুলো ছিল নির্নয় করা সম্ভব হয় নি । দেড় কোটি শরনার্থির পরিবার প্রতি একটি মৃত্যু ধরে সাত লক্ষ নিহতের সংখ্যা পষ্ট অনুমান করা যায় ।
.
ঐ মুহুর্তে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কাছে অনেকগুলো গড় জরিপ উত্থাপন করা হয়, নিহতের সংখ্যা বিশ লাক, দশ লাক, পনের লাক, বাইশ লাক ,সাতাশ লাক, ত্রিশ লাক তখন কি কোন জাতি সৃষ্টিকারী নেতার পক্ষে কম বলা সম্ভব, নিহতের সংখ্যা দশ লাক । শেখ মুজিব যদি কমও বলতেন তাহলে আপনারাই সম্যসা বাধাতেন কেন তিনি কম বললেন ।আবার যদি মাঝামাঝি বলতেন তাহলে সমস্যা কম বেশি দুটোই বাধাতেন ।
যুদ্ধের সময়কার অনেক ভিডিও ছবি আজ দেখি ।মনে প্রানে বিশ্বাস করি আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধিন করেছি ।এখনকার মত যদি এত ক্যামেরা ইন্টারনেট থাকত তাহলে আমরা প্রমান করেই ছাড়তাম মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ত্রিশ লক্ষ, চল্লিশ লক্ষ তারও বেশি ।কিন্তূ সমস্যা হলো অন্যখানে ।বাঙ্গালীর পাকি প্রেম ।বাঙ্গলাদেশে অনেক পাকি প্রেমিক-প্রেমিকা আছে যারা অন্ধভাবে পাকিস্থানকে ভালবাসে ।এরা ৭১এর ভিডিও ফুটেজ ও চিত্র দেখার পরে বলে এগুলো ভাইয়ে ভাইয়ে সামান্য মারামারি, রাগারাগি ।ভাইয়ে বোনে দুষ্টমি করেছিল ।পাকিস্থানীদের প্রতি বাঙ্গালীদের ভাল দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির জন্য তারা আজ মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ত্রিশ লক্ষকে তিন লক্ষ প্রমান করার চেষ্টা চালাচ্ছে ।