যখন সংসদ ভবনের দক্ষিন প্লাজায় জনসাধারণের প্রবেশ উন্মুক্ত ছিলো তখন অনেকবারই সেখানে গিয়েছি। বিশ্বের অন্যতম সেরা স্থাপত্যের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে উদাস হয়েছি। লাল ইটের সারি সারি সিড়িতে বসে বাদাম খেয়েছি, আড্ডা দিয়েছি। টুংটাং গীটারের সুরে অপেশাদা কন্ঠে গান শুনেছি। রাতের সংসদের অলৌকিক নীল আলোর স্বাপ্নিক ছাঁয়ায় প্রেমিকার চুলের ঘ্রানে নেশায় বুঁদ হয়েছি। মানিক মিয়া অ্যাভেনিউ দিয়ে যাবার সময় কে আছে যে একবার চোখ মেলে সংসদের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকায়নি!
সেই সংসদের দক্ষিন প্লাজায় নিরাপত্তা জনিত কারনে প্রবেশাধিকার সীমিত করা হলো। সবাই ফুটপাতে চলে এলো। তবু চোখ মেলে তো দেখা যায়।
সম্প্রতি সেই সংসদ কে আট ফুট উচু গ্রীলের বেড়া দিয়ে ঢেকে দেয়া হচ্ছে। কারন একই, নিরাপত্তা জনিত। ভাবছিলাম আমাদের জনবান্ধব সাংসদরা কেন এত নিরাপত্তা জনিত আশংকায় ভুগেন!
অনেক ভেবে দেখলাম গ্রীলের খাঁচা আসলে সাংসদদের নিরাপত্তার জন্য নয়। সাংসদদের হিংস্রতা থেকে জনগনের নিরাপত্তার জন্য করা। আমাদের সংসদ সচিবালয় চিড়িয়াখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে সংসদকে খাঁচায় আটকানোর এই ধারণা পেয়েছে। সত্যিই তো ! আমাদের সংসদ চিড়িয়াখানা বৈ তো আর কিছু নয়। আর চিড়িয়াদের খাঁচার ভেতরেই রাখা উচিৎ।
শুধু অনুরোধ থাকলো খাঁচায় যেন সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়া হয়," খাঁচার ভেতর হাত দিবেন না"।
শুভ কাজ শুরুই যখন হলো তবে ষোলকলা পূর্ণ করেই হোক।
আমরা টিকেট কেটে সংসদখানা যাব। 'সাংসদ চিড়িয়া' দশ টাকা, 'মন্ত্রী চিড়িয়া' পনের টাকা, 'প্রধান মন্ত্রী মহোদয়' বিশ টাকা। সবচেয়ে বড় কথা এই ব্যতিক্রমী চিড়িয়াখানার সুবাদে বহির্বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পাবে! দলে দলে পর্যটক আসবে! বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফুলে-ফেঁপে রেকর্ড ছাড়াবে! বাংলার মানুষ সুখে শান্তিতে থাকবে!!! আমরা একটা সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ পাবো।