![](https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/images/thumbs/Hard_Nut_1342126052_2-daud-haider.jpg)
জন্ম পাবনা জেলায়। ৩৮ বছর আগে একটি কবিতা লেখার ‘অপরাধে’ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন অগ্রসর ভাবনার কবি দাউদ হায়দার। সংবাদের সাহিত্যপাতায় 'কালো সূর্যের কালো জ্যোৎসায় কালো বন্যায়' নামে একটি কবিতা লিখেছিলেন। ধারণা করা হয়ে থাকে, তিনি ঐ কবিতাতে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ), যিশুখ্রীষ্ট এবং গৌতম বুদ্ধ সম্পর্কিত অবমাননাকর উক্তি ছিল যা সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছিল বাংলাদেশ সরকার তখন চায়নি আন্তর্জাতিকভাবে মুসলিম সরকারদের সাহায্য হারাতে। ১৯৭৩ সালে কবিকে নিরাপত্তামূলক কাস্টডিতে নেয়া হয়। ১৯৭৪ এর ২০ মে সন্ধ্যায় তাঁকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং ’৭৪-এর ২১মে বঙ্গবন্ধুর বিশেষ নির্দেশে কলকাতাগামী একটি ফ্লাইটে তাকে তুলে দেয়া হয়। ওই ফ্লাইটে তিনি ছাড়া আর কোনো যাত্রী ছিল না। তাঁর কাছে সে সময় ছিল মাত্র ৬০ পয়সা এবং কাঁধে ঝোলানো একটা ছোট ব্যাগ (ব্যাগে ছিল কবিতার বই, দু'জোড়া শার্ট, প্যান্ট, স্লিপার আর টুথব্রাশ। কবির ভাষায়
“আমার কোন উপায় ছিল না। মৌলবাদীরা আমাকে মেরেই ফেলত। সরকারও হয়ত আমার মৃত্যু কামনা করছিল।“
’৭৬-এ দাউদ হায়দার তার পাসপোর্ট নবায়নের জন্য কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে জমা দিলে তা আটক করা হয়। স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় এলে তিনি আটক পাসপোর্ট ফেরত চেয়ে আবেদন করেন। তার পাসপোর্ট ফেরতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে এরশাদ সরকারও। ওই পাসপোর্ট আজো ফেরত পাননি আগুনমুখী কবি।
কলকাতা ছিল তার কাছে একদম অচেনা বিদেশে যেখানে কাউকেই চিনতেন না। তিনি দমদম এয়ারপোর্টে নেমে প্রথমে কাঁদছিলেন। কলকাতায় তিনি প্রথম গৌরকিশোর ঘোষের কাছে আশ্রয় পান। তিনি সেখানে একমাসের মতো ছিলেন। তিনি সেখানে লেখালেখি শুরু করেন। কলকাতার কঠিন বাস্তবতার মাঝে তিনি দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকায় লেখা শুরু করেন। তার জীবনে প্রেমও আসে সেখানে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই তরুণী, তাকে প্রেম নিবেদন করে। তারপরও তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি একা কলকাতা শহরের মতোই। তিনি সেখানে একজন আগন্তুক মাত্র। ১৬ আগস্ট ২০০৯ সালের সমকালে লেখা তাঁর কলামে (বঙ্গবন্ধু ও অন্নদাশঙ্কর) দেখা যায় ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে 'আন্তর্জাতিক তুলনামূলক সাহিত্যের' ছাত্র ছিলেন। কলকাতায় তিনি সমাদৃত হন। অন্নদাশঙ্কর রায় তাকে নিজ বাড়ীতে আশ্রয় দেন। নির্বাসিত অবস্থায় ১৯৭৬ সালে তিনি ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসে নবায়ণের জন্য পাসপোর্ট জমা দিলে তা বাজেয়াপ্ত করা হয়। দাউদ হায়দারকে ভারত থেকেও নির্বাসনে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
পাসপোর্ট ছাড়া অন্য আরেকটি দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসে সমস্যা দেখা দেয়। ভারত সরকার দায়িত্ব নিতে চায় না নির্বাসিত কবির। তিনি অন্য কোনো দেশেও যেতে পারেন না পাসপোর্টের অভাবে। এমন এক দুঃখকালে তার পাশে এসে দাঁড়ান কবিবন্ধু নোবেল বিজয়ী জার্মান কবি গুন্টার গ্রাস। তিনি জার্মান সরকারের উচ্চপর্যায়ে কথা বলে বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত কবিকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়ার ব্যবস্থা করেন। ২২ শে জুলাই ১৯৮৭ এর কোনো এক ভোরে জার্মানির বার্লিনে গিয়ে পৌঁছান দাউদ হায়দার। জাতিসংঘের বিশেষ ‘ট্রাভেল ডকুমেন্টস’ নিয়ে এখন ঘুরছেন দেশান্তরে। গত তেত্রিশ বছর কোনো পাসপোর্ট নেই তার। জার্মানি যাওয়ার পর থেকে তিনি সেখানের ‘ডয়েচে ভেলে’ রেডিও চ্যানেলের প্রভাবশালী সাংবাদিক। গত ৩৫ বছরে এক মুহূর্তের জন্যও পা ছোঁয়াতে পারেননি জন্মভুমির মাটির ওপর। দেশে ফেরার জন্য নিয়ত পড়ছে চোখের জল।২২ বছর বয়সী তরুণ এক কবি বুকে প্রচণ্ড অভিমান আর প্রবল রক্তক্ষরণ নিয়ে ছেড়েছিলেন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের প্রিয় জনপদ। সেই কবি এখন ৫৭ বছরে পা দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।
্যে কবিতাটির কয়েক লাইনের জন্য তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন।
"অদ্ভুত আলখেল্লা পরিহিত মিথ্যুক বুদ্ধ
বুধি বৃক্ষতলে
যিশু ভন্ড শয়তান,
মোহাম্মদ আরেক বদমাশ
চোখে মুখে রাজনীতির ছাপ।"
তিনি প্রায় ৩০টির মতো বই লিখেছেন জার্মান, হিন্দি, ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, জাপানিজ ও স্প্যানিশ ভাষায়।
এছাড়া সাপ্তাহিক ২০০০ এ প্রকাশিত হওয়া তার আত্মজৈবনিক লেখা “সুতানটি সমামাচার” ২০০৭ সালে ধর্মীয় মুল্যবোধে আঘাত দেয়ার অভিযোগে সরকার বাজেয়াপ্ত করে।
![](https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/images/thumbs/Hard_Nut_1342126002_1-picture_43375.preview.jpg)
প্রকাশিত গ্রন্থ
সংগস অব ডেস্পায়ার (১৯৯২)
এই শাওনে পরবাসে (১৯৮২)
বানিশম্যান্ট (১৯৭৯)
আমি পুড়েছি জ্বালা ও আগুনে (১৯৮২)
এলোন ইন ডার্কনেস অ্যান্ড আদার পোয়েমস (১৯৭৮)
হোল্ডিং অ্যান আফটারনুন অ্যান্ড আ লিথ্যাল ফায়ার আর্ম (১৯৮১)
অবসিডিয়ান
সাক্ষাৎকার ও অন্যান্য
জন্মই আমার আজন্ম পাপ